-“হ্যাঁ মা, বলো, কোথায় তুমি, কতদূর?”
-“এই পৌঁছেই গেছি প্রায়। পৌঁছে ফোন করছি, অ্যালার্ট থাকিস, দরজাটা খুলিস।” ফোনটা রেখে দোকানে ঢুকল দেবাংশী।
হালকা গয়না, ছোট্ট টিপ, কাজল, খোলা চুলে আর সর্ষে রঙা শাড়ীটায় আজ বহুদিন পর দেবাংশী। আগেরবারের থেকে এবারের ওবাড়ি যাওয়াটা একটু হলেও বিশেষ। সাগ্নিকের পছন্দের পারফিউমটা প্যাক করিয়ে দোকান থেকে বেরতে বেরতে সন্ধ্যে প্রায় ৭:৩০টা। গাড়িটা ইউ-টার্ন নিয়ে এগোল কলেজস্ট্রিটের দিকে।
***************
দেবাংশীর নিজের বাড়িটা যতই মডার্ন টাইপ হোক, ছোট থেকেই উত্তর কলকাতার পুরোনো আমলের বাড়ি ভীষণ টানত ওকে।
ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে যে অলিগলি দিয়ে খানিকটা রাস্তা হাঁটতে হতো, সেইখানেই পড়তো উত্তর কলকাতার সাবেকী বাড়িগুলো, কী বড়বড় দরজা, জানলা, উঁচু উঁচু সিলিং, থাম, কড়ি কাঠ।
আসলে তখন ছোট বলে সবকিছু একটু বেশীই উঁচু লাগতো যদিও, কিন্তু এই সাবেকীয়ানাই ভীষণ টানত ওকে। কোথাও যেন একটা প্রাণ লুকিয়ে যৌথ পরিবারের মধ্যে।
তারপর বিয়ের পর অবশেষে সেই সাবেকী বাড়ির সাথে পরিচিতি। ভীষণ ভাল লাগত গলির ক্রিকেট খেলা দেখতে, মার সাথে ও-ও আসত বড়ি শুকোতে দিতে, ছাদে কী বিশাল সিমেন্টের জলের ট্যাংক, ঘরে ঘরে বড় জানলা, খড়খড়ি দেওয়া, কাঁচগুলোও কী সুন্দর রঙ্গীন, কী বিশাল টানা বারান্দা, একতলায় বিশাল চৌবাচ্চা,রান্নাঘরের বাঁধানো উনুন, আরও কত কী। পুরোনো পাড়ায় ঢুকে সব স্মৃতিগুলো একে একে জড়ো হচ্ছিল চোখের সামনে।
বাড়ির সামনে ব্রেক কষে যখন দেবাংশীর গাড়িটা দাঁড়াল তখন ৮:১৫।
***************
-“হুম, খোল দরজাটা, এসে গেছি তো।”
বাইরে থেকে মেয়েকে ফোন করেই এ বাড়িতে ঢুকল দেবাংশী। আগের বারের পর এই আবার এল ও, কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করছে আজ।
ওর না আসা অবধি সাগ্নিক, মা, শিবু সব অপেক্ষাই করছিল, ও যেতে কেক কাটা স্টার্ট হলো।
বড়দা, মানে সাগ্নিকের দাদা, প্রান্তিক, ও-ই ফটো তুলছিল। সাগ্নিকের কেকের প্রথম টুকরোটা মেয়েকে খাইয়ে দেওয়ার মুহূর্তটা ক্যামেরা বন্দি করছিল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে দেখছিল দেবাংশী। মোমবাতি, লজেন্স, অভ্র, রঙিন কাগজ, আরও কত কী, এই সব শিবুটার মাথা থেকে বেরিয়েছে। কোনবারই এত ঘটা করে হয় না, এবছর ৪৫বছর পূর্তি উপলক্ষে এত আয়োজন।
