কলেজের ফেস্ট থেকে আজ একটু তাড়াতাড়িই বেরিয়ে পড়ল দেবাংশী। তাড়া আছে আজ, মা-এর সাথে বেরোতে হবে আর আধ ঘন্টার মধ্যে, নয়তো মা আর বেরবে না। তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছিল দেবাংশী।
তখনই পিছন থেকে ডাকল, অয়নদা, দেবাংশীর থেকে দুই বছরের সিনিয়র। ব্রাইট স্টুডেন্ট, তাই কলেজে ঢোকার পর থেকেই অয়নদার ব্যাপারে কম শোনেনি ও, তবে সরাসরি কখনোই কথা হয়নি।
ব্যাকব্রাশ চুল, চোখে চশমা, পাঞ্জাবী, গালে হালকা দাড়ি, সদা হাস্যময়। হাতের শেষ হয়ে আসা সিগারেটটা ফেলে এই ফুটপাথে দেবাংশীর সামনে এসে দাঁড়াল অয়নদা।
-“তোর নাম তো দেবাংশী?”
ওর নামটা অয়নদা কীভাবে জানল, তা বিশ্লেষণ করতে করতেই খানিক থতমত খেয়ে উত্তর দিল ও, “হ্যাঁ, দেবাংশী চ্যাটার্জ্জী, ফার্স্ট ইয়ার।”
-“ফার্স্ট ইয়ার সেটা আমি ও জানি। ফেস্ট তো এখনো শেষ হয়নি, এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছিস কেন আজ?”
কথায় কথায় সময় গড়িয়ে যাচ্ছিল, দেবাংশী খুব বেশী কথা না বাড়িয়ে হাঁটা শুরু করল, কিন্তু অয়নদা? অয়নদার কথা বলা, চালচলন, ভাবভঙ্গি, সবটাই কেমন অন্যরকম। ওখান থেকে চলে এলেও মাথা থেকে কিছুতেই বেরচ্ছিল না অয়নদার ঐ হাসিটা। সবসময় হাসিমুখ, আজ অবধি কোনদিন অয়নদার মুখ হাসি ছাড়া দেখেনি। সবসময়, সমস্ত জায়গায়, প্রতিটি কথাবার্তায় ভীষণ রকম আত্মবিশ্বাসী। উজ্জ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটোয় একরাশ স্বপ্ন। চশমার আড়ালে থাকলেও যেন ঐ সূক্ষ্ম, ক্ষুরধার দৃষ্টি চোখ এড়ায় না। ঐ দীর্ঘ, দৃঢ়, নির্ভীক চেহারার ছেলেটা কারণে অকারণে বারবারই দেবাংশীর চোখের সামনে, চিন্তায় মননে এসেছে, যার কারণ ওর সত্যিই জানা নেই।
কলেজের ব্রাইট স্টুডেন্টের পাশাপাশি কলেজের স্টুডেন্টস ইউনিয়নের অ্যাকটিভ মেম্বার। সময়ে অসময়ে, সবার প্রয়োজনে, বিপদে আর কেউ থাকুক না থাকুক, এই একটা মানুষ থাকবেই।
অয়নদাকে কাছ থেকে ঝাপসা লাগত, বরং দূর থেকে যেন বেশী স্পষ্ট লাগত। শ্রদ্ধা বাড়ছিল মানুষটার ব্যক্তিত্বের প্রতি, আর তার সাথে বাড়ছিল ভালবাসাটা, সাগ্নিকের প্রতি।
**************
-“ম্যাম”
চোখ মুছল দেবাংশী। কখন যে ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেছল কে জানে।
-“আপনি এখন বাড়ি চলে যান, আমি আছি এখানে। কোন প্রয়োজন হলে আমি আপনাকে ফোন করে নেব।
পল্লব অয়নের সেক্রেটারি কাম অ্যাসিস্ট্যান্ট। সবটাই আসলে পল্লবই সামলায়।
ওর দিকে তাকিয়ে একমুহূর্ত ভেবে দেবাংশী বলল, “আমি একবার ডাক্তারের সাথে কথা বলে বেরবো।” বলতে বলতেই উঠে ডাক্তারের চেম্বারের দিকে এগিয়ে গেল দেবাংশী।
