||১||
সবুজ ক্ষেত পেরিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন, জানলার পাশের সীটে ঝোড়ো হওয়াটা ধাক্কা খাচ্ছে আমার মুখে, এত ঠান্ডা হাওয়ায় এতক্ষণের সব ক্লান্তি ফুড়ুৎ | খানিক মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, মা ঘুমোচ্ছে, আমিও চোখটা বুজলাম | সেই তো নালিকুলে নামবো, অনেক দেরী | আমার মামার বাড়ি | গরমের ছুটি যেমনি পড়েছে স্কুলে, তেমনি আমার একমাত্র ডেস্টিনেশন | দিদা আমার জন্য সব আমার পছন্দের খাবার বানিয়ে ফেলে ছুটি পড়লেই, ‘আমার সুইট দিদু ‘, ভাৱতে ভাবতেই মুখে আপনা আপনি হাসি চলে এল | অবশ্যই শুধু দাদু দিদা নয়, ছুটি পড়লে মামাবাড়ি যাওয়ার আরেকটা বিশেষ কারণও আছে |
ইস, এতক্ষণ বলাই হয়নি, আমি সৃষ্টি চ্যাটার্জী, বাড়ি কলকাতার খিদিরপুরে |
||২||
“ঐ তো মিমিরা সব এসে গেছে |”
রিকশা থেকে নামতে নামতে বড় মামীর গলা পেলাম | ব্যাগপত্র নামিয়ে নিলাম, মামা ভাড়া মিটিয়ে দিল, মামা আর মা ব্যাগ নিয়ে, আর আমি পিছনে আসতে আসতে টুক করে একবার পাশের বাড়ির ছাদটা দেখে নিলাম | নাহ, নেই |
***************
ঢুকে পড়লাম বাড়িতে, দিদু তো কখন থেকে বসে আছে আমাদের জন্য |
-“কী করব বলো ট্রেন লেট করল |”
-“যা হাত মুখ ধুয়ে নে দিদিভাই, খেতে দিচ্ছি”, বলে দিদু খেতে দিতে গেল | দিদুর হাতের রান্না খাব ভাবলেই পেটটা কেমন খালি খালি লাগে |
***************
“পেটে আর একটুও জায়গা নেই মামি বিশ্বাস করো আর পারব না |”, এখুনি পায়েস শেষ করতে না করতেই মিষ্টি পড়ল পাতে, সেই নিয়েই কথা, এত খেতে পারি আমি? মাছ, মাংস আবার এসব, ‘মামাবাড়ির আদর’ মানে যথার্থই তাই |
এবাড়িতে এলে একমুহুর্তও কারো মন খারাপ হতে পারে না, সামনে ফাঁকা মাঠ, উপরে বিশাল ছাদ, বিশাল দালানে খেলার জায়গা অফুরন্ত, তার সাথে মামারা, মামিরা, ভাই বোন, দাদু দিদা সব মিলিয়ে আর যেন কিচ্ছুটি চাই না | যেন প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারি, শহরের ধূসরের মাঝের সবটুকু ক্লান্তি যেন সবুজের ছোঁয়ায় উধাও |
||৩||
দুপুরে হালকা রেস্ট নিয়ে বিকেলে উঠলাম ছাদে | এই ছাদটাই হচ্ছে মামাবাড়িতে আমার সব থেকে প্রিয় জায়গা | এক তো এত সুন্দর পরিবেশ, ছাদ থেকে যেদিকে তাকাই শুধু গাছ আর গাছ, আর ছাদেও জুঁই, বেল, গন্ধরাজের গন্ধে মম করে চারপাশটা,আর আরেকটা কারণ হলো পাশের বাড়ির ছাদে, যাকে দেখার জন্য আমার মনটা…|
