জানি দেখা হবে

“থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যর” করমর্দন করে হাসিমুখে এইচ আর হেড-এর রুম থেকে বেরলো অভ্র। চাকরিটা পাকা হয়ে গেছে। নীচে নেমে মাকে ফোনে শুধু বলল, “বাড়ি গিয়ে যা বলার বলবো, চিন্তা কোরো না।” বেশ গুরুগম্ভীর গলায়। তারপর বাড়ি গিয়ে যখন সারপ্রাইজটা দেবে তখন মা বাবার মুখটা দেখবে শুধু।

অফিসের গেট থেকে বেরিয়ে মেট্রোর দিকে পা চালাল অভ্র।

************

অভ্র-র বাড়ি থেকে অফিস খুব একটা দূর না, মেট্রো ধরে নামলো দমদম, ধর্মতলা থেকে। দমদম থেকে সিঁথির মোড়। রাবড়ি মা-বাবা ওর সবারই খুব পছন্দের। টিউশন পড়িয়ে আগে হাত খরচ উঠত। আপাতত ঐ টাকা দিয়েই রাবড়ি কিনে বাড়ির দিকে এগোল। বেলটা বাজিয়ে বেশ ম্রিয়মান মুখে দাঁড়িয়ে। মা এসে দরজাটা খুলেই ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “আয়, আয়, কী হলো আজ? বললি না তো ফোনে।”

মাথাটা নীচু করে, হাঁড়িটা যথাসম্ভব আড়াল করে ঘরে ঢুকলো অভ্র, “কী বলবো আর?”

মা মুখ দেখেই বুঝল হয়নি এবারও, এর আগেও তিনটে ইন্টারভিউ দিয়েছে অভ্র। এবার টায় বড্ড আশা করেছিল, “তুই বস, জল দি।” বলেই যেই রান্নাঘরের দিকে এগোতে যাবে, তখনই অভ্র বলল, “মা এটা রান্নাঘরে নিয়ে যাও ” বলেই হাঁড়িটা এগিয়ে দিল।

অভ্রর মা বেশ অবাক চোখে- “এসব আবার কী?”

“চাকরি পাওয়ার পর মা-র জন্য রাবড়ি আনবো না???? চাকরিটা… হয়ে গেছে।”

ঠিক এই মুহূর্তে মা-র মুখটা দেখবে বলেই সত্যিটা বলেনি এখনও।

-“তুই তখন তাহলে আমায় মিথ্যে।।।।।”

-“হ্যাঁ, তোমার মুখটা দেখতে হবে না?” মার গালটা আহ্লাদে টিপে দিল অভ্র।

-“বাঁদর, হতভাগা।।।”

*************

অভ্র বরাবরই এরকম, ভীষণ আমুদে, মিশুকে, অভ্র থাকলে আসরটা জমে যাবেই। অভ্রর বাবা সরকারী কর্মী, মা গৃহবধূ। অভ্র মা বাবার একমাত্র সন্তান, পড়াশুনোয় কোনকালেই খারাপ না, আর এখন তো চাকরিটাও জুটে গেল, তাই অভ্রর সাথে সাথে বাড়িতেও আজ খুশির আমেজ।

**************

রাত্রে, আজ অভ্রর অনারে মা লুচি করেছিল। লুচি অভ্রর ফেভারিট। বারো তেরোটা মত লুচি খেয়ে যখন অভ্র বিছানায় পড়ল, তখন ওর নড়াচড়া করাও দায়। লুচি, রাবড়ি, মিষ্টি, তরকারি সব খেয়ে নিশ্চিন্ত একটা ঘুম। ও হ্যাঁ সঙ্গে অ্যান্টাসিডও। এরপর কাজের জগতে ঢুকে পড়লে এমন নিশ্চিন্ত ঘুম আর ভাগ্যে আসবে না তা অভ্র জানে। তাই আজকের এই নিশ্চিন্ত আনন্দের রাতটা আর কোনদিনও ফিরবে না। আরামে চোখ বুজল অভ্র।

।।২।।

অফিসে এসেই ফর্মালিটিজ কমপ্লিট করে ঠিক করে দেওয়া ওর সিটটায় বসল অভ্র। একটা আলাদাই অনুভূতি হচ্ছিল ওর, বলে বোঝানো যায় না কেমন লাগছিল। ওর সাথে জয়েন করেছে আরও দুজন ছেলে, আলাদা আলাদা কলেজ থেকে। স্বভাবতই ওদের সাথেই কথাবার্তা বেশী, সায়ন আর নিখিল। সায়নের বাড়ি উত্তর কলকাতাতেই, শোভাবাজারের দিকেই। নিখিল থাকে দক্ষিণ দিকে, গড়িয়াহাটের কাছে। সায়নের সাথে চা খেতে উঠল অভ্র, নিখিল আবার চা টা খায় না। ওদের কিউবিকল থেকে বেরিয়েই সামনে একটা করিডর। করিডর থেকে সামনে বাগানটা দেখা যায়। ভীষণ সুন্দর এখানটা। কফি নিয়ে দুজনে মিলে কফিই খাচ্ছিল,সাথে একটু গল্প। অভ্রর বাড়ি থেকে ফোন আসায় সায়ন চলে গেল সিটে, অভ্রর মা এত টেনশন করেন, এই ফোন বারবার করার বাতিক টা ঐ জন্যই। মাকে আশ্বস্ত করে ফোনটা পকেটে পুড়ে ঘুরতেই ধাক্কাটা খেল অভ্র। একটা মিষ্টি সুবাস যেন নাকে এসে লাগল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখল একটা মেয়ে নীচু হয়ে হাতের অগোছালো হয়ে পড়ে যাওয়া কাগজপত্রগুলো গোছাচ্ছে, যার কারণ অভ্রই।