**************
“সাংঘাতিক এলার্জি। এলার্জি যে কী মারাত্মক হতে পারে, আপনাদের ধারণার বাইরে, অবস্থা ক্রিটিকাল, এটুকুই বলতে পারি,এখনো অব্দি নো ইমপ্রুভমেন্ট, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে, দেখছি ” এটুকু বলেই চলে গেলেন ডাঃ বাসু। দেবাংশী নীচে নেমে গাড়িতে গিয়ে বসল।
।।৩।।
বিগত বেশ ক’দিন ধরে দেবাংশীর কী হয়েছে কে জানে, ও জানে ও ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে, তা সত্ত্বেও, পতঙ্গ যেমন আগুনের দিকে ধেয়ে যায়, তেমনটাই যেন দেবাংশীর অবস্থা।
ও নিজেও জানে না, সবকিছু সাগ্নিকের সাথে শেয়ার করা সত্ত্বেও এই কথাগুলো কেন সযত্নে এড়িয়ে যায়।
অয়নদার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে ওর, বেশ ভালো লাগে, অয়নদার উপস্থিতি ও রীতিমত পছন্দ করে। এর কোনটাই তো কোন অন্যায় নয়, কোন অবৈধ ইঙ্গিত তো নেই এসবের মধ্যে, তা সত্ত্বেও আজ অবধি অয়নদার কথা উঠলেই সাগ্নিকের সামনে ও বারবার চুপ করে যায়, স্বাভাবিক বাচনভঙ্গি কোথায় যেন হারিয়ে যায়, যেন জোর করে কিছু আড়াল করার চেষ্টা, কেউ যেন দেখে না ফেলে, কেউ যেন বুঝতে না পারে কিচ্ছু, এমন।
কেন এমন করছে দেবাংশী নিজেও জানে না। আজ যখন অয়নদা মঞ্চে উঠে নিজের কথাগুলো বলছিল, মুগধ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল দেবাংশী। কী অসম্ভব ভাল কথা বলে অয়নদা। কিন্তু তার সাথে সাথে ওর মনে টেনশনও চলছিল, সাগ্নিক এখনও এসে পৌঁছায়নি কেন, কিছু হলো না তো? এত দেরী তো কোনদিন করে না ও কলেজ আসতে। সাগ্নিক আসার পর একটু আশ্বস্ত হলো মনটা।
***************
সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছিল দেবাংশীর। বিগত কয়েকদিন ধরে দেবাংশী বেশ বুঝতে পারে, ওর দিকে অয়নদার তাকিয়ে থাকা। ওর যে অস্বস্তি হয় তা নয়, কোথাও যেন ভাল লাগাও থাকে একটা, ও নিজেই জানে না ওর সাথে কি হচ্ছে, সবকিছু কেমন যেন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে ওর।
***************
আজ কলেজের রিউনিয়ন ফাংশান, সাগ্নিকের পারফর্ম করার কথা এবার, তারপরই দেবাংশীর নাচটা। সাগ্নিকের পর ওরই ঢোকার কথা স্টেজে, ওর আর তাই দর্শকাসনে বসা হয়নি। মায়াবী আলোয় সাগ্নিক যখন গিটার হাতে নিয়ে ধরল সুরটা, সমস্ত টেনশন যেন একলহমায় মুছে গেল দেবাংশীর। গানটা ওকে উদ্দেশ্য করেই, এটা মাইকে অ্যানাউন্স করে গানটা ধরল যখন, তখন একরাশ প্রজাপতি যেন ওর পেটের ভিতর উড়ছিল, প্রেম যে এত মিষ্টি হয়, সাগ্নিককে ভাল না বাসলে…