****************
আমি আর বোন উঠে খেলছিলাম ছাদে | খেলতে খেলতেই চোখ বার বার যাচ্ছে পাশের বাড়ির ছাদটায়, আজ এখনও ওঠেনি | আমার ছোট থেকেই মডেলিং আর অভিনয়ের ইচ্ছা, সেই মতো অডিশনও দিতে শুরু করে দিয়েছি | এইক্ষেত্রে বাড়ি থেকে সব সময় সাপোর্টটা পেয়েছি, এটাই অনেক বড় ব্যাপার | তো বোনকে এসব নিয়েই অনেক রকম অভিনয় করে দেখাচ্ছিলাম | আমি ছোট থেকে নাচও শিখি, দু’জনে নাচলামও | এসবেই এত মগ্ন হয়ে গেছিলাম যে খেয়ালই করিনি একজন পাশের ছাদে অলরেডি চলে এসছে |
নাচ থামিয়ে যতক্ষনে বুঝলাম, ততক্ষনে সে আমার নৃত্যশৈলীতে মুগধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল, কিন্তু সেই হাসি দেখে লজ্জায় কানদুটো লাল হয়ে যাচ্ছিল আমার | চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম, ছুটকি নামলে কথা বলছি |
সন্ধ্যা নামতেই বড় মামি ডাক ছাড়লেন ছাদ থেকে নামতে | ছুটকিকে নামিয়ে দিলাম, বললাম,”গিয়ে ভাল করে চপ মুড়িটা মাখ, যাচ্ছি এখুনি |”
ছুটকি নামতেই মনে হয় হaওয়ার থেকেও দ্রুত বেগে পৌঁছলাম পাঁচিলের গায়ে, যেখানটা থেকে আকাশ আর আমার মধ্যেকার দূরত্বটা সবথেকে কম |
“এত দেরীতে এলে?” একটু অভিমান নিয়েই প্রশ্নটা ছুঁড়লাম আকাশের দিকে |
-“কী করব তাড়াতাড়ি এসে? তোর পেঁচার মত মুখ দেখতে ঘুম কেঁচিয়ে আসতে আমার বয়েই গেছে |”
-“কী বললে তুমি? আমি পেঁচা?”
-“ওহ, সরি সরি, পেঁচি |”, বলেই নিজের ভুবন ভোলানো হাসিটা দিয়ে আরেকবার আমার মনের সব হিসেবগুলো ওলটপালট করে দিলো যেন | কিন্তু তাও রাগের ভান করে ঝট করে নেমে এলাম, পাছে আমার চোখ বলে ফেলে, আমি তাকে কতটা ভালবাসি |
||৪||
আকাশ ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে, ওর আর আমার ব্যাপারটা বিগত দুই বছরের, ভাইবোনেরা জানে শুধু | কবে কিভাবে কখন যে শুরু হয়েছিল নিজেরই মনে নেই, শুধু যেদিন ও হঠাৎ আমার হাতে একটা কাগজ ছুঁড়ে দিয়ে সাইকেল নিয়ে পালিয়েছিল,… না না, যেদিন ছাদে খেলতে খেলতে চিঠি লিখে নুড়ি পাথারে মুড়িয়ে ছুঁড়েছিল আমার গায়ে,…. নাকী যেদিন জ্বরে বেহুঁশ আমায় ওষুধ দিতে আসার নাম করে আমার কপালে ছুঁইয়ে দিয়ে গেছল নিজের ঠোঁটটা |…কবে? জানা নেই |
পড়ন্ত বেলায় রোদ এসে ঘরটা ঝলমল করছিল, সামনের গন্ধরাজ ফুলের গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবছিলাম, আচ্ছা, আমি তো ওকে কখনো চিঠি দিনি | আইডিয়া, এবার বাবাজিকে চিঠিই দেব |
যেমনই ভাবনা তেমনই কাজ | নীল গোলাপি কাগজের রাইটিং প্যাডটা নামিয়ে বসলাম লিখতে | এসব লেখালেখি তো আসে না আমার, তাও, নিজের মনের কথা নিজের মনের মানুষটাকেই যদি অগোছালো ভাষায় বলি, বুঝে নেবে নাকী?
