।। ১।।
(সাল ১৯৮০)
“বক বকম, বক বকম”- ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে গম খুঁটে খাচ্ছিল পায়রাগুলো, আর তাদের এই চলাচল-এর দিকেই আনমনে তাকিয়ে ছিল রূপসা । মাথায় মোটা মোটা বেড়া বিনুনি বাঁধা ফিতে দিয়ে, কানে দুল, হাতে বালা, গলায় হার, পরনে শাড়ি, কপালে ছোট্ট টিপও জ্বলজ্বল করছে বটে । রূপসা, গাঙ্গুলী বাড়ির ছোট মেয়ে, সবার খুব আদরের বলাই বাহুল্য । অষ্টাদশী সুলক্ষণা এই কন্যা গাঙ্গুলী বাড়ির প্রাণ ভোমরা ।
************
(সাল ২০১৮)
-“স্যার, আমি ফাইলগুলো মেল করে দিয়েছি, প্লিজ একবার চেক করে নিন ।”
চেক প্যাটার্নের শার্ট, জিন্স, লোফারস, হাতে ঘড়ি, কানে এক কুচি হীরে, চোখে হাফরিমচশমা, খোলা রেশমের মতো চুলে অনন্যা, প্রকৃতই অনন্যা । মিঃ হিমাদ্রিকিশোর রায় নামি বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চ পদস্থ অফিসার, এনার তত্বাবধানে কাজে হাতেখড়ি, আর এনার কাছেই কাজ শিখেছে অনন্যা । অনন্যা হিমাদ্রীবাবুর ভাইঝির বয়সী তাই হিমাদ্রীবাবু যথেষ্ঠ স্নেহ করেন অনন্যাকে । অনন্যাও স্যার সুলভ শুধু নয়, তার থেকেও বেশি নিজের বাবাকাকার মতোই শ্রদ্ধা করে ওনাকে ।
****************
বিগত কয়েকদিন ধরেই হিমাদ্রীবাবুকে বড় অন্যমনস্ক লাগছে । অনন্যা সেটা প্রথমেই লক্ষ্য করেছে, আজ জিজ্ঞেস করেই ফেললো, “স্যার, আপনার কী কিছু হয়েছে?”
চোখ বুজে নিজেকে ভাবনায় ডুবিয়ে রেখেছিলেন হিমাদ্রীবাবু, অনন্যার কথায় চোখ খুলে মুখে জোর করে হাসি টেনে বললেন,”কেন রে মা? কিছু হয়নি, কটা বাজে খেয়াল আছে? যা বাড়ি যা ।”
নীচে তিলোত্তমা মহানগরী আলোর খেলায় সাজিয়ে ফেলেছে নিজেকে ততক্ষনে, বহুতল অফিস তখন সবাই একে একে ব্যাগ গুটোচ্ছে, সামনে weekend আছে, তাই সবারই মনে বেশ আনন্দ । অনন্যাও প্ল্যান করে রেখেছে, দেশের বাড়ি যাওয়া হয়নি বহুদিন, এবারে ঘুরে আসবে, কিন্তু স্যার-এর কিছু একটা তো হয়েইছে ।
।।২।।
নীচে তিলোত্তমা মহানগরীর ব্যস্ততা, আলোয় সাজা কর্কট মহানগরীর বুক চিরে দাঁড়িয়ে বহুতলটা, তারই কোন এক বারান্দায় মুখোমুখি কফি হাতে অনন্যা আর হিমাদ্রীবাবু । আকাশটা এখান থেকে যেন আরো কাছাকাছি, আর নীচে ছোট ছোট বাড়ি | গাড়িগুলোয় ক্লান্ত হয়ে ফেরা অফিস-যাত্রীগুলো যেন পুতুল, সেদিকেই তাকিয়েছিল অনন্যা, বলল, “স্যার, এত উঁচু থেকে শহরটাকে দেখলে নিজেকে একা মনে হয় না?”
