।।১।।
সে অনেক কাল আগের কথা।তা প্রায় ১৫ বছর তো হবেই। তখন আমি পোস্টিং নিয়ে বাঁকুড়া গেছি সবে। একটা স্কুলবাড়ির কাজ নিয়ে। আমার বয়স তখন কত হবে ? মেরে কেটে ৪০।
আমার উপরেই স্কুলবাড়ির পুনর্নির্মাণ এর যাবতীয় ভার সামলানোর দায় বর্তেছে। আমি ও সেই ভার হাসিমুখে গ্রহণ করে হাজির হয়েছি রাঙামাটির দেশে। ৬মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। তবে সরকারি কাজ তো, সে টা যে ৬ মাস থেকে এক বছর গড়াবে সেটা আলাদা করে উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন।
আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সরকারের তরফেই একটি বাড়িতে। বাড়িটা খুব একটা দূরে নয়, স্কুল থেকে হাঁটা পথে ২০ মিনিটের দূরত্ব বড়োজোর। অফিস থেকে গাড়ি দিলেও পায়ে হেঁটে যেতে খুব একটা মন্দ লাগে না। শীতের সকালে গায়ে রোদ লাগাতে কার না ভালো লাগে। রাতদিনের কাজের জন্য একজনকে বহাল করা হয়েছে। তার নাম লুধু। পুরো নাম জানা আর হয়ে ওঠেনি, লুধু বলেই ডাকতাম। লুধুর হাতের মাংসের ঝোল ভারী সুন্দর ছিল। প্রায়দিনই ও কি রান্না হবে জিজ্ঞাসা করলেই মাংস রাঁধারই ফরমাস করতাম। আচ্ছা, এখানে আমার পরিচয়টাই এখনো দেওয়া হয়নি। আমার নাম বীরেশ্বর ব্যানার্জী। পেশায় সরকারি ইঞ্জিনিয়ার। নিবাস কলকাতা। তবে আমি একা আসিনি, আমার সঙ্গে আরো কিছু ইঞ্জিনিয়ার, স্টাফ এসেছিলেন এই প্রজেক্টটার জন্য। তাই কাজ কর্মে গল্প আড্ডায় ভালোই সময় কেটে যেত।
*****
এই স্কুলটা যে খুব পুরোনো তা নয়। রেকর্ড বলছে ৪০ বছর পুরোনো হবে। এই কদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। পড়ে রয়েছে প্রায় ১২ বছর ধরে। মানে চলেছে মাত্র ২৮ বছর। এতদিন পরিত্যক্ত থাকার কারণে স্কুলটার ভগ্নপ্রায় দশা। তাই এত আয়োজন। স্কুলটা এভাবে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বেশ আর্থিক ক্ষতি ও হয়েছে। কারণ স্কুলবাড়িটা তখনকার দিনের নিরিখে বেশ বড়। সাথে খেলার দুটো মাঠ, ক্যান্টিন সব কিছু ছিল। ১১ – ১২ অবধি ক্লাস চলত এখানে। কিন্তু তারপর কিছু ভুয়ো খবর রটার পরে এত বড় স্কুলটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন ভোটের পর সরকার বদলেছে, নজর পড়েছে এই স্কুলে। নির্দেশ এসেছে যত দ্রুত সম্ভব সমস্ত কাজ শেষ করে আবার পুরোদমে স্কুলটা চালু করার। স্কুলের সামনে কিছু চেয়ার নিয়ে বসি আমরা স্টাফরা। চা টা এখানেই খাই, খালি খাবার সময় একবার গাড়ি পাঠায় যেতে হয় বাড়ি । স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখানকার লোকাল একজন কে বহাল করা হয়েছে। নাম চণ্ডী। সবাই চণ্ডীদা বলেই ডাকি।
*****
কাজ শুরুর মানে আমার এখানে আসার হয়ে গেছে ১৫ – ২০ দিন। সেদিন বসে ছিলাম সামনেটায়, বেলা ১১ টা বেজে গেছে কারণ লুধু দ্বিতীয়বার চা দিয়ে গেছে। চায়ের ভাঁড়ে বিস্কুটটা একটু ডুবিয়ে মুখে পুরতে যাবো তখনি চণ্ডী বলে উঠল, “দিনের বেলা ঠিক আছে স্যার,ছুটির দিন তো সারাদিনই থাকি, কিন্তু রাতের বেলাটা আপনি অন্য কাউকে খুঁজে ন্যান না স্যার। আমার রাতের দিকটা দমে অসুবিধে হয়ে যাচ্ছে। “
চণ্ডী এখানকার লোক হলেও কলকাতায় যাতায়াতের সুবাদে ভালোই বলে কলকাতার ভাষা। কথা বলতে বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। নয়তো লুধুর ভাষা আমি তো কিছু বুঝতেই পারি না। মনে হয় একটা দোভাষী হলে ভালো হতো।
তা চণ্ডীর এরকম উদ্ভট মন্তব্যে একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে। মুখ দিয়ে একটাই কথা বেরোল, ” মানে ?”