সাগ্নিকের গানটা চোখ বুজে শুনতে শুনতেই নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পাচ্ছিল দেবাংশী। নাহ, আর একটুও টেনশন হচ্ছে না। হলভর্তি লোকের হাততালি পড়ল সাগ্নিকের গানের শেষে, গর্বে যেন মাটিতে পা পড়ছে না দেবাংশীরও। ব্যাকস্টেজে সাগ্নিক ফিরতেই, আর দেবাংশীর স্টেজে ওঠার মুহূর্তেই চোখাচোখি দু’জনের। একমুহূর্তের মধ্যে যেন দুজনের মধ্যে কীরকম একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। একলহমায় শাড়ি পরিহিতা দেবাংশীর কোমরটা হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে ওর কপালে ওদের প্রেমের প্রথম চুম্বন এঁকে দিয়ে গেল সাগ্নিক। এক অফুরান ভালো লাগায় ভরে গেল যেন দেবাংশী, অবনত লাজুক দৃষ্টি, তার মধ্যে কাছের মানুষটার আলিঙ্গনাবদ্ধ। হোক না কয়েক মুহূর্তের জন্য, তাও মুহূর্তটা ভীষণ দামী দেবাংশীর কাছে। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যেই ডুবে গেল ও। সেই ঘোরের মধ্যে স্টেজে ওঠা, দুর্দান্ত পারফর্ম করা, আর হাততালিতে ফেটে পড়া হল, সব ভাললাগাগুলো মিলেমিশে যেন একাকার চারধার, মায়াবী যেন এই পরিবেশ। হাসিমুখে সকলকে নমস্কার জানিয়ে স্টেজ থেকে নামল দেবাংশী।
সাজঘরে গেল ফ্রেশ হতে। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়েও বারবার ভাবনায় হারাচ্ছিল দেবাংশী। নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে একটু আগের মুহূর্তটার কথা ভেবে কখন যে ঠোঁটের কোণে হাসিটা উঁকি দিয়েছে খেয়াল করেনি ও। বাইরে আবার হাততালির শব্দ, এবার কার পারফর্মেন্স যেন…ও হ্যাঁ, অয়নদা, অয়নদার আবৃত্তি।
ফ্রেশ হয়ে দর্শকাসনে পৌঁছল দেবাংশী, স্টেজে তখন নিজের বাকচাতুর্যে আগুন ঝরাচ্ছে অয়নদা, সবাই চুপ করে শুধু শুনে যাচ্ছে। আবার একবার হাততালি। কিন্তু… কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। সাগ্নিকও দাঁড়িয়েছিল ওর পাশেই, হঠাৎই জ্ঞান হারায় সাগ্নিক। স্বাভাবিকভাবেই ওখানে ঐ অবস্থায় সবাই সাগ্নিককে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অবশ্যই দেবাংশীও।
সাগ্নিকের জন্য দেবাংশীর চোখের চাঞ্চল্য, ওর দুশ্চিন্তা, ব্যস্ততা, একটা মানুষ দূর থেকে দেখছিল। একাধারে যখন কিছুজন সাগ্নিককে নিয়ে সেদিন হসপিটালে যেতে ব্যস্ত, তখন আর একদিকে স্টেজ থেকেই একদৃষ্টে চেয়েছিল অয়ন।
হল থেকে যাওয়ার ঠিক আগে অয়নের ঐ দৃষ্টির দিকে তাকিয়েছিল একবারও মাত্র দেবাংশী, বেরিয়ে গেছল তারপর। সেদিনের সেই দৃষ্টিতে কী ছিল জানা নেই ওর, কিন্তু অন্য দিনের মতো এই দিনের অনুভুতিটা ছিল না, এদিনটা ছিল অন্য, দেবাংশীর দিকে চেয়ে থাকা সেই পাগলপারা দৃষ্টিতে বিরক্তই হয়েছিল দেবাংশীর মনটা সেদিন। সাগ্নিক আর অয়নের মাঝের অসমরেখাটায় দাঁড়িয়ে নিজেকে সেদিন জর্জরিত লাগছিল দেবাংশীর।