খানিক হেসে হিমাদ্রীবাবু বললেন,”মনে হওয়ার কী আছে? একাই তো ।”
-“মানে?”
-“দ্যাখ, এত বড় ফ্ল্যাটে আমি, আমার একাকিত্ব, ব্যস । কাজেরলোক আছে, রেঁধে দিয়ে যায়, আর আমার সহধর্মিনী যখন মর্জি হয় বা টাকার টান পড়ে দেখা দেন, ব্যস, এর থেকে বেশি আর কী-ই বা বলতে পারি?”
হতবাক হয়ে কথাগুলো শুনছিল অনন্যা । স্যার পার্সোনাল লাইফে যথেষ্ট খুশি এটাই প্রিটেন্ড করে এসেছে এতদিন, এখন হঠাৎ করে এসব কী?
-“স্যার, আপনারা তো একসাথে যথেষ্ট ভাল আছেন, অন্তত তাই-ই তো জানতাম…”
কথাটা কেটে হেসে ফেললেন হিমাদ্রীবাবু । কফি মগটা নামিয়ে রাখলেন টেবিলে, “যা বাইরে থেকে দেখছো, তার সব সত্যি হয় কী?”
-“স্যার, মানে,….”
-“হ্যাঁহ, সত্যি এটাই, আমাদের দাম্পত্য জীবন আর পাঁচটা দম্পতির মতো নয় । আমি জানি না আমাদের মধ্যে আদৌ ভালবাসা ছিল বা আছে কী না, কিন্তু আমি চেয়েছিলাম, বা এখনো চাই সংসারটা করতে । অনেক বুঝিয়েছি ওকে, অনেক, লাভ হয়নি । আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে, নিদেন পক্ষে একজন মানুষ হিসেবেও কোনদিন মানেনি, ভালবাসা তো অনেক দূরের কথা । তবে এসব অনেক আগে থেকে শুর | হয়তো, হয়তো কেন বলছি, দোষটা আমারই, এখন এটাই মনে হয় আমার”, আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন হিমাদ্রীবাবু ।
।।৩।।
-“কীরে, আজ তোর ঐ কাঁচা হলুদ রঙা টিপটা পরিসনি কেন?”
পাশ থেকে সাইকেলের টিং টিং শব্দে ফিরে তাকাল শ্যামলা মেয়েটা । ততক্ষনে রোগা ছেলেটা হুশ করে পাশ থেকে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল, মনটা উড়িয়ে নিয়ে, আরও একবার ।
**************
বাইরে, উত্তুরে হালকা ঠান্ডা হাওয়ার আমেজ, আর সাথে সাথে বাড়ি বাড়ি শঙ্খ-উলুধ্বনির আওয়াজ, সরস্বতী পুজো যে আজ, বাঙালির প্রেম দিবসও যে আজ । বাইরে পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার রক্তলাল আবির প্রকৃতির বুক চিরে জানান দিচ্ছে প্রেমের আবার । ইতিউতি যেন ছড়িয়ে রয়েছে টুকরো টুকরো প্রেমের ভোমরাগুলো ।
দধিকর্মা দিতে এসছিল রূপসা, ওর প্রিয় হিমুদা-এর বাড়িতে । সবার অলক্ষ্যে চিলেকোঠায় উঠতে যাওয়ার সিঁড়িতে রূপসার হাতটা ধরে হ্যাঁচকা টান মেরেছিল ওর হিমুদা । চোখে চোখ রেখে মনের কথা বলতে দেরী করেনি হিমুদা । সেদিনকার সেই শ্যামলা, সরল মেয়েটা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে পালিয়েছিল । তারপর শুরু হয়েছিল এক নতুন অধ্যায় । সবার অলক্ষ্যে লুকিয়ে গড়ে উঠছিল দুই মনের নিষ্পাপ ভালবাসা ।
***************
পুকুর পাড়ে এই পড়ন্ত দুপুরটায় খুব একটা কেউ আসে না । পায়রাগুলো ঘাসের উপর হেঁটে বেড়াচ্ছিল গুটি গুটি পায়ে, গাছের তলটা আশপাশের তুলনায় বেশ ঠান্ডা ।
“আমার তোর কোন জিনিসটা সব থেকে ভাল লাগে জানিস?”, হিমুদা রূপসার দিকে মুগ্দ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্নটা করল ।
একটু সংকোচ, একটু লজ্জা, আর একটু ভয় ছিল রূপসার চোখ দুটোতে । বলল,”কী?”
