||১||
-“তুমি কী আর একটু পনির নেবে?”ডাইনিং টেবিলে স্বামী রজতকে প্রশ্নটা করল মিতালী | ডাইনিং টেবিলে থালা বাসনের টুংটাং আওয়াজ, আর ঘড়ির টিকটিক শব্দ ব্যস, এর বেশি আর কোন শব্দ খরচ হয় না এই সময় সচরাচর দুই পক্ষ থেকেই | এই মাত্র মিতালীর পক্ষ থেকে কটা শব্দ খরচ তাও হলো | রাজীব শুধু হাত নেড়েই ‘না’ বুঝিয়ে দিল |
মিঃ অ্যান্ড মিসেস গাঙ্গুলী, মানে এই রজত আর মিতালীর সংসার ভবানীপুর, ১২০০ স্কোয়ার ফুট-এর ফ্ল্যাটে | প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা অনেক বেশি এখানে, তাই দূরত্বটা বোধ হয় বেড়েই চলেছে….. রজত আর মিতালীর বিবাহিত জীবন চার বছরের, এখনও অবধি কোন সন্তান নেই | রজত আর মিতালী দুজনেই উচ্চপদে কর্মরত, স্ব স্ব ক্ষেত্রে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত | এত কিছুর মাঝে খারাপটা যে কী, সে সাধারণ মানুষের পক্ষে খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল | বিশাল ফ্ল্যাট, বৈভব, আহ্লাদ, সাফল্য, দুইপক্ষের সুখী পরিবার পরিজন, সব মিলিয়ে তো ঘরের কোণায় কোণায় সুখই সুখ হওয়ার কথা | কিন্তু না, তা নেই, দুটো মানুষের মধ্যে অভিমান, রাগ, দুঃখের যেন এক বিশাল দেওয়াল | এই দেওয়ালটা ঠিক কবে থেকে তৈরি হতে শুরু করেছিল, ওরা নিজেরাও জানে না হয়তো | প্রথম থেকে কিন্তু এমনটা ছিল না, বেশ কয়েক বছরের ভালবাসা পরিণতি পেয়েছিল এই বিয়ের মাধ্যমে | প্রথম প্রথম সব ঠিকই ছিল, তারপর কী যে হলো…..|
||২||
অফিসে ঢুকে নিজের চেয়ারটায় বসে এ.সি টা অন করল রজত, যা ট্র্যাফিক, আর গরম, উফফ | খানিকক্ষণ জিরিয়ে ফোনটা হাতে নিল, এখনও কোন মেসেজ নেই, রজতই প্রথম মেসেঞ্জারে মেসেজটা করল,”গুড মর্নিং” |
কিছুক্ষন পর ওপাশ থেকে উত্তর এল,”সুপ্রভাত, অফিস পৌঁছলেন?”
বিথী, মেসেঞ্জারের ওপাশের মেয়েটির নাম | বিথীর সাথে রজত কথা বলে প্রায় মাস ছয়েক ধরে, যেরকমটা ভাবছেন সেরকম কিছুই না, নিখাদ বন্ধুত্ব-ই গড়ে উঠেছে দুজনের মধ্যে, যে বন্ধুত্বের বেশির ভাগটাই জুড়ে থাকে হাসি, ঠাট্টা, ইয়ার্কি, আর দুজনেরই দুজনের ভালবাসার মানুষটাকে ঘিরে হাজারো কথা | অনেক অভিমান, রাগ, যা জমে আছে, সেটাই একে অপরকে বলে হাল্কা হওয়া | নিজের মনটা হাল্কা করার মুক্ত প্রাঙ্গন দুজন দুজনের কাছে, যেখানে কোন এক্সপেকটেশন নেই, কোন আরগুমেন্ট নেই, সবটুকুই মন ভাল হওয়া কিছু মুহূর্ত |
