।।১।।
-“জবা, ছাদে জামা-কাপড়গুলো শুকলো কিনা দ্যাখ তো একবার, আর বড়িগুলোও দেখে আসিস ।”
বিক্রমপুরে এলে বল্লভ বাড়ি চেনে না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন এখানে । গ্রাম বাংলার সুবিশাল দিগন্ত বিস্তৃত মাঠও যেমন আছে, তেমন আধুনিকতার ছোঁয়াও আছে এখানে । এখানে সূর্যের আলো যেমন পাখিদের ঘুম ভাঙ্গায়, তেমন স্ট্রিট লাইটের আলো পথিকদের রাস্তা দেখায় । কবিগুরুর গ্রামছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ থেকে অনেকটা এগিয়েছে বিক্রমপুর, কিন্তু শহরের ধূসর এখানকার সবুজটাকে গ্রাস করতে পারেনি এখনো ।
মহামায়া, বল্লভ বাড়ির বড় বৌ । একাধারে সংসার, মেয়ে সামলে নিজের ছোট ব্যবসাটাও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছে নিজগুনে ।
বল্লভ বাড়ির বড় বৌ চাকরি করবে তা আবার হয় নাকী? সুতরাং, চাকরি না হোক ব্যবসাই সই । নিজের শাড়ীর দোকান নিয়ে অনেক কটু কথা শুনলেও কানে তোলেনি বিশেষ মহামায়া, আর তার ফলস্বরূপ আজ মৃণালিনী শাড়ী এম্পোরিয়ামের বাড়বাড়ন্ত ।
************
মহামায়ার এই শাড়ীর দোকানের শাড়ীর ডিজাইন সম্পূর্ণ নিজস্ব । স্বকীয়তায় ভরপুর প্রতিটা কলকার টান, শাখা-প্রশাখা, পাতাগুলো যেন ভীষণ সজীব, মহামায়ার হাতের টানে ।
স্বামী, সংসার, সন্তান, এই দোকান ছাড়াও আরও কিছু মানুষ আছেন, যারা মহামায়ার মুখ চেয়েই বেঁচে আছে, তারা হলো মৃণালিনী শাড়ী এম্পোরিয়ামে কর্মরতা কিছু মেয়ে, যারা সমাজের কাছে অবহেলিত, আর ঘরে যাদের ঠাঁই নেই, আজ তারা সম্মান নিয়ে বাঁচার মানে পেয়েছে মহামায়ার জন্যই ।
।।২।।
“দোলের আর কিন্তু মাত্র একদিন বাকী, সব ব্যবস্থা ঠিক করে দেখে নিচ্ছিস তো?”
শিবের ত্রিনয়নের টানটা দিতে দিতে মেয়েকে প্রশ্ন করল মহামায়া ।
-“সে সব তো হলো, কিন্তু প্রত্যেকবারই হলিতে তুমি একটা কথা দাও, আর প্রত্যেকবারই তার খেলাপি করো, এটা কিন্তু ঠিক না, এরকম করলে আমি আর কোন কাজ করে দেব না ।”
ওলি, মহামায়ার একমাত্র মেয়ে, এই বছর মাধ্যমিক দিয়েছে । প্রতিবারই হোলিতে মায়ের নিজের আলমারিতে রাখা লাল ভেলভেটে মোড়া একটা ইয়া বড় গাবদা কাগজের ফাইল দেখতে পায়, বেশ রহস্যময় লাগে ওর, মাকে জিজ্ঞেসও করেছে বহুবার, কিন্তু প্রত্যেকবারই মা বলেন, আর একটু বড় হ, তারপর তোকে বলব । কিন্তু কোনদিনই বলা আর হয় না মহামায়ার ।
