একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প

।।১।।

“কাকা, ফুচকায় আর একটু ঝাল দাও তো”- বলেই হাপুস হুপুস করে চোখ নাক মুছে আবার ফুচকাটা মুখে পুরল উদিতা ।

“ঝাল খেতে গিয়ে নাকের জল, চোখের জল এক হচ্ছে তবু খাওয়া চাই”- বলেই উদিতাকে ভালবেসেই দু ঘা বসাল রাহুল । 

উদিতা , রাহুলের কথায় বিশেষ কান না দিয়ে খাওয়ায় মনোনিবেশ করল । খাওয়া শেষে ফাউ নিয়ে খানিক তর্ক বিতর্কও হলো, তারপর হাঁটা লাগল দুজন ।

রাহুল আর উদিতার এই হেদুয়া পার্কের পাশ দিয়ে হাঁটাটা নতুন কিছু নয়, দীর্ঘ বেশ কয়েক বছরের অভ্যাস, বহুদিন ধরেই এই রাস্তা, দোকান, পার্কের বসার বেদি, ফুচকাওয়ালা, কৃষ্ঞচূড়া গাছটা এরা সবাই ওদের চেনে । ঐ যেদিন রাহুল প্রথম উদিতার হাত ধরেছিল, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই, আচমকা, সেদিন উদিতার সাথে সাথে লাল কৃষ্ঞচূড়াটাও লজ্জা পেয়েছিল, রাঙা হয়েছিল উদিতার কানের লতি, গালের লালাভ আভা সেদিন রাহুলের চোখ এড়ায়নি ।

অথচ, এই রাহুল আর উদিতাই কোনদিন ভাবেনি, ওদের সম্পর্কটা এতদূর গড়াবে । শুধু ওরা না, কেউই ভাবেনি । কি করে ভাবতো? দুই মেরুর দুই মানুষ একে অপরকে এতটা ভালবাসতে পারবে কোনদিন ওরা নিজেরাই ভেবেছিল? 

সেই যেবার হায়ার স্টাডিজের জন্য রাহুল অনেকটা দূরে চলে গেল, রাহুলকে প্রথমে কিছু না বললেও, নিঃশব্দে, আড়ালে কম চোখের জল ফেলেছিল উদিতা ? যা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তাই হয়েছে , বুঝতেই পারেনি রাহুলকে কখন এতটা আপন করে নিয়েছে । ওদের রাতজাগা প্রতিটি কথোপকথন, খুব চেনা কফিশপটা, কলেজের গেটটা, টিউশন ব্যাচের চক ডাস্টার ব্ল্যাকবোর্ড ওদের বেড়ে ওঠা এই প্রেমের সাক্ষী ।

আনমনে দুজনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসব কথাই বারবার মনে আসছিল দুজনের ।

-“আচ্ছা, তোর মনে আছে, এই দোকানটার লস্যি তোর কত প্রিয় ছিল?”

-“হ্যাঁ, এই দ্যাখ, সেবার পুজোয় এই দোকানটাতেই খেয়েছিলাম না ? কি খারাপ ছিল বল ।।।।”

এসব বলতে বলতেই ট্রামলাইন পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে দুজন । আজ কতদিন পর আবার সেই চেনা রাস্তা, চেনা গলি, যেন অনেক না পাওয়ার মাঝে অনেকটা ফিরে পাওয়া ।

“আচ্ছা শোন, আজ তোকে কয়েকটা জরুরী কথা বলতেই এখানে ডাকা ।” রাহুলের দিকে তাকিয়েই বলল উদিতা ।

রাহুল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে উদিতা আবার বলল, দ্যাখ, অনেকগুলো বছর অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ির সকলকে আটকে রেখেছি, এভাবে আর কতদিন? আমার বাড়ির লোকজন কিন্তু এবার সিরিয়াস আমার বিয়ে নিয়ে।।।।।” কথাটা আর শেষ করতে পারল না উদিতা ।

