।।১।।
-“না মা, আমার সত্যিই আজ হবে না, অফিসে আজ ছুটি পাবো না গো। তুমি বারবার বললে যেতে না পারলে খুব খারাপ লাগে আমার। কিন্তু কিছু করার নেই তো।।।”
-“হয়ে গেছে তোর বকা? অনেক বকেছিস, আর না বকে চুপচাপ চলে আসবি, আমায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে লাভ নেই, আমি কিন্তু বসে থাকবো তোর জন্য।।।”
-“মা, প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।”
-“রাখছি এখন অনেক কাজ, সন্ধ্যেবেলা দেখা হলে কথা হবে খন, রাখ।”
সবে সকাল ৬:৩০টা, মা ঠিক ৬টায় ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে যায়, তার মানে স্নানটা সেরেই আগে ফোনটা দেবাংশীকে করেছে।
দেবাংশীও এই সময়ই ওঠে, মা তো ভালই জানে সেটা, আর ঠিক সময় বুঝে মা সক্কাল সক্কাল ফোনটা করল। এবার কী করবে ও?
কীভাবে আটকাবে যাওয়াটা? ওর মনটা একবার বলছে, যাই-ই না, ক্ষতি কী? কতদিন দেখি না কাছ থেকে আর পরক্ষণেই মনে হচ্ছে কী দরকার যাওয়ার, আবার তো সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, একই সিচুয়েশনের মুখোমুখি, তার থেকে থাক বরং।
বেশী আর না ভেবে নিজের রোজকার কাজে হাত লাগাল দেবাংশী। শিবাঙ্গী পড়তে যাওয়ার আগে দুধ কর্নফ্লেক্স খেয়ে যায়। রেডি করে নিজের চা-টা নিয়ে বসল ও, অন্যমনস্কই রয়েছে খানিকটা, আসলে সকালে মা-র ফোনটা ওর শান্ত মনটাকে যেন একটু বিচলিত করে দিচ্ছে, আসলে এই বুড়ো মানুষটাকে দৃঢ়ভাবে না বলার ক্ষমতা নেই ওর। আর আজ এই মানুষটা না থাকলে,এত কিছুর পর… এই সমাজে মাথা উঁচু করে…
বেলটা বাজল। জোর করে অতীতটাকে চোখের সামনে থেকে হিঁচড়ে সরিয়ে দিল দেবাংশী। কানাইদা মটনটা নিয়ে চলে এল বোধ হয়। গ্যাসটা অফ করে দরজার দিকে গেল দেবাংশী।
**************
একমাত্র মেয়েকে নিয়ে দেবাংশীর এই ছোট্ট সাজানো বাড়িতে বাস বেশ কয়েক বছর। শিবাঙ্গীর জন্ম, স্কুল, পড়াশোনা সবকিছুই এই বাড়িতে থেকেই। সামনে একফালি সবুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে এই ‘স্বপ্ন’ দেবাংশীর বাবার তৈরী।
আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির থেকে এই বাড়িটা অনেকটা আলাদা। এই বাড়ির প্রতিটা কোণ, প্রতিটা বাঁক তৈরী দেবাংশীর বাবার নিজের ভাবনায়। পেশায় ছিলেন আর্কিটেক্ট, তাই নিজের জীবনের সবথেকে সুন্দর, মিষ্টি স্বপ্নের বাড়িটাকে নিখুঁতভাবে বাস্তবায়িত করেছিলেন।
এবাড়ির প্রতিটা ঘর, বারান্দা, লাইব্রেরীটা, ঠাকুর ঘর, সিঁড়ি সবটুকু একেবারে নিজের ভাবনায় বানিয়েছিলেন সুধাংশুবাবু, দেবাংশীর আদরের বাপি। আর সঙ্গে ছিল দেবাংশীর মায়ের অসাধারণ সব হাতের কাজ, আজও বাড়ির অধিকাংশ জায়গায় ঐ মানুষটার সৃষ্টিই জড়িয়ে।