-“হুম, মনে আছে, বলব, এবার বলব, কিন্তু খুব মন দিয়ে শুনতে হবে । যা এবার কাজগুলো সার তো দেখি ।”
।।৩।।
“মিমি, অ্যাই মিমি, কলেজ থেকে ফিরে নিজের ঘরে ঢোকা নেই, সবসময় শুধু ঐ ঘরে যাওয়া, তোকে না কতবার মানা করেছি ।”, মায়ের কথা পুরোটা না শুনেই ছাদের ঘরের দিকে চলে গেল মিমি ।
সারাদিনের লেখাপড়া, কলেজ, গানের রেয়াজ, সবকিছুর পর যদি একটু প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে হয়, তাহলে এই ছাদের উপর উত্তপ্ত ঘরটাই বাড়ীর আর বাকী হিমশীতল ঘরের থেকে অনেক ভাল এটাই মনে হয় মিমির ।
আর তার কারণ হলো সেই মানুষটা, যে কিনা উপেক্ষিত, অবহেলিত হয়েও হাসিমুখে কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন । প্রচন্ড গরমেও ছাদের উপরের এই ঘরে থাকতে যার বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই । শতছিন্ন, মলিন শাড়ীতে, সামান্য কিছু খেয়েও, যেন অনেকটা মানিয়ে নেওয়া, মেনে নেওয়া ।
মৃনাল, মিত্তির বাড়ির মেয়ে, মিমির একমাত্র পিসি ।
“কীরে, এলি তাহলে? সময় হলো তোর? আয়, আয়, বস, মুড়িটা মাখি দাঁড়া ।”
এই মানুষটার জন্যই নীচের লোভনীয় খাবার ছেড়ে এখানে এসে মুড়ি খাওয়া যায় নির্দ্বিধায়, কেমন যেন এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি, তাকে ঠিক মতো চিনলে, জানলে ভালো না বেসে পারাই যায় না ।
-“কী, দ্যাখা হলো আজ, ঝগড়া মিটেছে?”
-“তুমি কী করে জানলে ঝগড়া হয়েছিল?”
-“বয়স হয়েছে কী এমনি এমনি, তা কিভাবে মিটল? হাত ধরলি? আর কী কী করলি? বল, বল ।”
-“ধ্যাৎ, তুমি না পিসি, যা তা ।”
-“যাতা-র কী আছে, যা হয়, তাই বলছি, আমিও তো প্রেম করেছি নাকী? জানবো না?”
-“মানে? তুমি প্রেম করতে? কবে? মানে কীভাবে? কই কখনো বলোনি তো?”
-“তুই তো কখনো জানতে চাসনি |”
-“কেন? তোমায় তো জিজ্ঞেস করতাম, তুমি সাদা শাড়ীও পরো না, মাথায় সিঁদুরও পরো না, কিন্তু মায়েদের কাছে শুনেছি ছোটবেলায় তোমার বিয়ে হয়েছিল, তাও তো তুমি কিছু খুলে বলোই না?”
দাঁড়া, তোকে আজ একটা জিনিস দেখাই, বলে একটা পেন্সিলে আঁকা স্কেচ বের করল মৃণালিনী, একজন পুরুষের পোট্রেট । অনেক পুরোনো কাগজ, হলদেটে ছাপ, কিন্তু তাও খুব যত্নে রাখা, “এটা আমার সবথেকে মূল্যবান আঁকা, বলতো এটা কে?”
-“কে? পিসেমশাই?”