রজত, মিতালী মানে আগের মিতুকে বড্ড মিস করে, যে মিতু কথায় কথায় রজতকে ডিস্টার্ব করে, খুনসুটি করে, দুস্টুমি করে মজা পেত, রজতকে নিয়ে সপ্তাহে একদিন সামনের পার্কটায়, তারপর ঝিলের পাশে না বসলে, একান্ত দুটো কথা না বললে যার হাঁসফাঁস করত, সারাদিনের কাজের শেষে যে রজতের প্রিয় খাবার বানিয়ে আনন্দ পেত, আর রজতেরও বৌ-এর হাতের রান্না না খেলে যেন দিনটা শেষ হতো না | এখনও রাঁধে, ভালই রাঁধে, কিন্তু কিছু যেন একটা খুব সূক্ষ্ম একটা ফাঁক যেন রয়েই যায়, অনেক কিছু যেন বদলে গেছে | কিন্তু কি বদলে গেছে তা’ই রজত বোঝে না | সময়ের সাথে সাথে এভাবেই তৈরি হয়ে গেছে দুটো পাশাপাশি থাকা মানুষের মাঝে এক পাহাড় প্রমান দূরত্ব |
||৩||
বাড়ি ফিরে রোজকার মতন একই দৃশ্য, রোজ যা হয়, মিতালী রান্না ঘরে, অফিস থেকে মিতালী রজতের একটু আগেই ফেরে | বরাবরই মিতালী রাঁধতে খুব ভালবাসে, রজতের জন্য যত্নে ঠিক কিছু না কিছু একটা রেঁধে রাখে আজও | আগে রজত আর মিতালী একসাথেই রাঁধত, এখন মিতালী একাই করে |
রজত ফোনটা নিয়ে বসল ফ্রেশ হয়ে | মানদা মাসি একটু মুড়িমাখা দিয়ে গেল, খেতে খেতে ফোনে মেসেজ ঢুকল, বিথী | আজ বিথীর সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা চলতে চলতে ব্যাপারটা প্রায় তর্কের পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে | বিথীর স্বামী চায় না এখন ওদের মধ্যে সন্তান আসুক, কিন্তু বিথীর মনে হয় এই সময়টাই সঠিক সময়, এই নিয়েই ওদের মধ্যে মতভেদ, কথা কাটাকাটি থেকে শুরু করে কথা প্রায় বন্ধ | বিথীর অভিযোগ ওর স্বামী শুধু নিজেরটা ভাবছে, নিজের গা বাঁচানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে | এই ক্ষেত্রে রজত ওর স্বামীর সিদ্ধান্তকেই সাপোর্ট করায় তর্ক এখন চরম পর্যায়ে |
রজতের ভাল লাগছিল না আর, ও ফোনটা রেখে ব্যালকনিতে চুপ করে গিয়ে বসল, ঘরটা অন্ধকার রাখল, কোথাও থেকে কোন আলো যেন চোখে না আসে, ২৫ তলার উপরে আলো পৌঁছায়ও না | এখানে বসে আকাশের তারাগুলো দেখছিল রজত | বিয়ের পর রোজ একটিবার হলেও ও আর মিতালী এই ব্যালকনিটায় বসত, আজ এগুলো অতীত, …. কিন্তু,…. কিন্তু এগুলো কেন অতীত হয়ে গেল? রজত তো মিতালীকে খুব ভালবাসে, আর মিতালীও রজতকে….. মিতালী কি অন্য কাউকে ভালবাসে? না, না, এ হতে পারে না | কেন ওদের মধ্যে এত দূরত্ব এলো? সেদিনের পর থেকেই, যেদিন রজত নিজের সুবিধার জন্য পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিল মিতালীকে ও এখন কোন ভাবেই বাবা হতে চায় না | মিতালী তো সংসার ভালবাসে, চাকরি করে কিন্তু কোনদিন নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য, ভালবাসায়, নিষ্ঠায় কোথাও