।।১।।
“বাবু, তোকে আর কতবার বলতে হবে, রোজ একবার করে অন্তত প্র্যাকটিসটা করবি question bank টা। আজও তো করলি না।” পেটির মাছের পিসটা একমাত্র ছেলের বাটিতে তুলতে তুলতে কথাগুলো ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন তনিমাদেবী, ঋদ্ধির মা, একটি প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা।
ঋদ্ধি এই বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবে, সঙ্গে ডাক্তারির যাবতীয় পরীক্ষাগুলোও। তাই, এই মুহূর্তে ঋদ্ধির স্নান খাওয়া ঘুম ছাড়া বাকী পুরো সময়টাই কাটে বইখাতা নোটসের পাহাড়ের মধ্যে, থার্মোডিনামিক্স কিংবা টাইট্রেশন এ , কিংবা জেনেটিক্সের হিসেবে।
পাড়ায় আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ঋদ্ধির নামের আগেও সকলে তাকে চেনে তার নামের আগে বসে যাওয়া বিশেষণ গুলোয়। সব থেকে ইন্টেলিজেন্ট,ব্রাইট স্টুডেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।
তো এই ঋদ্ধির জীবনে পড়াশোনার বাইরে ভাল লাগার যে জিনিসটা ছিল তা হলো আঁকা। তা সেই আঁকার কাগজ পেন্সিল ও বায়োলজির আঁকিবুকিতেই আটকে বেশ কিছুকাল। তার আর নৃত্যরত ময়ূর বা, শ্মশানের ধারে ধ্যানমগ্ন যোগীর ছবির সাথে দেখা হয় না বহুদিন।
তা, এ হেন এই ঋদ্ধির জীবনে একটা নতুন সমস্যা শুরু হয়েছে। না, এখনো অবধি বাড়িতে মা বাবাকে কিছুই বলেনি ও।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে বা ও চালাতে পারবে যথেষ্ট সংশয় আছে। ওর বায়োলজি টিউশনে পড়ে ওর নতুন এই সমস্যা, শাওন। এ মেয়ে হলেও স্বভাব, চালচলন, ভাবভঙ্গি, কথাবার্তা, কোনোটাই নারীসুলভ নয়। তাই, ১৭-১৮ বছরের বাকী মেয়েরা যেখানে কুর্তি লেগিংস বা সালোয়ারে, রুপোলী ঝুমকো পরে পরিপাটি হয়ে হাজির হয়, সেখানে শাওন বড়ই এলোমেলো, ছন্ন ছাড়া। রেশমের মত মাথার চুল কপাল ছাপিয়ে বারবার মুখের উপর নামে, বড় অবাধ্য তারা, আর তাদের শাসন করার কোনো চেষ্টাও নেই শাওনের। পরনে জিন্স একটা, আর একটা শর্ট টপ। হাতের পাঁচ আঙুলে পাঁচরকম আংটি থাকে কখনও, কখনও বা কিছুই না। কানে ছোট সোনা বা হীরের মুসুরডাল কোনদিন, তো অন্যদিন কিছুই না। এরকমই অদ্ভুত এলোমেলো এই শাওন। আর এই এলোমেলো মেয়েটাই ঋদ্ধির সমস্ত বিরক্তি আর অশান্তির কারণ।
আজ শাওন একটা অলিভ কালারের টি-শার্ট আর একটা ফেডেড জিন্স এ , হাতে কালো রঙের ব্যান্ড টাইপের কিছু, চুলটা বাঁধা কম খোলা বেশী, কানে ছোট্ট একটা হীরের কুচির ঝিলিক যেন। ঋদ্ধি কিছুক্ষণ তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। ইচ্ছে করে পাশে ব্যাগটা রেখে দিয়েছিল, নয়তো ফাঁকা জায়গা দেখলেই কেউ এখানে এসে বসবে। হলোও তাই।