তাই আজ বাপি, মা না থাকলেও যেন দেবাংশীর সঙ্গে সব সময় আছে। সারাদিন নিজের অফিস শেষে এই দোতলা বাড়িতে যখন মা মেয়ের আড্ডা বসে তখন আর কোনো একাকীত্ব, কোন ফাঁক থাকে না তার মধ্যে। ভালই আছে দেবাংশী। আর দিনের শুরু থেকে শেষে এই কানাইদা, মিনুদি, সেই কবে থেকে এই মানুষ দুটো ছিল বলেই আজ দেবাংশী একটুও একা নয়। আর বেলাদেবী… এত কিছুর পরও ঐ মানুষটা যদি না থাকত, তাহলে তো।।।
**************
কানাইদা, গরম মশলাটা থেঁতো করে দাও না, আর মশলাতে বেশী করে লঙ্কা বেটেছ তো? সাগ্নিককে তো জানো, ঝাল না হলে… আর বিশেষ কিছু বলার দরকার নেই। প্রতিবছর এ দিনে এই টুকরো টুকরো ভাষণগুলো শুনে কানাইদারও অভ্যাস হয়ে গেছে, বলা ভাল মুখস্থই হয়ে গেছে। তাই আর কিছু না বলে, কানাইদাও মিচকি হেসে নিজের মনে কাজ করতে লাগল।
**************
দেবাংশী এখন নিজের বড়সড় রান্না ঘরে ভীষনরকম ব্যস্ত, মটন কষা বানাতে কম ঝকমারি? তাও আবার এত জনের জন্য। সেই কবে থেকে বানাচ্ছে, একদম একইরকম, কোন এদিক ওদিক নেই। দেবাংশীর হাতের রান্না সত্যিই ঈর্ষণীয়, স্পেশালি মটন। প্রথম যেদিন সাগ্নিককে ওর জন্মদিনে খাইয়েছিল মটন, সাগ্নিক আদরের সুরে বলেছিল, যাই হয়ে যাক, আমার জন্মদিনে তোর হাতের মটন কিন্তু চাই-ই। তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর।।। মাঝে ঘটে গেছে অনেক কিছু, কিন্তু এটা পাঠাতে দেবাংশী কোনদিন ভোলেনি।
*************
টিফিন বাক্সে খাবার প্যাক করতে করতে ঘড়ির দিকে তাকাল একবার দেবাংশী, আজকের দিনটা ও ছুটিই নেয়, সব খাবার প্যাক করে ঐ বাড়ি পাঠিয়ে স্নানে যাবে। ড্রাইভার কাকাকে দিয়েই বরাবর পাঠায়, এবারও তাই। শিবাঙ্গী ঐ বাড়িতেই থাকবে আজ, একসাথে খাওয়াদাওয়া করবে, বাবার পাশে বসে খাবে। ভালই তো, ওদের মধ্যে যাই হোক মেয়ের ওপর তার প্রভাব পড়তে দেয়নি। ঘড়ির দিকে দেখল, এখনও ও বাড়িতে খাওয়ার সময় হয়নি। ওর কাজ শেষ, ড্রাইভার কাকা খাবার আর শিবাঙ্গীকে নিয়ে বেরিয়ে গেল গাড়িটা নিয়ে।
মিনুদির উপর বাকী কাজ ছেড়ে দিয়ে একটু নিজের ঘরে বসল ও।
***************
মা-র কথা এবার অন্তত রাখতে পেরেছে সাগ্নিক, কোনদিনই জন্মদিনে ছুটি পায় না ও, এবারই পেয়েছে। তাই সকাল থেকে মা-এর রয়্যাল ট্রিটমেন্ট পেতে খুব একটা মন্দ লাগছে না।
স্নান সেরে বেরতেই মা কপালে ফুল ঠেকিয়ে প্রসাদ নিয়ে হাজির। ওর জন্মদিনে সামনের মন্দিরে পুজো দেয়া মা-র সেই ছোট থেকে রেওয়াজ। এবাড়ির সবার জন্যই এটা হয়ে আসছে। মা প্রসাদটা হাতে দিতে দিতেই বলল, “রেডি হয়ে নীচে চলে আয়, খাবার বাড়ব তো।”
-“এখনো তো পেটে লুচি, আলুর দম, মিষ্টি কিলবিল করছে, এক্ষুনিই কীভাবে খাবো?”