অভ্র তাড়াতাড়ি নীচে বসে কাগজগুলো গুছিয়ে দিতে দিতেই বলতে লাগল, “এক্সট্রিমলি সরি ম্যাম, আসলে আমি ওদিকে ফিরে ছিলাম তো, একদম বুঝতে পারিনি, প্লিজ কিছু মনে করবেন না, etc etc।।।।”

জিনিসগুলো গোছানো হয়ে গেলেও অভ্রর ক্ষমা চাওয়ার লিস্ট আর ফুরোচ্ছে না যেন, মেয়েটি এবার সরাসরি অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি কী কিছু বলেছি আপনাকে? প্লিজ এভাবে এত বলবেন না, ইটস অ্যাবসালুটলি ওকে।” বলেই হাতের জিনিসগুলো নিয়ে উঠে উল্টোদিকে চলে গেল। ডানদিকে বেঁকে অভ্রর দৃষ্টি সীমানার বাইরে না যাওয়া অবধি অভ্র তাকিয়েইছিল। একটু পরে অভ্রর যেন হুঁশ ফিরল, গিয়ে বসল সীটে।

সমুদ্রনীলের মত গভীর চোখদুটো, টকটকে ফর্সা গায়ের রঙ, নিখুঁত চোখ নাক ঠোঁট, ঠোঁটের কাছে স্পষ্ট তিলটা যেন সৌন্দর্য্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশী ফর্সা তাই চুলটাও লালচে একটু, ছিপছিপে চেহারায়, দীর্ঘাঙ্গী।

সিটে বসেও বেশ কিছুক্ষণ ঐ মেয়েটার কথাই ভাবছিল, পরনে দুধে আলতা রঙের একটা কুর্তি পরেছিল। চুলটাও অগোছালো ভাবে বাঁধা থাকলেও ভারী মিষ্টি লাগছিল। ইস, মেয়েটার নামটা জিজ্ঞাসাই করা হলো না। নিশ্চয় এই অফিসেই কাজ করে, তাহলে আবার দেখা হবে। তখন নামটা জিজ্ঞেস করে নেবে না হয় অভ্র।

বাড়ি ফেরার সময় সায়নকে আর বেশী কিছু বলল না অভ্র।

।।৩।।

(কয়েকদিন পর)

আজ চাকরি পাওয়ার দৌলতে বন্ধুদেরকে ট্রিট দিতেই হবে, তাই আজ আর মেট্রো ধরবে না, সায়নকে বেরিয়ে যেতে বলল অভ্র। হাতমুখে একটু জল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে লিফটের দিকে এগোতেই আজ আবার দেখলো মেয়েটাকে। এই ক’দিন আর অতটা খেয়াল করেনি। আজও ঐ করিডোরের দিক দিয়েই আসছে মেয়েটা। কিছু বলবে? একবার নামটা তো জিজ্ঞেস করতেই পারে। মেয়েটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে না? উফফ, কী মারাত্মক তাকানোটা। অভ্রর সবকিছু যেন একনিমেষে এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেল মেয়েটা। আর ও হাঁদার মতো তাকিয়েই রইল। লিফ্টটা চলে এসছে। লিফ্টের দিকে পা বাড়াল অভ্র।

*************

বন্ধুদের সাথে হইচই, হুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া, সেলফি তোলা এই সবকিছুর মাঝেই অভ্রর চোখে ভেসে উঠছিল মুখটা। মুখে যেন সবসময় একটা গোলাপী আভা ছড়িয়ে থাকে মেয়েটার। ঠিক পদ্ম ফুলের মত, আর ঐ চোখদুটো। নাহ, কিছুতেই মন থেকে সরছে না চোখদুটো। নিজের অজান্তেই একরাশ অকারণ ভাললাগায় ভাসছিল অভ্র। কাল মেয়েটার সাথে কথা বলতেই হবে।

*************

মা-এর সাথে অভ্র বরাবরই খুব ফ্র্যাঙ্ক, ইনফ্যাক্ট অভ্র কিছু বলার আগেই অভ্রর মা-ই সব বুঝে যায়।

