বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, আকাশ তখন থেকে ঠায় বসেই রয়েছে ঘাটে। এখন বাঁধানো ঘাট থেকে করিডোর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া অনেকটা সহজ হয়েছে ভক্তদের। ওই বাঁধানো সিঁড়িতেই বসেছিল ও, একা। আশপাশের মানুষগুলোর ব্যস্ততা দেখছিল, সবাই ছুটছে, দৌড়াচ্ছে, নিজেদের নিয়ে খুব ব্যস্ত সকলে, কেউ পাশেরজন কে ধাক্কা মেরে চলে যাচ্ছে, কেউ পাশের লোককে পিছনে ঠেলে সামনে এগোতে ব্যস্ত, কেউ ঘাটের কাছেই নিজের অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিয়ে নিজের ভার হালকা করতে ব্যস্ত আরো কত কি। সূর্যের আলো নদীর জলে পড়ে এতক্ষণ মুক্তোর মতো ঝলমল করছিল জলরাশি, চোখ দুটো জ্বলছিল, এখনো জ্বলছে, তবে আলোর ঝলসানিতে নয়, ধোঁয়ায়। পাশের মণিকর্ণিকা ঘাট থেকে অবিরাম এইদিকে হাওয়ায় উড়ে আসছে ধোঁয়া, অনবরত জ্বলে চলেছে একটার পর একটা চিতা, আর সেই সৎকারের ধোঁয়াই উড়ে আসছে এইদিকে।
পল্লবদাকে পাঠিয়ে দিয়েছে গেস্ট হাউস এ, একা থাকতে ইচ্ছে করছিল ওর, কিন্তু চোখ থেকে জলটা যেন বেরোচ্ছেই না, পাথর হয়ে গেছে সবকিছু। বুকের ভিতর একটা শুন্যতা যেন গ্রাস করে নিচ্ছে একটু একটু করে সবকিছু, জলটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বার বার এটাই মনে হচ্ছে ওর, “আমার সাথেই কেন?”
*****
সামনেই একটা নৌকা ভিড়ল ঘাটে, দশাশ্বমেধ ঘাটের আরতি দেখতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সওয়ারি জোগাড় করছিল মাঝবয়সী মানুষটা, চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু তাও বাঁচার তাগিদের কাছে সেই ক্লান্তি চাপা পড়ে গেছে।
মন্দিরের কাছে করিডোর জুড়ে মানুষের ভিড়, একটা সুর বেজে উঠল, মহাদেবের স্তুতি শুরু হলো, কি অপূর্ব সে রাগ, আলোয় ঝলমল করছে ঘাট, ঠান্ডা হাওয়া আর সাথে নাম না জানা অপূর্ব গানের সুর, মনটা যেন একটু একটু করে ডুবতে চাইছে এই সবকিছুর মাঝে। আবার জ্বালা করছে চোখটা বড্ড বেশি, চোখ গেল আবার ঐদিকে, দাউদাউ করে জ্বলছে, পুড়ে শেষ হচ্ছে একটু একটু করে সবটা, নাকি এই সমাপ্তি কোনো এক নতুন শুরু ?