-“ধ্যুর, তোর মাথায় আর এই জীবনে কিছু ঢুকবে না, প্রেম করিস কী করে? তোর কাছে যেমন পার্থ মূল্যবান, তেমনি আমার কাছে এই ছবিটা ।”, বলেই নিজের স্বভাবসিদ্ধ রহস্যময়ী হাসিটা হাসল মৃণাল ।
বিস্ফারিত চোখে নিজের পিসির দিকে তাকিয়েছিল মিমি । ও এখন সবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ার, চেনা জানা ছকে বাঁধা গন্ডি থেকে বেরোনোর সাহস এখনও অর্জন করতে পারেনি । সমাজ যেটাকে ঠিক-এর তকমা দেয়, সেটাকেই চোখ বুজে ঠিক বলে মানে মিমি, যাচাই করার বা ছকের বাইরের ভাবনা চিন্তাগুলো এখনো ওর মনে উঁকি দেয়নি ।
মিমি মনে মনে ভাবল, তার মানে আর পাঁচটা লোক যা বলে, সেটাই ঠিক! ও যে কারও কথা কানে তুলত না, সেটা কি তাহলে ভুল ছিল? সবাই তো বলতো কুলটা, দুশ্চরিত্রা, স্বামীর ঘর করতে পারেনি, সেগুলোই তাহলে ঠিক? তাই নিজের স্বামীর ছবি না এঁকে পরপুরুষের ছবি আঁকড়ে বেঁচে আছে? ছি ছি ছি !
“আমি জানি তুই কী ভাবছিস।।।।”, মিমির অবনত দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল মৃণাল ।
মিমির মুখে কোন কথা ছিল না, গ্রীষ্মের প্রচন্ড রৌদ্রে ঘরের পাশে পায়রাগুলো ঝিমোচ্ছিল, চারদিকটা নিস্তব্ধ, এতক্ষণে নিচেও মা, জ্যেঠিমারা শুয়ে পড়েছে, নীচের কলতলায় জল পড়ছে টুপটাপ, ব্যস, আর কোন শব্দ নেই আশেপাশে ।
নিস্তব্ধতা ভাঙল মৃনালের একটা কথায়, “তোর থেকে তোর পার্থকে কেউ জোর করে কেড়ে নিল, আর অন্য কারুর সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল, কী করবি তুই?”
মিমি তাকিয়ে বলল,”কেড়ে নেবে মানে? কেন?” মিমির গলায় অজানা উদ্বেগ ।
-“যেটুকু জিজ্ঞেস করছি বল না ।”
হাতের মুড়ির বাটিটা সরিয়ে মিমি বলল,”আমি আমার পার্থকে কাড়তেই দেব না, যে কেড়ে নিতে চাইবে তাকেই শেষ করে দেব, আর বিয়ে? কোনো প্রশ্নই ওঠে না “
মুচকি হাসলেন মৃণালিনী,”প্রথম দুটো পারিনি, শেষটা করতে পেরেছি, এবার বল ।”
-“মানে?”, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল মিমি, মৃণালিনীর মুখে তখনো হাসি, সেই হাসি চোখের দৃষ্টি অবধি পৌঁছায়নি, সে হাসির আড়ালেই যেন লুকিয়ে আছে অনেক না বলা না বোঝা কথা, অনেক না বোঝাতে পারা কথা, অনেকটা হারানোর যন্ত্রনা, আর খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচার আর্তি ।