খুব চেনা পরিচিত ভালবাসার গল্প এটা, আমাদের সবার মতোই ।

রাহুলের বাবা রিটায়ার করেছেন আগের বছর, সরকারী কেরানি ছিলেন, বাড়ির অবস্থা নিতান্তই সাধারণ । সেই বাড়ি থেকে ঘুঁষ দিয়ে সরকারী চাকরি লাভ বা বহু টাকার বিনিময়ে পড়াশুনো কোনটাই সম্ভব নয় । সুতরাং, এই মন্দার বাজারে যা চাকরীর অবস্থা এতে এসব নতুন কিছু নয়, কত প্রেমই তো এই চাকরীর অভাবে – টাকার অভাবে জানলা দিয়ে পালায় ।

রাহুলও শুনলো শুধু চুপ করে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না, উদিতা জানে রাহুলও যথেষ্ট চেষ্টা করছে, কিন্তু তাও এখনও অবধি।।।।।

দুইপক্ষের মৌনতায় যেন অনেকগুলো কথা বলে দিচ্ছিল, যে হাতদুটো একে অপরকে সবসময় আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল, আজ সেই হাতদুটোই কী ক্লান্ত? কে জানে।

“তুই আমার স্বপ্ন, আমার জীবনের ইচ্ছা সবই তো জানিস।।।।।”

রাহুলের মুখের কথা কেড়ে উদিতা বলল,”জানি, সবই জানি, ইনফ্যাক্ট আমিই সবথেকে ভাল জানি, কিন্তু, বাড়িতে কী বোঝাব বল তো? রোজ রোজ কী বলে বোঝাব? কী অজুহাত দেব?”

-“অজুহাত? অজুহাতটা কীসের? সবটা বুঝিয়ে বললে তাদেরও তো বোঝা উচিত? তার জন্য রোজ অজুহাতের কথা কী করে আসছে? তাও তো আমি চেষ্টা করছি ।” এটুকু বলেই থামল রাহুল । ফিরে তাকাল উদিতার দিকে, শক্ত করে ধরে রাখা হাত টার দিকে তাকাল একবার ।

উদিতা তাকিয়ে সেই চোখগুলোর দিকে, যেগুলোর দিকে তাকিয়ে আজ এতগুলো বছর বেঁচে থাকার রসদ পেয়েছে ও । রাহুলের স্বপ্ন, ওর লেখা এগুলো তো উদিতারও স্বপ্ন ছিল, ওকে জিততে দেখাটা তো উদিতারও স্বপ্ন ছিল, কিন্তু, সমাজ আর সেই সমাজের মানুষ থুড়ি জীব-এর সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চলতে আজ উদিতারও কোথাও যেন রাহুলের জন্য অপেক্ষাটা বিরক্তিকর ঠেকছে । রাহুলের নিজের স্বপ্নকে ছোঁয়াটা আজ উদিতার কাছে কিছুটা হলেও পাগলামো ঠেকছে, যেন, ওসব পরে হবে, চাকরিটাই জরুরী, স্বপ্ন ছোঁয়া চাট্টিখানি কথা নয়, ওসব ভেবে সময় নষ্ট করে কী লাভ?

************

দিন দিন কথার ওপর কথা বাড়ছিল, তার সাথে বাড়ছিল দূরত্ব । দুই পরিবারের ইচ্ছার চাপে, ওদের মিষ্টি সতেজ নিষ্পাপ প্রেম দীর্ঘশ্বাস ফেলছিল, কী করে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল সবটুকু, অথচ রাহুল কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারছিল না, চাকরিটাও জুটছিল না, কোনদিন ১০টা -৫টা অফিসের কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি, কিন্তু সবকিছু পেরিয়ে ভালবাসাটা যেন আর বেঁচে থাকছে না ।

-“দ্যাখ, আমার পক্ষে এভাবে আর সম্ভব হচ্ছে না, আমার মা বাবারও তো আমায় নিয়ে কিছু স্বপ্ন আছে, আর কতদিন? সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে, সবসময় সব স্যাক্রিফাইস আমি একাই কেন করবো?”

কথাগুলো বলে কিছুক্ষন চুপ ছিল উদিতা, ওপাশের মানুষটার হৃদপিন্ডটা তখন দুমড়ে মুচড়ে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে,”আমি তো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে চেষ্টাটা করছি উদিতা, এটা কী স্যাক্রিফাইস নয়?”

