দ্রুততার সঙ্গে নিজের হাতের বাকি কাজগুলো সারছিল অনির্বান | আজ রাত্রের ফ্লাইট, তার আগে গুছিয়ে নেওয়ার পালা, জিনিসপত্রগুলো আর সাথে মনটাও | বাবা মারা গেছেন মাত্র দিন কুড়ি আগে, কিছুতেই মানতে পারছে না সেটা অনির্বান | মা মারা গেছে যখন তখন অনির্বান ছোট-ই বলা চলে, বাবাই সব, একমাত্র দিদি বিয়ের পর থেকেই বাইরে, সেও কাল ফিরে গেল | জিনিসপত্র গোছাতে গোছাতেই হাতে পড়ল ডায়েরিটা | বাবা বরাবর ডায়রি লিখতেন, তবে কারও সে ডায়েরিতে হাত দেবার অনুমতি ছিল না | অন্যমনস্ক ভাবেই ডায়েরি উল্টে দেখল অনির্বান, পড়তে লাগল, পড়তে পড়তে নেশা লেগে গেল যেন, ঘড়ির কাঁটা কতদূর ঘুরছে কোন খেয়ালই নেই | চোখ আটকাল বেশ কিছুক্ষন পর |
**************
জন্মের আগেই দাদু মারা যায়, ঠাকুমা তো কবেই মারা গেছেন, শুধু গল্প শুনেছিল ও | দিদিভাই দাদুকে বেশ খানিকটা সময় পেয়েছিল | দিদিভাই বাবার কাছে গল্প শুনেছিল দাদুর | দাদুকে পায়নি বলে আক্ষেপও খুব অনির্বানের, এমন একজন মানুষকে ও পেল না | দাদু আঁকতেন, লিখতেন এবং খুব সুন্দর কথা বলতেন, আদ্যোপান্ত রসিক আর গুনের মানুষ বলে যাকে আর কী | তো, ডায়েরিটা বাবা আর দাদুর সম্পর্কের একটা সমীকরণেরই আভাস ছিল | এত কিছু তো অনির্বান জানতোই না | বাবা দাদুকে নিজের সুবিধার্থে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, দাদুর কোন কথা শোনেননি | দাদুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় বাবা | দাদু তখন মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েন, বাবার প্রতি স্নেহ বশত স্বাভাবিক ভাবেই অনেক অভিমানও জমে ছিল মানুষটার | বাবা যখন বুঝেছিল তখন অনেকে দেরী হয়ে গেছে | বাবার বুঝতে বুঝতেই মানুষটা আর নেই, শুধু একটা চিঠি বাবার উদ্দেশ্যে রেখে গেছল দাদু, যার সারমর্ম এই যে -যদি বাবার সন্তান এই একই ব্যবহার করে, সেদিনই বাবা বুঝতে পারবে তার ভুলটা |…
ডায়েরিটা বন্ধ করল অনির্বান | একটা ডায়েরির পাতার কয়েকটা শব্দ যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে আরও একবার দেখিয়ে দিয়ে গেল নিজেদের শিক্ষাকে | একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে, এখানে দোষী কে? কোন প্রজন্মের ঘাড়ে চাপবে দোষটা?
বৃদ্ধাশ্রমের ১২ নম্বর ঘরে তখনও অনির্বানের বাবার ছবিটা রাখা, ওটা তখনও গোছানো হয়নি | এত গোছগাছের পর মনটা আরও একবার অগোছালো হলো, আরও একজনের |