লিখতে লিখতেই কিছুক্ষন পর দিদু হাঁক দিল, “কী এত করছিস ঘরে, দেখ কী বানিয়েছি তোর জন্য |”
“যাচ্ছি”, সাড়া দিয়েই তাড়াতাড়ি শেষ করে লোকাতে লাগলাম চিঠিটা | খাতার ভাঁজে বন্ধ করা চিঠিটা পড়ন্ত বেলায় প্রহর গুনতে লাগল কখন পৌঁছাবে আসল মালিকের হাতে |
****************
চিঠি আপাতত তার মালিকের কাছে পৌঁছে গেছে আশা করি | উত্তর এখনও পাইনি, ছাদেও উঠতে দেখিনি ২৪ ঘন্টায়, খোঁজ করতে হবে | আপাতত আমি খুব ব্যস্ত, আর বড্ড খুশি, অডিশনে সিলেক্টেড আমি | বাড়িতেও সবাই খুব খুশি, আজই খবর পেলাম | একবার আমার আকাশকেও জানাতে হবে, কিন্তু ওনার তো পাত্তাই নেই | ছোট মামা গেছে আমার পছন্দের বিরিয়ানি আনতে, আর বড় মামা সন্ধে বেলা ফেরার পথে আমার প্রিয় কিছু নিয়ে আসবে |
**************
বিকেলে ছাদে উঠলাম | নাহ, আজও নেই | আমি যখন আসি তখন তো একটুও সময় নষ্ট করে না এভাবে, এইটুকুই তো সম্বল, বাকি তো ফোনে, দেখা তো আর হয় না | কী হলো???
…….এতদূর অবধি একনিঃশ্বাসে পড়ে বিরাম নিলো সামনে বসা নতুন ছেলেটা |
অনেক কষ্টে ডেট পেয়েছে আজ ডিরেক্টর স্যার আর নীহারিকা ম্যাম-এর, মন জয় করতেই হবে |
নীহারিকা রয়, আপাতত এক নম্বর নায়িকা, মুম্বাই-এর জুহু বীচের পাশে নিজের বিলাস বহুল ফ্ল্যাটে বসে এতক্ষন স্ক্রিপ্টটা শুনতে শুনতে মুগধ হওয়ার থেকে বেশি অবাক হচ্ছিল | কিছুতেই থই খুঁজে পাচ্ছিল না নীহারিকা | ঐশিক আর ওর ঘটনার পর দীর্ঘ দশটা বছর অতিক্রান্ত, এই ছেলেটা এত ডিটেলসে এত কিছু জানলটা কী ভাবে? কে এ?
নাহ, শেষ ক্লাইম্যাক্স শোনার মত মনের অবস্থা নেই নীহারিকার | ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে, ঢেউগুলো ভাঙতে দেখছিলো নীহারিকা | আজ এতদিন পর আবার কেন? হ্যাঁ, ঘটনাটার পর কলকাতায় একটা চিঠি পেয়েছিল বটে ঐশিকের | ঐ যা হয়, নিজের স্বপ্ন সত্যি করো, ইত্যাদি, ইত্যাদি…| এসব সেন্টিমেন্টের কোন মূল্য নেই আর এখন | কিন্তু ছেলেটা? নাহ, জানতেই হবে ওকে |
****************
সন্ধের দিকে ফোনে করে ছেলেটাকে আর একবার ডেকে পাঠাল নীহারিকা |
“এই প্লটটা তোমার মাথায় কিভাবে এলো?”, নিজের রেশমের মত চুলটা গোছাতে গোছাতে প্রশ্নটা ছুঁড়ল নীহারিকা, কোন ভূমিকা না করেই, যাতে মিথ্যে কোন কথা গোছাতে না পারে ছেলেটা |
ছেলেটা স্বভাবতই খানিক থতমত খেয়ে উত্তর দিল,কেন ম্যাম, এনি প্রব্লেম?”
-“না কোনো প্রব্লেম কেন হবে, আমি জানতে চাইছি সোর্সটা কী?”
কিছুক্ষন মৌনতার পর,”আসলে আমার দিদির থেকে শুনেছিলাম তার থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এটা লিখি | ভেবেছিলাম চিত্রনাট্য হিসাবে ভাল মানাবে |”
-“ব্যস, ব্যস, আর কিছু জানতে চাই না | তোমার দিদির কন্ট্যাক্ট ডিটেলসটা আমার সেক্রেটারীকে দিয়ে যাও, আর তোমার স্ক্রিপ্ট আমার ভালো লেগেছে, তাই ওটা নিয়ে ভেবো না |”
ছেলেটিকে বিদায় জানিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো নীহারিকা, রাতের আকাশের মিটিমিটি তারা আর বাণিজ্য নগরীর ঝলমলে আলোর ভিড়ের মাঝে হঠাৎ সজীব হয়ে উঠছিল দশ বছর আগেকার ঝলসানো স্মৃতিগুলো | হঠাৎ ফোনের আওয়াজে চোখের কোণের জমা জলটা টুপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নীহারিকার |
-“ম্যাম আমি ওনাকে কাল শ্যুটিং স্পটেই ডেকে নি তাহলে?”