সেই যে কলেজে পড়তেই রূপসা, ঐ একজনকেই এই জীবনে ভাল লেগেছিল অভ্রর। কিন্তু, এই ভালোলাগাটা কিছু না জেনে শুনেই ছিল। রূপসার পরিবার ভীষণ রকম গোঁড়া তো বটেই, উপরন্তু, প্রেম ভালোবাসা এসব ওদের পরিবারে নৈব নৈব চ। কিন্তু, এত কিছু তো জানত না অভ্র, রূপসার প্রেমে যখন প্রায় পাগল, তখন তো অভ্রর মা-ই ধরে ফেলেছিল সবটা। অভ্র কোনদিনই বলেইনি যে মেয়েটা আসলে রূপসা। খুব ভাল বন্ধু হিসেবে আরো বাকী বন্ধুদের সাথে রূপসারও যাতায়াত ছিলই বাড়িতে, ইনফ্যাক্ট এখনও আছে। কিন্তু, কোথা থেকে যেন মা বুঝেই গেছিল, ঐ মেয়েটা আর কেউ না, রূপসাই। অভ্র নিজেও অবাক হয়েছিল সেদিন। তারপর অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেছে। অভ্র সবদিন বন্ধুর মতো পাশে পেয়েছে ওর মা-কে, নীলিমা দেবীকে।

**************

(কয়েকদিন পর)

ক’দিন ধরেই দেখছেন তাই আজ আর কোন সংশয় না করেই অভ্রকে প্রশ্নটা করেই ফেললেন নীলিমা দেবী – “নাম কী মেয়েটার?”

অভ্র অন্যমনস্কভাবে মোবাইল সার্ফ করছিল, “জানি না গো, এখনও জিজ্ঞেসও করে উঠতে পারিনি।।।।” বলেই ওর সম্বিৎ ফিরল। খানিক থতমত খেয়ে অভ্র মার দিকে তাকিয়ে, “না।।।।।মানে।।।। তুমি এটাও।।।।” 

আর বেশী কিছু বলতে পারলো না ও, মা মাথায় একটা চাঁটি মেরে রুটি করতে উঠে পড়লেন।” আমি বুঝব না তো কী তোর পাশের বাড়ীর কাকীমা বুঝবে? যা যা কথা বল, কাল এসে নামটা বলিস খন।” 

অভ্রর এবারে কেন কে জানে খুব লজ্জা লাগছিল, নিজের অজান্তেই মুখের হাসিটাকে লুকোচ্ছিল ও কার থেকে কে জানে। মাথা নীচু করে খানিক মাথাটা চুলকে নিল অভ্র, হাতের মুঠো ফোনটা বাজল তখনই।।।।।।

“হ্যালো, হ্যালো, মামা, হ্যাঁ বলো?”

ব্যস, ছোট মামা, মানেই একরাশ খুশির আমেজ।

**************

-“এক্সকিউজমি।”

-“হ্যাঁ বলুন।” আজ মেয়েটা কফি খেতে এসছে। এই টাইমটায় তার মানে আসেই একবার।

-“আপনার নামটা তো সেই দিন থেকে এখনও জানাই হয়নি।”

-“ওহ আচ্ছা আচ্ছা, আমি রোহিনী, রোহিনী বসু। আপনি?”

-“আমি অভ্র দে, আপনি কবে জয়েন করেছেন?”

-“আমি জয়েন করেছি বছর দুই হলো, আপনি তো নিউ জয়েন তাই না?”

-“হ্যাঁ, আপনি কোন ডিপার্টমেন্ট?”

-“আমি তো পারচেজ, আপনি টেকনোলজি তো?”

কথায় কথায় দু’কাপ কফি শেষ হয়ে গেছিল কখন খেয়ালই নেই। টনক নড়ল টিফিনটাইমে সবাইকে বেরতে দেখে, “এই দেখুন, বকে বকে কত দেরী করে দিলুম।”

-“আরে আপনি লাঞ্চ করবেন তো, আজ আমার সাথে করতে পারেন।”

-“না না, সরি, আমি বাইরে খুব একটা খেতে যাই না। ইউ প্লিজ ক্যারি অন, বাই।”

চলে গেল রোহিনী, দমকা হাওয়ার মত। হাঁ করে তাকিয়েইছিল অভ্র, সায়ন পিছন থেকে এসে পিঠে মারল একঘা।

-“কীরে, এতক্ষন ধরে এখানে করছিস টা কী?”

-“আরে, একটা মেয়ের সাথে আলাপ হলো। খেতে চল, যেতে যেতে বলছি।”

(কিছুদিন পর)

রোহিণীর বাড়ি গল্ফগ্রিনে। নিজেদের বাড়ি, একমাত্র মেয়ে, বাবা রিটায়ার করেছেন, ইন্সিওরেন্সে ছিলেন, মা গৃহবধূ। বছর দুই হলো ও চাকরিতে ঢুকেছে।” এতদূর বলে থামল অভ্র। মা আর ছোট মামা হাঁ করে তাকিয়ে ওর দিকে। মুখে একটা অন্যরকম হাসি চাপার চেষ্টা স্পষ্ট।

-“তুই তো বায়োডেটা নিয়ে চলে এসছিস পুরো।” মামা এই কথাটা বলেই মুখে মুড়িটা চালান করলেন।

ছোটমামা যে পুলিশে আছেন, সেটা না বললে কেউ ভাবতেও পারবে না, এতই আমুদে হাসিখুশি মানুষটা। ছোট মামা তাই ছোট থেকেই অভ্রর সব আবদারের ঠিকানা।

।।৪।।

এই মাসখানেকে রোহিণীর সাথে অভ্রর বন্ধুত্বটা বেশ অনেকটাই এগিয়েছে। রোজ কফি খাবার টাইমে অন্তত ওরা একে অপরকে ফোন করে একসাথে একটু আড্ডা দেয়।

একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেই ফেলল অভ্র, কিন্তু অনুশোচনা হচ্ছিল সব শুনে বইকি। বেকার একটা মানুষের ঘা টাকে খুঁচিয়ে দিয়ে কী লাভ।

রোহিণীর দিদি মারা গেছে, বছর দুয়েক হলো। ‘মারা গেছে’ এই শব্দটা যদিও ব্যবহার করা উচিত না। কেসটা বন্ধ হয়ে গেছে। টাকাপয়সা, প্রভাব, প্রমান লোপাট যা হয় আর কী। রেপ কেস, মার্ডার। কোন সুরাহা হয়নি, আর ওর এখন সে ক্ষমতাও নেই। কেস রিওপেন করার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে কই? বিরোধীপক্ষের নাম বললো না, কিন্তু বিরোধীপক্ষ যে যথেষ্ট প্রভাবশালী সেটা বুঝল অভ্র।

বাবা মার মানসিক আর শারীরিক অবস্থা কেমন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সব মিলিয়ে ওর নিজের অগোছালো জীবনটা স্পষ্ট করে দিল অভ্রর সামনে।

**************

দেখে বোঝার উপায় নেই ওর ওপর দিয়ে এত ঝড়। সবসময় হাসিমুখে কথা বলে, অথচ আজ যখন ওর কথাগুলো বলছিল, ওর চোখের কোণের জলটা কিন্তু অভ্রর চোখ এড়ায়নি। যতই ও আড়াল করার চেষ্টা করুক।

অভ্র বাড়ি ফিরে বেশ কিছুক্ষণ আজ ভাবছিল, কিছুতেই সরাতে পারছিল না রোহিণীর মুখটা মন থেকে। আজ ভীষণ ইচ্ছে করছে, রোহিণীর হাতটা শক্ত করে ধরতে, যদি কিছু করতে পারতো ও ওর জন্য। অভ্ররই বা কতটুকু ক্ষমতা, কিন্তু স্বল্প ক্ষমতা দিয়েই আজ ইচ্ছে করছে রোহিণীর এলোমেলো জীবনটাকে যদি একটু সাজিয়ে তুলতে পারতো। যদি রোহিণীর চোখের জলটাই আটকাতে পারতো? যদি রোহিণীর কষ্টগুলোকে ভাগ করে নিতে পারত।বন্ধু হিসেবে নাকী অন্য কিছু? জানা নেই অভ্রর। কিন্তু, রোহিণীর জন্য কিছু না করে ও পারবে না, এটা বুঝে গেছে অভ্র। এটাই কী ভালোবাসা? ধ্যুস, এভাবে হুট করে ভালোবাসা যায় নাকী? কিন্তু।।। ভালবাসা তো এরকম হুট করেই আসে। দিনক্ষণ দেখে কী আর আসে? তাহলে? অভ্র কী রোহিণীর…না না , কী যে হচ্ছে ওর মধ্যে, ও নিজেই জানে না। আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে যখন ঘুমোল অভ্র, রাত প্রায় ১:৩০টা।

।।৫।।

মনে হয়, কান্ডটা ঘটিয়েই বসলো অভ্র। অভ্র কখনোই বোঝে না তেমন মনের জটিলতা, ও কিছু বোঝার আগে ওর মা বুঝতে পেরে যায় সবটা। এই যেমন এখন বুঝে ফেললো। বিগত কয়েকদিন ধরে নাকী অভ্র যতক্ষণ মার সাথে কথা বলেছে, তার ৪০% কথা রোহিণী সংক্রান্ত। আর রোহিণীর ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ওর চোখে মুখে একটা অদ্ভুত ঔজ্জ্বল্য আর ভাললাগার ছাপ থাকে। মা যদিও একটু বেশীই বাড়িয়ে বলছে সেও জানে, কিন্তু যাই হোক, মা কথাটা বলেছে কিন্তু ঠিকই।

সত্যিই, রোহিণীর ব্যাপারেই তো সবসময় ভাবছে, বলছে, তার মানে।।।। ইসস, এই দ্যাখো আবার কেমন ক্যাবলার মতন হাসছে, আবার কেমন লজ্জা লজ্জাও লাগছে। আবার ভালও লাগছে, ওই সিনেমাতে যেমন বলে পেটের ভিতর প্রজাপতি উড়ছে, ঐরকমই একটা ফিলিং। ওর দিকে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে সবসময়। 

মেয়েটা ফেসবুকও করে না, কোন মানে হয়? ধ্যুর। মা বলছে, দেরী না করে মনের কথা বলে দিতে। বলবে? কীভাবে বলবে? ও রাজী হলে একদিন তাহলে বাড়িতেও মা-র কাছে আনবে, তারপর ওর বাড়ি আর রোহিণীর বাড়ি মিলে।।।।।।। উফফ, হোল্ড অন, হোল্ড অন, এত্ত বেশী ভেবে ফেলে না অভ্র। ধ্যুস।