*****
হঠাৎ চোখ গেল, উদাস শূন্য দৃষ্টি নিয়ে ঘাটের নীচের দিকে বসে আছেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক, বয়স মেরে কেটে ৫০ এর কোঠায় হবে, অন্তোষ্টিক্রিয়া শেষ হয়েছে বেশিক্ষণ হয়তো হয়নি, মাথাটা একটু একটু করে নত করে নিলেন, চোখের জল মোছার জন্য। মানুষটার আশেপাশে কেউ নেই, একাই বসে আছেন।
খুব ইচ্ছে করল একবার গিয়ে কথা বলতে, কিন্তু এরকম একটা সময়ে অজানা অচেনা লোকের সাথে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা কার ই বা থাকে, কেনই বা কথা বলবেন উনি ? কিন্তু আকাশ নিজেই বা কেন কথা বলতে চাইছে ? আসলে মনে মনে যেন ও মাপার চেষ্টা করছে, তুলনা করার চেষ্টা করছে ওর যন্ত্রণার থেকেও বেশি গভীর, বেশি ক্ষত কার মনে আছে ? হয়তো সেই জন্যই খুঁজছে চোখ দুটো এদিক ওদিক, যদি কেউ বলে, ওর কষ্টটা তো কম, তাহলে কি একটু শান্তি পাবে ও ?চোখ দুটো বুজলেও সেই এক দৃশ্য, চোখ খুললেও সেই একই ঘটনা বার বার ভেসে আসছে চোখের সামনে। ও কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি এরকম কোনো কিছুর সম্মুখীন হতে হবে ওকে কোনোদিন ও। বারবার ফোনটা ভাইব্রেট করছে, ফোনটার স্ক্রিনে দেখল, ফটোগ্রাফার বারবার কল করছে, আজই তো বিয়ের অ্যাডভান্স টাকাটা দেওয়ার কথা ছিল, সত্যিই তো। উফফ ! ফোনটা কেটে একপ্রকার ছুঁড়ে ফেলে দিল পাশের সিঁড়িতে। মাথাটা নীচু করে দুহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে নিল আকাশ, আর পারছে না নিজেকে ধরে রাখতে।
নিজের সবথেকে যন্ত্রণার কথাটা যেখানে নিজেই এখনো মানতে পারছে না, কি ভাবে বার বার কথাগুলো বাইরের লোককে বলবে ? কি কৈফিয়ত দেবে ? বার বার বাজছে ফোনটা, ধরল এবার।
-“হ্যাঁ বলুন। “
-“—-“
-“ক্ষমা করবেন, বিয়েটা হচ্ছে না। তাই বুকিংয়েরও কোনো প্রয়োজন নেই এখন। সরি। আর প্লিজ বার বার কোনো অফার পাঠিয়ে ফোন মেসেজ হোয়াটস্যাপ মেইল এসব করবেন না। এটা অনুরোধ। রাখলাম। ” কথাগুলো কোনোক্রমে বলে ফোনটা কেটে দিল আকাশ। সামনের আঁধারে মেশা ওপারের নৌকাগুলো দেখার চেষ্টা করল ও, তখনই ওপাশ থেকে একজনের উপস্থিতির আভাস। একটা মেয়েলি কণ্ঠস্বর ধরা গলায় বলল, “একটু জল পেতে পারি ?”
ঘোলা চোখ দুটো মুছে এতক্ষণে পাশে তাকাল ও, খানিকদূরেই বসে আছে মেয়েটি, বয়স বেশ কম, মেরেকেটে ২৩-২৪ হবে হয়তো। পরনে অশৌচের সাদা শাড়ি, অবিবাহিত নাকি বিধবা বুঝতে পারল না আকাশ। মেয়েটির কথায় মনে পড়ল পল্লবরা ব্যাগটা ওর কাছেই ছেড়ে গেছিল, তাতেই জলের বোতলটা দেখা যাচ্ছে, সেটা দেখেই মেয়েটা জল চাইল। ওর ফোনের কথা শুনে বুঝতে পেরেছে বাঙালি, তাই বাংলাতেই বলল। ও মাথাটা নেড়ে জলের বোতলটা বাড়িয়ে দিল মেয়েটার দিকে।
মেয়েটির চোখে মুখে যেন এক অদ্ভুত শান্ত ভাব, এত গভীরতা চোখ দুটোয়, এইটুকু বয়সে এত ম্যাচিউরিটি সহজে দেখা যায় না। আর সবথেকে বড় কথা, একাই বসে আছে, আশেপাশে এখনো অবধি তো কাউকে চোখে পড়ছে না। মেয়েটি জল খেয়ে বোতলটা এগিয়ে দিলো,একইরকম নিষ্প্রভ, মেয়েটার হাত থেকে বোতলটা নিতে নিতে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল আকাশ, ” আপনি কি একাই… না মানে… “
“হ্যাঁ, স্বামী সন্তান মা কে দাহ করার পর আর কেই বা থাকবে বলুন পাশে বসার জন্য, বাবা আছেন, অসুস্থ, বাড়িতে রয়েছেন, আত্মীয় স্বজন আছেন, শ্বশুর শাশুড়ি আগেই চলে গেছেন, কাজেই আর সেরকম কেউ নেই, তাই একাই।”
“স্বামী সন্তান মা সব একসাথে? মানে কিভাবে?”
