।।১।।
-“পার্সেল? কোন পার্সেল? কই জানি না তো কিছু।”
ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝছিলেন না নীলিমাদেবী। খানিক বাকবিতণ্ডার পর ছেলের মুখে “হ্যাপি বার্থডে মা” শুনে হাসি ফুটল বয়স্ক মানুষটার মুখে। এই মানুষটার মুখে হাসি দেখতে এত ভাল লাগে রুহির, কেন জানে না। মনে হয় যেন এই মানুষটার হাসিটুকুর জন্য ও সব করতে পারে। কথার সূত্রেই কিছুক্ষণ পর টনক নড়লো ওর, সত্যিই তো দুপুর দিকে একটা পার্সেল এসেছে বটে, তালেগোলে আর খেয়ালই নেই।
পাশের ঘর থেকে বাক্সটা দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এল রুহি। রুহির হাতে বাক্সটা দেখে ওপারে ফোনে ছেলের কথা বুঝলেন নীলিমাদেবী। প্রতিবারের মতো এইবারও তার মানে, মায়ের জন্মদিন ভোলেনি আকাশ, নীলিমাদেবীর আদরের তাতান।
ছেলের ফোনটা কিছুক্ষণের জন্য রেখে বাক্সটা ভারী উৎসাহ নিয়ে খুলতে লাগলেন, আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে মানুষটার মুখের হাসি আর আনন্দ কেমন চোখ অবধি পৌঁছেছে, দেখছিল রুহি।
নীলিমাদেবীর বহুদিনের প্রতীক্ষিত একটা উপহার, গরদের শাড়ী। বড় সাধ ছিল ওনার, গরদের শাড়ী পড়ে পুজোয় বসবেন। কেরিয়ার সংসার সন্তান সব সামলাতে সামলাতে ঐ দিকটায় আর যাওয়াই হয়নি। আগে শাশুড়ি মা-ই দেখতেন পুজোর দিকটা, এখন ঠাকুর মশাই নিত্যদিন সেবা দিয়ে যান। গরদের শাড়ীটায় হাতটা বুলিয়ে চোখটা বুজে যেন অনুভব করার আপ্রাণ চেষ্টা দূর দূরান্তে থাকা একমাত্র সন্তানের স্পর্শটা, খোঁজার চেষ্টা যেন তাতানের অস্তিত্বটাকে। কতদিন নিজের ছেলেকেই দেখতে পান না সামনে থেকে। কঠিন মানুষটার আড়ালে থাকা এক, দুঃখী মা-এর যন্ত্রণাটা বেশ দেখতে পাচ্ছিল রুহি। বিরক্ত করেনি ও, চুপচাপ ঘরের বাইরে গিয়ে নিজের কয়েকদিনের ছোট্ট সোনাটাকে কোলে তুলে নিল ও, আজ তো ও-ও মা, তাই সন্তানের থেকে দূরে থাকার কষ্টটা কতটা যন্ত্রণার হতে পারে বোঝে ও। একদিন ও-ই চেয়েছিল এই কচি প্রাণটাকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিতে, আর এখন তো ওর সন্তানকে কাছে নিয়েই সুস্থভাবে বেঁচে আছে। আর আজ যখন ঐ মানুষটা এই একই কারণে এতটা কষ্ট পাচ্ছে, ও কিছুই করতে পারছে না? ওর কী কিছু করা উচিত নয় মানুষটার জন্য? ‘মা’ বলে ডাকবে তবে কোন যোগ্যতায়? সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল ওর। অনেকগুলো প্রশ্ন একসাথে মনে ভিড় করে উত্তরগুলো হাতড়াচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল বেশ রাত। ছেলেকে রেখে পাশের ঘরে পা বাড়াল ও।
***************
ভিডিও-কলে ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে বারবার চোখের জল আড়াল করছিলেন আজ নীলিমাদেবী। আজ কতদিন পর এরকম মুহূর্ত কে জানে।
– “কতদিন আসিসনি বলতো? কতদিন দেখি না তোকে?”
এলোমেলো কথার ভিড়ে রাত যে কত গড়িয়েছে, খেয়াল নেই দুই প্রান্তেরই। বহুদিন পর আজ মা ছেলের গল্পের মাঝে তাই আর বাধা দিল না রুহি। ঈশারায় শুতে বলে নিজের ঘরে চলে গেল ও।
***************
(কয়েকদিন পর)
আজ অনেকদিন পর ‘আমন্ত্রণ’-এর সকালটা একদম অন্যরকম। বারান্দায় আসা রোদটা অন্য দিনের তুলনায় যেন বেশীই মিষ্টি। বাইরের বারান্দার টবের ফুলগাছ, ছোট্ট চারা বা বাড়ির সামনের রাধাচূড়া, সবার মধ্যে যেন ফিসফাস। বাড়ির পুরনো ইটগুলো, কিংবা ড্রয়িংরুমের বিশাল দেয়াল ঘড়ির কাঁটা, সবাই জেনে গেছে, আর তাই খুব খুশী। কেন?