মা যখন পাশে আছে, ও সিওর বলবে, কালকেই।।।।।

*************

“তোমার মাথায় কতদূর কী চলছে, আমার জানা নেই , কিন্তু, এখন আমার অলরেডি মেসড-আপ লাইফে তোমায় এনে তোমার লাইফটা কীভাবে শেষ করি বলতো? তুমি তো সবই যেন। বাবা প্যারালাইজড, দুজনেরই বয়স হয়েছে, আমি আজ এখানে সেখানে ছুটছি, যাতে কেসটা কোনক্রমে রিওপেন হয়, একমাত্র আর্নিং মেম্বার আমি, এত সবকিছুর পর প্রেম করার মত সময় বা মেন্টালিটি কোনটাই নেই আমার। তোমার কোন প্রব্লেম নেই। প্রব্লেমটা আমার , তুমি প্লিজ ভুল বুঝ না।”

অভ্র সব শুনলো শুধু, আজ চারপাশটা বড্ড সুন্দর, মেঘলা আকাশ, ঝোড়ো হাওয়া, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, সব মিলিয়ে ভীষণ সুন্দর আজ দিনটা। অভ্র যেভাবে তাকিয়েছিল, সেভাবেই চেয়ে রইল, ও এরকমই কিছু একটা আনসার এক্সপেক্ট করেছিল, তাই ও একটুও অবাক হয়নি। মা-ই বলেছিল এরকম সম্ভাবনার কথা, এরকম পরিস্থিতিতে এটা বলাই স্বাভাবিক। 

আর অভ্র ওর এই দোলাচলের সময়ই ওর পাশে থাকতে চায়। ভাল সময়ে সুখের সময়ে তো সবাই ভালবাসতে পারে, দুঃসময়ে ক’জন থাকে পাশে? রোহিণীর পাশে থেকে যদি ওর লাইফের প্রব্লেমগুলোকে ভাগ করে নিতে পারে, ওর যুদ্ধের রাস্তায় একটু যদি ওকে সাহায্য করতে পারে, এর থেকে বড় ভালবাসার পরীক্ষা আর কী হতে পারে?

“আমি জানি, আমি বুঝি সবটা, এইরকম একটা সময়ে এগুলোই বলা স্বাভাবিক, তোমায় তো ভালবাসতে বলিনি আমি, আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে চাই, আমিও তোমার সাথে তোমার জন্য কিছু।।।।।। যাই হোক, তোমার পরে মনে হলে না হয়।।।।। ব্যস, আর কিছু চাই না আমি।”

গলাটা ধরে আসছিল অভ্রর, এমনিতে অভ্র খুব ইমোশনাল বরাবরই, বেশি কিছু আর বলল না ও। ওপাশের মানুষটাও চুপ, কিছু বলার থেকেও এখন বোধ হয় একটু নৈঃশব্দ্যই প্রয়োজন ছিল। চোখের ভাষাটা পড়ে নিচ্ছিল হয়তো রোহিনী, যেখানে কোন খাদ নেই, যাকে বিশ্বাস করা যায়, আস্থা রাখা যায় যার উপর। মাঝে কতটা সময় কেটেছে খেয়াল নেই ওদের, ফোনটা বাজতে সম্বিৎ ফিরল দুজনেরই।

“কাল আমি দিদির কেসের সব ডিটেলসগুলো দেব তোমায়, দেখো একটু যদি কিছু হয়, তোমার মামা তো… আর আমি কাল থেকে ছুটি নিচ্ছি আসলে, ক’দিনের মধ্যেই ফিরে আসব।”

“আই লভ ইউ”, “ভালবাসি” এ ধরনের কোন শব্দ বলার প্রয়োজন হয়নি ওদের দুজনের কারোরই। কিন্তু তবুও বুঝে নেওয়া সবটুকু, একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের জায়গা খুঁজে পাওয়া যেন। ভাল লাগছিল অভ্রর। আজই একবার ছোটমামার সাথে কথা বলতে হবে।

************

(ক’দিন পর)

ছোটমামার আসার কথা ছিল না আজ, তাই স্বভাবতই বাড়ি ফিরে হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়ার আনন্দ। ছোটমামাই অভ্রর পছন্দের ফিশফ্রাই এনেছে, একসাথে খাওয়াদাওয়া হলো। আজ থাকবে ছোটমামা। এবাড়িতে সবাই-ই খাদ্যরসিক, আর ছোটমামা আসলে তো কথাই নেই। তার মানে আজ রাত্রেও জমাটি রান্না।

সন্ধ্যের দিকে বসল অভ্র ছোটমামার সাথে, ফোনে আগেই বলেছিল সব।

-“কি বুঝছ গো? কেসটার ব্যাপারে।।।।”

-“আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, খোঁজখবর নেওয়া আমার হয়ে গেছে, ফাইলটা এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি, দু -এক দিনের মধ্যেই এসে যাবে, রেপ দেন মার্ডার, কিন্তু ইনফ্লুয়েন্সিয়াল লোক, পুরোটাই ধামাচাপা পড়েছে তাই। যে সমস্ত প্রমাণ থানা অবধি এসেছিল, সেটা আর কোর্ট অবধি পৌঁছয়নি। আর ভিকটিমের বাড়ির কন্ডিশন অতি সাধারণ, সুতরাং লড়তে পারেনি, খুব স্বাভাবিক। এখন বক্তব্যটা হচ্ছে, আমি এখন যে লেভেলে রয়েছি, আমি কেস রিওপেন করাতেই পারি, এবার কেসটা তুই রিওপেন করবি নাকি ওই রোহি…”

-“না না, ওকে আর বিপদে টানার দরকার নেই, আমিই করাবো।”

-“ওয়েল, এখন ব্যাপার হচ্ছে, যার এগেনস্টে এই কেস সে কিন্তু তোদের কোম্পানীরই সি ই ও। এবার বল এখনও করবি কেস?”