“কীরে, ব্যাগটা সরাবি নাকি সেটাও বলতে হবে?” বলেই নিজেই ঋদ্ধির ব্যাগটা উঠিয়ে ওবসে পড়ল ঋদ্ধির পাশে। ঋদ্ধি প্রথমেই নাকটা একটু কুঁচকোল, সিগারেটের গন্ধে। শাওন-এর গা থেকেই আসছে। আর ঋদ্ধি এই গন্ধটা একদম সহ্য করতে পারে না। চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে খাতাটা খুলল, তখনই শাওনের প্রশ্নবাণ শুরু, “কীরে কী খেয়ে এসছিস আজ? আজও মা পড়তে দিয়ে গেল বুঝি? লাল্টুবাবু !” বলেই নিজের খেয়ালেই হাসল খানিকটা শাওন।
-“শোন, তুই একটা ছেলে রে, অনেক তো হলো, এবার একটু নিজে ঘোর-ফের-দ্যাখ। হাতে এখনও একটা মোবাইল ফোন অবধি নেই, স্মার্টফোন না হোক, অন্তত একটা মোবাইল। কী রে তুই? আর নাক সিঁটকোচ্ছিস কেন রে? সিগারেট খেয়ে এসেছি বলে? তুই তো শালা।।।”
পি.বি স্যার চিৎকার করতেই চুপ করল তখনকার মত শাওন।
শাওন এমনই, এলোমেলো, ছন্নছাড়া, পাগল, একদম অন্যরকম। আর এই অন্যরকম মানুষটার থেকেই ভয় ঋদ্ধির। ঋদ্ধির সাজপোশাক, স্বভাব, চালচলন সবকিছু নিয়েই কমেন্ট করা এখন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ওর । চুল আঁচড়ানোর স্টাইল, টি-শার্টের সাথে প্যান্টের কালারের সামঞ্জস্য কতটা, হাতের ঘড়ি, বডি-স্প্রের সুবাস প্রতিটি বিষয় নিয়েই ঋদ্ধি তাই এখন দ্বন্দ্বে। ও কী এতটাই হাঁদা, যেমনটা শাওন বলে? হ্যাঁ, ঋদ্ধি তেমন স্মার্ট নয়, এটা ঋদ্ধিও জানে। ওর ড্রেসিং সেন্স না হয় খারাপ, তাতে কী? এবার আর নয়। ঋদ্ধি এবার একটা উত্তর দেবেই। আজ ও মা-এর কোচিং-এ ছাড়তে আসা নিয়ে কীরকম বলল,রোজ রোজ এই অশান্তি নেওয়া সম্ভব না।
স্যার পড়াতে যেমনি একটু ব্রেক দেয়, সবাই একটু এদিক ওদিক ঘুরে আসে। শাওন গেল সামনের বারান্দাটায়। এই সুযোগ। খানিক ভাবল ঋদ্ধি, সব তো তালগোল পাকাচ্ছে, এভাবে মেয়েদের সাথে কোনদিন কথাও বলেনি ও। বেশী আর না ভেবে বারান্দায় গেল ঋদ্ধি। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতেই দেখল বারান্দার কোনটায় দাঁড়িয়ে শাওন। ঋদ্ধি গিয়ে দাঁড়াল শাওনের পাশে।
-“কী রে কিছু বলবি?”
সিগারেটে টান দিচ্ছিল শাওন। গন্ধে প্রবল অস্বস্তি হচ্ছিল ঋদ্ধির। তাও, খানিক কেশে-টেশে গলা খাঁকারি দিয়ে ঋদ্ধি বলল, “দ্যাখ, তোকে অনেকদিন ধরেই বলব ভাবছি, বলতে পারছি না… দ্যাখ…”
ঋদ্ধিকে থামিয়ে শাওন বেশ খানিকটা ধোঁয়া ঋদ্ধির মুখ ছুঁড়ে বলল, “প্রপোজ টপোজ করবি নাকি !”
কথাটা শুনে হকচকিয়ে গেল বেশ খানিকটা ঋদ্ধি। প্রপোজ!! বলে কী? কী ভাবছে ঋদ্ধির ব্যাপারে?