কারণ তাতান এসছে আজ দীর্ঘ তিনবছর পর।
সেদিনকার বুড়ো মা-টার কথা ফেলতে পারেনি বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকা ছেলে, তাই ‘আমন্ত্রণ’-এর ডাক এবার আর এড়াতে পারল না।
আজ দুপুরের ফ্লাইটেই এসছে, নীলিমাদেবী যে আজ কতদিন পর নিজে হাতে ছেলের প্রিয় কুমড়ো ফুল ভাজা করলেন, নিজেরই খেয়াল নেই। আজ কতদিন পর রান্না ঘরের জানলার গরাদটা, নুন চিনির কৌটো সাক্ষী এক মার তার ছেলের জন্য তিল তিল অপেক্ষার।
।।২।।
(দিন কয়েক পর )
বছর তিনেক আগের পাড়াটা আর এখনকার পাড়াটার মধ্যে বিস্তর ফারাক। সব পুরোনো বাড়ি ভেঙেই ফ্ল্যাট। যদিও এখন পুরোনো বাড়িকে মেনটেইন করে রাখার ক্ষমতাই বা ক’জনের আছে? তাই প্রোমোটারি জাঁকিয়ে বসেছে এই পাড়াতেও। ‘আমন্ত্রণ’টাই রয়ে গেছে। পাশের বাড়ির মিত্ররাও প্রোমোটারি করাচ্ছে। মা জিদ ধরে না থাকলে তাতানও হয়তো।।। কিন্তু আজ বলতে দ্বিধা নেই, এত ইট কাঠের মধ্যে ওদের ‘আমন্ত্রণ’-এর নিজস্বী, সাথে বাড়ির পিছনের একটুকরো বাগানটা অনেক ধূসর-এর মাঝে যেন একটুকরো সবুজ বেঁচে আছে বড় যত্নে। ভাল লাগছে খুব তাতানের। এই সেই বাড়ি, এই বাড়ির বাইরের নতুন গেটটা যখন পছন্দ করা হচ্ছিল তাতান তখন কতটুকু, তাও মনে আছে, দাদু ওর পছন্দেরই গেট লাগিয়েছিল। দাদু খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। দাদুর সাথে থেকে থেকে তাতানের পছন্দও একইরকম। বারান্দার ওইদিকের ঘরটা পড়ার ঘর ছিল তাতানের। কত কিছুর সাক্ষী ঐ ঘরের জানলার গরাদগুলো।।। ঐ ঘরে বইখাতা যেভাবে ফেলে রাখতো তাতান, সেভাবেই থাকতো, আর কারো সেগুলোকে গুছিয়ে তোলার কোন অনুমতি ছিল না। ঐ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলোমেলো ঘরটাই ভালো লাগতো তাতানের। ওর জীবনের প্রথম পরীক্ষা, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট-এর রাতজাগা প্রিপারেশন, রেজাল্ট, প্রথম চাকরির এপয়েনমেন্ট লেটার, প্রথম বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সব কিছুর সাক্ষী ঐ ঘর। প্রথম পিউ-এর গালে ওর আলতো ঠোঁটের ছোঁয়াও তো ঐ ঘরের পর্দার আড়ালে। পিউ-ই প্রথম ওর অগোছালো হয়ে থাকা ডায়েরি, বই, প্রেমপত্র, গুছিয়ে দিয়েছিল। বাধা দিতে পারেনি তাতান, বাধা দিতে চায়ও নি।
ঘরটায় ঢুকে আবার তাই সব পুরোনো মুহূর্তগুলো ভিড় করছে ওর চোখের সামনে। ঐ যে পেনটা, পেনস্ট্যান্ডে গুছিয়ে রাখা, ওদের প্রথম কী যেন বলতো পিউ, “লাভ এনিভার্সারি”তে দিয়েছিল। দিয়ে বলেছিল, “এই পেনটা দিয়েই তোর আমার কবিতাটা লিখিস।”
নাহ, কবিতাটা অসম্পূর্ণই ই থেকে গেছে। তারপর থেকে তাতানের লেখালিখিটাও ছেড়ে চলে গেছে ওকে। আগে ঘন্টার পর ঘন্টা লিখে যেত ও, আর এখন, কতদিন খাতা কলমই তোলেনি হাতে। এই ঘর, এই বাড়ি, এই সমস্তকিছু, পিউ-এর স্মৃতি এই সবকিছু তাড়া করত ওকে, তাই তারপর থেকে একবারও আর এই বাড়িতে পা রাখেনি ও। কিন্তু আজ এতদিন পর সেই স্মৃতিগুলো সেই মধুর মুহূর্তগুলো ওকে তাড়া করেনি, বরং আজ এত বছর পর সেই স্মৃতিগুলোকে ছুঁতে পেরে কোথাও যেন নিজেকে খুব হালকা লাগছে ওর।