চণ্ডীর উচ্চতা মাঝারি, চেহারা ভারীর দিকে, মাথায় টাক তাতে গোছাখানেক পাকা চুল, মোটাসোটা পাকা গোঁফ, গায়ের রং শ্যামবর্ণ, পরনে ধুতি ফতুয়া, পায়ে একজোড়া ছেঁড়া কালো চটি।
আমার প্রশ্নে দাঁত বের করে একটু হাসল খানিক, দেখলাম পান খাবার অভ্যাস আছে। বলল, “আসলে অনেকগুলা ওষুধ খাতি হয় কিনা। অনেক রকম রোগ যে। তাই রাত জেগে শরীরটা দমে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আপনি বরং কলকাতার কাউকে লাগিয়ে দ্যান স্যার। “
কাজ করবে না ঠিক আছে, কিন্তু এই বিপদে ফেলে পরামর্শ আমার সবদিনই বিরক্ত লাগে। বিরক্তি নিয়ে বললাম, ” আমার খেয়ে দিয়ে কাজ নেই এখানকার দেখাশোনার কাজ এখানকার লোক দিয়ে না করিয়ে কলকাতা থেকে নিয়ে আসব। তুমি করবে না সে বুঝলাম, কিন্তু লোক ও তুমি জোগাড় করে দেবে, জোগাড় করে দিয়ে তুমি যেতে পারো। “
তাকালাম চণ্ডীর দিকে, দাঁত আর বেরিয়ে নেই, হাসি থামিয়ে মুখটা একটু সিরিয়াস গোছের। “স্যার ইখানের কুনো লোকই রাত্রে থাকবেক নাই, ওই জন্যই বলছু কলকাতা থিক্যা লোক লিতে।”
“কেন ? এখানকার লোকের কি প্রব্লেম থাকতে ?”
“স্যার আপনি কি কিছুই শোনেন নাই ?”
“না। কি শুনবো আবার ?”
“এই এত্তবড় ইস্কুল, বন্ধ হলো ক্যানে ?”
“ক্যানে ? আই মিন কেন ?”
কিরকম একটা রহস্য জনক ভাবে তাকাল ও। ওর দৃষ্টির দিকে তাকিয়েই কেমন যেন একটা লেগেছিলো আমার সেদিন। কেমন যেন অস্বাভাবিক শীতল দৃষ্টি। ও বলল আবার, “একদিন রাত্রে ইখানে থেকি দেখেন, তাহলেই সব বুঝতে পারবেন। “
আমি নিজের গলাটা ঝেড়ে এবার বেশ জোরালো গলায় বললাম, ” আরে যা বলার পরিষ্কার করে বল। এত হেয়ালি শোনার সময় আমার নেই। কি প্রব্লেম এখানে বলো?”