-“হোয়াট? কী বলছো কী তুমি?”

-“ঠিকই বলছি, নরেশ কপোডিয়া, তোদের কোম্পানীর সি ই ও, তাই তো? এবং এখনও নিজের প্রভাবের জোরে দিব্যি আছে, কেসও বন্ধ করিয়ে দিয়েছে, ওর কিছু হয়ও নি।

আমি কেস রিওপেন করতেই পারি, কিন্তু তুই ভেবে বল।”

-“ওহ মাই গড! এত বড় একটা কথা রোহিণী আমায় বলল না কেন? ও কী ভাবল, ওটা শুনলে আমি পিছিয়ে আসব? এত ভীতু অভ্র নয়। তুমি কেস রিওপেন করো মামা, আমায় কী কী করতে হবে বলো। আর প্লিজ, মা-কে এসব কিছু বোলো না এখন। বেকার টেনশন করবে মানুষটা।”

-“বেশ ভাগ্নে, তুমি যখন মনস্থির করেই ফেলেছো, তবে তাই হোক। মা বাবার একমাত্র…”

-“দাঁড়াও মামা, একটা ফোন এসেছে।”

উঠে গেল অভ্র।

।।৬।।

আশ্চর্য তো মেয়েটা, ছুটিতে আছিস ঠিক আছে, তাই বলে ফোন অফ রাখবি? এ কেমন কথা। আর এখানে অভ্র কেস নিয়ে পাগল হচ্ছে। মাত্র ছয় মাস আগে জয়েন করেছে অভ্র, এরপর হয়তো ওর চাকরিটাও আর থাকবে না। আর যার জন্য এতো কিছু তাকে দেখো। তাও কটাদিন মেসেজের রিপ্লাই করেছে অনেক পরে, আজ তো পাত্তাই নেই এখনও। পরশু জয়েন করার কথা। আসুক একবার, ওর হচ্ছে।

করিডর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে রুমটা আজ প্রথম দেখল ও, নরেশ কপোডিয়ার। এ এরকম কে ভেবেছিল? সবথেকে অবাক লাগছে, রোহিণীর দিদির সাথে এমন ঘটার পরেও ও কীভাবে এখানে চাকরিটা কনটিনিউ করল? হয়তো ওর দিদির ঘটনার পর জয়েন করেছে, তাই হবে। হয়তো তথ্য প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টাতেই। কিন্তু, এত বড় একটা কথা ও বললো না অভ্রকে? এখানেই খটকা লাগছে, আর এটা জানার পর থেকে ওর সাথে অভ্রর আর কোন কথাই হয়নি। মেসেজও না।

এদিকটা বড় একটা আসে না অভ্র। এদিকে ওদের কোন কাজও থাকে না, আর নতুন বলে অত সকলকে চেনেও না তেমন এখনও। এদিকটাতেই বসে রোহিণী বলেছিল। একটু ঘুরে এল ওদিকটা।

এদিকের এই রুমটা কবে থেকে বন্ধ পড়ে আছে।।।।

ফোনটা বাজছে, বের করে দেখল ছোট মামা।

-“হ্যাঁ মামা।।।।।।। হ্যাঁ।।।।।।।

**************

অভ্রকে রোহিণী বলেছিল অফিসের কেউ এসব জানে না, ও-ও যেন শেয়ার না করে কিছু, সেই, এসব কথা শেয়ার করার মতও না। মামা ফাইলটা পাঠাচ্ছে। তাই অভ্র বললো, ওর পার্সোনাল মেল আইডিতে পাঠাতে। কেসটা রিওপেন হয়েছে, মামা ASAP অ্যাকশন নেবে, আজই হয়তো। নয়তো যা প্রভাব এর, যে কোন সময় পাখি ফুড়ুৎ হয়ে যেতে পারে। তাই যা করার খুব তাড়াতাড়ি আর গোপনে করতে হবে।

**************

সিস্টেম থেকে আর নিজের জিমেলটা খুলল না অভ্র, ফোন থেকে খুলল।

রুক্মিণী বসু। রোহিণীর দিদির নাম তাহলে রুক্মিণী? ও বরাবর দিদিই বলে এসেছে, তাই নামটা আর জানা হয়নি অভ্রর কখনো। ডিটেলসটা পড়তে পড়তে লাস্টে গিয়ে চোখটা আটকে গেল অভ্রর। এ কী দেখছে ও? এটা কী করে সম্ভব? এটা তো রোহিণীর ছবি। তাহলে কী ওরা যমজ? না না, তা কী করে হয়, তেমন হলে তো ও জয়েনই করতে পারত না এখানে, তখনই চিনে যেত ওকে। তাহলে? এটা কীভাবে তাহলে।।।।।

ফোনটা করল রোহিণী কে, ফোন নাম্বার ডাজ নট এগ্জিস্ট। মানে টা কী?