-“সব পারবি, কটা বাজে খেয়াল আছে? আর মটন ঠান্ডা হলে খেতে ভাল লাগবে তো?”
মা-র এই কথাটার জন্য প্রস্তুত ছিল না সাগ্নিক, খানিক্ষণ চুপ থেকে বলল, “শিবুটা এসছে? তুমি যাও, আমি যাচ্ছি একটু পর।”
বেলাদেবী জানেন সবটা, বাকীটা নিজের মধ্যে রেখেই নীচে চলে গেলেন। কিছু কিছু জায়গায় একলা ছেড়ে দেওয়াই দরকার। নিজে থেকে বোঝাটা কখনও কখনও খুব জরুরী।
মা চলে যেতে ঘরের বিশাল আয়নাটার সামনে দাঁড়াল সাগ্নিক। ঘরটার তিনদিক খোলা, আলো-হাওয়াও তেমনি। পড়ন্ত দুপুরের আলোটা পড়েছে আয়নাতে, প্রতিফলিত হয়ে সারাটা ঘর উজ্জ্বল এখন |বিশাল আয়নাটা দেওয়ালের অনেকটা জুড়ে, পাশেই আলনাটা, তার পাশে লম্বা জানলাটা দিয়ে পাশের খেলার মাঠটা পরিষ্কার দেখা যায়। আয়নাটার সামনে থেকে সরে আলনাটায় একবার হাত রাখল সাগ্নিক, তারপর আঙ্গুল ছোঁয়াল জানলার গরাদে।
এই বাড়ি, এই ঘর ছেড়ে দেবাংশী চলে গেছে বহুবছর, সবার ঘৃণার পাত্রী হলেও আজও কত্তটা জোরালো ওর উপস্থিতি। সাগ্নিকই হয়তো ওর অবচেতন মনে কোনোদিন চায়নি দেবাংশীর অস্তিত্ব মিটুক এই বাড়ি থেকে।
এই, এই আলনাটাতেই জড়িয়ে থাকতো দেবাংশীর শাড়ি, ওড়না, এই আয়নাতেই লাল টিপ লাগিয়ে রাখতে ও, এই নিয়ে সাগ্নিকের সাথে কম ঝামেলা হয়নি। এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই তো স্নান সেরে সিঁদুর পরতো ও, সাগ্নিক অফিস বেরনোর আগে ওর টাইটা বেঁধে দিতো। আজকের দিনেই প্রথম এই বাড়িতে ওর জন্মদিনে এসেছিল দেবাংশী, আর আজ সব থেকেও…
প্রথম প্রথম ওর কথা জোর করে ভোলার চেষ্টা করতো সাগ্নিক, লাভ হয়নি, উল্টে যন্ত্রণা বেড়েছে। তারপর থেকে মা-র কথাটাই শুনেছিল ও। মা যে কীভাবে এত ভাল বোঝে ওকে আর দেবাংশীকে। মা শুধু বলেছিল, “কারও কোন দোষ নেই, তাই দোষারোপ করাটা বন্ধ কর, আর নিজের মনের উপর আর জোর খাটাস না, যা হচ্ছে সব সময়ের উপর ছেড়ে দে।”
সত্যি বলতে কী, তারপর থেকে অনেক শান্ত হয়ে গেছে সাগ্নিক, এখন ওর সত্যিই রাগ, দুঃখ কিছুই নেই ঐ মানুষটার প্রতি। হ্যাঁ, বিষন্নতা মাঝে মধ্যেই চেপে ধরে বইকী, মিসও করে, ভীষণ করে, কিন্তু এখন শিবাঙ্গী, ওদের আদরের শিবু, ওর অনেকটা একাকীত্ব ভুলিয়ে দিয়েছে। তাই এখন আর আগের মত অসুবিধে হয় না। কখন যে হঠাৎ এসে একেবারে বাড়ি মাথায় করবে, দাদু-ঠাকুমার ঘর থেকে বাবার ঘর, জ্যেঠুর ঘরে দৌরাত্ম্য করে যখন বাড়ি ফেরে, প্রলয় শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস-এর পাশাপাশি মন খারাপটাই বেশীর ভাগটা