-“না, দ্যাখ, তুই সবসময়, আমার এপিয়ারেন্স, ড্রেসিং সেন্স, আমার চালচলন সব কিছু নিয়ে সবসময় এরকম বলিস না। আমারও তো ধৈর্য্যের…”
কথাটা শেষ হলো না ঋদ্ধির, তার আগেই ঋদ্ধির মুখ আবার সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ল শাওন। সিগারেট ফেলে বলল, “তোর খারাপ লাগে যখন বলব না বস, কিন্তু এরপর যখন বাকী সবাই বলবে, তারপর রেগিং করবে, তখন আমার কথাটা মনে পড়বে। ছাড়, অত চাপ নিতে হবে না, চ, ক্লাস স্টার্ট হবে।” বলে ঋদ্ধিকে রেখেই ক্লাসের দিকে এগোল শাওন।
**************
না, সেদিনকার পর থেকে আর শাওন বলেনি সেসব কিছু। কিন্তু ঋদ্ধি এবার নিজের আয়নাটার সামনে চোখ মেলে তাকিয়েছে, নিজের চোখে চোখ রেখেছে। নিজের সাথে সাবলীলভাবে কথা বলতে শুরু করেছে ঋদ্ধি। শাওনই বলেছিল, নিজের চোখে চোখ মেলাতে আগে, তারপর পথটা অনেক সহজ।
শাওনের কথাগুলো কানে বাজলেই ঋদ্ধির মনে কিছু একটা হয়, আর নিজেকে বদলানোর, না না, নিজেকে প্রেজেন্টেবল, কনফিডেন্ট গড়ে তুলতে কোন কসুর ছাড়েনি আর ঋদ্ধি। আর দিনের পর দিন মিথ্যে তাচ্ছিল্যের আবরণে মোড় শাওনের ‘ভোকাল টনিক’ই কাজ করেছে অনুঘটকের মত।
ঋদ্ধির ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজির এই জটিল জীবনে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের মতোই এসে পড়েছে শাওন। কখন কীভাবে, ঋদ্ধি নিজেও জানে না। তবে, এখন শাওনের শার্ট থেকে আসা সিগারেটের গন্ধে ঋদ্ধি নাকটা কম সিঁটকোয়, শাওন ঋদ্ধির পাশে বসলে ওর বুকের ধুকপুকানি, ওর শিরা উপশিরায় রক্ত প্রবাহ প্রবল হারে বাড়ে বইকী। ক্লাসের মাঝে শাওনের অগোছালো চুলের দিকে তাকাতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে বইকী। এখন ঋদ্ধি নিজের প্রতি কনফিডেন্সের অভাবে অতটাও ভোগে না। শাওনই তো বলে, সামনে কে আছে, সে কী ভাববে, ওসব ভেবে কী লাভ? ওটা না হয় তারাই ভাবুক।
হ্যাঁ, শাওনের মতো করে ভাবতে চেষ্টা করে এখন ঋদ্ধি। আর ঋদ্ধির মধ্যে এই আমূল পরিবর্তনটা শুধু মানসিক না, শারীরিকও। ঋদ্ধির চালচলন কথাবার্তার ধার, এসব কিছু ঋদ্ধির মা-রও চোখ এড়ায়নি।
।।২।।
সময় তরতর করে যেমন এগোচ্ছিল, তার থেকেও দ্রুত মনে হয় বাড়ছিল ঋদ্ধির মনের ভিতর জোর করে বন্দী করে রাখা ভালবাসাটা। যার হদিশ শুধুমাত্র ঋদ্ধির কাছেই। আর কেউ জানে না কিচ্ছুটি।
***************
আর শরীরটা ভাল নেই, ঋদ্ধি আজ আর পড়তে যায়নি। নিজের ঘরের পড়ার টেবিলটা থেকে সামনে পশ্চিমাকাশটা বড় সুন্দর দেখা যায়, আর সাথে গঙ্গার হাওয়া। বিকেলে সূর্য অস্ত গিয়ে আকাশে এদিক ওদিক সোনালী লাল গোলাপী কমলা আবীর খেলছে আপন মনে, সামনের গঙ্গার পাড়ে ঝটপটিয়ে পায়রাগুলো খুনসুটিতে ব্যস্ত। একদৃষ্টে তাকিয়েছিল ঋদ্ধি। চেষ্টা করেও আর শাওনকে নিজের ভাবনা থেকে সরাতে পারে না যেন, চায়ও না। শাওন ওর জীবনে এসে কেমন এলোমেলো করে দিল সবটা। তাই না? সত্যি কী এলোমেলো? নাকি এলোমেলো হয়ে থাকা ঋদ্ধিকে নিজের মতো করে গুছিয়ে দিল?