***************
সর্বসমক্ষে সাগ্নিকের দেবাংশীর প্রতি প্রেম নিবেদন, এটাই মনে হয় অনুঘটকের মতো কাজ করেছিল অয়নের মধ্যে। আর সেইদিন থেকেই রক্তক্ষরণের শুরু। দেবাংশী-সাগ্নিকের সম্পর্কের কথা জানা সত্ত্বেও ইচ্ছে করেই বোধ হয় নিজের মনের গোপনে থাকা দেবাংশীর জন্য অনুভূতির কথা জানিয়ে দিয়েছিল অয়ন, সাগ্নিকের সামনেই। আর দেবাংশী? কী বলতো ও? একেই তো জ্বলতে শুরু করেছিল আগুন, উপরন্তু অয়নের মধ্যে শুরু হওয়া রক্তক্ষরণটাকে আরো ছড়িয়ে দিয়ে গেছল সেদিন ও | সেদিনকার অয়নের দৃষ্টি দেবাংশী কোনদিনও ভুলতে পারবে না। বেশ মনে পড়ে, বসন্তদার ক্যান্টিনে সেদিন সাগ্নিক, দেবাংশীর পুরো গ্রূপটাই বসেছিল। পরীক্ষা শেষ, ক্যান্টিনে তখন ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা। ওদিকে ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট আউট, ওদের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট-ক্লাস-ফার্স্ট অয়নদা কলেজে এসছিল সেদিন, তখন দুপুর দুপুর, ২টো-৩টে হবে হয়তো। বাইরে তপ্ত দুপুর, রোদ পড়লে যে যার গন্তব্যের দিকে রওনা দেবে। তখনই হঠাৎ অয়নদা এসেছিল, সঙ্গে রাতুলদা আর সুবিনয়দাও ছিল। অয়নদার বলা কথাগুলো এখনো যেন কানে বেঁধে দেবাংশীর।
-“তুই তো জানতিস দেবাংশী, একটা মেয়ে হয়ে কিছু বুঝিস নি, তা তো না? তুই কী করবি সেটা তোর ব্যাপার। কিন্তু আমার দিক থেকে তোর জন্য আর কিছু বদলাবে না, যদি কোনদিন মনে হয়, যোগাযোগ করিস, আমি কিন্তু তোর অপেক্ষা করব।”
***************
গাড়ীটা বাড়ির সামনে সজোরে ব্রেক কষে থামাল দেবাংশী, এসি-র ঠান্ডা হাওয়াতেও দরদর করে ঘামছে ও। অতীতটা বারবার আজ চোখের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে, বড্ড অস্থির লাগছে আজ। সেদিনকার ঐ মানুষটাই আজ মৃত্যুর সাথে লড়ছে, দেবাংশীকে চেনার পর থেকে জানার পর থেকে নিজের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই যে লিখে দিয়েছে দেবাংশীর নামেই। কোন শর্ত ছাড়া, কোন প্রত্যার্পণ ছাড়াই যে নিজের মতো করে ভালবেসে গেছে দেবাংশীকে…
গাড়ি থেকে নেমে লক করে বাড়ির দিকে এগোল দেবাংশী। ওর হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা হাতেই বেলটা বাজাল ও, প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, যেন কেউ প্রবলভাবে গলাটা চেপে ধরেছে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে, এত আলো থাকতেও চোখের সামনে যেন আঁধার নেমে আসছে। মাথাটা ভীষণরকম ভারী, এক্ষুণি মনে হচ্ছে টাল খেয়ে পড়ে যাবে, আর দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা টুকুও নেই যেন…
দরজাটা খুলল সাগ্নিক।
দেবাংশীর মুখ চোখের অবস্থা দেখেই সাগ্নিক বলল, “এত রাত? কী খবর ওদিকে?”
