বিশ্বাস করি না

রোহনকে রেডি করে স্কুলে পাঠানোর জন্য আজও রোজের মত বাড়ির সবার আগে কাক ভোরে উঠে পড়েছ নিশ্চয় । বাড়ির সমস্ত কাজ সেরে বাজার, দোকান, রোহনকে পড়ানো সবটুকু করো তুমি হাসিমুখে ।

তোমায় যত দেখি অবাক হই । মাকে কোনদিন পাইনি কাছে, তাই তোমায় দেখে নিজের মনেই মাঝে মাঝে প্রশ্ন ওঠে একটা, সবকিছু এভাবে একা হাতে সামলে চলেছ তুমি, আর কারা যেন বলে পুরুষরাই শক্তি ধরে, নারীরা অপলকা, আমি বিশ্বাস করি না ।

মনে পড়ে, যেদিন দুজন একসাথে রান্না করতে গিয়ে একসাথেই হাত পুড়িয়েছিলাম, দোষটা আমারই ছিল । বাবা এসে আমার হাতটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ল, আর তুমি নিজেকে নিজেই হাসি মুখে সামলে নিলে । সেদিন ঐ যন্ত্রণার মধ্যেও তোমার মুখটা দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম, আর কারা যেন বলে, মেয়েদের একটুতেই একটু, আমি বিশ্বাস করি না ।

তোমায় ভালবেসে, বিয়ে করে আমাদের এই লাল, নীল সংসারে একসাথে হাঁটাটা সহজ ছিল না ।

তোমার আগের সম্পর্ক, বিয়ে, ডিভোর্স সবকিছু পেরিয়ে তুমি আবার একজন পুরুষকে বিশ্বাস করার, ভালবাসার সাহস দেখিয়েছিলে । অন্ধকার অতীতটাকে উপরে ফেলে দিতে পেরেছিলে তুমি, নিজের শরীরের কালশিটে গুলোর প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলে তুমি । কারা যেন বলে নারীরা পুরুষ ছাড়া চলতেই পারে না, আর দেখো আমিই উল্টে তোমায় পাশে চেয়েছিলাম, যারা বলে তাদের কথা আর বিশ্বাস করি না ।

নিজের বাড়ি ছেড়ে তুমি এসেছো, কই আমি তো যাই নি, তাও তুমি কত সুন্দর ভাবে মিশে গেছ আমার জীবনটার সাথে, আমার সবটুকুকে নিজের করে হাসিমুখে বাঁচছ তুমি । আচ্ছা আমি কি পারতাম? কারা যেন বলে, পুরুষরা সব পারে, আমি বিশ্বাস করি না । 

সপ্তাহের শেষে ছুটির দিন যখন বেলা করে ঘুম থেকে উঠি তোমায় পাশে দেখতে পাই না, তখন এটাই মনে হয়, আজ তো তোমারও ছুটি হওয়া উচিত ছিল, কই তুমি তো একঘন্টা বেশী ঘুমোনোর ফুরসত পাও না । কেন? কারা যেন আবার বলে, যারা গৃহবধূ তাদের নাকি কোনো কষ্ট নেই, আমি বিশ্বাস করি না ।

অনেক কিছু দিয়েছ তুমি, রোহনকে দিয়েছ তুমি । মাসের ঐ কটা দিন তুমি যন্ত্রনা মুখ বুজে সহ্য করেও একই ভাবে সবটুকু সামলে চলো, তোমায় হটব্যাগ টুকু এগিয়ে দিতে পেরে তোমায় বলি, “তোমায় ভালবাসি”, তোমার দৃঢ়তা, তোমার রুচিশীল মনকে ভালবাসি, তোমায় একজন নারী হিসাবে নয়, একজন সুন্দর মানুষ হিসেবে ভালবাসি, কোনদিন বলতে পারিনি, পারবও না হয়তো । কিন্তু…… ভালোবাসি ।বছরের শুধু একটা দিন নারীদের জন্য? আর বাকী ৩৬৪ টা দিন? যেদিনগুলোয় তুমি না থাকলে আমি চলতেই পারতাম না, তার হিসেবে কে দেবে? বাকী দিনগুলোয় তোমার কষ্ট, যন্ত্রনা, স্বার্থত্যাগ, মানিয়ে নেওয়া, এগুলোর দাম কে দেবে? কারা যেন বলে, আজই শুধু নারীদিবস, আমি একজন পুরুষ, আমি বিশ্বাস করি না ।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

মুক্তি

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, আকাশ তখন থেকে ঠায় বসেই রয়েছে ঘাটে। এখন বাঁধানো ঘাট থেকে করিডোর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া অনেকটা সহজ

Read More »

বন্ধু হবি চল

বাক্সপেটরা নিয়ে স্টেশনেই বসে ছিল নয়না, বৃষ্টি পড়েই চলেছে, মুষলধারায়। বাবা বলল আরেকটু অপেক্ষা করতে, এত বৃষ্টিতে তো ছাতাও হার মানবে, আর বেরিয়ে রাস্তাও অজানা

Read More »

ক্লিক

।।১।। -“মালিনী, কালকের মিটিংটা কখন ফিক্স করেছ? -“ম্যাম, সকাল ১১টা।” -“ওকে, কনফার্মেশন পেয়ে গেছ?” -“ইয়েস ম্যাম।” -“ওকে গুড। আর।।। এক মিনিট।।।” টেবিল থেকে ফোনটা তুলে

Read More »

শিক্ষা

।।১।। দাপুটে, বদরাগী, মেজাজি এই সব কটা বিশেষণই বেশ ভালো যায় মিসেস বোসের সাথে। রেণুকা বোস আর অমরনাথ বোস সানফ্লাওয়ার এপার্টমেন্টে ১২০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাট 2c

Read More »

বিদায়

।। ১।। রীতিমত জোর করেই নন্দিনীকে পাহাড়ে নিয়ে এলো সঙ্গীতারা। আসার ইচ্ছে তো ছিল না ওর একদমই, শরীর সাথ দিলেও মনটা কোনোভাবেই সাথ দিচ্ছে না।

Read More »

মামাবাড়ি

।।১।। একবার নিজের ঘড়িটা স্টেশনের ডিজিটাল ঘড়ির সাথে মিলিয়ে নিল মিনি, সময় তো হয়ে গেছে। উল্টো দিকের দুটো মেট্রো এসে গেল কিন্তু এদিকের মেট্রোর কোনো

Read More »

Share with