সাগ্নিক একটা গাঢ় নীল রঙা কুর্তা পরেছে, নীল রঙটায় ফর্সা, লম্বা, সুঠাম চেহারার সাগ্নিককে বরাবরই দারুন লাগত দেবাংশীর, আজও সেই একই ভালোলাগা নিয়ে মুগধ দৃষ্টিতে চেয়েছিল, কতক্ষণ খেয়াল নেই, যতক্ষণ না মহুয়াদি কেকটা দিতে এল। মহুয়াদি, বড়দার স্ত্রী।
-“আরে নে রে, এই নিয়ে তিনবার ডাকলাম, ধর”
-“ওহ সরি, সরি, বুঝতে পারিনি গো এত আওয়াজে।”
-“সেই। আর এখন আর ও ভাবে তাকিয়ে কী হবে, স্বেচ্ছায় যখন সব ভেঙে গেছিস।” বলেই ওদিকে চলে গেল মহুয়াদি।
এই বাড়ির কেউই আর দেবাংশীর উপস্থিতিটা ভাল চোখে দেখে না, মহুয়াদিও তাদের মধ্যে একজন। আগেরবার এই একই ঘটনা ঘটেছিল, বড়দা ছিল সেবার।
দেবাংশীর আনা উপহারটা নিয়ে মস্করা করেছিল সেদিন, সোজাসুজি কিছু না বললেও দেবাংশীর মনটা সেদিন ক্ষত বিক্ষত করেছিল সহজেই। সেদিনও সাগ্নিকই ব্যাপারটা মজার ছলে উড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু কোথাও একটা সাগ্নিকের চোখেও চাপা রাগ, আক্রোশ ছিলই। তার মাঝেই কোথাও হয়তো বেঁচে থাকা সামান্য ভালোবাসা…কে জানে।
এবার, সাগ্নিক নিজে না বললে…
সরবতের গ্লাসটা নিয়ে বারান্দাটায় এসে দাঁড়াল দেবাংশী। সাগ্নিক আর ওর কমন ফ্রেন্ড, রাতুল, ত্রিধা, মৈনাকও এসেছে এবার। ত্রিধার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল দেবাংশী।
এই বারান্দাটা ওর খুব প্রিয়, বড় রাস্তার উপরেই এই বারান্দাটা থেকে জমজমাট কোলকাতাটাকে বেশ ভালভাবে দেখা যায়, এখন সামনে অনেকগুলো নতুন দোকান খুলেছে, আলোয় আলো চারদিক।
প্রথমবার যখন সাগ্নিকের জন্মদিনে এসেছিল এই বাড়ি, ওদের এই গ্রূপটাই ছিল সেদিনও। মিতালী আর সায়নীও ছিল, ওরা দুজন এখন বিয়ে করে দেশের বাইরে। ওদের বিয়ের পরপরই এই দুজনের বিয়ে হয়। তারপর থেকে একবারই দেখা হয়েছে, কলেজ রিইউনিয়নে। তারপর দেবাংশী সাগ্নিকের সেপারেশন, শিবাঙ্গী… অনেক কিছু ঘটে গেছে।
ত্রিধা একটু ওদিকটায় গেল, চুপচাপ বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে ছিল ও। বারান্দাটার একদম কোণে ও আর সাগ্নিক মিলে এই ঝিনুকগুলো সাজিয়েছিল, চাঁদিপুর থেকে এনে, সেগুলো আজও সাজানো আছে। অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়েছিল সেদিকেই দেবাংশী, হাতে তখনও গ্লাসটা ধরে, সাথে সাগ্নিকের গিফ্টটাও, এখনও দেওয়া হয়নি। এবার আর আগেরবারের মতো সবার সামনে…
-“আর কতক্ষণ ধরে থাকবে গিফ্টটা?”