“জন্মদিনের পার্টির ভেন্যু কোথায় হবে সেই নিয়ে অনেক অশান্তি চলছিল কদিন ধরেই, বলেছিলাম এত দূর রাত্রে ড্রাইভ করে শুধু জন্মদিন সেলেব্রেট করতে যাওয়ার কি দরকার ?কাছেও তো করা যায় সেলিব্রেট, শোনেনি। একটা এক্সিডেন্ট আমার সবকিছু এদিক ওদিক করে দিল, অথচ কি আশ্চর্য আমি বেঁচে গেলাম দিব্যি ! আমার নিজের মা, আমার সন্তান, আমার স্বামী সব হারিয়ে ফেলেছি এক লহমায়, নিজের বলতে বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। “
কথাগুলো যেন বলতেই চাইছিল কাউকে, অনেকক্ষণ পর যেন কথা বলল, গলাটা ধরা। কি বলবে খুঁজে পেল না আকাশ, একে কি বলে সান্ত্বনা দেওয়া যায়, আদৌ সান্ত্বনা দেওয়া যায় কি ?
“সরি, আমি তো আসলে…”
“সরি বলার কিছু নেই, আমার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে, আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু যে যাওয়ার সে তো যাবেই, তাকে আটকে রাখে কার সাধ্যি ? সবকিছু আমাদের হাতে তো থাকে না, আর সেটা যত তাড়াতাড়ি মেনে নিতে পারা যায় ততই জীবনের পথ চলতে সুবিধা হয়। আমার হাতে যতটা ছিল ততটাই করেছিলাম চেষ্টা, কিন্তু যা ভবিতব্য তা খণ্ডন করার আমি কে ? তাই তারা চলে গেছে, আর আমি রয়ে গেলাম।”
কথাগুলো শুনে কিছু বলতে পারল না আকাশ, এইটুকু মেয়েটার জীবনদর্শন বোঝার ক্ষমতা সবার হয়তো নেই, আকাশ ও তো এটাই ভাবছিল এতক্ষণ ওই-ই কেন? ওর আর সঞ্চয়িতার বিয়েটা ঠিক হয়েছিল কিছুদিন আগেই, সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছিল, সব কিছু কোন ঠিকঠাক চলছিল, বাড়ির সবাই খুব খুশি ছিল, ও নিজেও ভাবেনি বাড়িতে সকলে এত ভালোভাবে ওদের সম্পর্কটা মেনে নেবে, কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে গেল? কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ, আজ থেকে এক সপ্তাহ আগেও সঞ্চয়িতা আর ও অফিস থেকে ফিরে এইসময় ফোন এ একসাথে বিয়ের প্ল্যানিংই করছিল। তারপরই কি যে হয়ে গেল ? কদিন ধরেই ধুম জ্বর, প্রথমে অতটা পাত্তা যায়নি আকাশ, ছোট খাটো কিছু ভেবেই উড়িয়ে দিয়েছে, অফিস এ কাজের প্রেসার এ অত ভাবার সময় ও পায়নি, কিন্তু যেদিন অবস্থার অবনতি হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো সঞ্চয়িতা, রাতের ঘুম সেদিন থেকেই ছুটে গেছিল আকাশের। তাও এমনটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি ও, ডেঙ্গু তো বহু লোকের হয়, সবাই সেরেও যায়, কিন্তু সঞ্চয়িতা সারল না, দুই পরিবারকে, আকাশকে একা করে দিয়ে চলে গেল কাল রাত্রে। এখনও অব্দি যেন কিছু মাথাতেই ঢুকছে না এভাবে কি হয়ে গেল? কিভাবে সব কিছু তছনছ হয়ে যেতে পারে? “
ওর ভাবনায় দাঁড়ি টানল সামনের মাঝিটা, বেশ চিৎকার করে ডাকাডাকি শুরু করেছে, তখনই মেয়েটার কথাগুলো কানে বাজল, সত্যিই তো সব কিছু তো নেই আমাদের হাতে। তাও মেনে নিতে পারছে কি ও জীবনের চরম সত্যটা?