“আমার কথা বিশ্বাস হবেক নাই আপনার। কিন্তু বিশ্বাস করেন এখানে কিছু ব্যাপার আছে। ওই জন্যই তো কেউ টিকতে পারল নাই। রাত দুপুরে বাচ্ছার কান্নার আওয়াজ ও ভেসে আসে। আপনি নিজেই তাকিয়ে দেখেন না, এখানে বসে একবার স্কুলটার দিকে তাকিয়ে দেখেন, বুকটা কেমন হু হু করে উঠছে না? ওই ঘটনাটার পর থেকে এক বছর ও চলেনি আর স্কুলটা। সব পাততাড়ি গুটালো। অথচ আগে কি সুন্দর জমজমাট ছিল সবকিছু। বাচ্চারা মাঠে খেলা করত, ঢং ঢং করে ঘন্টা পড়ত স্কুলে, দারোয়ানজি সকাল এ বিকেল এ গেটের বাইরে দাঁড়ায়ে কি সুন্দর সবটা সামাল দিতেন। ইস্কুলের রেজাল্ট কত ভালো হতো, নাম ডাক বাড়তে লাগল, ভালো ভালো মাস্টারমশাইরা আসতে লাগলেন, দমে নামডাক। সরকারি ইস্কুল হয়েও কত ভালো পড়াশোনা। নামমাত্র খরচে। আমাদের মতন গরীব সাধারণ মানুষ যেন হাতে স্বর্গ পেল। স্কুলে সরস্বতী পুজো, স্বাধীনতা দিবস সব ধুমধাম করে হতো। এই যে দেখছেন খাবার ক্যান্টিন আর কোনো ইস্কুলে ক্যান্টিন ছিল না। ঘুগনি, আলু কাবলি, ভেলপুরি আরো কত কি সব নিয়ে বসত ইখানে। টিফিনের ঘন্টা পড়লেই সব বাচ্চাগুলা ছুট্যা ছুট্যা এই যে এই গেটটা দিয়ে হাত বাড়ায়ে কিনত সব। দমে কম দাম তো। চার আনা, আট আনা, বড় জোর এক টাকা। আর দেখো এখন সেই ইস্কুল কেমন পড়ে আছে পোড়ো বাড়ির মতো। খাঁ খাঁ করছে সব। সব ই অভিশাপ। চোখের জল ফেলালে দাম তো দিতেই হবেক। ওই টুকুন একটা বাচ্চা…”
গলাটা বুজে এল চণ্ডীর সেটা বুঝতে পারলাম স্পষ্ট। চোখ দুটো ও কেমন ছলছল করছে। সবটা হয়তো বানিয়ে বলছে না এটাই মনে হলো। স্কুলটার দিকে তাকালাম একবার। “সুনুকপাহাড়ি বয়েস হাই স্কুল” নীল কালিতে লেখা সাদা দেয়ালের উপর, ভগ্নপ্রায় দশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একা একটা স্কুলবাড়ি। সেদিন আর কথা বলতে চেয়েও বেশি কথা হলো না কাজের চাপে । আমাকেও ডাকল আর চণ্ডী ও আর তেমন কিছু বলল না দেখলাম। মুখটা দেখে শুধু এটাই মনে হল লোকটা মিথ্যেবাদী নয়।
খারাপ লাগছিল, অথচ বুঝতে পারছিলাম না আমার খারাপ লাগার কারণ টা কি। না আমি এখানকার মানুষ, না এই স্কুলের সাথে আমার কোনো ইমোশন জড়িয়ে আছে। কিন্তু তাও মন টা খারাপ হয়ে গেল অজানা কোনো কারণে। সেদিন কাজ সেরে একটু দেরি করেই ফিরেছিলাম। মনে হলো লুধু কে একবার জিজ্ঞাসা করি কিন্তু লুধুর কোনো ভাষাই তো বুঝে পারব না। তাই আর জিজ্ঞাসা করলাম না কিছু।
এখানে মানুষজন কলকাতার মতন অত রাত করে খাওয়া দাওয়া করে না। সন্ধ্যে ৮ টা থেকেই যেন মনে হয় রাত ১০ টা। এখানকার মানুষের ফুড হ্যাবিট ও কলকাতার মানুষের থেকে অনেকখানি আলাদা। ভাষা ,খাওয়া দাওয়া, স্বভাব সবকিছুই অন্যরকম, রাত ৯ টা তেই এরা খেয়ে নেয় আর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েও পড়ে, ওঠেও তেমনি ভোরে। লুধুর জন্য আমার খাওয়া দাওয়া হয় এখন ৯ টার মধ্যেই। আমায় খেতে দিয়ে ও মুড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে, ঘুমালে আর ওর হুঁশ থাকে না। কিন্তু এত বিবিধের মাঝেও এই রাঙামাটির দেশে এসে এই স্কুলটার জন্য আমার মনে হঠাৎ খুব কষ্ট হচ্ছিল।