আজ ঋদ্ধি সবার সামনে যেটুকু কথা বলে তাতে কোন জড়তা থাকে না। এটাও তো শাওনের জন্যই। সেদিন যখন সবার সামনে ঋদ্ধি নিজের টপিক নিয়ে সব জানা সত্ত্বেও গ্রূপ ডিসকাশনে তোতলাচ্ছিল, বাইরে নিয়ে এসে শাওন যদি ঋদ্ধিকে সেদিন থাপ্পড়টা না মারত, ঋদ্ধি আজও তো কনফিডেন্সের অভাবেই ভুগতো।
“জানিস না এমনটা তো না, নিজের জানাটাকে একটু গুছিয়ে যদি বলতেও না পারিস, ডাক্তারীর স্বপ্নটা ছাড় তাহলে।”
সেদিন খুব রাগ হয়েছিল, আর সেই রাগটাই আগুনের মতো কাজ করেছিল। নিজেকে পুড়িয়ে খাঁটি করার মন্ত্রে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছিল ঋদ্ধি। আর এই সবকিছুর মাঝেই কখন শাওন ঘাপটি মেরে বসেছিল ওর মনের ঘরে, ও নিজেই বোঝেনি।
একদিন ঠিক বলবে ও নিজের মনের কথা শাওনকে, ওর বিশ্বাস শাওনও ঋদ্ধিকে… নিজের অজান্তেই লজ্জায় মাথাটা খানিক চুলকে নিল ঋদ্ধি।
**************
অনেকক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়েছিল ঋদ্ধি, নাহ, আজ আর এল না শাওন। পাশে রেখে দেওয়া ব্যাগটা সরিয়ে পাশে বসে পড়ল রণ। ক্লাস চলতে চলতেই অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে ঋদ্ধি আজ। আগের দিন জ্বরের জন্য ও আসেনি। আচ্ছা সেদিন এসেছিল শাওন? কী জানি। ইসস ফোন নম্বরটাও নেয়নি এতদিন। ধ্যুর, ধ্যুর।।।
**************
এত অপেক্ষা এর আগে কখনও করেছে কী না সন্দেহ, আবার আরেকটা শুক্রবারের অপেক্ষা, বায়োলজি ক্লাসের অপেক্ষা। সকালের জ্যাম পাউরুটির প্রতি বিরক্তি দেখাতেও ভুলে গেছে আজ ঋদ্ধি, ওর অপেক্ষায় বিভোর হয়ে মাছের কাঁটা বেছে খেতেও কোন অসুবিধা হয়নি ওর।
আজ ক্লাসের সময়ের বেশ খানিকটা আগেই পৌঁছে গেছে। দরজার দিকে বারবার ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে, নাহ, আর যে মনটাকে কিছুতেই শান্ত রাখতে পারছে না। আচ্ছা, শাওন কী টিউশন চেঞ্জ করল? ওর যা মতিগতি, কখন কী ভাবে কী করে? যদি আর না আসে? কী হবে এবার? না, না, আর একটুও ভুল করবে না ঋদ্ধি, এবার ঠিক নিয়ে নেবেই ফোন নম্বরটা।
ক্লাস শুরু হতে যখন আর মিনিট তিনেক বাকী তখনই ঢুকল শাওন।
।।৩।।
-“অ্যাই, অনেকক্ষণ ধরে ঠাম্মির মাথা খাচ্ছিস, লেখাপড়া নেই? যা নিজের কাজ কর। আর মা, তোমারও আক্কেল কী, ওকে এখন এসব শেখানোর কী প্রয়োজন? আশ্চর্য!”
-“আহ, মা, তুমি থামো তো। তুমি তো অর্ধেক কথা পেটে রাখো। ঠাম্মি বলছে, আমি শুনছি, প্ৰব্লেমনটা কোথায়? আচ্ছা বলো ঠাম্মি, এই ফটোর সাথে তোমার গল্পটার কী সম্পর্ক?”
-“না দাদুভাই, তুই এভাবে কথা বলবে না অনেকবার বলেছি তোমায়, আর তুইও তো তেমন, ছেলেটাকে যদি বলিও, অসুবিধার তো কিচ্ছু নেই, বরং ওর জানা দরকার। তোদের মতো মা বাবাদের জন্যই… যাক গে।।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম,
শাওনকে দেখে ঋদ্ধির মন আশ্বস্ত হলো বটে, কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তার ভাঁজও পড়ল কপালে। শাওনের চোখের নীচের কালি, শূন্য দৃষ্টি, উদাসী মুখটা দেখে ঋদ্ধি এটুকু আঁচ করে ফেলেছে কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কী? সে উত্তর নেই ঋদ্ধির কাছে।
হাঁড়িগলির রাস্তাটা দিয়ে একসাথে ফিরছিল ওরা। শাওনের সেই ছটপটে ভাবটা কোথায় যেন উবে গেছে, ঋদ্ধির প্রশ্নে বারবার শাওন একটাই উত্তর দিচ্ছে যে, “না, কিছু হয়নি।” আর অগুনতি সিগারেটের ধোঁয়ায় আজ ঋদ্ধির প্রাণ ওষ্ঠাগত।
একসাথে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তাটাও কখন ফুরিয়ে গেছে, খেয়াল করেনি দুজনে। ঋদ্ধির ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছিল না, কিন্তু ফিরতে তো হবেই। বাঁ দিকের রাস্তাটায় ঋদ্ধির পথ আর ডান দিকের রাস্তাটায় শাওনের। স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোয় দাঁড়িয়ে শাওনের চলে যাওয়াটা দেখছিল ঋদ্ধি। ঋদ্ধি নিজেও জানে না কিছু, কিন্তু মনটা শান্ত করতে পারছে কই?
