ঘরজামাই

||১||

“ঐ তো ঘর জামাই এসে গেছে | এসো, এসো |” অফিসের বোস বাবু অর্ণবকে দেখেই নিজের স্বভাবসিদ্ধ তির্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিলেন অর্ণবকে লক্ষ্য করে |

নিজের ডেস্কে ব্যাগটা নামাতে নামাতেই পাশের ডেস্কের মিঃ মিত্র যোগ করলেন, “তো তোর কপাল আছে বলতে হবে, শ্বশুরবাড়ির তো ভালোই আছে শুনেছি, বাড়িটাও পাবি | সত্যি, ভাগ্য বটে, খুঁজে পেতেও তো হয়েছে এমন ঘর |”

এসব কটু মন্তব্যগুলো এখন গা সওয়া হয়ে গেছে অর্ণবের, এখন আর পাত্তা দেয় না | আগে খারাপ লাগত, কিন্তু এখন বুঝে গেছে, পুরোটা না জেনে, না বুঝে ভুল ভাল মন্তব্য করার লোকের সংখ্যাটাই বেশি, তা এদের যতই বোঝাতে যাই না কেন | তার থেকে যা বলে সুখ পায় পাক |

**************

অর্ণব আর মহুয়ার বিয়ে হয়েছে মাস সাতেক | বিয়ের পর ওরা অর্ণবের শ্বশুরবাড়ির কাছেই, বাগুইহাটি এলাকায় একটা ফ্ল্যাট নেয় | তারপর থেকেই রটনা শুরু হলো যে অর্ণব হচ্ছে ঘরজামাই | ঘরজামাই না হলে কেউ শ্বশুরবাড়ির কাছে থাকে এরকম? ব্যস, আর কী, জল্পনা কল্পনা রটনা শুরু |

||২||

বাড়ি ফিরে ব্যাগটা রেখে ধপ করে সোফার উপর বসল অর্ণব, উফফ, যা ধকল গেল আজ | মহুয়াও ফিরেছে একটু আগে, ও অর্ণবের থেকে খানিকটা আগে ফেরে, শ্বশুর শাশুড়ির সাথে দেখা করে, খাবার দিয়ে, তারপর | এদিকে অর্ণবও, মহুয়ার ফিরতে দেরী হলেই শ্বশুর শাশুড়ির কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায় | দু’পক্ষের প্রতিই দুপক্ষের দ্বায়িত্ব, এটা অর্ণব আর মহুয়া দুজনেই জানে |

এই যেমন কদিন আগেই অর্ণবের মায়ের সর্দি কাশিটা খুব বেড়েছিল | সর্দি কাশি হলে মানুষের হাঁফ ধরে, অর্ণবকে বলতেও হয়নি, মহুয়াই সবটা সামলে নিয়েছে, অফিস ফেরত | দুজনের দুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আনুগত্যের পাশাপাশি দুই পরিবারের প্রতি দ্বায়িত্ব কর্তব্যও আছে, এটা অলিখিত, অব্যক্ত থেকেও দুজনের কাছেই স্পষ্ট, কারোকে কিছু বলতে হয়নি | আর এই নিয়ে দুই পরিবারের যথেষ্ট গর্ব, সত্যিই তো, এ তো গর্বেরই বিষয় |

||৩||

আজ আবার শুরু হয়েছে, আজ আবার সামনের ডেস্কের কল্যাণ বক্সী | আজ অর্ণব ঠিক করল, এদের সমুচিত জবাব দেওয়াটা বড্ড জরুরি |

-“ও তো ঘরজামাই, শ্বশুরবাড়ির পাড়াতেই থাকে, ওর কথা আর…. হে হে হে |”