-“ঐ যে তোর চোখ দুটো, কোন ছলনা নেই যেখানে, কোন মেকী অনুভূতি নেই, আছে শুধু অনাবিল সারল্য । এই সারল্যটাই বার বার আমায় টানে তোর কাছে। এড়াতেই পারি না, তোর কাছে না এসে পারিই না, হয়তো এড়াতে চাইও না । সত্যিই তোকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি । আমায় ছেড়ে আর কাউকে ভালবাসবি না তো?”
ছিল শুধু মৌনতা, এই মৌনতাই সায় দিয়েছিল রূপসার অপেক্ষার । নিজের হিমুদার জন্য অপেক্ষা করতে কোন দ্বিধা নেই রূপসার, সব বাধার বিরুদ্ধে লড়তে কোন ভয় ছিল না সেই চোখে ।
***************
-“ট্রেন কখন?”
-“আজ দুপুর তিনটেয় । আমায় চিঠি লিখবি তো?”
-“লিখব । তুমি?”
-“লিখব, আর নিজেকে বদলাবি না তো? এরকমই থাকবি, আমার সরল, সাদাসিদে রূপসা ।”
সেদিনের প্রেম ছিল অটুট । ট্রেন স্টেশন ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছিল সেদিন, অপেক্ষায় ছিল দুটো মন, একটা গ্রামে, একটা শহরে । নিজেকে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই-এ ব্যস্ত ছিল তারা । দুজনের এক হওয়ার চেষ্টায় ক্যারিয়ার-এর লড়াই-এ দ্রুত এগোতে চেয়েছিল ওরা ।
।।৪।।
“স্যার, আমার মনে হয়, আপনার একবার সামনা সামনি কথা বলা উচিত, ম্যাডাম-এর সাথে ।”
-“কোন লাভ হয়নি, অনেকবার চেষ্টা করেছি, কী লাভ হলো, জোর করে কী কাউকে বাঁধা যায়? হয়তো ক্যারিয়ারে ওঠার নেশায় কোনদিন তাকাইনি, তার খেয়াল যত্ন কিছুই করিনি, মানছি তো । ভাবতাম বুদ্ধিমতী, নিজেও চাকুরীরতা, ঠিক বুঝবে সবটা । পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ-এর মাঝের টানাপোড়েনটা মাঝখান থেকে আমিই সামলাতে পারিনি । পারিনি ব্যালেন্স করতে, হয়তো আমার জন্যই….জানি না ।” দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন হিমাদ্রীবাবু, চোখের কোণের জলটা দিনের আলো থাকলে হয়তো দেখতে পেত অনন্যা ।
***************
(বেশ কিছুদিন পর)
থামল গাড়িটা বাড়িটার সামনে । নামলেন হিমাদ্রীবাবু, সঙ্গে অনন্যা । অনেক বুঝিয়ে এখানে আনতে পেরেছে অনন্যা হিমাদ্রীবাবুকে । ওনার স্ত্রী-ও আসছে, অন দ্য ওয়ে, অনন্যাই আপোয়েনমেন্ট ফিক্স করেছে । একটা কাউন্সেলিং খুব খুব দরকার, ওর এটাই মনে হয়েছিল, আর সব যখন হাতের কাছেই, ও আর দেরী করেনি ।
