হঠাৎ একদিন

hathat-ekdin-muktodhara story image

hathat-ekdin-muktodhara story image

||১||

“কখন থেকে বলছি একটু দেখে দাও, এখনও তোমার খেলার পাতা পড়া শেষ হলো না, আমাকেও দেবে না দেখতে, আশ্চর্য |”, বলেই চা-এর কাপটা টেবিলের উপর সশব্দে রেখে দিল মিতালী |

মিতালীর অনেকদিনের একটা নেশা আছে, লটারির টিকিট কাটা | এটা বহু বছর ধরে চলে আসছে, মাঝে মাঝে একশ দু’শ টাকা পেয়েছেন বটে, কিন্তু ঐ অবধি | কবে কোন গণৎকার বলেছিলেন, এভাবেই নাকি বিপুল অর্থযোগ আছে ওনার ভাগ্যে | তারপর থেকেই…

||২||

মিতালী দেবীর স্বামী বীরেন বাবু, রোজকার মতো আবারও একবার বিরক্ত হয়ে চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিলেন, “রোজ এই এক আছে, কি যে পারে এরা “, বলতে বলতেই লটারির পাতাটা ওল্টালেন, চশমাটা একবার ঠিক করে দেখতে লাগলেন, ৪৩২৩৯৬৯৬ …. কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো হৃৎপিন্ডটা ওনার গলার কাছে উঠে এসছে | কাগজটা ভাঁজ করে একপাশে সরিয়ে দিলেন, লটারীটা ১ কোটি টাকার, ওনার ভেবেই কীরকম মাথা ঘুরছে | মধ্যবিত্ত সাধারণ ঘর, কোনদিন এত টাকা একসাথে দেখেননি, তারা কিনা কোটি টাকার মালিক হতে চলেছেন?

মিতালী দেবী আবার একবার চলে এলেন রান্নাঘর থেকে তাগাদা দিতে, এসে দেখলেন বীরেনবাবু কেমন ভাবে একটা বসে আছেন…

“কী হলো, শরীর খারাপ লাগছে নাকী?”-মিতালী দেবী |

খানিকটা ধাতস্ত হয়ে,” আরে না না, লটারীটা না……….. লেগে গেছে |”

মিতালী দেবীর মুখ চোখের অবস্থা বর্ণনা করার অপেক্ষা রাখে না বলাই বাহুল্য |

||৩||

ধপ করে বসে পড়লেন মিতালী দেবী, চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ |

“এই দেখো আমার তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে |”- মিতালী দেবী |

বীরেন বাবু ইতিমধ্যে একটু ধাতস্থ হয়েছেন, এবার বললেন,”একটা কথা বলছি মন দিয়ে শুনে রাখ, তোমার যা হাভাতের বাপের বাড়ি, শুনলেই সব ভাগ চাইতে চলে আসবে, একদম কিছু বলবে না এখন |”

-“পাগল নাকি? যাই হোক আমার বাপের বাড়ি হাভাতের নয় আদৌ, বরং তোমার ভাইরা তাই | আর কিছু হলো কি হলো না তুমি তো দান-ছত্র খুলতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে, তাই দয়া করে নিজের মুখে কুলুপটি আঁটো |”

-“আচ্ছা বেশ | আচ্ছা, আমরা তাহলে এই ফ্ল্যাটটায় আর থাকব না বুঝলে, এত ছোট | ভাল ফ্ল্যাট দেখতে হবে একটা | এটা বিক্রি করে দেব |”

-“আমি তো তোমায় প্রথম থেকেই বলেছিলাম এ ফ্ল্যাট আমার প্রথম থেকেই পছন্দের নয়…”

-“এটা আবার কবে বললে? মনে পড়ছে না তো |”

-“সে তোমার মনে পড়বে কেন? আচ্ছা মডিউলার কিচেনটা কিন্তু মাস্ট |”

-“সে ঠিক আছে, আর ছেলেটাকেও ভাবছি ভালো দামী একটা স্কুলে ভর্তি করব | ছেলে তো বড় হচ্ছে, ওর ক্রিকেট খেলার শখ, তাহলে কোচিং-এও ভর্তি করে দেব |”

-“আচ্ছা, টাকাটা তো আমার, আমি কি করব একবার জিজ্ঞাসাও করছ না?”

