আজ আবার সরস্বতীপুজো

সর্ষেফুলের মিষ্টি হলুদ রঙের শাড়িটা পরে প্রথম যেদিন স্কুলের পুষ্পাঞ্জলি দিতে এসছিলিস, ক্লাস ইলেভেনে, সেদিনই তোর খোলা চুলে আর চোখের কাজলে কুপোকাত হয়েছিলাম ।

ছেলেরা সাধারণত দুপ্রকারই হয়, স্মার্ট এন্ড হ্যান্ডসাম আর ক্যাবলা হাঁদা টাইপ, আমি দ্বিতীয়টাই । তাই কোনদিনই আমার মনের ভাব কথা হয়ে তোর কান অবধি পৌঁছায়নি । তোকে দেখে কবে প্রেমে পড়েছিলাম জানা নেই, কিন্তু তোকে দেখতে না পেলে সেদিনটা আমার মনের আকাশে সূর্য উঠত না, এটুকু বলতে পারি ।

বায়োলজি টিউশনটা আমার সব থেকে প্রিয় ছিল কারন, ঐ দুটো ঘন্টা স্কুলের পর তোকে আবার দেখার সুযোগটুকু মিলত | তোর রেশমের মতো চুল, তোর কানের ঝুমকো, তোর কথা বলা, তোর চাঞ্চল্য, এ’সব কিছুই আমার ভীষণ ভীষণ ভালো লাগত, ইনফ্যাক্ট এখনও লাগে ।

গলির মুখে তোর জন্য একদিন দাঁড়িয়েছিলাম অঙ্ক টিউশনের বাইরে মনে আছে? ব্যাচ আলাদা ছিল তো তাই । তুই আমার চোখে চোখ রেখে যখন জানতে চেয়েছিলিস আমি এখানে কেন? তখনও বলতে পারিনি যে তোর জন্য, শুধু তোর জন্যই আমার এখানে আসা ।

স্কুল পেরিয়ে কলেজে যে একসাথে পড়তে পারব, সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি ।

ভেবেছিলাম এবার নিশ্চয় আমি আমার মনের কথাটা জনাব, ভাগ্য আমায় হয়তো এভাবেই সুযোগ দিচ্ছে ।

কিন্তু, তুই যে কৌশিকের হাত ধরবি, আমি ভাবতে পারিনি । সেদিন তোর জন্য কেনা লাল গোলাপটা আমার ব্যাগের ভিতরেই শুকিয়ে নিজের রং আর সুবাস হারিয়েছিল ।

তোর হাতে অন্য কারো হাত, আমি মানতে পারিনি । কিন্তু তুই খুব খুশী ছিলি, আর তোর খুশীতে আমি খুশী ।

এরকমই সরস্বতী পুজোয় শাড়ী আর পাঞ্জাবীতে তোরা দুজন অঞ্জলি দিয়েছিলি, তোর চোখে উপচে পড়া আনন্দে আমি যেমন খুশী ছিলাম, তেমনি তোর চোখের জলেও সমব্যথী ছিলাম আমি । কৌশিকের ছেড়ে চলে যাওয়ায় তুই যে চোখের জল ফেলেছিলি, খেয়াল করিসনি হয়তো – তোর জন্য আমার চোখও আর্দ্র ছিল ।

বলতে পারিনা আমি, দেখাতে পারি না, তুই তো জানিস সেটা । বন্ধুত্বের নিরিখে দেখতে গেলে দুইজন খুব ভাল বন্ধু আমরা । তাই তুই খুব ভাল করেই তো জানতিস তোর ক্যাবলা, হাঁদা বন্ধুটা বলতে জানে না , আর শুধু শব্দ দিয়ে আমার ভালোবাসার গভীরতা মাপা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না । কিন্তু তোকে খুব খুব ভালবাসতাম, আজও বাসি, আজীবন বাসব ।

তোর ক্লান্ত মাথাটা রাখার জন্য আমার কাঁধটা সবদিন পাবি, তোর ঘুম না আসা চোখে ঘুমের পালক বুলিয়ে দেওয়ার জন্য আমায় পাবি, তোর মন খারাপের বাদলা দিনে একসাথে বৃষ্টি দেখার জন্য আমায় পাবি, রৌদ্রজ্জ্বল সোনালী দিনে তোর গান শোনানোর জন্য আমায় পাবি ; তোর মনের প্রতিটা কোণে, তোর বইয়ের মলাটে, তোর ম্যাথসের গ্রাফ পেপারে সব জায়গায় তুই আমায় পাবি, একটু নিজের মতন করে খুঁজে নিস ।

আজ আবার একটা সরস্বতী পুজো । তবে আজ তুই হলুদ শাড়ীতে নয় লাল বেনারসীতে অন্যান্য । কপালে চন্দন, নাকের নথ, মাথার টিকলিতে আমায় খুঁজে পাচ্ছিস কী? আমি জানি তুই পাবি । ভাগ্যিস, আমার মনের কথাটা বুঝে তুই-ই আমায় তোর মনের কথাটা জানিয়েছিলি নয়তো আজকের সানাই-এর সুর কী এত মধুর হতো? আমায় এভাবেই খুঁজে নিস, তোর নিজের মতন করে । দেখিস ঠিক পাবি, আমি আছি তোর পাশে, আজীবন । এই যেমন এখন লুকিয়ে আছি তোর ঘুমিয়ে পড়া চোখে, তোর সদ্য পরা লাল টকটকে সিঁদুরের মধ্যেই লুকিয়ে আছি । খুঁজে নিস, বুঝে নিস, আমায় তোর মতন করে গুছিয়ে নিস ।

ইতি, 

তোর হাঁদা বন্ধু  বর

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

তোমায় আমায় মিলে

।।১।। “উফফ! পা-টায় যা অসহ্য যন্ত্রনা করছে। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে। আর পারা যায়?” হাতের , কানের গয়নাগুলো খুলতে খুলতে বলছিল কুহেলী। রাজীব ততক্ষণে মোবাইল

Read More »

নিভৃত যতনে

।। ১।।   কোর্টের বাইরে তখন খাঁ খাঁ করছে রোদ, ঘড়ির দিকে তাকাল একবার রিয়াঙ্কা, কোথা দিয়ে এতটা সময় চলে গেল বুঝতেই পারেনি। একবার বাবার দিকে

Read More »

সন্ধ্যে নামার আগে

।।১।। “প্লিজ তোমার ভাঙা রেকর্ডটা একটু বন্ধ কর তো, সবসময় ভালো লাগে না। একেই অফিসে এত কাজের প্রেশার, বাড়ীতে একটু শান্তিতে বসব, তাও দেবে না।”

Read More »

যদি

।।১।। “আর দেরী করলে কিন্তু, সত্যিই পৌঁছতে পারবে না, অলরেডি সাড়ে চারটে বেজে গেছে” মা-এর উদ্দেশ্যে চেঁচাল মৌমিতা, অয়নের দিকে একবার আড়চোখে তাকাল। অয়নও একটা

Read More »

তুমি রবে নীরবে

।।১।। “বাবু, তোকে আর কতবার বলতে হবে, রোজ একবার করে অন্তত প্র্যাকটিসটা করবি question bank টা। আজও তো করলি না।” পেটির মাছের পিসটা একমাত্র ছেলের

Read More »

একে একে এক

।।১।। চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমার আড়ালে ঘন কালো কাজলে মোড়া বড় চোখদুটো সামনের দেবদারু গাছটার দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্কভাবে কি যেন একটা খুঁজছিল, হাতের পেপার ওয়েটটা

Read More »

Share with