**************
(দিন কয়েক পর )
এতদিন না চাইতেও বারবার ঋদ্ধির মনে পড়েছে শাওনের অবনত চোখদুটি, চোখের কোণে জমে থাকা কালি, আর ক্লান্ত অবসন্ন মুখটা।
আজ তাই আর না, শাওনের থেকে সব জানতেই হবে ওকে। শাওন জানে না, ও ঋদ্ধির জন্য কী, কতটা। তাই আজ সবটা না শুনে যাবে না ঋদ্ধি। একেই পরীক্ষার চাপ, তার মধ্যে এই অশান্তি চললে।।। না না, আজ ক্লিয়ার হতেই হবে।
**************
রোজকার মতো হাঁড়ি গলিতে চলতে চলতেই আজ ও দুটো একটা কথা বলছিল মাত্র। খুব খুব ইচ্ছে করছে আজ ঋদ্ধির, মনের কথাটা বলে দিতে, আর যে তর সইছে না ওর। রাস্তার পাড়ে কুকুরটা ওদের দেখে লেজ নাড়িয়ে চলে গেল আপন মনে। দুপাশে বাড়ি থেকে লাইট ভেসে আসছে শুধু। আর সিরিয়ালের ডায়লগ। ব্যস, আর ওরা। কেউ নেই আর। ঋদ্ধির মাথায় সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। উচিত-অনুচিত হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে শাওনের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়েই নিল ও। শাওনের আরেক হাতের দু আঙুলের ফাঁকে তখনও জ্বলন্ত গোল্ড-ফ্লেকটা ধরা, আর চোখে অনেকখানি বিস্ময়। মুহূর্তের মধ্যে সিগারেটের টুকরোটা ফেলে দিল ওর হাত থেকে ঋদ্ধি। শাওন এর ঠোঁটে মাখা সিগারেটের গন্ধটা পেরিয়ে ওর কাছে যেতে চাইছিল মনটা, কিন্তু আপাতত, শাওনের হাতদুটোই শক্ত করে ধরেছিল ও। শাওনের চোখে চোখে রেখে ওর মনের ভিতরটা পড়ার চেষ্টা করছিল ও, আর ওর চোখ বলছে, ও ভাল নেই। শাওন সবকিছুর আগে ওর ভীষণ কাছের একজন বন্ধু, শাওনের চোখে চোখে রেখে একটাই প্রশ্ন করল ও, “তোর কী হয়েছে বল আমায়।”
হয়তো কথাটায় কোথাও লুকিয়েছিল অনেকটা ভরসা, অনেকটা আশ্বাস, কোথাও একটা ‘আমি আছি’ লুকিয়েছিল সেই স্বরে। নিশ্চিন্তে দিনের শেষে কাঁধে মাথা রাখার ঠাঁই ছিল যেন কথাটার মধ্যে।
নাহ, শাওনও আর বেশীক্ষণ পারেনি নিজেকে ধরে রাখতে। কান্নায় ভেঙে পড়ল হাঁড়িগলির রাস্তাটায়। সেদিনকার কথাগুলোর সাক্ষী ছিল হতভম্ব ঋদ্ধি, আর সেই আলো-আঁধারি রাস্তাটা, আর ঐ প্রভুভক্ত কুকুরটা।
ভালবেসেই নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিল শাওন একটা মানুষকে, কিন্তু আর পাঁচটা গল্পের মতোই এখানেও ছেলেটা ওকে ছেড়ে অন্য কারো হাত ধরেছিল, এত দূর অবধি তো জানা গল্প। কিন্তু তার পরের অজানা সত্যটা এতটা ভয়ংকর হতে পারে স্বপ্নেও ভাবেনি ঋদ্ধি।
আজ সেই ছেলেটাই ব্ল্যাকমেল করে ওর থেকে সমস্ত রকম ফায়দা নিচ্ছে , আর ছেলেটা আর কেউ না, ওরই দূরসম্পর্কের দাদা, তাকেই ভালবেসে ফেলেছিল শাওন। ভালবাসায় তো কোন পাপ থাকতে পারে না। কিন্তু আজ নিজের ঘরের মধ্যেই ও দিনের পর দিন, নির্যাতিত মানসিক ও শারীরিক দুভাবেই।