আরো বার কয়েক ফোন করল, একই কথা বলছে।

তখনই একটা জটলা, ঝামেলার আভাস কানে এলো। সবারই উৎসুক দৃষ্টি সে দিকেই। 

অফিসে পুলিশ এসেছে, ওয়ারেন্টও আছে। তার মানে ছোট মামা কাজ শুরু করে দিয়েছে, কিন্তু।।।। ওর তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

**************

বিগত দুঘন্টায় অভ্রর জীবনে একটা ঝড় বয়ে গেল, যে ঝড়ের কোন পূর্বাভাস ওর কাছে ছিল না। আর কী ঘটছে আর ঘটেছে ওর সাথে তাও ওর ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রুক্মিনী বসু বছরখানেক আগে এই অফিসেই চাকরি করত, পারচেজ ডিপার্টমেন্ট। এই অফিসেই নরেশ কপোডিয়ার লালসার শিকার হয়। প্রমাণ লোপাট করতে রেপের পর খুন। ঘটনাস্থল ওই ঘরটাই, যে ঘরটার সামনে দিয়ে আজ ও এল, একটা খুব চেনা সুবাস ওকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। তখন মাথায় আসেনি, এখন বুঝতে পারছে ওই সুবাসটাই ও ওর কাছে থাকলেও পেতো।

রোহিণী বসু নামে কোন মেয়ে পারচেজ ডিপার্টমেন্টে কাজই করে না।

রুক্মিনীর ঘটনাটা ঘটার পরও টাকা, আর প্রভাবের জাঁতাকলে পিষে সবাই চুপ, কেউ একটা কথাও বলেনি, আজ যদি কেসটা রিওপেন না হতো, তাহলে কোনদিনই নরেশ কপোডিয়াকে আবার অ্যারেস্ট করা সম্ভব হতো না, কিন্তু, এবার আর কোন ফাঁক যাতে না থাকে, অভ্রর ছোটমামা সেটা ঠিক দেখবে।

কিন্তু, যার কথায় অভ্র কেস রিওপেন করলো, তার কোন অস্তিত্বই নেই, এমনটাই সকলের মত, এটা অভ্র কি করে মেনে নেবে?

ছোটমামাও বলল, দেখ ফাইল এও লেখাই রুক্মিণী ওর মা বাবার একমাত্র সন্তান ছিল। রোহিনী নামে কারোর কোন উল্লেখই নেই। আমি তোকে সেদিন এটাই বলতে গেলাম, যে রোহিনী কী খুড়তুতো জাড়তুতো কেউ?রুক্মিণী তো একমাত্র মেয়ে, কিন্তু তোর ফোন এসে যাওয়ায় তুই উঠে গেলি।

তাহলে, এতগুলো মাস ধরে যার সাথে কথা বলল, যাকে অভ্র ভালোবাসল, তার কোন অস্তিত্বই ছিল না, কে ছিল ও তবে? ও-ই রুক্মিণী। রোহিনী নামটাই ভুয়ো তার মানে। রুক্মিনীর আত্মা? ধ্যুর, এসব অভ্র বিশ্বাস করে না, কিন্তু এখানে তো আর কোন যুক্তিই খাটছে না। অভ্র এখনও কেমন একটা ঘোরের মধ্যে। সত্যিই তো, ও ছাড়া আজ অবধি কেউ তো রোহিণীকে দেখেইনি, শুধু ও-ই রোহিণীর সাথে কফি খেত, ঠিক সায়ন চলে যাওয়ার পর। ওদের কতবার বলেছে, ওরা বুঝতেই পারেনি। কেউ যখন থাকত না, তখনই রোহিণী থাকত, আর যখন সবাই থাকতো, রোহিণী থাকত না। তাহলে ফোন, এসএমএস?

ফোনটা তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোন এসএমএস পেল না অভ্র। কিন্তু, এসএমএস তো ছিল, সত্যি ছিল, কোথায় গেল সব? ফোন নম্বর টার নাকি কোন অস্তিত্বই নেই, কিন্তু ও তো ফোন করেছে, তাহলে এসব কীভাবে।।।।।

**************

রোহিণী কিংবা রুক্মিণী যেই হোক, তার বলা বাড়ির অ্যাড্রেস এ পৌঁছাল যখন অভ্র, তখন বিকেল ৪:৩০টা প্রায়। রথীন বসু, নেমপ্লেট লেখা, হ্যাঁ, ফাইলেও এই নামটা দেখেছে,নাম টা বড় চেনা যেন। সঙ্গে ছোট মামা আর আরও একজন পুলিশও ছিল। 

বয়স্ক ভদ্রলোক সত্যিই প্যারালাইজড, সেরিব্রাল এর পর থেকেই।।।।

বাড়ির কর্ত্রী মিত্রা বসু, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টে বেশ অসুস্থ দেখেই বোঝা যায়। তাও এই অবস্থাতেও সবাইকে বসিয়ে কথাবার্তা, চা পান, কোন কিছুতে ত্রুটি রাখলেন না। হঠাৎ এত বছর পর কেস রিওপেন কীভাবে, অবাক উনিও। অভ্র শুধু খুঁজছিল রুক্মিনীর ঘরটা।আর এই মানুষ গুলো ও খুব চেনা ওর, কিন্তু এই মুহুর্তে ঠিক মনে আসছে না |