পিউ-এর চলে যাওয়ার পর থেকেই নিজের থেকে, মার থেকে, সবকিছু থেকেই পালিয়ে বেড়িয়েছে ও। মেনে নিতে পারেনি বহুদিন, পিউ-এর এইভাবে চলে যাওয়াটা। জানে তাতান, মা কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু মার সামনে এলেই যে সব মনে পড়ে যেত ওর, আর তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারত কীভাবে? মা কী আজকাল একটু হলেও নিজের ধ্যানধারণা, চিন্তাধারা বদলেছে? হয়তো বদলেছে।।। নয়তো রুহি বলে মেয়েটার আজ এই বাড়িতে থাকা সম্ভবই ছিল না।
এলোমেলো ভাবনার ভিড়ে কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে খেয়ালই করেনি নিজের এই ঘরটায় বসে তাতান। আজ কতদিন পর ওকে স্নান করতে যেতে ওর মা চিৎকার করল। নিজের মনেই খানিক হেসে, সাড়া দিল তাতান। উঠে পড়ল ও। ঘড়িতে তখন প্রায় ১টা।
।।৩।।
ফোনে তো সব কথা বলা হয় না, সব বোঝাও সম্ভব না, ঐ জন্যই হয়তো এই ক’বছরে ওর মা কতটা বদলে গেছে বুঝতে পারেনি তাতান। রুহি, নীলিমাদেবীর রান্নাঘরে ঢুকে রান্না করছে, ঐ রকম একজন গোঁড়া মানুষ সেটায় মত দিয়েছেন, চোখে না দেখলে তো বিশ্বাসই করতো না তাতান।
মা-এর সাথে বেরিয়ে এই একটু আগে ফিরলো ও, তখনই দেখল মালতীদির পরও রুহিও খাবার বানিয়ে টেবিলে সাজাচ্ছে, ও আর বাচ্চাটাকে ফেলে বেরোয়নি। অল্প বয়স, এই ক’দিনের মধ্যেই এত বিশ্বাস করা, মার এত কাছাকাছি, একটু অস্বস্তিই হচ্ছে বরং। মা তো বিচক্ষণ মানুষ, মানুষ ভালো চেনে, একজনকেই চিনতে পারল না এটাই আক্ষেপ।।। ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো তাতান। তখনই ঘরে টোকা মারল রুহি।
বেশ অবাকই হলো, ঘড়িতে একবার সময়টা দেখে নিয়ে আবার তাকাল ওর দিকে। এখন তো খারাপ লোক আর খারাপ উদ্দেশ্যের অভাব নেই। তাই মা যাকে তাকে বিশ্বাস করতে পারলেও ও অন্তত বিশ্বাস করে না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে বলল তাতান, “কী ব্যাপার, কিছু বলবে?”
রুহির পরনে সাধারণ একটা কুর্তি পাজামা, পরিষ্কার করে বাঁধা চুল, চোখে মুখে বুদ্ধিমত্তার ছাপ স্পষ্ট, চোখ দুটোয় বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, তবে তার সাথে সাথেই চোখ দুটো মায়ায় ভরা, দেখলে যেন খারাপই লাগে বেশী।
– “দাদা, তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে এখানে এভাবে এসেছি, একটু সময়…”
– “হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়… বলো…তুমি দরজায় দাঁড়িয়ে না থেকে বসো না সোফাটায়।”
রুহি বসলো না, তবে ঘরে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিলো। ভাবটা এমন যাতে ঘরের কথা বাইরে কেউ শুনতে না পায় ।
অস্বস্তিটা বাড়ছিল তাতানের আবার। অধৈর্য্য হয় যাচ্ছিল, যা বলার তাড়াতাড়ি বলে যাক না।
ওর ভাবনায় দাঁড়ি টেনে রুহি বলল, “দাদা, তুমি কী সত্যি পরশু চলে যাচ্ছ আবার?”
এতক্ষণে বিষয়টা পরিষ্কার হলো তাতানের কাছে। মা কী ওকে সাফাই চাইতে পাঠিয়েছে, আর যা বলার নিজে কেন বলে না খোলাখুলি।
তাতান দৃঢ় ভাবেই বলল, “হ্যাঁ, কেন বলতো?”