না, মাকে বলে কোন লাভ হয়নি শাওনের, সে নিজেও নিজের বেসামাল জীবনে মত্ত। আদরের বাবাকে হারানোর পর থেকেই শাওনের জন্য ভাবার মানুষ আর ছিল না কেউ। মা-ও অন্য একজনকে বিয়ে করে নিজের সংসারেই ব্যস্ত। আর দুশ্চরিত্র সৎবাবাও সুযোগ ছাড়ে না নিজের নোংরা হাতটা দিয়ে সুযোগের সদব্যবহার করতে। নিজেরই বাড়িতে নিজের লোকেদের কাছে আজ হেনস্থার শিকার শাওন। না, এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি ও। বাইরে বাকী সময় গলা ফাটালেও নিজের জন্য প্রতিবাদের সুরটা এখনো পারেনি ছড়াতে, বরং পিছু হটতে হটতে আজ দেওয়ালে পিঠ থেকে গেছে।
শাওনকে কী বলে সান্ত্বনা দেবে, আদৌ সান্ত্বনা দেবে কী না, কিছু বুঝতে পারছিল না প্রথমটা ঋদ্ধি। সান্ত্বনা দেওয়ার তো কথা না, বরং ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওর জন্য লড়াইটা শুরু করা দরকার এখন। শাওন যদি ওর মনের জোর হতে পারে, ও কেন পারবে না, শাওনের প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে? শাওনের হাতটা এই সময় শক্ত করে ধরার মত মানুষ তো ঋদ্ধিই।
এভাবে শাওনকে কাঁদতে দেখেনি কখনও, আজ শাওনের চোখে জল। সবসময় তো আগুনই দেখে এসেছে, আজ সে আগুন কোথায়? সেই আগুনটাই তো দরকার।
।।৪।।
-“কীরে, তুই কী উঠবি এবার? ক’টা বাজে খেয়াল আছে? স্নানটা করতে যা আগে।”
-“উফফ, বলছি তো যাচ্ছি, এইরকম সময়ে প্লিজ চুপ, ঠাম্মি আর কতটা বাকী বলো। বেশী নেই তো, ব্যস, এটা শুনেই যাচ্ছি।।। আচ্ছা ঠাম্মি, এই ছবিটা তাহলে কার আঁকা? বলো না।”
-“সব বলছি, শান্ত হয়ে শুনবি, তার আগে মা-এর কথা শোন, যা পালা। ভাত খেয়ে শুনবি আবার, যা যা।”
অগত্যা আবার মা-এর কথামতো স্নান, খাওয়া সেরেই আসতে হলো ঋতমকে। বেলার দিকে, এই দিকের ঘরটাই সব থেকে বেশী ঠান্ডা থাকে। রোদটা এদিকটায় কম পড়ে, আর সাথে সামনেই গঙ্গার ঠান্ডা হাওয়া। তাই, দুপুরটা ঠাম্মির এই ঘরটাই একেবারে স্বর্গ।
-“আচ্ছা, ঠাম্মি, এই ছবিটা তাহলে কার? কে এঁকেছে এটা এত সুন্দর করে? পুরো জীবন্ত একদম। মিঃ ঋদ্ধিই?”
-“তোর প্রশ্ন করা শেষ হলে আমি আবার শুরু করব।”
-“আচ্ছা, আচ্ছা, বলো।”
-“সেইদিন সন্ধ্যে থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত ঐভাবেই ঐ ফাঁকা রাস্তাটায় শাওনের হাতটা চেপে বসেছিল ঋদ্ধি। শাওনের মতো মেয়ে কাঁদছে, এটা তো কেউ বিশ্বাসও করতে পারবে না। কিন্তু শাওন সেদিন কেঁদেছিল, অনেক অনেকদিন পর হাউহাউ করে কেঁদেছিল সেদিন মেয়েটা। রাত জাগা ক্লান্ত চোখদুটো, চোখের জল, ওর হাতের কিছু অজানা ক্ষত, কাটা দাগ, এসব কিছু দেখেও ঋদ্ধি কিছু করতে পারছিল না সেদিন। একটা ১৭বছরের ছেলে, অপ্রাপ্তবয়স্ক, কীই বা করত? ক্ষমতা থাকলে সেদিনই ঐ নরক থেকে বার করে আনতো ও ওর শাওনকে। শাওন অন্য কারো জন্য চোখের জল ফেলছে, ঋদ্ধির সামনে, আর ঋদ্ধির ভিতরটা পুড়ছে, শাওনের জন্য। কিন্তু বলার মতো তো কোন শব্দও নেই।
শাওন অনেকটা সময় পর বলল, “জানিস, ছোটবেলায় বাবা যখন নিজের অফিস থেকে ফিরত, রোজ আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসতোই। ক্যাডবেরি, লজেন্স, মিষ্টি, খেলনা যা আমার ভাল লাগে কিছু একটা আনবেই। আর আমিও জানলার গ্রিল-এর উপর ভর করে বাবা কখন ফিরবে ওয়েট করতাম, খুব হ্যাপি ছিলাম রে তখন। সেই জানলা, গ্রিল, রাস্তা সব আছে, শুধু বাবা আর নেই। সেই দিনগুলো আর কোনদিন ফিরে পাব না এটা মাথায় এলেই নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারতাম না। নেশা শুরু করলাম, নেশা করতে করতে কখন সেটা অভ্যাসে পরিণত হলো, বুঝতে পারিনি।” চোখটা বুজে, “সরি বাবা, প্লিজ তুমি অন্তত রাগ কোরো না আমার উপর।” বলল শাওন।