***************
চেম্বারটা আক্ষরিক অর্থে সেরকম চেম্বারই নয়, ঘরে ঢুকেই মনটা কেমন ভাল হয়ে যায় । চারপাশে ইতিউতি ছড়ানো মন ভাল করা জিনিস, বই, ফুল, আলো, একটুকরো সবুজ ঘরের কোণে, আর অনেকটা আলো আর মুক্ত বাতাস, সেই হাওয়ায় উড়ছিল পর্দাটা । এখনও কাউন্সিলর আসেননি, ঠিক সময়ও হয়নি এখনো । হিমাদ্রীবাবুর স্ত্রী মীনাক্ষী দেবীও পৌঁছে গেছেন ।
“নমস্কার, আমিই সাইকোলজিস্ট রূপসা ব্যানার্জী ।”, বলতে বলতে তাকাল হিমাদ্রীবাবু আর তার স্ত্রীর দিকে । হিমাদ্রীবাবু তাকিয়েই রয়ে গেলেন, এই কী সেই রূপসা? সেই সরল মেয়েটা, এভাবে এরকম পরিস্থিতিতে কোনদিন দেখা হতে পারে, স্বপ্নেও ভাবেননি । কিন্তু, ওনার চোখে যে অগাধ বিস্ময় আর একরাশ জিজ্ঞাসা ছিল, তার ছিটে ফোঁটাও উনি প্রকাশ করতে পারছিলেন না, স্ত্রী মীনাক্ষী দেবীর সামনে । তার থেকেও আশ্চর্য উল্টো দিকে রূপসার চোখে সেই বিস্ময়ের আভাও ছিল না । হিমশীতল ছিল সেই দৃষ্টি, খুব শান্ত সেই চোখ, যেন সে দিকে তাকালেই মনের অর্ধেক অশান্তি দূর হয়ে যায়, যাকে ভরসা করে অনেক কিছু বলা যায়, হালকা হওয়া যায় । কিন্তু কোথায় সেই বিনুনি বাঁধা সাদা সিদে মেয়েটা? এ যে সম্পূর্ণ আলাদা এক নারী । চোখে মুখে আধুনিকতা, বুদ্ধিমত্তার ছাপ স্পষ্ট । অতীতের কোন তলে ভাবতে ভাবতে হিমাদ্রীবাবু নিজেও ভুলে গেছেন ওনার চুলেও যে পাক ধরেছে । জানলার windchime টা হওয়ার দোলায় দুলছিল, সুর তুলছিল ধূসর অতীতের ।
(কিছুদিন পর)
যে ট্রিটমেন্টের ভিতর হিমাদ্রীবাবু আর ওনার স্ত্রী আছেন, তাতে সপ্তাহে তিনদিন এখানে আসতেই হয় । কিন্তু, সপ্তাহে তিনদিনের পরও যেন আরও আসতে ইচ্ছে করে এখন হিমাদ্রীবাবুর । রূপসা ওনার প্রথম ভালোবাসা, আজ অস্বীকার করে কোন লাভ নেই, সেই মানুষটাকেই চোখের সামনে দেখে, নিজের অতীতের পাতাগুলো নড়ে চড়ে উঠেছিল । আর আজ তার মনের অবস্থা এরকমই , ” আবার কী ফিরে পেতে পারি না হারানো দিনগুলো, হারানো সুরগুলো?” কিন্তু যে সময় একবার যায় আর কী ফিরে আসে? হিমাদ্রীবাবু চোখের ভাষা লুকোতে পারছিলেন না, রূপসাদেবীরও সেটা বুঝতে বাকি ছিল না ।
**************
(বেশ কিছুদিন পর)
-“আজই আমার কাছে আপনাদের শেষ দিন । আশা করি, জীবনের বাকী পথটুকু আপনাদের মসৃন হবে, ভালবাসায় আর শান্তিতে কাটবে, আর তাতেই আমার কাজ সফল হবে, খুব ভাল থাকুন ।”
একটা নোট ছেড়ে রেখে গেছেন রূপসাদেবী, হিমাদ্রীবাবু আর মীনাক্ষীদেবীর উদ্দেশ্যে । একটা জরুরী কাজে বেরিয়ে গেছেন, আজ আর থাকার কোন বিশেষ প্রয়োজনও ছিল না, ওনার কাজ উনি সফল ভাবে শেষ করেছেন।