কল্যানবাবুর দেঁতো হাসিটা বড্ড কানে লাগল আজ অর্ণবের, আর চুপ থাকতে পারল না |

-“আমি বিগত বেশ কদিন ধরে শুনছি ঘরজামাই, শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় থাকে, ওর আর চিন্তা কী ইত্যাদি ইত্যাদি | আপনাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে কে এই কথা বলে গেছে বলুন তো যে আমি ঘরজামাই? আর আমি কোথায় ফ্ল্যাট কিনব সেটা নিয়েও একটা জল্পনা বানিয়ে ফেললেন | আপনাদের এতো clarification দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না, তাও আপনাদের এত কৌতূহল নিরশনের জন্য বলি, বাগুইহাটিটা আমার আর ওর অফিসের মধ্যবর্তী একটা জায়গা বলে ওটাই আমরা ফ্ল্যাট কেনার আদর্শ জায়গা বলে সিদ্ধান্ত নি | সেখানেই আমার শ্বশুরবাড়ি সেটা ভেবে নয় | আর আমরা অফিস থেকে প্রত্যেক দিন দুজনেই দুইবাড়িতে যাই, মা বাবার কাছে | আমার মা বাবা তোমার বাবা মা এরকম কিছু করি না | ও যেমন আমার মা কে রেঁধে দিয়ে আসে, আমিও তেমন মহুয়া ফিরতে দেরী করলে আমার শাশুড়ি মাকে রেঁধে দিয়ে আসি | ওর অফিসটা আমার বাড়ির কাছে তাই ওদিকটা ও ভালই সামলে নেয় | আর সব থেকে বড়ো কথা, আমার মা বাবার আমি ছাড়াও ভাই-ও আছে, সমানভাবে সে-ও দায়িত্ব নেয়, এড়িয়ে যায় না, কিন্তু মহুয়া তো তার মা বাবার একমাত্র সন্তান, তাদের প্রতি আমার কী কোন দায়িত্ব নেই? নাকী দায়িত্ব নিলেই ঘরজামাই বলবেন আপনারা? আর যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নি, ঘরজামাই, আপনাদের অসুবিধা কিসের বলুন তো? একটু গোঁড়ামি থেকে সরে এসে logically ভাবুন না | নিজেদের মা বাবার দায়িত্ব তো নেন না, আমি যখন দু’পক্ষের দায়িত্ব নিচ্ছি, সেটা নিয়েও আপনাদের কটূক্তি করতে হবে তাই না? একটু নিজের চরকায় তেল দিন তো মশাই |”

সপাটে চড় পড়ল তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের গালে, যারা এত কথা বলে যাচ্ছিল এতদিন | ‘তোমার আমার ‘ না করে দুজনেই দুই মা বাবার দায়িত্ব নি সমানভাবে, নিজের সুবিধামত ভাগ করে | বৌমা শ্বশুর শাশুড়ির প্রতি কর্তব্য করতে পারলে জামাই কেন নয়? এবার তো মানসিকতাটা বদলাই |

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

টিফিনবাক্স

প্রতিবারের মতন এই বছর ও সমস্ত সরঞ্জাম গুছিয়ে বেরোনোর জন্য ব্যস্ত অমিত, অন্তত সন্ধ্যার মধ্যে বেরোতে না পারলে খুব মুশকিল। পুজোর দিকটা কতদূর কি হলো

Read More »

হারিয়ে যাওয়া ‘আমি’

।।১।। “এই বেলটা বাজছে, একবার দেখ না, তরকারিটা নামাচ্ছি তো, দেখ রে,আরে এই টুসি, কোন সাড়াশব্দ নেই।” “আরে আমি রেডি হচ্ছি মা, তুমি দেখো।” “উফফ,

Read More »

লজ্জা

লাইটার আর সিগারেটটা নিয়ে চুপচাপ সবার নজর এড়িয়ে ছাদে উঠে এল রিনি। কিছু আগেই বেশ বৃষ্টি হয়ে গেছে। ছাদটা ভিজে এখনও, মাটির সোঁদা গন্ধটা বেশ

Read More »

আজ বাঁচুন

আবাসনেরর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতেই চিৎকার কানে এলো… সিকিউরিটি কে ছুটে যেতে দেখে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিলো না ওরা |কিন্তু তারপরই আবাসনের দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেল যেন চারপাশটা…

Read More »

রদ্যি খবর

“তোকে কতবার আর বলব পুপু, আজ অন্তত দস্যিপনাটা একটু কমা। দেখছিস তো বাড়িতে লোকজন আসবে আজ।” মেয়ে পুপুকে আবার একবার খানিক ধমকে দিলো রাধিকা, বিক্রমপুরের

Read More »

এই বেশ ভালো আছি

।।১।। ট্রাঙ্ক থেকে ন্যাপথালিন দেওয়া গুটি কয়েক তোলা শাড়ি থেকে একটা শাড়ি বের করছিল মায়া । ছোট্ট দু’কামরার ঘরে এককোণে খাট, ছোট্ট আলনা, ট্রাঙ্ক, কুঁজো,

Read More »

Share with