কোন খামতি দেখা যায়নি, এই জন্যই রজত ওকে এত্ত ভালবাসতো, ইনফ্যাক্ট ভালবাসে | তারপর থেকেই মিতালী কেমন বদলে গেল | রজত দৌড়তে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে মিতালীর এই পরিবর্তন যখন চোখে পড়ল তখন অনেকটা দেরী হয়ে গেছে | বিথী বারবার রজতকে মিতালীর সাথের প্রথম দিকের দিনগুলো মনে করায়, ঠিকঠাক সাজেশনও দেয় | বিথীও নিজের স্বামী নিয়ে গল্প বলে, রজত খুব একটা সাজেশন দিতে পারে না, নিজেই দোলাচলে, অন্যকে কী সাহায্য করবে |
“খেতে এস”, মিতালীর শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় টনক নড়ল | আগে মিতালী এভাবে কথাই বলতো না, আর আজ? রজত অন্ধকার ঘর ব্যালকনি ছেড়ে খেতে গেল |
||৪||
বাপের বাড়ি এলে খানিকটা খোলা বাতাস পায় মিতালী, মন খুলে কথা বলা যায় এখানে, ওখানে তো…
সামনের বারান্দাটায় চা নিয়ে বসেছিল মিতালী | মা বাবা, শ্বশুর শাশুড়ি, দুই বাড়ির সব লোকজন সবাই কবে নতুন অতিথি আসবে সেই খবর শুনতে অস্থির | হবে নাই বা কেন, চার বছর বিয়ে হয়ে গেল, মিতালী আর এখন কোন উত্তর দেয় না | হঠাৎই পাশে এসে বসল টিকলি, মিতালীর বোন | ও মোটামুটি পুরোটাই জানে, ওকে বলেই একটু হাল্কা হয় মিতালী |
“আয় রে বোস, কতদিন একসাথে বসে এভাবে মশলা চা-টা খাইনি বলতো |” মিতালী বলল |
-“সে আর বলতে, রজত দা-ও তো তোর হাতের মশলা চা-টা খেতে খুব ভালবাসে, তাই না |”
কিছুক্ষন নীরবতার পর মিতালী বলল, “বাসত, এখন আর বাসে কী না জানা নেই |” কথার সঙ্গে সঙ্গে একটা দীর্ঘনিশ্বাসও ছিল, যেটা টিকলির নজর এড়াল না |
-“কী এমন হলো বলতো তোদের মধ্যে যেটা আর ঠিক হচ্ছে না? এতদিন হয়ে গেল, আর কত? ক্ষমা করে দে না |”
-“ক্ষমা মানুষকে তখনই করা যায়, যখন সে ক্ষমাটা চায়, ও আদৌ চেয়েছে? ও আদৌ বুঝেছে ওর দোষ? আমাদের মধ্যে আর কোন স্বাভাবিক সম্পর্ক বেঁচে নেই রে | ও নিজের স্বার্থে চায় না আমরা মা বাবা হই | ওর লাইফ, ওর কেরিয়ার, ওর প্ল্যানিং সব ওর, কই আমায় তো একবার জিজ্ঞেস করা হলো না আমি কী চাই? ঐ অশান্তির পর ও একমাসের জন্য ইউ.এস চলে গেল, নিজের গোল অ্যাচিভ করতে, ঐ সময় যে আমার পক্স হয়েছিল, আমার অবস্থা এত খারাপ ছিল, ও আজও জানে সেটা, ওকে কিছু জানাইনি, কাউকে জানাতে দি-নি, ও-ও জানতে চায়নি, তাই নয় কী? সম্পর্কের সুতোটা দু’দিক থেকে সমান ভাবে ধরতে হয় | একদিক থেকে ধরে কতদিন চলবে? আর সেদিনকার ব্যবহারটা আমি কোনদিন ভুলব না রে, আজও ভুলতে পারি না | ওটা আমার কাছে একটা চরম অপমান জনক ঘটনা ছিল, বিবাহবার্ষিকীর রাতে একটা ভালবাসার মুহূর্তে ওকে আমাদের সন্তানের ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলাম | প্রত্যুত্তর ও কতটা খারাপ ভাবে দিয়েছিল, কতটা অপমান করেছিল, সেটা একটা মেয়ে হয়ে, একজন স্ত্রী হয়ে আমার কাছে লজ্জার |” এতটা বলে একটু শ্বাস নিল মিতালী |