হঠাৎ কি মনে হলো একবার ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। চণ্ডীর কথা গুলো ঘুরছিল মাথায়। শীতকাল তাই সাপের ভয় নেই, কি রকম যেন একটা টান অনুভব করছিলাম আমি সেদিন, হাঁটতে লাগলাম জোরে, বাইরে ঠান্ডা টাও মারাত্মক, সোয়েটার টুপি কিছু বাদ দিনি, কলকাতার তুলনায় গরম বা ঠান্ডা দুটোই বেশ বেশি। হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম সেটা। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম স্কুল এর কাছে।
অন্ধকারে একটা পোড়ো বাড়ির মতন দাঁড়িয়ে আছে স্কুলটা। টিম টিম করে একটা হলুদ বালব জ্বলছে শুধু, তাতে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সত্যিই চণ্ডীদা ঠিকই বলছিল, স্কুলটার সামনে দাঁড়ালে মন টা হু হু করে। যেন কত বাচ্ছার কলরব অন্ধকার চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে, কিন্তু পারছে না তাই গুমরে গুমরে কাঁদছে।
স্কুলের বেঞ্চ গুলো ,চক ডাস্টার ব্ল্যাকবোর্ড গুলো যেন এক অন্তহীন অপেক্ষায় দিন গুনছে। কবে আবার বাচ্চাদের দুস্টুমি দেখতে পাবে, বন্ধুদের একসাথে টিফিন ভাগের সঙ্গী হবে। কবে আবার একসাথে সবাই ক্লাস করতে করতে মাস্টারমশাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দেবে এক গলায়। সময়টা যেন থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে এখানে। নিজেকে আটকাতে পারলাম না চাইলাম ও না, হাতের টর্চ টা সামনে ফেলে এগোতে লাগলাম স্কুলের গেটের দিকে। যেই গেট খোলার জন্যই আমায় এখানে পাঠানো হয়েছে। দাঁড়ালাম সামনে এসে, গেট টার অবস্থাও তথৈবচ। জং ধরা, ঝুল আর ধুলোয় ভরা, সঙ্গে অজস্র মাকড়সার জাল। তার মধ্যেই কোনোক্রমে ঠেলে ঢুকলাম ভিতরে। একটা বিচ্ছিরি ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে আমায় যাওয়ার জায়গা ছেড়ে দিল গেটটা। টর্চ ফেলে দেখে নিলাম সামনেটা।
সাপ না থাকুক অন্য জীব জন্তু ও তো থাকতে পারে, এতদিনের পরিত্যক্ত। এগোতে লাগলাম এক পা এক পা করে। আর চারপাশটা দেখে অতীতটাকে খুঁড়ে বের করার একটা চেষ্টা করতে লাগলাম। রাত বাড়ছে, তায় গ্রামে শীতের রাত, আমার যে ফেরা উচিত সে নিয়ে আমার মাথায় তখন কিছুই নেই। একটা নেশার মতন যেন এগিয়ে চলেছি। ঘর গুলো বেশ বড় বড়, তবে বেঞ্চ টেঞ্চ আর কিছুই নেই। আছে শুধু ব্ল্যাকবোর্ড, আর একরাশ হাহাকার। অন্ধকার পেরিয়ে হেঁটে যেতে যেতে সময় যে কতটা গড়িয়ে গেছে খেয়াল ও নেই। গিয়ে দাঁড়ালাম একটা বন্ধ দরজার সামনে। সমস্ত ক্লাসরুমের দরজা খোলাই ছিল, এটা বন্ধ দেখে একটু অদ্ভুত লাগল, ঠেললাম ,খুলল না। এক দুবার চেষ্টা করার পর নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তালা বন্ধ। হুড়কো টানা। ঠান্ডাটা সোয়েটার টুপি ভেদ করে হাড় অবধি পৌঁছে গেছে। আর বেশিক্ষণ এই ধু ধু মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয় বুঝতে পারছিলাম, নয়তো আর কিছুর জন্য না হোক, ঠান্ডাতেই মরব।
বন্ধ দরজাটার সামনে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ফিরে আসতে যাচ্ছিলাম তখনই টর্চের আলোয় দেখলাম ঘরের মধ্যে টা দেখা যাচ্ছে ভাঙাচোরা দরজার ফাঁক দিয়ে। আর কি আশ্চর্য, বাকি সব ঘর ফাঁকা হলেও এই ঘরে বেঞ্চ মজুত। যেন কেউ অসমাপ্ত কাজ ফেলে রেখে গেছে এসেই সম্পূর্ণ করবে তাই আর কিছু সরানো হয়নি। বেশ অবাক লাগল। টর্চ টা নিয়ে আরো একটু দেখার চেষ্টা করলাম আর তারপর… বুকের ভিতরের হৃদপিন্ডটা খুলে বেরিয়ে আসবে মনে হলো।