খানিক সামলে বীরেন বাবু বললেন,” হ্যাঁ, সে তোমার টাকা, তুমি যা ভাল বুঝবে করবে | লাস্ট ডিসিশনটা তোমারই, আমি তোমায় শুধু বললাম |”

-হুম, কবেকার শখ বিদেশে বেড়াতে যাব, গাড়ি কিনব, হীরের একটা গয়না কিনবো, এসব আগে করি, তারপর দেখছি |”

-“আমার একটা ছোট ব্যবসাও শুরু করার ইচ্ছে ছিল, তোমায় তো বলেছি | রেস্টুরেন্টটা শুরু করতে পারব তাহলে মনে হচ্ছে |”

****************

মিতালী দেবী মনে মনে ভাবলেন, ‘আজব মানুষ তো, জিতলাম আমি, আর শখ পূরণ হবে ওর | আহ্লাদ কত?”

বীরেন বাবু মিতালী দেবীর নিস্তব্ধতা দেখে ভাবলেন,’আচ্ছা, মেয়ে মানুষের হাতে এত টাকা? মেয়েমানুষ তাহলে হাতের মুঠোয় থাকবে? নাহ,মেয়েদের হাতে টাকা থাকলে কক্ষনো স্বামী দের সম্মান করে না তারা… |”

মুখে কিছু না বলে বীরেন বাবু তাকালেন মিতালী দেবীর দিকে, মিতালী দেবীও তাকালেন বীরেন বাবুর দিকে | দু’জনের চোখেই এখন যেন সেই স্বামী স্ত্রীর বিশ্বাস, ভালবাসা, শ্রদ্ধা চাপা পড়ে গেছে অবিশ্বাস আর রাগে |

মিতালী দেবী উঠে ঘরে চলে গেলেন, ঘরে গিয়ে ভাবতে বসলেন,’কোন দিন তো এতটুকুর জন্য নিজের শখ আহ্লাদ পূরণ করলাম না | এখন যখন নিজেই তার সুযোগ পেতে চলেছি, সেখানেও ভাগ বসাবে, ব্যাগড়া দেবে ? একে তো সংসারের ঘানি টেনে টেনে নিজের কিছুই জমল না, একে দাও, ওকে দাও, তাকে দাও, ধ্যুত |’

বীরেন বাবু কাগজটা টেবিলে রেখে, কাপটা রান্না ঘরে রাখতে গেলেন, ভাবলেন,’যতটুকু যা করেছি নিজের যোগ্যতায়, অনেক কষ্ট করেছি নিজের স্ত্রী সন্তানের জন্য | এখন যখন একটু নিজের স্ত্রীর কাছে আবদার জানালাম, সে শুধুই নিজেরটা ভাবল, ছিঃ |’

রান্না ঘর থেকে ঘরে ঢুকলেন বীরেন বাবু | মিতালী দেবী বললেন,”এবার থেকে ঐ ঢপের বাটা, তেলাপিয়া মাছ কেনার অভ্যাস টা বদলাতে শুরু কর | বুঝলে? ঐ এক মাছ খেতে খেতে মুখে অরুচি ধরে গেছে | আর এই চাষার মত সবসময় ওপর দিয়ে শার্ট, চটি পরার অভ্যাসটা ছাড়ো |

বীরেন বাবু শুধু শুনলেন আর ভাবলেন,’সত্যিই অর্থ মানুষকে এক লহমায় কতটা বদলাতে পারে, নয়তো ওনার স্ত্রী মিতালী,যাকে কিনা উনি এত ভালবাসেন, তাকে চিনতে এত ভুল হয় কি করে | এক মুহূর্তে এরকম আমূল পরিবর্তন !’

||৪||

এদিকে এতক্ষণে কথাবার্তায় ছেলে বুবাই-এর ঘুম ভেঙে গেছে, এদিক ওদিক করতে করতে  অবশেষে বিরক্তি নিয়ে সে উঠেই পড়ল | বুবাই ক্লাস টু-এ পড়ে | কী তখন থেকে লটারী, টিকিট বলে যাচ্ছে, মায়ের এটা নেশা জানতাম, এবার বাবাও?