কিছুক্ষনের নিস্তব্ধতা ভেঙে আবার বলল,”আমার মনে হয় আমি ওকে মুক্তি দিলেই ও ভাল থাকবে | এটাকে কী সম্পর্ক বলে আদৌ? আমরা শুধু এক ছাদের তলায় চার দেয়ালের মধ্যে থাকি-ই শুধু | ন্যূনতম দায়িত্ব যে এড়িয়ে চলে নিজের স্বার্থের খাতিরে, তাকে স্বামী বলা যায় কী? আমি সত্যিই ডিভোর্স চাই এবার |”
বাইরে বিদ্যুতের তীব্র ঝলকানির সাথে বাজ পড়ল, খুব জোরে | সেই বিদ্যুতের আলোয় মিতালীর চোখ দুটো দেখল টিকলি, কত যন্ত্রনা আছে রাগ আর অভিমানের আড়ালে |
||৫||
রজত আজ একাই বসে আছে ফ্ল্যাটটায়, কাল ওর ফ্লাইট, বিজনেস ট্রিপ ১৫ দিনের | মিতালী নেই, ওর বাপের বাড়িতে | বীথির বলা কথাগুলো খুব ভাবাচ্ছে আজ রজতকে, ওর নিজের জীবন নিয়ে | সত্যিই তো, ছুটতে ছুটতে কোথায় থামতে হবে, ভুলে গেছে ও | ওদের কত বছরের সম্পর্ক, বিয়ের পরও আজ ওদের সন্তান নেই শুধু মাত্র ওর জিদে, ও দায়িত্ব নিতে চায় না তাই, ও দৌড়তে চায় তাই | আজ বীথি বলল, ওর সাথে ওর স্বামীর ডিভোর্স নিয়ে ভাবছে, ওদের সমস্যাটাও রজত মিতালীর মত-ই | অনেকদিন পর ওদের বিয়ের বিশাল বাঁধানো ফটোটার দিকে একবার তাকালো রজত | কতদিন ও ভালভাবে ওদের সাজানো গোছানো সুন্দর সংসারটাকেই দেখেনি, কী লাভ এত দৌড়ে? যেখানে জীবন নেই, পরিবার নেই | বিথীকে মেসেজ করলো রজত,”এখন তাহলে আমার কী করা উচিত?”
একজন বন্ধুই পারে বন্ধুকে সঠিক পরামর্শ দিতে, বিথীও দিল, বলল ক্ষমা চেয়ে নিতে | একটা ক্ষমা যদি একটা সম্পর্ক বাঁচাতে পারে, তবে কীসের এত ইগো, কীসের এত জিদ, কীসের এত দম্ভ | এবার বোধহয় একবার কথা বলা উচিত, ইনফ্যাক্ট কথা বলা খুব দরকার মিতালীর সাথে | ও বাপের বাড়ি থেকে ফিরুক, রজত ফিরুক ট্রিপ থেকে, সামনা সামনি বসে কথা বলবে রজত এবার |
||৬||
ঘরে এ.সি চলছে তাও দরদর করে ঘামছে রজত, রাত প্রায় বারোটা, আজই ফিরেছে | ড্রয়িং-এর সেন্টার টেবিলের সামনে রাখা ডিভোর্স পেপারটা, সামনে বসে মিতালী, নির্বিকার, শান্ত |
কিছুক্ষন পর রজত বলল,”কেন?”
মিতালী খানিক হেসে উত্তর দিল,”প্রশ্নটা না হয় নিজেকেই করো |”
রজত সবটা ডুবে যাওয়ার আগের মুহূর্তে যেমন শেষবারের মত আঁকড়ে ধরার মরিয়া চেষ্টা করে মানুষ, সেভাবেই বলল,”আর একবার ভাবা যায় না কী?”