ওর মুখের উপর পড়া চুলগুলো সযত্নে সরিয়ে দিয়ে ঋদ্ধি বলতে গিয়েও থেমে গেল সেদিন, “আমি তো আছি আর কেউ না বাসুক, আমি তো তোকেই ” নাহ, পারেনি, মুখের কাছে কথাটা এনেও পারেনি ঋদ্ধি কথাগুলো বলতে সেদিন|
শাওন ঋদ্ধির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে বলল, “পীযুষকে অবলম্বন করে বাঁচতে শুরু করলাম, যেই একটু হাসতে শুরু করলাম, তখনই এটা কেন হলো বলতো? বিশ্বাস তো ভাঙলোই, আমার সবটুকু নিয়ে আজ আমায় ব্ল্যাকমেল করে নিজের ক্ষিদে মেটাতে চাইছে, আর আমায় সেটা সহ্য করতে হবে, কেন বলতো? কাকে বলবো নিজের মা-কে? সেও তো বাড়িতে একটা নরপিশাচকে তুলে এনেছে। কখন ঝাঁপিয়ে পড়বে জানি না। খুব খারাপভাবে আমাকে ছোঁয় জানিস, বড্ড ঘেন্না করে এখন নিজের উপর। এতো নোংরা, ঘৃণার মধ্যে কীভাবে থাকবো বলতো? দু’দিকেই দুটো পিশাচ নিঃশ্বাস ফেলছে আমায় ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য, আর মা চোখ থাকতেও তো অন্ধ। এভাবে কী বাঁচা যায়?”
সেইদিন, শাওনকে রাস্তা থেকে বাড়ি অবধি পৌঁছে বাড়ির ফেরার সময় ঋদ্ধির মনে একটা কথাই আসছিল, ওকে কী বাড়িতে পৌঁছে ঠিক করলাম, নাকি রাস্তাটা বাড়ির থেকে নিরাপদ ওর কাছে? বাইরে থেকে শাওন যতটা কঠিন, ভিতরটা ততটাই নরম, আর এরকম মানুষকে বোঝা বড় কঠিন, আর একবার বোঝার পর তার মতন বন্ধু পাওয়া দুর্লভ।”
***************
পরের শুক্রবার টিউশন যাওয়ার আগেই কানাঘুষো কিছু একটা শুনছিলই ঋদ্ধি, কিন্তু গিয়ে…
***************
শাওন সুইসাইড করেছে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে। কোন সুইসাইড নোট নেই। ঋদ্ধি, শাওনের বাড়ি যখন পৌঁছল তখন পুলিশ, লোকজন গিজগিজ করছে। শাওনের মুখটা একবার দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ঋদ্ধি। আর দাঁড়ায়নি। ঐ অবস্থায় শাওনকে মনে রাখতে চায় না ও। বাড়ি ফিরে আসে, নিজের ঘরে। যত্নে লেখা চিঠিটা, যেটা শাওনকে সেদিন দেবার জন্যই লিখেছিল, সেটা আর সেদিনকার পর থেকে বের করেনি। এই সেই চিঠি।”
হলুদ, জরাজীর্ন চিঠিটা ডায়েরির ভিতর থেকে বের করলেন তনিমাদেবী, ঋদ্ধির মা, ঋতমের ঠাম্মি।
ঋদ্ধির ভালবাসার কথা আর শাওনের কান অবধি পৌঁছায়নি কোনদিনই। বরং, নিঃশব্দে জায়গা করে নিয়েছে ওর পুরোনো ডায়েরীগুলোতেই।
ঋদ্ধি আজ একজন সফল ডাক্তার, সাইকিয়াট্রিস্ট। কিন্তু জীবনের প্রথম ভালবাসাকেই অন্ধকার থেকে বের করে আনতে পারেনি ও।