দেবাংশী কোন উত্তর না দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল, ব্যাগটা সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে বসল, ভীষনরকম ক্লান্ত লাগছে আজ।
“মেয়ে ঘুমিয়েছে?” কয়েকমুহূর্ত পর প্রশ্ন করল দেবাংশী।
“হুম”, এটুকু বলেই দেবাংশীর পাশটায় গিয়ে বসল সাগ্নিক। বহুদিন পর, দেবাংশীর হাতে হাত রাখল, কিন্তু দুজনের মধ্যে দূরত্বটা একই জায়গায়… তাই আজও দেবাংশী অন্য কারো জন্য এই অবস্থায়, আর সাগ্নিক সেটা জেনে বুঝেও…
নিজের উপর এই কারণেই বড় হাসি পায় সাগ্নিকের। কী লাভ হলো এত ভালবেসে? ‘ভালোবাসা’টা কী আদপে? আজ এত ভালবেসেও তো দেবাংশী ওর থেকে দূরে, অন্য কারো জন্য অস্থির, আর সাগ্নিক আবারও একবার নিজেরই জন্মদিনে নিজেরই ভালবাসাকে অন্য কারো জন্য কষ্ট পেতে দেখছে। ওর নিজের সন্তান জবাব চাইছে, কিন্তু ওর কাছে কোন উত্তর নেই, সত্যিই কী নেই? কাকে আড়াল করতে চাইছে ও? কেনই বা চাইছে?
বহুবছর ধরে হাতড়েছে প্রশ্নের উত্তরগুলো। বারবার একটাই জবাব এসছে, দেবাংশী যাই করুক, ও নিজের ভালবাসাকে পারবে না ছোট করতে, কারো সামনে না, কোন কিছুর বিনিময়েই না। আর তাই বারবার চুপ থেকেছে, এমনকী নিজের মেয়ের কাছেও, আজও। সমাজ যাই তকমা দিক না কেন, ও এটাই বিশ্বাস করে, নিজের ভালবাসাকে ভাল রাখার দায়িত্ব ওরই, সে যার সাথে ভাল থাকে থাকুক। আর তাই আজ ও এই মেয়েটাকে এত বছরেও কখনো একবারের জন্যও ঘৃণা করতে পারেনি সাগ্নিক। রাগ, অভিমান, যাই থাকুক, ক্ষমা করে দিয়েছে সাগ্নিক অনেকদিন। আর তাই আজ অনেক শান্তিতে থাকতে পারছে, সেটা ও জানে।
অন্যমনস্কভাবে দেবাংশীর দিকে চেয়ে ভেবে যাচ্ছিল সাগ্নিক, দেবাংশীর মুখ চোখ একদমই ভালো লাগছে না। আচ্ছা, সাগ্নিকের জন্য ব্যাকুল কখনো হয়েছিল দেবাংশী? কোনদিনও? কে জানে। নিজের মনপাখিকে বাগে আনল সাগ্নিক, দেবাংশীকে বলল, “কেমন আছে এখন অয়নদা? কী হয়েছে হঠাৎ? সব তো ঠিকই ছিল, হঠাৎ?
ফোনটা ভাইব্রেট করছে দেবাংশীর, পল্লবের ফোন। তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করল ও।
ওপাশ থেকে কী বলছে, জানে না সাগ্নিক, কিন্তু দেবাংশী এরকম করছে কেন? মিনিট খানেকের মধ্যেই ফোনটা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল দেবাংশী, সাগ্নিকের বুকে।
কিংকরব্যবিমূঢ সাগ্নিক, ওর বুকে আজ দেবাংশী, কিন্তু অন্য কারো জন্য। কয়েকমুহূর্ত পর নিজেকে কোনপ্রকারে সামলে দেবাংশীর মাথায় হাত রাখল ও। দেবাংশীর মুখ চোখ লাল – সাগ্নিকের চোখে চোখ রাখতে পারল না দেবাংশী। গাল বেয়ে নোনতা জলের ধারা, অবনত চোখে শুধু একটা কথাই বলল, “হি ইজ নো মোর।”