-“না নয়, কারণ তোর কাছে আমি ফার্স্ট প্রায়োরিটি নই, হলে তুই এত দায়সারা ভাবে থাকতে পারতি না ।”

-“মানে?”

-“মানে এটাই যে তুই যদি ঠিক ভাবে চাকরীটা খুঁজতি তাহলে আজ এই দিনটা আসত না ।”

কিছুক্ষনের মৌনতা ভেঙে রাহুল বলল,”তুই কী চাস?’

মুখ দিয়ে কথাটা বেরচ্ছিল না উদিতার, তাও বলতে তো হবেই ওকে আজ,”আই থিঙ্ক আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত, এই সম্পর্কটার কোন পরিণতি নেই ।” এটুকু বলেই চুপ করে গেল উদিতা ।

ওপাশে তখন ঝড়ের আগের নিশ্চুপতা, শুধু বলল,”বেশ ।” ব্যাস, এটুকু বলেই ফোনটা কেটে দিল রাহুল ।

ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল উদিতা । কে যেন ওর ভিতর থেকে ওকেই উপড়ে নিয়ে চলে গেল, কিন্তু আর কীই বা করার ছিল? এভাবে আর কতদিন? সমাজকে কী বলবে? আশেপাশের মানুষকে কী বলবে? ও-ও তো রাহুলকেই ভালবাসে, কিন্তু রাহুলের তো বোঝা উচিত সবটা, ও তো ওর পরিস্থিতিটা বুঝলই না । ওর স্বপ্নটাই সব? আর ওদের একসাথে বাঁচার স্বপ্নটা? সেটা কিছু না? তার কোন দাম নেই? একটা স্বপ্নকে ছুঁতে গিয়ে আরেকটাকে শেষ করে দেয়া — সেটা ঠিক?

কান্নায় ভেঙে পড়ল উদিতা, প্রকৃতিও যেন একসাথে কান্নায় ভেঙে পড়েছে, আকাশ ভেঙে তখন বৃষ্টি ।

।।২।।

একে কি বাঁচা বলে? আজ এতগুলো বছর পর এত খুনসুটি, মারামারি, আবদার, আদর, ভালবাসার পর হঠাৎ করে সে আর নেই, এটা কী মেনে নেওয়া সম্ভব? কিন্তু এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে, উদিতা তো চাইলেই নিজের জীবন, মা বাবার কথা মতো, নিজের মতো করে শুরু করতে পারে । আর তো ওর বিয়েতেও বাধা নেই, কিন্তু পারছে কই? গলায় কাঁটার মত যেন কী একটা বিঁধে আছে । ও পারছে না, অনেক চেষ্টা করেও পারছে না রাহুলকে ছাড়া বাঁচতে, আর রাহুল? ওর কী হচ্ছে কষ্ট উদিতার জন্য? সেদিন অত কিছু শোনার পর আর একটা ফোনও করেনি ও, কেনই বা করবে? যেচে অপমানিত হতে কেউ কেন চাইবে? কিন্তু ভালবাসায় এসব কিছুও সম্ভব, মান অপমানের বেড়া টপকে কখন সেই মানুষটাই সব হয়ে ওঠে, সে কী আর খেয়াল থাকে?

************

আবহাওয়া দপ্তর বলছে, এখনও বেশ কিছুদিন চলবে এই দুর্যোগ, প্রবল নিম্নচাপ । ঘন কালো মেঘে মোড়া আকাশটা, ততোধিক দুর্যোগ চলছে উদিতার মনে , বাবার পছন্দের পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে ওকে ।

বাড়ির সকলে খুব খুশি । উদিতা নিজের ঘরে আয়নাটার সামনে । আজ সবকিছু এলোমেলো ওর সামনে, হাতে রাহুলের দেওয়া প্রথম উপহার সস্তার হার দুল-এর সেট । টিউশনের টাকা জমিয়ে কেনা । খুব যত্ন করে এগুলো রেখে দেয় উদিতা । সেদিন তো এগুলোই খুব দামী ছিল ওর কাছে, আর আজ এগুলো বাড়তির খাতায় নাম লিখিয়েছে । ওরা স্বপ্ন দেখেছিল একটা সুন্দর ঘরের, বড় না হোক, ছোটই সই । স্বপ্ন দেখেছিল একসাথে পথ চলার, দামী গাড়িতে না হোক, পায়েই সই । স্বপ্ন দেখেছিল একসাথে রাতের আকাশের তারা গোনার, জড়িয়ে ধরে সারা রাত গল্প করার ।