জুড়ে থাকে। এই মেয়েকে ছোট থেকে একলা দেবাংশী সামলালো কীভাবে কে জানে। ভাবনার মাঝে হারিয়ে কখন যে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে গেছে, খেয়ালই করেনি সাগ্নিক। ওর আলমারির কাঠের লকারটা থেকে বের করলো পুরোনো হলদেটে হয়ে যাওয়া কাগজটা। দেবাংশীর সাগ্নিককে লেখা প্রথম প্রেমপত্র, আর সেই ছবিটা, যেখানে দেবাংশী একদৃষ্টে মুগধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সাগ্নিকের দিকে আর সাগ্নিকের হাসিমুখ অবনত। দুজন মানুষ, একজন নিজের ভালোবাসা জাহির করে মুক্তমনা হয়ে, মুক্ত বিহঙ্গের মতো, যার প্রেম কে ঢাকার, লুকোনোর, বাঁধার যেন কোন চেষ্টাই নেই।
আর একজন, যার প্রেম, পাগলামো তার একান্ত নিজস্ব অনুভূতি, যার তল পাওয়ার ক্ষমতা নেই কারো। উল্টোদিকের মানুষটাকেও নিজের অনুভূতি বোঝানোর যেন তার কোন দায়ই নেই, তুমি তো জানোই আমার জন্য তুমি কী, ঠিক কতটা, আর কিছু নাই বা বললাম।
হারিয়ে গেছল অতীতের ভিড়ে, নাকে এসে লাগল সেই পরিচিত সুঘ্রাণ। সাগ্নিকের পছন্দের মটনকষা, দেবাংশীর হাতের বানানো, সঙ্গে শিবুর চিৎকার।
ঐ এসে পড়েছে তার মানে। আর্দ্র চোখটা ঝট করে সামলে নিয়ে, লকারটা বন্ধ করে আলমারিটা লাগিয়ে দিল সাগ্নিক।
-“বাবা, ও বাবা।।। আরে তাড়াতাড়ি এস, কোথায় গেলে?”
মেয়ে বাবার জন্য খাবারদাবার এনে হাজির, সঙ্গে আবার বাবার পছন্দের কেক।
সাগ্নিক তাড়াতাড়ি নীচে ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়াল।
****************
-“ও মিনুদি, ফোনটা দাও তো, ঐ দিকে চার্জে দিয়ে রেখেছি”
হাতের বইটার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বই-এর দিকে তাকিয়েই বলল দেবাংশী।
দুপুর বেলা দেবাংশীর ঘুমোনোর একদম অভ্যাস নেই, তাই যেদিন অফিস থাকে না, এই লাইব্রেরী আর গল্পের বইই সঙ্গী। আর একটা নেশা আছে অবশ্য, সেটা জানে না বটে কেউ, সেটা হলো ডায়েরী লেখা। যখন মনের ভিতর কথাগুলো বড্ড ঝড় তোলে, কিন্তু পাশে কাউকে বলার নেই, তখন এই ডায়েরী লাইন আর কলমটাই ভরসা। নিজের মনের সবটুকু উজাড় করে দেয় এই ডায়েরীতেই।
মিনুদির থেকে ফোনটা হাতে নিয়েই একবার স্ক্রিনটার দিকে তাকাল দেবাংশী। ফোনটা হাতে নিয়ে কয়েকমুহূর্ত ভেবে রিসিভ করলো, ফোনের ওপাশে সাগ্নিক।
-“হুম, বলো। মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্য ডে।”
-“থ্যাঙ্ক ইউ দেবু, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ, মটনটার জন্যও। যাই হোক, কেমন আছ?”