সাগ্নিক পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে কখন, দেবাংশী স্মিত হেসে ফিরে তাকাল ওর দিকে, হাসিমুখেই গিফ্টটা বাড়িয়ে দিল ওর দিকে, কোন শব্দ বিনিময় নেই, তাও যেন কত কথা বলা হয়ে গেল দুজনের মধ্যে।
কলেজেও তো এরকমই ছিল, দুজন দুজনের মনের কথা বলার আগেই বুঝে নিত, সবসময় সবকিছু বলার প্রয়োজনই পড়ত না।
-“থ্যাঙ্ক ইউ, এখানে একা দাঁড়িয়ে কেন, ভিতরে চলো।”
-“এমনিই, ত্রিধার সাথে কথা বলছিলাম। যাচ্ছি, তুমি চলো।”
-“শরীর ঠিক আছে তোমার, চোখ মুখটা বসা লাগছে কেন এত?”
-“আর কী, বয়স তো হচ্ছে নাকি, তার মধ্যে এরকম দস্যি মেয়েকে রাতদিন সামলে, রান্না, বাড়ি, অফিস”, বলতে বলতেই ঘরে একবার মেয়ের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো দেবাংশী, সে লম্ফঝম্ফ করতেই ব্যস্ত তখন, বাকী বোনেদের সাথে।
হঠাৎ করে সাগ্নিক দেবাংশীর কপালের উপর দিয়ে পড়ে থাকা চুলটা নিজে হাতে করে সরিয়ে দিল সযত্নে ওর কানের ঝুমকোর পাশে। হকচকিয়ে উঠল ও, একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না এটা দেবাংশীর কাছে। হাঁ করে চেয়েছিল ও শুধু সাগ্নিকের চোখের দিকে, হঠাৎ করেই কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন চারপাশটা স্তব্ধ হয়ে গেল, থমকে গেল যেন গাড়ি চলাচল, হাওয়ার গতিবিধি, অবাধ্য চুলের বিচরণ, চারপাশের কোলাহল, চোখের পলক, শ্বাস প্রশ্বাস সব সব সব।
একই রকম সাবলীলভাবেই সাগ্নিক বলল, “খুব টায়ার্ড লাগছে, চোখের কোণে কালি, একটু তো নিজের ও যত্ন নিতে পারো।”
বহুদিন পর, আজ আবার একবার, ঠিক আগের মতো সব কিছু।
কিছু বলল না দেবাংশী, মন বলছিল থেমে থাক না মুহূর্তটা, থমকে দাঁড়াক সবকিছু, হোক মুখোমুখি কথা, আবারও।
মৌনতা ভেঙে সাগ্নিকই আবার বলল, “অয়নদা এলো না?”
হঠাৎ যেন সব ভালো মুহূর্তের মাঝে আবার ছন্দপতন, আচমকা যেন কেউ বাধ্য নদীর ধারাকে অবাধ্য করে দিল। যেন অযথা আলোড়ন এলো কোথাও থেকে।
-“মানে?”
-“মানে আবার কী, দেখা হয়েছিল অয়নদার সাথে, বলেছিলাম আজ আসার জন্য, তুমি কিছু জানতে না?”
সাগ্নিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেবাংশীর দিকে।
দেবাংশীর চোখে মুখে বিস্ময়, সাগ্নিকের সাথে অয়নের আবার দেখা, এটা সত্যি বিস্ময়করই বটে দেবাংশীর কাছে। দেবাংশী খানিক্ষণ সাগ্নিকের দিকে তাকাল, এই চোখ পড়তে দেবাংশীর ভুল হতে পারে না। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “অয়নদার সাথে আমার অতো যোগাযোগ নেই এটা তোমায় বহুবার বলেছি সাগ্নিক, তাও কেন???”
কথা বলতে বলতে কখন যে গলার সুর চড়তে শুরু করেছে, খেয়াল করেনি দুজনই।
-“এটাই তো এতবছরেও বুঝলাম না, কেন? হোয়াই? আমি তো সরেই গেলাম, তাহলে কেন?”