আজ সব স্বপ্নগুলো রং হারিয়েছে, সমাজের চোখ রাঙানিতে, ছেলের যে চাকরী নেই, ছেলে যে শখের লেখক, এর আবার ভবিষ্যৎ হয় নাকী? মেয়ে চাকরী করে আর ছেলে কিছু করে না । সমাজ কী মানতে পারবে? কখনই না, সুতরাং সমাজের তোয়াক্কা করো আর নিজের ভালো লাগা, ভালোবাসা, স্বপ্নকে তোয়াক্কা করো না, এটাই তো নিয়ম । সেই কোন যুগ থেকে কত কফিশপ, ক্যান্টিন, পার্কের বেঞ্চ সাক্ষী রয়েছে ভেঙে যাওয়া প্রেমগুলোর । কারণ, সেই একটাই । 

*************

(কিছুদিন পর)

নাহ, সার সত্যতা বুঝে গেছে উদিতা, এভাবে চলতে পারে না । আজ একবার দেখা করবে ও, হয়তো এটাই শেষ দেখা, কে জানে । ক্ষমা চাইতে হবে ওকে, নাহলে যে ও শান্তি পাচ্ছে না । প্রিন্সেপ ঘাটের যেখানটায় ওরা দেখা করতো, আজও সেখানেই, আজ রাহুলকে ওর কিছু দেওয়ারও আছে, আজ তাই দেখা হওয়াটা বড্ড জরুরী ।

।।৩।।

ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটা বল নিয়ে খেলতে ব্যস্ত, ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে, মা বাবাকে নিয়ে খিলখিলিয়ে হাসি হেসে ছড়িয়ে দিচ্ছে আনন্দগুলো আশেপাশে ।

‘….এরকম স্বপ্ন তো আমাদেরও ছিল’, এরকমটাই ভাবছিল তাকিয়ে রাহুল, উদিতার ডাক এবারও এড়াতে পারেনি ও । কিন্তু আবার কেন? জানে না ও, উদিতার দেখাশোনাও চলছে ।

বৃষ্টি থিম তখন সোনালী রোদটা একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে মেঘের আড়াল থেকে, আকাশটার একদিক কালো মেঘে মোড়া তো আরেকদিক সোনালী ছটায় ঝলমলে । চারপাশে ভিজে মাটি, সোঁদা গন্ধ, কয়েক পশলা বৃষ্টির পর যেন অনেকটা সতেজতা, প্রাণ ভরে নিঃস্বাস নেওয়ার পালা যেন এবার ।

-“বল তাড়াতাড়ি কী বলবি?” উদিতার দিকে না তাকিয়েই কথাগুলো বলল রাহুল ।

-“সেদিনকার জন্য I am really sorry, আমার ওভাবে বলাটা সত্যি উচিত হয়নি ।”

-“হুম ।”

-“আমায় ক্ষমা করে দে প্লিজ ।”

-“ক্ষমা আমি সেদিনই করে দিয়েছি, আর কিছু?”

-“আর কী বলার থাকতে পারে, আমি তো তোর জীবন থেকে সরেই গেছি, আর তো কোন বলার জায়গা নেই ।বলছি তো সরি”, উদিতার ধৈর্য্য বরাবরই কম, এখনও ওর ধৈর্য্য ছাপিয়ে গলায় অন্য টান, যেন হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয়, হয়তো বা ফিরে পাওয়ার আকুতি ।

-“আমিও বলছি তো it’s OK, আর কী কিছু বলবি? আমার দিক থেকে শুধু এটুকুই বলার, ভাল থাকিস।”

-“ভাল যে তোকে ছাড়া থাকব না সেটা কী বলে বোঝাতে হবে?”