-“হুম ওকে |”, বলে ফোন রাখল নীহারিকা |
পরদিন শ্যুটিং স্পটে দেখা হয় মেয়েটির সাথে | মেয়েটি তো এত বড় স্টারের সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ হতে পারে ভেবেই আহ্লাদিত |
মেয়েটিকে গল্পের সোর্সের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে মেয়েটি খানিক ইতস্তত করে বলে,
-“আমার একজন স্যার এর থেকে |”
-“কোন স্যার?মানে উনি কোথায় পড়ান?”
-“আমার কলেজের স্যার, ক্লাসে একবার গল্পটা বলেছিলেন….”|
চকচক করে উঠল নীহারিকার চোখগুলো, নিজের অজান্তেই, কেন তা জানে না |
ব্যস, বাকী ডিটেলগুলো জোগাড় করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি নীহারিকাকে |
****************
সেই রাতটা আর ঘুম হয়নি নরম বিছানায় এ.সি ঘরে, মুখোমুখি একবার হতেই হবে ঐশিকের সাথে | সে রাতে ঘড়ির টিকটিক টিকটিক শব্দ আর বুকের ভিতর ধড়ফড়ানি আওয়াজটা, আর সঙ্গী বিনিদ্র রাত |
||৬||
ঝাঁ চকচকে গাড়িটা মুম্বাই-এর ঘিঞ্জি এলাকায় থামতেই অনেকগুলো উৎসুক চোখ ভিড় জমিয়েছিল বারান্দা থেকে | কোনোক্রমে মুখ ঢেকে পার হলো নীহারিকা | কোনোরকম আগাম হদিশ দেওয়া ছিল না, তাই সটান নীহারিকা ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেল, একটা মানুষ অজস্র বইখাতার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে, কে এল কে গেল কোনো খেয়ালই নেই |
-“কেমন আছো ঐশিক?”
সেই এক কণ্ঠস্বর, শুনেই এক লহমায় পিছন ফিরে তাকাল ঐশিক | গ্ল্যামারের চাকচিক্কে ঢাকা সেদিনকার সাধারণ মেয়েটাকে চিনতে কয়েক পলক সময় লাগলেও কোনো ভুল হয়নি |
-“তুমি? এখানে? এভাবে?”, হতবাক ঐশিক বুঝেই উঠতে পারছে না যে কী হলো?
-“আমি এখানে যেভাবেই হই না কেন, তুমি একটা থার্ড পার্সনকে আমার লাইফের ঘটনা বলেছ কোন অধিকারে?”
-“কী ভুলভাল বকছ? আর আজ এতদিন পর হঠাৎ কেন এসেছ? যখন হাতটা ছেড়েই দিয়েছিলে দশ বছর আগে, তখন আবার কেন?”
-“মানে? আমি ছেড়েছিলাম নাকী তুমি? কী আবোল তাবোল বকছ? আর এসব অবান্তর কথার সময় নেই আমার কাছে |
-“সময় তোমার কবে ছিল? স্বপ্নকে ছুঁতে সময়ের এভাবেই তো একটা সম্পর্ককে শেষ করেছিলে | তাহলে আজ কেন আবার অতীতের মুখোমুখি? তুমি তো আর বাংলার সেই সাধারণ মেয়েটা নেই | তুমি তো এখন বড়ো স্টার মুম্বাই-এর, আমার সাথে কথা বলার তো দরকার নেই, প্লিজ যাও |”
নীহারিকা ঐশিকের আবোল তাবোল কথা শুনে কিছুই বুঝছিল না, শুধু বুঝছিল যে ওদের চোখের আড়ালেও আরো কিছু হয়েছিল |
“তোমার মা, দিদি আমার বাড়ি এসছিলেন এটা জানতে না তুমি?”-নীহারিকা |
দুজনের চোখেই ভ্রান্তি, সংশয় | ঐশিক বলল,”হ্যাঁ জানতাম, কিন্তু তুমি মাকে বলনি যে তুমি আমাদের বাড়ির সাথে সম্পর্ক রাখতে চাও না?”