সব শুনে রুক্মিনীর মা-ও বললেন,”তোমার নিশ্চয় কোন ভুল হচ্ছে বাবা, রোহিনী নামে আমাদের পরিবারে কেউই নেই কোনদিন। রুক্মিণীই আমাদের একমাত্র মেয়ে ছিল। সাধ করে মেয়েটাকে অনেক লেখাপড়া শেখালাম, ভাল চাকরিও পেল। কয়েকমাস যেতে না যেতেই ও বলতো, ঐ লোকটা ভীষণ বিরক্ত করছে। ফোনে, এসএমএস-এ, সামনে সামনি, ইচ্ছাকৃত সন্ধ্যের পরও কাজের নাম করে আটকে রাখা, তখনই একবার পুলিশে কমপ্লেন করলে হয়তো এতবড় একটা।।।।।।”

আর কিছু শুনতে পারছে না অভ্র, সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে, সবটা। ওখান থেকে উঠে খুঁজতে লাগল এদিক ওদিক, ওর ‘রোহিণী’কে যাকে ও ভীষণ ভীষণ ভালবাসে, আর সবাই কিনা বলছে, রোহিণী কখনো ছিলই না! কেউ তো ওকে বিশ্বাসই করছে না। কিন্তু, ও তো জানে ও কোন মিথ্যে বলছে না।

রুক্মিনীর ঘরটায় ঢুকল অভ্র। কী পরিপাটি করে সাজানো, ওর খাতা বই, গল্পের বই, লেখার ডায়েরী, ওর আঁকার খাতা, দেওয়ালে টাঙানো ওর ছবিগুলো, এই সবকিছুর মধ্যেই এই ক’মাসের জন্ম নেওয়া সদ্য প্রেমের চারাটা খুঁজছিল অভ্র, ওর ‘রোহিণী’কে, তার মানে আর কখনোই আসবে না ও ওর সাথে কফি খেতে। কাজ তো শেষ। কিন্তু অভ্রই কেন???? এবার যে অভ্র ওকে ছাড়া থাকতে পারবে না, এবার কী হবে? 

চোখের জলে ঝাপসা হয়ে গেছে চারপাশটা, এবার ওকে যেতেই হবে, আর কতক্ষণ । বাইরে আকাশ কালো করে তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝড়ও উঠেছে ভালোই। আলো আঁধারিতে আবার একবার ওটা রোহিণী না? এই তো তুমি এসেছ, সবাইকে বলব এবার, আছ তুমি। কানের কাছে শুধু যেন রোহিণী ওর মিষ্টি গলায় বলল, “ভালবাসি। দেখা হবে হয়তো আবার কোনদিন, অন্য কোথাও, ভাল থেকো অভ্র, ডায়রিগুলো নিতে ভুলো না, থ্যাংক ইউ মাই লাভ।।।।”

অভ্র দাঁড়িয়ে রইলো একা… নিরন্তর কোনো এক অপেক্ষায়… 

——**********——

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

মুক্তি

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, আকাশ তখন থেকে ঠায় বসেই রয়েছে ঘাটে। এখন বাঁধানো ঘাট থেকে করিডোর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া অনেকটা সহজ

Read More »

বন্ধু হবি চল

বাক্সপেটরা নিয়ে স্টেশনেই বসে ছিল নয়না, বৃষ্টি পড়েই চলেছে, মুষলধারায়। বাবা বলল আরেকটু অপেক্ষা করতে, এত বৃষ্টিতে তো ছাতাও হার মানবে, আর বেরিয়ে রাস্তাও অজানা

Read More »

ক্লিক

।।১।। -“মালিনী, কালকের মিটিংটা কখন ফিক্স করেছ? -“ম্যাম, সকাল ১১টা।” -“ওকে, কনফার্মেশন পেয়ে গেছ?” -“ইয়েস ম্যাম।” -“ওকে গুড। আর।।। এক মিনিট।।।” টেবিল থেকে ফোনটা তুলে

Read More »

শিক্ষা

।।১।। দাপুটে, বদরাগী, মেজাজি এই সব কটা বিশেষণই বেশ ভালো যায় মিসেস বোসের সাথে। রেণুকা বোস আর অমরনাথ বোস সানফ্লাওয়ার এপার্টমেন্টে ১২০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাট 2c

Read More »

বিদায়

।। ১।। রীতিমত জোর করেই নন্দিনীকে পাহাড়ে নিয়ে এলো সঙ্গীতারা। আসার ইচ্ছে তো ছিল না ওর একদমই, শরীর সাথ দিলেও মনটা কোনোভাবেই সাথ দিচ্ছে না।

Read More »

মামাবাড়ি

।।১।। একবার নিজের ঘড়িটা স্টেশনের ডিজিটাল ঘড়ির সাথে মিলিয়ে নিল মিনি, সময় তো হয়ে গেছে। উল্টো দিকের দুটো মেট্রো এসে গেল কিন্তু এদিকের মেট্রোর কোনো

Read More »

Share with