সামনে রাহুলের চোখ অবনত, ছেলে হলেও চোখটা আজ জলে ছলছল করছে, সন্তর্পনে নিজের চোখের জলটা লুকিয়ে নিল রাহুল ।

-“আমার হাতে আজও কোন চাকরী নেই, আমি আজও বেকার, আজও তোকে সবকিছু দিতে পারব না, যা কিছুর স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা।।।।।”

রাহুলকে কথাগুলো শেষ করতে না দিয়েই আচমকা নিজের ভালবাসার আবরণে জড়িয়ে নিল উদিতা । উফফ, কী অপার শান্তি, এটাই তো কতদিন ধরে পাচ্ছিল না উদিতা, কিছু না পেয়েও যেন সবটুকু পাওয়ার সুখ এখানে, আস্তে আস্তে রাহুলের হাতদুটোও আর শুনল না কোন কথা, জড়িয়ে ধরল প্রাণের মানুষটাকে, জেক ছাড়া বাঁচার চেষ্টা করে একটু একটু করে মরে যাচ্ছিল ও, যাকে ছাড়া বাঁচা আজ অসম্ভব । হাউহাউ করে কাঁদছিল উদিতা, রাহুলের চোখেও বাঁধ ভেঙেছে তখন, গভীর চুম্বনে আবদ্ধ হলো দুটি ঠোঁট । রাহুলের বুকে মাথা রাখল উদিতা, “আমি তো চাকরী করি, তুই এখন না-ই বা করলি, আমার যদি কোন অসুবিধা না থাকে, লোকে কী বলল, না বলল, কী যায় আসে তাতে । তোর স্বপ্নকে সত্যি করতে যদি কিছু করতে পারি, সেটাই বরং আমার কাছে অনেক । আমি সব সামলে নেব, তুই এত ভাবিস না, আমি তোর সাথে থাকতে চাই, তোর পাশে থাকতে চাই, আর তোর থেকে দূরে থাকতে ভাল লাগছে না, তাই বিয়েটা করতে চাই তাড়াতাড়ি, এবার তুই যা চাইবি সেটাই হবে । ওহ, দাঁড়া, তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি ।” বলেই নিজের ব্যাগ থেকে বের করল বইটা । সাদা কভারের উপর লাল তুলির টানে ভারী সুন্দর উপরের মোড়কটা, বই-এর উপর জ্বলজ্বল করছে রাহুল চৌধুরী নামটা । মুগধ হওয়ার সাথে সাথে ততোধিক অবাকও হচ্ছিল রাহুল, এসব কীভাবে হয়ে গেল? বইটা খুলতেই দেখল ওর লেখা সব গল্পগুলো আজ ছাপার অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে । মুগধ হয়ে দেখছিল রাহুল । 

নিজের মনের অগোছালো ভাবনাগুলোকে কাগজে লিখে সব উদিতাকেই প্রথম শোনাত ও, উদিতাই ওর প্রথম পাঠক, সমালোচক ।

-“আমার এক পরিচিত আত্মীয়র পাবলিকেশন এটা, তোর জন্য এর থেকে ভালো উপহার আর কিছু খুঁজে পেলাম না, প্রথমে খরচ ৫০-৫০, আর তারপর বিক্রি বাড়লেই।।।।। আর আমি সিওর রেসপন্স ভাল হবেই । তুই খুশি তো?”

রাহুল আজ কতটা খুশি সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারছে উদিতা ।

-“আমি জানি, চাকরীটারও দরকার, বিশ্বাস কর আমি চেষ্টা।।।।”

-“আমি আর কিছু জানতে চাই না, তোর উপর কোন চাপ নেই, মা বাবাকে তাহলে বলি এবার কথা বলতে বাড়িতে?”