“ঠিক কী ভাবব বলো? আর ভেবে কী লাভ সেটাও বলো? তোমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কারও জায়গা আছে কী? নেই | কী লাভ তাহলে এসব বলে?” উঠে চলে গেল মিতালী, ক্ষমা চাইতে পারল না আজও রজত নিজের ইগো আর অহংকারের লম্বা বেড়াটা টপকে |
***************
বড্ড অশান্ত লাগছে নিজেকে রজতের | আজ ও নিজে থেকেই অফিস যায়নি, কিছু ভাল লাগছে না ওর | মিতালী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, রজত তখন বাড়িও ছিল না | ফোন করতে গিয়ে আঙুলটা আটকে গেছে বারবার, ভাবতে ভাবতে মাথাটা ধরে গেল রজতের | সামনে মিতালীর সাইন করা ডিভোর্স পেপারটা রাখা | ও কী তাহলে সাইন করে দেবে? ছিঁড়ে দেবে তাহলে এই ‘নামহীন’ বাঁধনটাকে |
ধ্যুর, অনেকেই মুভ অন করে, এতে এত ভাবার কী আছে | ও-ও মুভ অন করবে, লাইফে একটা সাকসেসফুল মানুষের মেয়ের অভাব হয় না | এই তো বীথি-ই তো, বীথির সাথে কথা বলতে রজতের বেশ ভালোই লাগে, বীথির কথাবার্তার সাথে ওর চেনা মিতুর অনেক অনেক মিল, ঐ জন্যই হয়তো এতটা ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে ওদের মধ্যে | কিন্তু, যতই মিল থাকুক, বীথির সাথে যতই কথা বলুক, ও কিন্তু বিথীকে মিতুর জায়গায় একবারও কল্পনা করতে পারেনি, ইনফ্যাক্ট কল্পনা করতে চায়-ই-নি | বীথি ওর বন্ধু-ই, মিতুর জায়গাটা মিতুর-ই | বীথির মধ্যে ও সবদিন ওর মিতুকেই খুঁজেছে, এটাই সত্যি | বুঝতে অনেকটা দেরী হয়ে গেল রজতের | শেষবার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা ওকে করতেই হবে |
বীথির কাছে রজত কৃতজ্ঞ, ওর বন্ধুত্বের মাধ্যমে ও রজতকে ওর ভুলটা অনেক দেরীতে হলেও নিজের অজান্তেই হয়তো বুঝিয়ে দিয়েছে | বীথির জীবনের টুকরো ঘটনাগুলো রজতকে অনেককিছু শিখিয়ে দিল খুব কম সময়ে |
||৭||
“প্লিজ, আমায় ক্ষমা করতে পারবে না? পারবে না নিজের মতো করে ভেঙে গড়ে নিতে? মানছি, ভুল করেছি | কিন্তু, ক্ষমা কি পেতে পারি না?”… রজতের চোখে জল | মিতালীর মাথা নীচু, চোখের জল লুকোনোর আপ্রাণ চেষ্টায় |
কিছুক্ষন চুপ থেকে রজত আবার বললো,”খুব ভালবাসি তোকে মিতু, প্লিজ আমায় ছেড়ে যাস না |”
আজ কতদিন পর রজতের মুখে মিতু ডাকটা শুনলো মিতালী | এই ডাক, এই সম্বোধন গুলোই তো মিস করতো মিতালী | বাঁধ ভাঙলো অবশেষে চোখের জলের, পারলো না আটকাতে মিতালী নিজেকে, এতদিনের জমে থাকা রাগ, অভিমান, একটু ভালবাসার স্পর্শেই গলতে শুরু করলো | রজত মিতালীকে কাছে টেনে নিলো | হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলো মিতালী, রজতের বুকে | রজতও কাঁদছে, তবে আনন্দে, ওর মিতুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ | সঙ্গে মনে মনে ধন্যবাদ দিচ্ছে বিথীকে, যে মানুষটার জন্যই রজত আজ নিজের ভুলগুলো স্বীকার করার ক্ষমতা অর্জন করেছে, বুঝেছে নিজের ভুল, ফিরে পেয়েছে মিতুকে |
মিতালীর বাপের বাড়ির ঘরগুলো আলাদা, আলাদা, পুরোনো কালের বাড়িতে, ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আনন্দে চোখের জল মুছল টিকলি ওরফে বীথি, মিথ্যে যদি একটা সম্পর্ক জোড়ে তাহলে সে মিথ্যে হাজার বার বলা যায় | একটু একটু করে রজতদার মনে রজতদার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছিল টিকলি, বীথির বেশে, মিতালীর মতো করে, আজ ও সফল | ওর পরম প্রিয় দুটো মানুষ আজ আবার একসাথে | রজতদা কোনদিনও মিতালীকে ছাড়া আর কারোর কথা ভাবেননি, বীথির সাথে নিখাদ বন্ধুত্ব টুকু তারই প্রমান | সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোকে ভাল কাজেও লাগানো যায় তাহলে, এদের সুবাদেই আজ দুটো ভালবাসার মানুষ আবার একসাথে |