টর্চের আলো ঘরের এদিক ওদিক পড়ছিল, সেই আলোতেই যেন মনে হল কেউ একটা দাঁড়িয়ে আছে ওই বন্ধ ঘরের ভিতর। যতক্ষণে মনে হলো আমি টর্চের আলো অন্য দিকে সরিয়ে দিয়েছি ততক্ষণে কিন্তু এক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার সেই জায়গাতেই আলোটা ফেলতেই মনে হলো এবার জ্ঞানটা হারিয়ে ফেলব। প্রথমে মনে হয়েছিল ভুল ও তো দেখতে পারি, এখন দেখলাম না। সত্যিই কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই বুঝলাম এটা কোনো বাচ্চা, দরজার দিকে পিছন করে। কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, পরনে স্কুল ড্রেস, হাই বেঞ্চের উপর বসে রয়েছে চুপ করে, জানলার দিকে মুখ করে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ফোর ফাইভের বাচ্চা। হাই বেঞ্চ থেকে ছোট ছোট পা ফেলে নামল মাটিতে। এগিয়ে গেল সামনের খোলা জানালাটার দিকে। জানালাতে গ্রিল নেই কোনো। যে কোনো সময় কোনো এক্সিডেন্ট হতে পারে। জানলার একদম কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালো বাচ্চাটা। একটা পা তুলল, আরেকটা পা তোলার আগে হঠাৎ তাকাল পিছন দিকে ফিরে। দরজা তো বন্ধ, কিন্তু ওই ভাঙা দরজার ফাঁক ফোকর ভেদ করে সেই দৃষ্টি সরাসরি পড়লো আমার দিকেই। উফফ ! একটা হাড় হিম করা ঠান্ডা নিঃশ্বাস যেন লাগল গায়ে। শিরদাঁড়া বেয়ে বইছে ঠান্ডা রক্তের স্রোত। যেন জাগতিক পরিবেশ থেকে অনেক দূরে এক অলৌকিক অসম্ভব জগতে আটকে পড়েছি আমি। আটক আছে এই বাচ্চাটাও। ওর দৃষ্টি একদিকে যেমন আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ করে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল, তেমনি সেই দৃষ্টিতে একটা অদ্ভুত মন উদাস করা, শেষ হয়ে যাওয়ার আগে একবার শেষবার বাঁচার জন্য আকুল আর্তি ছিল, শৈশবটা আর একবার বাঁচতে দেওয়ার জন্য অসহায়তা ছিল সেই দৃষ্টিতে। আমার বুকের ভিতরে প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়া হৃদপিন্ডটা দুমড়ে মুচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলো সেই দৃষ্টির সামনে। পরক্ষণেই বুঝলাম, যা কিছু সামনে দেখছি এ তো বাস্তবে সম্ভব নয়। আমায় এখান থেকে বেরোতে হবে নয়তো আমি ও হয়তো… আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়াইনি ওখানে, পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে নামতে থাকি নীচে।
কোথা থেকে যেন একটা বরফ এর থেকেও শীতল বাতাস এসে অবশ করে দিয়ে যাচ্ছে আমার হাত পা। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশটায়। কত রাত হয়ে গেছে তাও জানি না। একটা বাচ্চার গুমরে গুমরে কাঁদার শব্দ এলো কানে। সেই কান্নার তীব্রতা এতটাই বেশি যেন মনে হলো মাথাটা আসহ্য যন্ত্রনা করছে এখুনি ফেটে যাবে, ওই কান্না থেকে নিষ্কৃতি চাই আমার। কিন্তু সেই শব্দ বাড়তে লাগল একটু একটু করে। খুব কষ্ট হচ্ছে অথচ কাউকে কিছু বলার নেই অসহায় ভাবে কাঁদা ছাড়া। এরকম ই ছিল সেই কান্নাটা, একটা হাহাকার যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরছে আমায়। দৌড়াতে লাগলাম আমি অন্ধকারের বুক চিরে।