বাঁচার জন্য প্রথম প্রতিবাদটা শাওনকেই করতে হতো, ঋদ্ধির জন্য করলেও পারেনি শাওন নিজের জন্য গলার স্বর তুলতে। শাওনকে একটু একটু করে অন্ধকারে ডুবতে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি ঋদ্ধি, আর শাওনের হাতটা ধরতে যাওয়ার আগেই আচমকা হারিয়ে গেছিল ও গভীর অন্ধকার সমুদ্রে। ঋদ্ধির হাতের তুলি অনেকদিন পর যখন সজীব হলো সাদা পাতায়, প্রথম ছবিটা ছিল শাওনেরই। আজও সে ছবি সযত্নে রাখা, আরো অনেক ছবির মধ্যে থেকে আলাদা সে ছবি।
এই ছবি, চিঠি, ডায়েরী এ সবকিছুই জানতেন তনিমাদেবী, আর জানত পিয়ালী, ঋদ্ধির স্ত্রী, ঋতমের মা।
ঋদ্ধি পিয়ালীর থেকে কখনোই কিছু লুকোয়নি। তাই, ঋতম যখন প্রথম ঋদ্ধির আঁকা ছবিটা দেখে প্রশ্ন তুলেছিল, কে ইনি? বাবার আঁকার খাতায় এই মহিলা কে? পিয়ালীই উত্তর দিয়েছিল, “ওটায় তো তোমার হাত দেওয়ার দরকার নেই, রেখে দাও।”
সেই থেকেই কে উনি জানার জন্য উৎসাহটা অদম্য ছিল। আর তারপর যখন বাবা বলল, ডাক্তারী পড়েছিলাম সাইকিয়াট্রিস্টই হওয়ার জন্য, তখনই সবটা জানার জন্য আর ধৈর্য্য ধরতে পারছিল না ঋতম।
***************
শাওনের নেওয়া সিদ্ধান্তটা কতটা ভুল ছিল, আর এই ভুল যাতে আর অন্য শাওন না করে, সাইকিয়াট্রিস্ট হিসাবে নিজেকে তৈরী করার পরিকল্পনা সেদিনই করে নিয়েছিল ঋদ্ধি। নিজের প্রথম ভালোবাসাকে বাঁচাতে পারেনি, কিন্তু আর কেউ যেন এভাবে তার শাওনকে না হারায়, আর কোন মেয়েকে যেন যৌন হেনস্থার স্বীকার না হতে হয়, আর কোন মেয়েকে যেন আত্মহত্যার পথ না বাছতে হয়, তার জন্য আজও লড়াই করে চলেছে ঋদ্ধি। চিকিৎসার পাশাপাশি NGO-এর সাথে যুক্ত।
আজও সমাজে মানসিক রোগকে লজ্জার চোখে দেখা হয়, বা কোনও রোগ হিসাবে গণ্যই করা হয় না, ফলস্বরূপ পরে তা মারাত্মক আকার নেয়।
আজও শিক্ষিত মেয়েরা পারিবারিক যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দ্বিধা বোধ করে, আর লড়াইটা এইখানেই। আর এইসব কিছুতে ঋদ্ধি পাশে পেয়েছে নিজের মাকে আর পিয়ালীকে, ওর শেষ ভালবাসা, যে সব শুনে জেনে ঋদ্ধির পাশে থাকতে দু’বার ভাবেনি।
***************
ঋদ্ধি আজ কাজের জন্য দিল্লীতে।
বাবার পড়ার ফাঁকা ঘরে গিয়ে দাঁড়াল ঋতম। সামনে সেই গঙ্গার ধার। হাওয়ায় উড়ছে আঁকার খাতা। শাওন যেন ঋদ্ধির তুলিতে জীবন্ত, এই বুঝি বেরিয়ে দাঁড়াবে সামনে, এলোমেলো চুল সরিয়ে দাঁড়াবে এসে , বসে পড়বে বায়োলজির খাতা নিয়ে।
“এই শাওন, দাঁড়াবি তো, আসছি”, চমকে উঠল ঋতম। গঙ্গার পাড়ে ওরা দুইজন, এই মেয়েটাও শাওন, ছেলেটার হাত ধরে, গঙ্গার ধার ধরে এগোচ্ছে।
সেই মায়াবী সূর্যাস্ত আর গঙ্গার ধার, পাড়ে আঘাত হানছে জল, আবার কখন দূরে চলে যাবে, জীবনটাও কেমন জোয়ার ভাতার মতনই তো, এই আছি এই নেই। কত নিষ্পাপ ভালোবাসা এভাবে হারায়, অকালে কত মা এর কোল শূণ্য হয়, কত বাবার স্বপ্ন চুরমার হয়, নিজেদেরই দোষে সব হারিয়ে যায়।
ঋতমও কী চাইলে পারে না নিজের জীবনটাকে একটু অন্যভাবে সাজাতে?ডাক্তার হতে, এই মানুষ গুলোর পাশে দাঁড়াতে, ভাবাই যায় বিষয়টা। অস্ফুটে যেন মৃদু হাসল ছবিটা, শাওন।দূরে কোথাও শোনা যাচ্ছে, ঐ চায়ের দোকানটায় বোধ হয়, উনুনের ধোঁয়ার সাথে, “তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম।।।”