বলতে বলতেই খানিক অবজ্ঞার সুরেই হাসল সাগ্নিক, দেবাংশীর চোখ এড়াল না সেটা। ওর ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙছিল। আবার একবার নিজের সবটুকু বেআব্রু হচ্ছিল যেন।
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সাগ্নিক বুঝল ঠিক হয়নি জিনিসটা। কথাটা ঘোরানোর জন্য দেবাংশীর দিকে তাকাতেই বাজলো ফোনটা। ফোনটা রিসিভ করতে দেবাংশী ওদিকে সরে গেল একটু।
সাগ্নিক তাকিয়ে রইল দেবাংশীর দিকেই। অবাধ্য চুলটা ওর কপালের টিপটাকে বারবার ঢেকে দিচ্ছে। আজ এত বছর ধরে চেনে মানুষটাকে, এত বছর চেনার পর কারও সম্পর্কে অজানা কিছু কীভাবে থাকতে পারে। কিন্তু এই মেয়েটাকে আজও পুরোপুরি চিনে উঠতে পারল না ও। ঐ জন্যই ওর মনের অজস্র প্রশ্নের উত্তর ওর আজও অজানা।
দেবাংশী কখনও স্বচ্ছ, খরস্রোতা নদীর মত, আবার কখনও শান্ত, গভীর, যার তল পাওয়ার কঠিন সাগ্নিকের পক্ষেও। যখনই মনে হয়, পেরেছি সবটা বাগে আনতে, ঠিক তখনই আবার অজানা দিকটা ঠিক বেরিয়ে পড়ে। দেবাংশী উত্তেজিতভাবে কারও সাথে কথা বলছে, হয়তো ঐ লোকটার সাথেই, মিঃ অয়ন মল্লিক।।।
এতগুলো বছর নিজেকে অনেক চেষ্টার পর শান্ত, স্থির রাখতে শিখলেও ঐ নামটা সামনে এলেই মাথাটা জ্বলে যায় সাগ্নিকের, দুটো রগ রাগে দপদপ করতে থাকে, একটা তীব্র জ্বালা যেন, কিছুতেই পারে না ও সবটা ভুলতে, যতই চেষ্টা করুক।
না, আদৌ ইমম্যাচিওর নয়, সেটা যে যাই বলুক, ইমম্যাচিওর হলে এইভাবে এককথায় সসম্মানে দেবাংশীর জীবন থেকে, নিজের সন্তানের থেকে দূরে সরে যেতে পারতো না, কিন্তু না চাইতেও যখনই ঐ নামটা উচ্চারিত হয় কারণে অকারণে কিছুতেই ভুলতে পারে না অতীতটাকে, যন্ত্রনা তো কম পেতে হয়নি। সময় যতই পেরোক, ঘা-টা যে এখনও দগদগেই, তা তো অস্বীকার করতে পারে না।
ফোনটা রেখে এদিকে এল দেবাংশী, মুখ চোখ চঞ্চল, অশান্ত। উদ্বিগ্ন মুখে একবার ঘরের মধ্যে মেয়ের দিকে চাইল। তারপর একবার সাগ্নিকের দিকে।
-“কী হলো? এরকম করছো কেন? কি হয়েছে?”