হিমাদ্রীবাবু মনে মনে ভাবলেন,”তুমি জানতে তাই না রূপসা আমি তোমার সঙ্গে আজ অন্তত যে করেই হোক একবার কথা বলার চেষ্টা করবো, ঐ জন্য কিছুতেই আর ধরা দিলে না বলো? কিছুই বলার মুখ নেই আমার, তাও, তোমার কাছে ক্ষমা চাইতাম একবার । স্বপ্ন দেখিয়ে, ভালবাসার কথা বলে, হাত ছেড়ে দেওয়া আর অন্য কাউকে বিয়ে করে নেওয়া, এর কোনো ব্যাখ্যা আর অজুহাত হয় না । সেদিন তুমি আনস্মার্ট, গ্রাম্য, স্বল্প শিক্ষিত, গ্ল্যামারহীন বলে তোমায় ছেড়ে মীনাক্ষীর হাত ধরেছিলাম, আর আজ দ্যাখো, সেই তুমিই আমার ভেসে যাওয়া, ডুবন্ত সংসারটাকে নিজগুনে বাঁচিয়ে দিলে । তুমি নিজেকে আজ উচ্চতার সেই শিখরে নিয়ে গেছ, যে আজ আমি ম্লান হয়েও তোমার জন্য খুব খুশি । আমি ভাবিনি মীনাক্ষীর সাথে আমি আবার সংসার করতে পারব । ধন্যবাদ দেওয়া বা ক্ষমা চাওয়া কোনটাই হলো না । তুমি ভাল থেকো রূপসা ।”
গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লেন হিমাদ্রীবাবু আর মীনাক্ষীদেবী । মীনাক্ষীদেবী আর সত্যিই কৃতজ্ঞ রূপসা ম্যাম-এর কাছে । যদিও এনার আর একটা পরিচয় ওনার অধরাই রয়ে গেছে । নিজেকে বদলাতে চাইলে তবেই বদলানো সম্ভব, আর তখন যদি হাতটা শক্ত করে ধরার মত কাউকে পাওয়া যায়, সেটা অনেক সহজ হয়ে যায় । মীনাক্ষীদেবী আর হিমাদ্রীবাবু নিজগুনে নিজের সম্পর্কটা বাঁচিয়েছেন আর তাতে রূপসাদেবীর অবদান অনস্বীকার্য ।
****************
(কিছুদিন পর)
-“আচ্ছা পিসি, তুমি সেদিন আমার বস আর ওনার স্ত্রী-এর সাথে দেখা না করে ওভাবে চলে গেছিলে কেন? তুমি তো আর কোন পেশেন্টের সাথে এরকম করো না ।”
নিজের কাজগুলো ব্যস্ত হাতে শেষ করছিলো রূপসা, অনন্যার আদরের পিসিমনি, যার আর একটা পরিচয় ।
বইগুলো গোছাতে গোছাতেই উত্তর দিলেন, ” সব কথা নাই বা বলা হলো, কিছু কথা না বলাই থাকে ।”
-“ধ্যুত, তোমার সবসময় হেঁয়ালি ভাল লাগে না, যাও তো ।”
অভিমান দেখিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসে পড়ল অনন্যা, মোবাইলের গেম-এ ব্যস্ত হয়ে ।
অনন্যার চোখ এড়িয়ে নিজের বই-এর ভাঁজে বহুপুরোনো হিমুদার ছবিটার দিকে এক ঝলক তাকিয়েই বন্ধ করে দিলেন রূপসাদেবী । আশেপাশের কৃষ্ণচূড়া গাছ, বারান্দার পায়রা আর কাঠবেড়ালিগুলো, দেয়ালের ইটগুলো খালি চুপিচুপি শুনতে পেল কথাটা, “ভাল থেকো হিমুদা ।”