– “দাদা, মা ভীষণ একা হয়ে গেছে। এই সারাটা বাড়িতে এভাবে একটা বুড়ো মানুষ, পুরো একা। আমি তো ক’দিন সবে এসেছি, সারাটাক্ষণ তোমারই একটা ফোনের অপেক্ষা। খুব কষ্ট হয় মানুষটার জন্যে, তুমি যেও না দাদা, মায়ের তোমাকে দরকার।”
এতটা বলার পর রুহির গলাটা যেন ধরে এল, বুঝতে পারল সেটা তাতান। কিন্তু একজন তৃতীয় ব্যক্তির মুখ থেকে এই সত্যি কথাগুলো শুনতেও খুব একটা ভাল লাগছিল না ওর। রুহির ছলছলে চোখটার দিকে তাকিয়ে তাতান উত্তর দিল, “এই কথাগুলো কী মা তোমায় বলতে বলেছে?”
– “এ মা, না না, মা কেন…”
– “Exactly, মা তোমায় বলেনি, তাহলে তুমি কেন এত মাথা ঘামাচ্ছ? আর এখন তো তুমিও এই বাড়িতেই থাকবে, তাই আমার থাকা না থাকায়… যাই হোক, আমি কেন এখানে ফিরতে চাই না, মা সেটা ভালো ভাবেই জানে। মা কোনদিনই তাই এই কথাগুলো বলবে না, তোমারও এত ভাবার দরকার নেই। তবে তোমার রিকোয়েস্ট এ এভাবে আসতে রাজী হয়ে ভালোই লাগলো। আজ এতদিন পর নিজের ঘরে, নিজের দেশে ফিরে…”
তাতানের কথা কেটে রুহি ঈশারায় বলল চুপ করতে, আস্তে কথা বলতে, যেন বাইরে কথা না যায়।
– “মানে? মা জানে না তুমি ফোন করেছিলে আমায়?”
– “প্লিজ দাদা, তুমি মাকে এসব বোলো না, মা-এর জন্মদিনের দিন মার মুখটা দেখে আমি আর নিজেকে আটকাতে পারিনি। মার ফোন থেকে নম্বর নিয়েই তোমায় ফোন করেছিলাম তাই। তোমার আসার কথা শুনে মার চোখে মুখে যে খুশী আমি দেখেছি, তুমি চলে গেলে মা ভাল থাকবে না দাদা। মা জানে তুমি স্বেচ্ছায় এসেছ, আমি তোমায় ফোন করেছিলাম মা যেন না জানে ঘুনাক্ষরেও…তোমায় আর পিউদিকে মা…”
এটুকু বলেই আর কিছু বলতে পারল না রুহি, তাতানের দৃষ্টি আর কিছু বলার অনুমতি দিচ্ছে না যেন। শীতের হালকা আমেজ বলে ফ্যানের আয়াজটুকুও নেই। চারিদিক নিস্তব্ধ।
– “তোমায় পিউ-এর ব্যাপারে মা বলেছে? কী বলেছে আবার? যে নেই তার ব্যাপারে আজও এত চর্চা চলছে এই বাড়িতে? ঠিক এই কারণেই আমি আর এই বাড়িতে আসতে চাই না। এই কী প্ল্যান চলছে বলতো তোমাদের মাথায়? কী জন্য ডাকলে আমায়? এবার তো সত্যি সন্দেহ হচ্ছে।।।”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছে তাতান, এতটাই উত্তেজিত ওর কপালে ঘামের বিন্দু শীতেও, ফর্সা মুখ চোখ রীতিমতো লাল।
রুহি বেশ ভয় পেয়ে গেছে তাতানের এই রূপ দেখে। ও যতটা সম্ভব নীচু গলায় বোঝানোর চেষ্টা করলো, নীলিমাদেবী কিছুই বলেননি তেমন, যা জেনেছে শুনেছে বুঝেছে তার দায় শুধু নীলিমাদেবীর নয়। কিন্তু…
– “সবই যখন মা তোমায় বলেছে, তাহলে এটাও জানো নিশ্চয় পিউ-এর কী হয়েছিল, কেন ও আর নেই আমাদের মধ্যে, কেন আমি আসি না এই বাড়িতে সব বলেছে তো ডঃ নীলিমা? নাকি নিজের পিঠটা বাঁচিয়ে গেছেন?”এত কথা কাটাকাটির মাঝে নীলিমাদেবী যে দরজার বাইরে কখন এসে দাঁড়িয়েছেন, খেয়াল করেনি কেউই। কয়েকমুহূর্তের জন্য সবটা চুপচাপ। আসন্ন ঝড়ের আগের থমথমে গুমোট পরিবেশ যেন চারপাশে। নীলিমাদেবী একদৃষ্টে চেয়েছিলেন তাতানের দিকে, চোখে জল ছিল বৈকি। কিন্তু তার থেকেও আরও বেশী ছিল কিছু, অপমান? লজ্জা? নিজের ছেলের এরকম ব্যবহার, তাও আর একটা মানুষের কাছে, নিজেরই মায়ের সম্পর্কে… এর থেকে লজ্জার, অপমানের আর কী হতে পারে?