হঠাৎ দেখলাম আমার পাশেই দৌড়াচ্ছে ওই বাচ্চাটা! এ কি করে সম্ভব ! এবার কি তাহলে আমার মৃত্যু সামনেই? ভয়ে আমার চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসার জোগাড়। বাচ্ছাটা একেবারে আমার পাশটায় চলে এসেছে। যেন হাওয়ার সাথে উড়ছে, দৌড়াচ্ছে না। একটু একটু করে এগিয়ে এবার আমার পাশ থেকে আমায় ছাড়িয়ে আমার সামনে এসে হাজির। হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে কোনোক্রমে নিজের গতি থামিয়ে দাঁড়ালাম আমি, টর্চের আলোয় পরিষ্কার দেখলাম ঘন অন্ধকার রাস্তায় জঙ্গলের পাশে আমি দাঁড়িয়ে আছি একা আর সামনে কেউ নেই। তাহলে আমি কি দেখছিলাম এতক্ষণ? আর দেরি না করে দৌড়াতে গেলাম আবার ,কিন্তু… ওই তো, ওই তো বাচ্চাটা। এবার আমি কি করবো? ও তো আমার পিছুই ছাড়ছে না। কিন্তু একি… একটা ওই টুকু বাচ্চার সারা মুখে আঘাতের চিহ্ন, রক্তাক্ত স্কুলড্রেস। না আর আমি পারছি না সহ্য করতে। আঁধার ঘনিয়ে এলো আমার চোখে, আর তারপর কিছু মনে নেই। শুধু চোখ বোজার আগে স্পষ্ট দেখলাম বাচ্ছাটার মায়া ভরা মুখটা চেয়ে রয়েছে আমার দিকে, চোখে জল।
।।২।।
আমি যখন চোখ খুললাম তখন বুঝলাম আমি আমার ঘরে ,আমার বিছানাতেই শুয়ে আছি, ঘরে দিনের আলো। মাথাটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে, গায়ে প্রবল জোর। মোটাসোটা লেপ কম্বল চাপা দিয়ে ও কাঁপুনি যাচ্ছে না। কিন্তু কি হয়েছে আমার? কিছুই যে বুঝতে পারছি না। না গতরাত্রের ঘটনার একটা কথাও ভোলা সম্ভব নয়, ভুলিওনি। কিন্তু… এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, লুধু রান্নাঘরে নিজের রান্নায় ব্যস্ত, আর চণ্ডীদা, আমার আরো দুজন কলিগ গম্ভীর মুখে ঘরের বাইরে কোনো আলোচনায় মগ্ন। ডাকতে গিয়ে দেখলাম গলা দিয়ে শব্দ ও বেরোতে চাইছে না কোনো। লেপের ভিতর থেকে হাতটা বের করলাম কোনোরকমে। হাত দিয়ে বিছানায় আঘাত করলাম ,আর গলা দিয়ে একটু ডাকার চেষ্টা করলাম। চণ্ডীদাই প্রথম দেখল, দেখতে পেয়েই দৌড়ে এলো আমার কাছে, সাথে সকলেই।
এখন কেমন আছি বা শরীর কেমন লাগছে একই প্রশ্ন করতে লাগল সকলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কাল রাত্রে আমি কোথায় ছিলাম। কিন্তু ওদের উত্তর শুনে আমার আরো অবাক হওয়ার পালা। গতকাল নয়, গত পরশু গভীর রাত্রে আমায় কোথাও দেখতে না পেয়ে লুধু আমায় খুঁজতে শুরু করে, এদিক ওদিক কোথাও না পেয়ে আমার কলিগদের ডাকে, তারপর সবাই মিলে খোঁজাখুঁজির পর আমায় প্রায় রাত তিনটে নাগাদ উদ্ধার করে ওই স্কুলবাড়ির পিছনের মাঠটায়, অচৈতন্য। কাল সারাদিন রাত আমার জ্ঞান ফেরেনি, সঙ্গে ছিল ধূম জ্বর। কিন্তু আমি অত রাত্রে ওই স্কুলবাড়িতে কিভাবে এবং কেন সেই প্রশ্ন ও ধেয়ে এল সঙ্গে সঙ্গেই , যার কোনো সদুত্তর ছিল না আমার কাছে।
আমরা মাথায় শুধু একটা জিনিসই চলছিল আমি যা কিছু দেখেছি , যা কিছু আমার সাথে ঘটেছে তার ব্যাখ্যা কি? সেটা না জানা অবধি আমার শান্তি নেই। চণ্ডীদার সাথে কথা বলা খুব দরকার। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম কখন একান্তে আমি চণ্ডীদাকে প্রশ্নগুলো করার সুযোগটা পাবো।
*****
“ঠিক কি কারণে স্কুলটা বন্ধ হয়ে গেলো তুমি তো আগের দিন বললে না চণ্ডীদা। আমার আজ মনে হয় জানাটা খুব দরকার। যদি সেদিন ই আমি সব টা জানতে পারতাম তাহলে আর আমার সাথে…যাই হোক ,বলো এবার। “