আবার বলল আকাশ,”আচ্ছা জন্মদিন কার ছিল?”
“আমার।” শূন্য দৃষ্টি নিয়ে বলল মেয়েটা। আর কিছু বলতে পারলো না আকাশ, মুখ ফিরিয়ে একটু শান্তির খোঁজে জলের দিকে তাকাল, ওর থেকে যন্ত্রণার দাঁড়িপাল্লায় এই মেয়েটার পাল্লাটা অনেক অনেক ভারী, তাও এ আজ ও ভেঙে গুড়িয়ে যায়নি।” বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইল খানিকক্ষণ…
******
কতক্ষণ কেটে গেছে কে জানে, ঘাটে লোক ধীরে ধীরে অনেক কমে গেছে, প্রায় একদিন হতে চলল ও এভাবে বসে আছে, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই তেমন, শুধু মণিকর্ণিকা ঘাটে কোনো বিরতি নেই, দাউ দাউ করে জ্বলে চলেছে চিতার লেলিহান শিখা। ফোনটা সেই তখন থেকে সিঁড়িতে পড়েই আছে, তুলে সময়টা দেখতে স্ক্রিনটা অন করল আকাশ, ওর আর সঞ্চয়িতার ছবিটা ডিসপ্লেতে জ্বলজ্বল করে উঠল, আর সাথে ওর বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল আবার, কিন্তু পরক্ষণেই মনে এই ভাবনাটাই এলো, কিছু ছাড়তেও জানতে হয়, ইচ্ছে না থাকলেও। ফোনটা ব্যাগের মধ্যে ঢোকানোর জন্য ব্যাগটা নিতে যেতেই হাত লাগল ব্যাগের মধ্যে রাখা ঘড়িটায়, বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। তালেগোলে ভুলেই গেছিল ঘড়িটার কথা, শেষ যেদিন ঘুরতে বেরিয়েছিল, এক সেট চুরি কিনে ট্রাই করার সময় হাত থেকে ঘড়িটা খুলে আকাশকে রাখতে দিয়েছিলো সঞ্চয়িতা। ব্যাস, সেই শেষ বেরোনো, তারপরেই তো এইসব… ব্যাগ থেকে ঘড়িটা বের করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো করে হাত বোলাল আকাশ। এটা ওদের প্রথম লাভ এনিভার্সারিতে আকাশই ওকে গিফট করেছিল, সবসময় এটাই পরত সঞ্চয়িতা।
নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে লাভ নেই, সেটা ও পারছেও না না, চায় ও না হয়তো, ব্যাগ এ ঢোকাতে গিয়ে-ই দেখল সামনের সেই ভদ্রলোক ওর দিকেই দেখছে। দৃষ্টিটা কেমন যেন, মুচড়ে উঠল বুকের ভিতরটা। ও কিছু বলার আগেই এগিয়ে এলো ওর দিকে, চলনটাও কেমন যেন, ঠিক সাবলীল নয়। আকাশ কি বলবে কিছু খুঁজে পেলো না, ওর কিছু বলার আগে নিজেই জিজ্ঞাসা করলেন, “নাম কি তোমার ?”