-“আমায় এক্ষুনি একবার বেরতে হবে।”
-“কিন্তু হলোটা কী, সেটা তো বলো।”
-“অয়ন…অয়ন হসপিটালাইজড। হসপিটাল থেকেই ফোন এসেছিল,পল্লব ফোন করেছিল ওখান থেকে, আমায় এক্ষুনি একবার যেতে হবে।”
সাগ্নিক আর বেশি কিছু বলল না, কী বৃত্তান্ত, কোথায়, কবে কিছুই আর প্রশ্ন করল না, তবু ওর চোখের চাহনি না চাইতেও যেন অনেক কিছু বলে যাচ্ছিল। দেবাংশী, শিবাঙ্গীকে সঙ্গে নিয়েই ফিরতে চায়, মেয়ে যেতে নারাজ। এখন এমনিতেই মাথার ঠিক নেই, তার মধ্যে মেয়ের জিদ।।।
অবস্থা বুঝে সাগ্নিকই বলল, “তুমি হসপিটালের দিকে এগোও, আমি মেয়েকে পৌঁছে দিচ্ছি। তবে একদিন ও এখানে থাকলে কিছু অসুবিধা হতো না, এটাও কিন্তু ওর বাড়ি, যাই হোক।”
দেবাংশী কিছু একটা বলতে গিয়েও আর কিছু বলল না, “থ্যাঙ্ক ইউ”, ব্যস এটুকু বলেই বেরিয়ে গেল।
*****************
-“ফিস ফ্রাইটা ভাল ছিল? ঠাম্মি আজ বানিয়েছে কিন্তু, কেনা নয়।”
-“হুম।”
-“ঠাম্মি প্যাকও করে দিয়েছে, আর মিষ্টি তো কিছুই খেলি না, বাড়ি ফিরে খেয়ে নিস।”
-“হুম।”
-“আর একদম রাত জাগবি না। মা নেই, একা বলে যা ইচ্ছে তাই করবে তা নয়, চুপচাপ শুয়ে পড়বে। মা এলে আমি বেরিয়ে পড়ব, উপরে নিজের ঘরে শুয়ে পড়বে চুপচাপ।”
-“বাবা প্লিজ, ভাল লাগছে না, তুমি একটু চুপ করে গাড়ি চালাও না।”
ড্রাইভ করছিল সাগ্নিক, রাত দশটা প্রায়। শিবুকে নিয়ে দেবাংশীর বাড়ির দিকে, আর পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। ইউটার্ন নিয়ে মেয়ের দিকে তাকাল সাগ্নিক, মেয়ের চোখ মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট, কারণটা খুব একটা অজানা নয়। তাও খানিক ভেবে সাগ্নিক বলল, “এতো মাথা গরম কীসের এত টুকু একটা মেয়ের, কি হয়েছে…”
-“তুমি খুব ভালো করে জানো বাবা, কী হয়েছে। আজকের দিনেও মা চলে গেল। একটা দিন, একটা দিন ভেবেছিলাম মা, বাবা, বাড়ির সবার সাথে একসাথে ডিনার করব, সেটাও হলো না। কেন বাবা? আমার ও তো ইচ্ছে করে, আমার সব বন্ধুদের আমি গল্প করেছি, এবার ওদের কী বলবো? কী এমন জরুরী কাজ এলো যে মা এভাবে চলে গেল, সব সময় এত কী।।।”
এটুকু বলে চুপ করে গেল শিবাঙ্গী। গলাটা কাঁপছে, কিন্তু ভেউ ভেউ করে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদার মেয়ে ও নয়, সামলে নিল নিজেকে।
ততক্ষনে সাগ্নিক মেয়েকে ব্যাগ নিয়ে নামতে ইশারা করল, বাড়ি এসে গেছে। মুখে কিছু বলল না আর। সত্যিই তো, এর কী-ই বা উত্তর ও দেবে, এর কী উত্তরই বা হয়? শিবাঙ্গী খাবারের ব্যাগ নিয়ে সদর দরজার দিকে এগোল। কিছুক্ষণের জন্য নিজের গাড়িতেই চুপচাপ বসেছিল সাগ্নিক, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষা। ফোনটা একবার হাতে নিল ও, দেবাংশীকে কী একবার ফোন করবে? নাহ, থাক, দেখুক আর কিছুক্ষণ, তারপর না হয়… ওর আর অয়নের মধ্যে গিয়ে ও করবেই বা কী।জোর করে ভাবনাগুলো মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে বেরলো সাগ্নিক। গাড়ি লক করে বাড়ির দিকে এগোল যখন তখন প্রায় পৌনে এগারোটা।