কোনোরকম ভনিতা না করে সরাসরি প্রশ্নটা করলাম চন্ডীদাকে। ততক্ষণে বাকি সকলে বিদায় নিয়েছে ঘর থেকে। কথা আছে বলে চণ্ডীকে বসিয়ে রেখেছি খাটটার পাশে। চণ্ডী প্রথমে খানিকটা হকচকিয়ে গেলো এরকম প্রশ্নে , তারপর খানিক আমতা আমতা করছিল, চাপাচাপি করলাম খানিক । এছাড়া আর আমার উপায় ই বা কি। কিছুক্ষণ কি ভাবল কে জানে। তারপর অবশেষে মুখ খুলল ও। সে ঘটনা যতটা না ভয়ের তার থেকে অনেক বেশি হৃদয়বিদারক।
*****
তখন স্কুল রমরমিয়ে চলছে। স্কুলটা সরকারি হলেও সরকার ছাড়াও আরো অনেক অনুদান পেত । পড়াশোনার মান ও অন্যান্য স্কুলের থেকে অনেক উন্নত ছিল। ঐরকম একটা সময়ই স্কুলে ক্লাস ফাইভ এ একটা বাচ্চা পড়তো যে সবার থেকে একটু আলাদা। আলাদা বলার কারণ এই যে সে ছিল পড়াশোনায় তুখোড়, যে কাজ ই তাকে দেয়া হোক না কেন নিজের ১০০ % দিয়ে সে সেই কাজ করতো। শিক্ষকদের নয়নের মণি। শুধু একটাই সমস্যা, অনাথ পৃথ্বীরাজ বড় বেশি নিজের দুনিয়ায় ডুবে থাকত।
কিছু ভাবতে শুরু করলে এমন গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ত যে চারপাশে কি ঘটে যাচ্ছে তার কোনো হদিশ ই থাকত না পৃথ্বীরাজের কাছে। আর খেলাধুলোয় ওর তেমন আগ্রহ ছিল না। মা বাবা ছিল না, নিজের কাকার কাছেই থাকত ও। পড়াশোনায় তুখোড় আর স্কুলে এত কম খরচের কারণেই ওর পড়াশোনা চলা সম্ভব হচ্ছিল। আর ও ক্লাসে স্ট্যান্ড করার জন্য টাকা লাগত ও না তেমন, বছরে সামান্য কিছু লাগত।
বাড়ির পরিবেশ খুব একটা ভালো ছিল না । কাকা ভালোবাসলেও কাকিমার চোখের বিষ ছিল ছোট্ট পৃথ্বীরাজ। তাই নিজেকে নিজের জগতে ডুবিয়ে রেখেই শান্তি পেত ও। স্কুলে আসতে স্কুলে থাকতে বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে পড়াশোনা করে খেলাধুলো করেই নিজের তালে দিব্যি বাড়ছিল ছেলেটা।
সেদিন মনে হয় শুক্র বা শনিবার ছিল। কারণ পরদিন স্কুল ছুটি থাকার কথা। বর্ষাকাল। বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল সকাল থেকেই। বাড়িতে সেদিন ও এক চোট অশান্তি হয়েছিল পৃথ্বীরাজকে নিয়েই। ওর কাকিমার মুখে প্রায় দিনই ওর মরণকামনা শোনা যেত, সেদিন ও এরকম ই বলেছিল। ছোট্ট ছেলেটা সেদিন স্কুলে ঢুকেছিল গোমড়া মুখ নিয়ে। চোখের কোণে জল। হয়তো মার ধোর ও করেছিল খুব। হাতে কালসিটের দাগ পাওয়া গেছিল। ওর বাড়ির এই সমস্ত কথা ওর মারা যাওয়ার পর ওর কাকা কাকিমা স্বীকার ও করেছে। তবে প্রত্যক্ষ ভাবে ওকে খুনের কোনো অভিযোগ বাড়ির লোকের উপর বর্তায়নি তাই কাকিমার কোনো শাস্তি ও হয়নি।
সেদিন স্কুলে চুপচাপই ছিল সারাটা দিন, ওর বন্ধুদের থেকেই যা জানা গেছিল আর কি। সব ঠিক ই ছিল গোল বাঁধল পিটি ক্লাসে। খেলাধুলোয় তেমন আগ্রহ ছিল না ছেলেটার, আর সেদিন সকাল থেকেই মন মেজাজ ভালো ছিল না। তখন স্কুলে স্পোর্টসের নতুন স্যার এসেছে , তার কাছ থেকে আর কিছু না শিখতে পারা যাক, তুমি কতটা অপদার্থ, তোমার দ্বারা যে কিছু হবে না, তুমি তোমার মা বাবার এমনকি সমগ্র পৃথিবীর বুকে একটা বোঝা সেইটা তোমার মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে দিতো সেই দিবাকর স্যার। স্কুল তরফে এর আগেও ওই স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল কিন্তু কিছু ব্যবস্থা হওয়ার আগেই সেই দুর্ঘটনাটা ঘটেই গেল সেদিন। দিবাকর স্যারের বাক্যবাণ সঙ্গে বেতের আঘাত, ছেলেটার মনোবল একেবারে ভেঙে দিয়েছিল সেদিন। নিজের অস্তিত্বের উপরেই একটা বড় প্রশ্ন চলে এসেছিল ছেলেটার মধ্যে। ওর বন্ধুরা ওর মুখ চোখের অবস্থা দেখেই বুঝতে পেরেছিল আজকের দিনটা বাকি আর ৫ টা দিনে আর ৫ টা ছেলের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার মতন থাকবে না। কিছু একটা ঘটতে চলেছে । পৃথ্বীরাজকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়েও ছুটির সময়ে স্কুল থেকে বের করতে পারেনি ওরা, কিন্তু এটা ও ভাবতে পারেনি এরকম ও কিছু করতে পারে ওই টুকু বাচ্চা ছেলেটা। ঘরে ওই ব্যবহার , অত্যাচার, স্কুলের ওই ঘটনা এই সব কিছু মিলিয়ে একটা বিষ তৈরী হয়ে গিয়েছিল বাচ্ছাটার মাথায়। তাই স্কুল থেকে বাচ্ছারা বেরোনোর সময়ই নিজের চারতলা ক্লাসরুম থেকে ঝাঁপ দেয় পৃথ্বীরাজ। আওয়াজ পেয়ে ওর ১০ বছরের থেঁতলে যাওয়া রক্তাক্ত একরত্তি শরীরটার দিকে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যায় স্কুলের দারোয়ানরা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। একরাশ অভিমান নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় পৃথ্বীরাজ। কিন্তু নিজের সব থেকে প্রিয় জায়গা এই স্কুলকে ছেড়ে কিছুতেই যেতে পারেনি ও। আর ওর এই অশরীরী উপস্থিতির কারণে রাতারাতি ভুতুড়ে স্কুলের তকমা পেয়ে যায় এই স্কুল। ব্যাস আর কি, স্কুল সেই থেকে বন্ধই পড়ে আছে।
*****
“কিন্তু এত কথা তুমি জানলে কি করে? এত খুঁটিনাটি ডিটেলস তো বাইরের লোকের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।”
“ছা টা কে ছোট থিক্যা বড় হোতি দেখলাম, আমি জানব না তো কে জানবেক? ওর মন খারাপ হোক বা ফুর্তি হোক , ওকে ভালোবেসে ঘুগনি আলুকাবলি খাওয়াইতো ওর এই ঘুগনি কাকু। পয়সা কড়ি নিতে ল্যারতাম, কোথায় পাবে ওই টুকু ছা মা নাই বাপ নাই। দেখলেই বড় মায়া লাগত। সেদিন ও খাওয়াইছিলাম। কে জানতো আর কুনোদিন ও ছা টা খেতে আসবেক নাই। ওর ওই নিথর ছোট্ট এই টুকুন শরীরটা দেখে কত রাত ঘুমাতে পারি নাই… ” গলা ধরে এসেছে চণ্ডীদার, আর কিছু বলার বা শোনার মতন অবস্থা আমার ও ছিল না। বুকটা মুচড়ে দুমড়ে যাচ্ছিল শুধু।
।।৩।।
আমি আমার কাজ সম্পূর্ণ করে ওখান থেকে চলে আসি দুই বছরের মধ্যে। কিন্তু এই ঘটনাটা থেকে বেরোতে আমার সময় লেগেছে বহু বছর। পুনর্নির্মাণের পর অনেক বাধা পেরিয়ে আবার স্কুল চালু হয়। এখন সেই স্কুল আবার হৈহৈ করে চলছে, কিন্তু পথে এসেছে অনেক বাধা। অনেক আইনি জটিলতা, স্থানীয় মানুষদের তরফে আপত্তি। কিন্তু সব কিছুই একে একে ঠিক পার করে ফেলেছিলাম। আর সেই রাতের ছোট্ট বাচ্ছাটার দেখা আমরা অনেকবার পেয়েছি, কখনো বেশিক্ষণ কাজ করে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে একলা ফেরার সময়, কখন বা রাতের আঁধারে, কখনো সূর্যের আলো ফোটার আগে আগে। কখনো শুনেছি দেরি হয়ে গেছে আমরা এখনো ফিরিনি কেন, কখনো বা আবার স্কুল কবে খুলবে ,কখনো বা স্কুল ক্যান্টিন এ কাকুরা আলু কাবলি নিয়ে বসবে তো? তবে সেই মুখ ভয়ঙ্কর নয়, বরং একরত্তি নিষ্পাপ মায়াভরা হাসিহাসি একটা মুখ।