বসার ঘরে তখন যা সমস্ত কথা চলছে তা শুনে চক্ষু চড়ক গাছ বুবাই-এর | মানেটা কী? এক কোটি টাকার লটারি জিতেছে মা ? বুবাই তাড়াতাড়ি খবরের কাগজটা আর টিকিটটা নিয়ে মেলাতে বসল ….৪৩২৩৯৬৯৫ | কই মিলেছে? মাথা খারাপ নাকি এদের?

-“কী গো, তোমরা? তখন থেকে কী বলছ তোমরা ? ভালো করে চোখ মেলে দেখ, মেলেনি লাস্ট ডিজিট | ভুল দেখেছে বাবা, ৫ কে ৬ দেখেছে তাড়াহুড়োয় |

****************

……..কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা, কোথাও যেন একটা স্বস্তির নিঃস্বাস পড়ল আবছা, কী জানি, কেউ যেন মনে মনে বলল, যা হয়েছে ভাল হয়েছে |

||৫||

আবার একই খাতে বইতে লাগল মিতালী দেবী বীরেন বাবুর জীবন | শুধু মিতালী দেবীর ফ্ল্যাটটা বড্ড ছোট মনে হয় আজকাল, বাটা মাছ-এর কাঁটা বাছতেও ভাল লাগে না আর এখন | বীরেন বাবুর চোখেও যেন একটা পরিবর্তন, নিজের স্ত্রীকে চেনাটা যেন ভুল হয়েছিল এরকম ধাঁচের…. ব্যস, এটুকুই |

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

মুক্তি

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, আকাশ তখন থেকে ঠায় বসেই রয়েছে ঘাটে। এখন বাঁধানো ঘাট থেকে করিডোর হয়ে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া অনেকটা সহজ

Read More »

বন্ধু হবি চল

বাক্সপেটরা নিয়ে স্টেশনেই বসে ছিল নয়না, বৃষ্টি পড়েই চলেছে, মুষলধারায়। বাবা বলল আরেকটু অপেক্ষা করতে, এত বৃষ্টিতে তো ছাতাও হার মানবে, আর বেরিয়ে রাস্তাও অজানা

Read More »

টিফিনবাক্স

প্রতিবারের মতন এই বছর ও সমস্ত সরঞ্জাম গুছিয়ে বেরোনোর জন্য ব্যস্ত অমিত, অন্তত সন্ধ্যার মধ্যে বেরোতে না পারলে খুব মুশকিল। পুজোর দিকটা কতদূর কি হলো

Read More »

ক্লিক

।।১।। -“মালিনী, কালকের মিটিংটা কখন ফিক্স করেছ? -“ম্যাম, সকাল ১১টা।” -“ওকে, কনফার্মেশন পেয়ে গেছ?” -“ইয়েস ম্যাম।” -“ওকে গুড। আর।।। এক মিনিট।।।” টেবিল থেকে ফোনটা তুলে

Read More »

শিক্ষা

।।১।। দাপুটে, বদরাগী, মেজাজি এই সব কটা বিশেষণই বেশ ভালো যায় মিসেস বোসের সাথে। রেণুকা বোস আর অমরনাথ বোস সানফ্লাওয়ার এপার্টমেন্টে ১২০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাট 2c

Read More »

বিদায়

।। ১।। রীতিমত জোর করেই নন্দিনীকে পাহাড়ে নিয়ে এলো সঙ্গীতারা। আসার ইচ্ছে তো ছিল না ওর একদমই, শরীর সাথ দিলেও মনটা কোনোভাবেই সাথ দিচ্ছে না।

Read More »

Share with