ঐপ্রান্ত থেকে বাংলায় সংলাপ আশা করেনি আকাশ, একটু যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল, কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে উত্তর দিল, “আকাশ বসু। “
“আকাশ…” আরেকবার ওর নামটা ওর সামনেই উচ্চারণ করলেন,তারপর অন্যমনস্ক ভাবে সামনের দিকেই তাকিয়ে বললেন, “আমার ছেলে তোমার মতোই, হয়তো এক দুই বছরের এদিক ওদিক হবে, তোমার মতোই গড়ন, তোমার মতোই লম্বা ফর্সা, চশমা আছে কি তোমার ?চশমা পরলে তো যে কেউ তোমায় টুবাই বলে ভুল করবে। লোকে বলে না পৃথিবীতে একইরকম দেখতে সাতজন মানুষ হয়, তোমার আর টুবাই এর ক্ষেত্রে হয়তো এটাই প্রযোজ্য।”
ভদ্রলোকের চোখ দুটো চিকচিক করছিল, না চেয়েও জিজ্ঞাসা করেই ফেলল আকাশ, “আপনি এখানে অনেকক্ষণ থেকেই বসে আছেন দেখছি, মানে কার…”
ভদ্রলোক চোখদুটো মুছে নিলেন, চোখ দুটো অসম্ভব লাল, ক্লান্ত, দেখে বড় মায়া লাগছিল আকাশের, প্রায় ধূসর চুলগুলো উস্কোখুস্কো, মুখে হালকা পাকা দাড়ি, বাবার কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ।
ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ” টুবাই, গতকাল মারা গেছে সকালে, আমার বড় ছেলে, দাহ করে বসেই আছি তখন থেকে, বাড়িতে ছোটটা আর আমার স্ত্রী আছে। ওই মানুষগুলোকেও তো আমাকেই সামলাতে হবে, তাই এবার যেতেই হবে। “
খানিক থম মেরে বসে রইল আকাশ, কি বলবে ? বলার আছেই বা কি? বলার মতো কিছু শব্দ হয় কি?”
উনিই আবার বললেন, ‘যে যাওয়ার সে তো যাবেই, তাকে তো আটকানোর সাধ্যি নেই, মুঠো আঁকড়ে ধরে থাকলে কি বালি ধরে রাখা যায় হাতে? সে তো নিজের নিয়মে ঝরে পড়বেই। এক ছেলে গেছে, কিন্তু যারা আছে তাদের জন্য তো…” নিজের মাথাটা নীচু করে নিলেন, কয়েক সেকেন্ড পর আবার বললেন, “যেটা বাস্তব সেটা যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করতে পারবে তত শান্তি পাবে, সব আমাদের হাতে নেই, আর এটা মেনে নিতে পারলেই বাঁচতে পারবে। ভালো থেকো বাবা। “
কথা কটা বলে চলে গেলেন মানুষটা, কোনো কথা বলতে পারেনি আর আকাশ, কত সহজে জীবনের চরম সত্যটা বলে চলে গেল দুটো মানুষ আজ, সব হারিয়েও। এদেরকেই মনে হয় আসলে যোদ্ধা বলে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই হার মানতে নারাজ। হাতের ব্যাগটা নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল আকাশ, ঘাটের সামনের দিকে জলের কাছে গেল, অন্ধকারে ঐপারের কিছু দেখা যাচ্ছে না একটা দুটো আলোর বিন্দু ছাড়া। কতক্ষণ ওই আঁধারের দিকে তাকিয়ে ছিল জানে না, পাশের ঘাট থেকে আবার চোখ জ্বালানো আগুনের হলকা জোরালো হতেই জ্বলন্ত আগুনের দিকে তাকাল একবার ও, একদম সোজাসুজি , আর এড়িয়ে যাওয়া নয় , ব্যাগ থেকে সঞ্চয়িতার ঘড়িটা মা গঙ্গার বুকে ফেলে দিলো ও, চোখে জল, যেন অবশেষে শেষ বাঁধনটা খুলে দিলো এবার, মুক্ত করল নিজেকে, আঁকড়ে ধরার পার্থিব বস্তুটাকে ভাসিয়ে দিলো অবলীলায়, কি লাভ আঁকড়ে? যে যাওয়ার সে তো আগেই চলে গেছে। এবার ফিরতে হবে ঘরে, ততক্ষণে আকাশে সূর্যের প্রথম লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে একটু একটু করে, ভোর হয়ে গেছে।
পড়ুন মুক্তধারার তিনটি সেরা থ্রিলার উপন্যাস:-
রুদ্ধশ্বাস গরমে হাড়কাঁপানো থ্রিলার …