-“ভালো, তুমি?”
-“হুম, মেয়ের কাছে শুনলাম, তুমি সন্ধ্যেবেলা আসছো না।।।”
-“হ্যাঁ, আসলে কাজ আছে একটু।।।”
-“আজ তো তোমার কোন কাজ নেই। আর দেবাংশী, আজ তো অফিস যাওনি। তাই, না আসার কোন কারণই নেই। আর যদি থাকেও, আমি সত্যিই চাই তুমি এস, এলে…মা-র খুব ভাল লাগবে, মা তোমার জন্য কতটা…আচ্ছা, রাখছি এখন, সন্ধ্যেবেলা দেখা হবে।”
ফোনটা রেখে দিল দেবাংশী।
অনেকদিন পর, হুম, অনেকদিন পর, সাগ্নিকের এই কন্ঠস্বর, কোনো প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া, কোনো কেজো সংলাপ, মেয়েকে নিয়ে কোন আলোচনা ছাড়া আজকের এই ১মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ফোন কল।
বেশ কয়েক বছর পর আগেরবার মার কথায় ঐ বাড়ি গেছিল দেবাংশী, আজকের দিনেই। নৈঃশব্দ পেরিয়ে দেবাংশীকে দেখে সেদিন সাগ্নিক খুব বেশী কিছু বলেনি, তবে ওর চোখ পড়তে দেবাংশী ভুল কোনদিনই করেনি, সেদিনও না। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও কিছু অবাঞ্ছিত অপ্রিয় ঘটনা…যাক গে। কিন্তু এবার আর শুধু মা না, সাগ্নিকও।।। একটা জোরে শ্বাস নিল দেবাংশী। উঠে পড়লো ও, বইটা রেখে। ঘড়িটার দিকে একবার দেখে ঐ ঘরে গেল।
আলমারিতে সার সার শাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে দেবাংশী, চোখ খুঁজে চলেছে ঐ সর্ষে রঙের শাড়িটাকে। কোথায় গেল ওটা? বহু বহু বছর ধরে রেখে দেওয়া যত্ন করে শাড়ীটা হাতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হলো দেবাংশীর মনটা। এই শাড়ীটা দেবাংশীর খুব খুব প্রিয়, সাগ্নিকের প্রথম মাইনেতে কেনা দেবাংশীর জন্য প্রথম উপহার। এত বছরেও, এত কিছুর পরও পরম যত্নে যা গুছিয়ে রেখেছে ও।
শাড়ীটা বের করে একবার হাতটা বোলাল, পুরোনো শাড়ীর মধ্যে থেকে খোঁজার চেষ্টা করল সেই অনুভুতিটা, সেই পুরোনো হারিয়ে যাওয়া গন্ধটা,বাইরে ঝোড়ো হাওয়া। হঠাৎই ঘরের জানলাটা জোরে পড়তে টনক নড়ল দেবাংশীর।শাড়ীটা খাটের উপর রেখে জানলাটা গিয়ে আটকে দিল ও, ঘরে আলোটা জ্বালিয়ে দিল, বাইরেটায় আঁধার ঘনিয়েছে বেশ, আলমারির নীচটায় পড়ে থাকা কাগজটায় চোখ গেল দেবাংশীর। বেশ জরাজীর্ণ, ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়েও গেছে বেশ কিছু অংশ, হলদে হয়ে যাওয়া কাগজটা খুলল দেবাংশী, বেশ বড়সড় একটা চিঠি, চিঠির শেষে লেখা নামটা – অয়ন।