“আরও বোঝাতে হবে? যাকে ভালবেসেছি তার ছবিটুকু আঁকড়ে বাঁচছি, আর যাকে ভালবাসিনি, তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিলাম বিয়ের মণ্ডপে, এই হলো আমার অপরাধ । আর হ্যাঁ, আমার নিজের লোকগুলো, যারা আমার আপনজন, তারাই এই মানুষটাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল । তাদের পারিনি শেষ করতে । যে মানুষটা আমার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছিল, মরার আগেও নিজের কথার খেলাপ করেনি, তাকে ছেড়ে সুখে সংসার? সম্ভব বলতো? তাতে লোকে আমায় বিয়ে ভাঙার জন্য নানা কথাই বলে, সে কী আমি জানি না? আমি কুলটা, নষ্টা, আমার নিজের বাড়ির লোকই যখন বিশেষণগুলো উপহার দিয়েছে, তখন আর বাইরের লোকের কী দোষ? শুধু চরিত্র নয়, আমার মাথাও নাকী খারাপ, ওদের ঘাড়ে রয়েছি, কতকীই না শুনলাম ।” এতটা বলেই নিজের উপর নিজেই খানিক হাসলেন মৃণালিনী ।
-“এই দ্যাখ, আমার আঁকা কত শয়ে শয়ে ছবি, এগুলোর মধ্যে দিয়েই আমি আমার পলাশকে খুঁজে পাই, ঐ মানুষটাই তো আমায় হাতে তুলি ধরতে শিখিয়েছিল, সাদা কাগজ কিভাবে মনের রঙ্গে রাঙিয়ে তুলতে হয়, ঐ মানুষটাকে ভালবেসে জেনেছিলাম আমি । বসন্তের লাল পলাশ এঁকে দিয়েছিল আমার সারা শরীরে, কুমারী থেকে নারী হয়েছিলাম আমি তাঁর ছোঁয়ায় । লাল আবিরে রক্ত লাল ছিল আকাশ সেদিন, দোল ছিল সেদিন, আর দ্যাখ, আমায় ছেড়েও গেল ঐ দোলেই । তার ভালোবাসায় হেরে যেতে ইচ্ছে করত বারবার, তার কাছে যেন মাথা নত করেও জিতে যাওয়া, তার ভালবাসায়, লজ্জায় রাঙা হয়েছিল সেদিনকার ষোড়শী মৃণালিনী । এই কলকার টান, মা দুর্গার চোখের মণিতে, লতা শাখা প্রশাখার বাঁকে, প্রতিটা তুলির টানে ঐ মানুষটা জড়িয়ে । আমার পলাশ জড়িয়ে ।”
************
দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল, রক্তলাল আভা পুরো আকাশটাকে মুড়ে ফেলেছে ততক্ষনে, সামনের পুকুরটায় লাল সূর্যটার প্রতিচ্ছবি, জলের দুলুনিতে ভাঙা গড়ার খেলা খেলছে সে । চারিদিকে কেমন ঘরে ফেরার আমেজ, পাখিগুলোও ঘরে ফিরছে, মিমিও পা বাড়াল ঘরের দিকে । দূরে শোনা যাচ্ছে সন্ধ্যের শঙ্খধ্বনি ।
নিজের ঘরে গিয়ে বসল মিমি, একাকী । আজ সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে ওর, সবটা শুনে জেনে । একটা মানুষের মধ্যে থেকে তার আত্মাটা কেড়ে নিয়ে তাকে জোর করে বাঁচিয়ে রাখা, এর থেকে বড় অন্যায় আর কী হতে পারে? কাউকে ভালবাসা কী করে কোন অপরাধ হতে পারে? এভাবে মেরে বাঁচিয়ে রাখাটা তাহলে কোন প্রকারের অপরাধ? মাথাটা ধরে বসে রইল মিমি । পিসির আঁকার এত সুন্দর হাত, এত স্কেচ, এসব কিছু তো সঠিক মর্যাদাই পেল না, যার থেকে এই সৌন্দর্য সৃষ্টির উৎপত্তি, সেও রইলো না । কেন? একজনের সাথেই এত অন্যায় কেন?
ওদের থামওয়ালা বাড়ির আনাচ কানাচ, প্রতিটা কোণ, বাঁক, চিৎকার করে বলছিল যেন, মিথ্যে ঐতিহ্যের ভড়ং আর যে নেওয়া যাচ্ছে না । বন্ধ হোক এবার বনেদীয়ানার ভড়ংটা, কৌতুক করছিল জানলার লাল নীল কাঁচগুলো, ভিতরে পুরোটাই তো ঘুন ধরা, ফাঁপা, আর কী লাভ?