হাজার হাজার আতশবাজি যেন ঝলমলিয়ে দিয়েছে আকাশটা, কখন সূর্য ডুবে আঁধার নেমেছে কে জানে, পূর্ণিমার চাঁদের আলো গঙ্গার জলে পড়েছে, আকাশ বাতাসে যেন ভালবাসার রং ছড়িয়ে রয়েছে ইতিউতি ।

উদিতার কপালে চুমু এঁকে সম্মতি জানাল রাহুল ।

।।৪।।

অবশেষে অনেক ঝড় ঝাপ্টা পেরিয়ে আজ উদিতা weds রাহুল লেখা বোর্ডটা জ্বলজ্বল করছে আলোয় । বিয়ে বাড়ির সানাই, আলোর মাঝেই আজ চার হাত এক হচ্ছে । কপালে চন্দনের টিপ, মাথায় টোপর, গলায় মালা পরা রাহুলকেই তো দেখার স্বপ্ন দেখেছিল উদিতা । লাল বেনারসী, সোনালী ভাল সামলে বারবার তাই মুগধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল ভালবাসার মানুষটার দিকে, আর রাহুল? কখন বলবে ও কথাটা? বিয়ের আগে নাকী পরে? আর যে তর সইছে না । লাল টিপ, কপালের টিকলি, মুকুটে কী মিষ্টিই না দেখাচ্ছে ওর উদিতাকে ।

অবশেষে শুভক্ষণ উপস্থিত, মালাবদলের পর পুরুত মশাই-এর চার হাত নিয়ে মন্ত্র পড়ার ফাঁকেই কান কানে বলল কথাটা, ক্যামেরা বন্দি হলো মুহূর্তটা ।

-“ওই, একটা কথা বলার ছিল ।”

-“এখন? এভাবে? সবাই দেখছে তো, বল কী বলবি, এসএমএস এ বলা যেত না?”

-“নাহ, এটা সামনে থেকেই বলতে হবে ।”

-“কী? বল? জানিস বইটার রেসপন্স কি মারাত্মক ভাল, কাকু বলছিল এই রেট-ই যদি চলতে থাকে।।।।”

-“তুই আগে শোন আমার কথাটা, এই খবরটা আমি সকালেই পেয়েছি ।”

-“আচ্ছা বল ।”

-“আজ সকালেই অ্যাপয়েনমেন্ট লেটারটা এসেছে, চাকরিটা পেয়ে গেছি রে ।”

-“মানে! সত্যি?”

-“হুম”

…সামনে তখন পরিণতি পাচ্ছে দীর্ঘ দশ বছরের প্রেমটা, হোমের আগুনে গমগমিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ হচ্ছে, এক হচ্ছে চার হাত ।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

তোমায় আমায় মিলে

।।১।। “উফফ! পা-টায় যা অসহ্য যন্ত্রনা করছে। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে। আর পারা যায়?” হাতের , কানের গয়নাগুলো খুলতে খুলতে বলছিল কুহেলী। রাজীব ততক্ষণে মোবাইল

Read More »

নিভৃত যতনে

।। ১।।   কোর্টের বাইরে তখন খাঁ খাঁ করছে রোদ, ঘড়ির দিকে তাকাল একবার রিয়াঙ্কা, কোথা দিয়ে এতটা সময় চলে গেল বুঝতেই পারেনি। একবার বাবার দিকে

Read More »

সন্ধ্যে নামার আগে

।।১।। “প্লিজ তোমার ভাঙা রেকর্ডটা একটু বন্ধ কর তো, সবসময় ভালো লাগে না। একেই অফিসে এত কাজের প্রেশার, বাড়ীতে একটু শান্তিতে বসব, তাও দেবে না।”

Read More »

যদি

।।১।। “আর দেরী করলে কিন্তু, সত্যিই পৌঁছতে পারবে না, অলরেডি সাড়ে চারটে বেজে গেছে” মা-এর উদ্দেশ্যে চেঁচাল মৌমিতা, অয়নের দিকে একবার আড়চোখে তাকাল। অয়নও একটা

Read More »

তুমি রবে নীরবে

।।১।। “বাবু, তোকে আর কতবার বলতে হবে, রোজ একবার করে অন্তত প্র্যাকটিসটা করবি question bank টা। আজও তো করলি না।” পেটির মাছের পিসটা একমাত্র ছেলের

Read More »

একে একে এক

।।১।। চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমার আড়ালে ঘন কালো কাজলে মোড়া বড় চোখদুটো সামনের দেবদারু গাছটার দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্কভাবে কি যেন একটা খুঁজছিল, হাতের পেপার ওয়েটটা

Read More »

Share with