-“আমি? উল্টে তোমার মা আর দিদিই আমাদের বাড়ি এসে অপমান করেছিলেন |
-“কিন্তু মা তো বলেছিল, মা তোমার আর আমার ব্যাপারে কথা বলতে গেছিলেন, সব ঠিক করে রাখতে | তুমি অডিশনে সিলেক্ট হওয়ার জন্য নাকী ‘না’ বলে দিয়েছিলে |”
“দাঁড়াও, দাঁড়াও, কী হয়েছিল সেদিন আমায় বলতে দাও একবার |”, নীহারিকা শুরু করল,”চিন্তার কালো মেঘ আমার মনে প্রভাব ফেলতে শুরু করছিলো যেই, সেই তখনই, সন্ধেবেলা হঠাৎ কাকীমা আর রিনিদি আমাদের বাড়ি এসে হাজির | কিছু বোঝার আগেই যেন একটা ঝড় বয়ে গেছিল সারা বাড়িতে |তোমাকে লেখা প্রথম চিঠিটা, আমাদের সম্পর্কের কথা, আমার অভিনয় করার শখ সব কিছু নিয়েই একটা ঝড় বইয়ে দিয়ে চলে গেলেন ওনারা | আমার মতো ‘নাচুনী’ মেয়ে ওনাদের বাড়ির কোনো সদস্য হওয়ারই যোগ্যতা রাখে না | অজস্র অপমান, নিন্দা, মন্দ শোনার পর যখন শুনলাম নিজের মা-এর ডিসিশনে তোমার ও কোন আপত্তি নেই, তখন বুঝলাম, ওহ…ওই জন্যই একবারও আমার সামনে আসার সাহস হলো না | আস্তে আস্তে পাকানো জট টা খুলতে শুরু করছিলো চোখের সামনে, আর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতার তীব্র রোষে পুড়তে শুরু করেছিল একটা সরল মন, যে শুধু ভালবেসেছিলো |
বাড়ি ফিরে আসি তারপর | হ্যাঁ, তারপর থেকে মামাবাড়ি যাওয়াটা একদমই কমিয়ে দিয়েছিলাম …|”
চুপ করল নীহারিকা, গ্ল্যামারের চাকচিক্যের আড়ালের সাধারণ মেয়েটা আবার বেরিয়ে এল |
“মা-এর তোমার অভিনয় জগতে আসা পছন্দ ছিল না জানি, কিন্তু তাই বলে এত বড় একটা মিথ্যে ! “, ঝাপসা চোখে বাইরের দিকে তাকাল ঐশিক |
কিছুক্ষন পর বললো ,”আমায় মা-এর মুখোমুখি হতেই হবে একবার, কিন্তু তুমিও তো জানাতে পারতে সবটা চিঠিতে, আমি তো তোমায় শেষবারের মত চিঠিও লিখেছিলাম |”
নীহারিকা-“কোনো লাভ হতো কী? আমাদের দুজনের দুজনের প্রতি তো বিশ্বাসটাই ছিল না, বিশ্বাস থাকলে এত বড় চক্রান্ত করতে পারত কী কেউ? দোষ বল, দায় বল যেটা আমাদেরও ততটা যতটা বাকীদের |”
ঐশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে,”এমনিও আমি কী তোমার যোগ্য আজ? তাও মা কে প্রশ্নগুলো আমায় করতেই হবে |”
***************
কলকাতা গামী প্লেনে চেপে বইটা খুলল ঐশিক, নীহারিকার লেখা চিরকুটটা হাতে লাগল – “একবার হারিয়েছি, আর হারাতে পারব না তোমায়, অপেক্ষায় রইলাম |”
হাওয়াই জাহাজ তখন মেঘ কাটিয়ে উড়ে চলেছে | প্লেনটার থেকেও যেন বেশি তাড়া ঐশিকের | তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে যে ওকে……