*************
সেই দোলে পিপির ঘরে গিয়ে আর আবির মাখানো হয়নি মিমির, আদর করে মিনু পিপি বলে ডাকত মিমি । পিপি কোনদিনই দোল খেলত না, এবার সব শুনে একটু পিপির সাথে দোল খেলতে ইচ্ছে ছিল মিমির । সাদা কালো জীবনের ঐ অভিশপ্ত দিনটাকে যদি একটু রাঙানো যায় ।
নাহ, সম্ভব হয়নি, ফাঁকি দিয়ে চলে গেল মিনু পিপি, সেদিনই । চলে যাওয়ার পর মুখে যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তির ছাপ । যেন এইতো মুক্তি, এবার তোমার কাছে যাওয়া থেকে আর কেউ আটকাতে পারবে না আমায় পলাশ ।
আমাদের সমাজের কাছে মৃত্যুর পর খারাপ মানুষ হয় ভাল আর ভাল মানুষ হয় খুব ভাল । এখানেও জানা নেই, কি জন্য বাড়ীর সব মানুষ, আত্মীয় স্বজন, যেন মিমির থেকেও বেশী আপন করে নিচ্ছিল ঐ প্রাণহীন শরীরটাকে । এতদূর অবধি খুব একটা অবাক হয়নি মিমি, চুপ ছিল, কিন্তু যখন মুখাগ্নির অধিকার নিয়ে টানা পোড়েন শুরু হলো, বংশের কোন প্রদীপ, মানে বাড়ীর কোন ‘ছেলে’ এই গুরুদায়িত্ব পালন করবে, তখন আর নিজেকে স্থির রাখতে পারল না মিমি । ও মেয়ে বলে ওর কোনো অধিকার নেই, আর ছেলে বলে, যে কোনদিন দুদন্ড ভালভাবে কথা বলেছে কী না সন্দেহ সে করবে কাজ, হায় রে সমাজ ।
নাহ, চুপ থাকেনি মিমি । সেদিনও না, আজও না । সেদিনও পিপির শরীরটাকে কলুষিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল, আর আজও পিপির স্বপ্ন, শখ, পিপির কাজটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র ।
।।৩।।
এতদূর বলে থামল মহামায়া, দুচোখ অশ্রু সিক্ত, সামনে বসে ওলি, ওলির চোখেও জল ।
-“এই খাতাটা তোমার পিপির তাই না?”
-“হুম, পিপির থেকেই আমার সাদা কাগজে আঁকিবুঁকি কাটতে শেখা ।”, বলে দুটো কাগজ বের করলেন মহামায়া,”ইনিই পলাশ, পিপির আঁকা সবথেকে সুন্দর সৃষ্টি, আর এই আমার পিপি, তোর মা’র আঁকা সবথেকে সুন্দর সৃষ্টি ।”
হাঁ করে ছবিদুটোর দিকে তাকিয়েছিল ওলি । মৃণালিনী দেবীর মুখের স্মিত হাসি, চোখের গভীরতা, না বলা কথা, গালের তিল, সবটুকু ভারী যত্নে, বড় সুন্দর করে তুলে ধরেছেন মহামায়া । ছবি দেখেই জানতে, বুঝতে, ভালবাসতে ইচ্ছে করে মানুষটাকে ।
-“পিপির পায়ে লাল আবিরটুকু দিয়ে নিজের কাছেই শপথ করেছিলাম, তোমায় এভাবে হেরে যেতে দেব না আমি । আর আজ দ্যাখ, এতগুলো মানুষের জীবন ঐ মানুষটার তুলির টানে রঙ্গিন হয়েছে । পিপি শুধু দিয়েই গেল, সবটুকু রাঙিয়ে দিয়ে গেল, নিজের জীবনের সমস্ত রং উজাড় করে বাকী অনেকের জীবন রাঙিয়ে দিয়ে গেল ।”
*************
বল্লভ বাড়ীর দালানের লাগানো মাঠে প্রতিবারের মত এবারও দোল উপলক্ষে উৎসব আয়োজিত হয়েছে । দোকানের মেয়েরাই সব করে । চারিদিক লাল আবিরে ঢাকা, সবাই খেলতে ব্যস্ত । প্রতিবারই গান বাজে, এবারও সেই একই গান, এতদিন জানত না, বুঝত না ওলি, আজ জন্য ওলি, ঐ মানুষটার প্রিয় গান এটা, তার জীবনের গান এটা, “রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে-“