অদিতি নীচে যাওয়ার আগে শুধু বলে গেল, “আমি নীচের কাজগুলো মিটিয়ে আসব, ততক্ষণ তোমরা একটু অপেক্ষা করতে পারলে ভাল হয়, নয়তো আমি পরে ইন্দ্রনীলকে যা বলার বলে দেব, তবে কথাগুলো সবার সামনে হলেই ভাল হতো।”
অদিতি কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই নীচে চলে গেল। নীচে ঠাকুর দালান এখন লোকে লোকারণ্য, বাড়ি ভর্তি আলো, উৎসব, লোকজন। এই অবস্থায় বাড়ির বড় বৌ সেখানে না থেকে ঘরে থাকবে কী ভাবে, আবার পাঁচটা কথা উঠবে তা অদিতি ভালই জানে, তাই কথা না বাড়িয়ে চলে গেল ও। নামার সময় হাতটা বেসিনে ভালভাবে ধুয়ে নিল ও, নীলের হাতের ছোঁয়া লেগে গেছে ওর হাতে, প্রসাদ দেবার সময়। নীলের কোন কিছুই আর সহ্য করতে পারে না অদিতি। হয়তো এটা মানসিক সমস্যা, কিন্তু আর কিছু করার নেই।
*********
-“মা, বলো প্লিজ, পাখি কে? ও অদিতিকে মা বলেছিল, আমি সেটা শুনেছি।”
-“বলে দাও পরমা, একটা সত্যিকে লুকোতে তো হাজারটা মিথ্যে বলতে হবে এবার।”
পরমাদেবী মাথানীচু করে খাটে বসে পড়লেন, নীলের চোখে জিজ্ঞাসা, পরমার্থবাবু বারান্দাটায় গিয়ে দাঁড়ালেন। সব কিছু যেন খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে শুরু করেছে, কীভাবে বাঁচাবেন, সত্যিই বলবেন নাকি মিথ্যে বলবেন? বলেই বা কী, যে পুরুষমানুষ নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য, স্ত্রী, পরিবার, বৃদ্ধ মা বাবা সবকিছু একলহমায় ভুলে যেতে পারে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে, যার স্বপ্নে শুধু সেই-ই আছে, আর কারও জায়গা নেই, সেখানে তাকে কী সত্যিই পুরুষমানুষ বলা যায়? যে স্বামী, পুত্রের দায়িত্ব নিতে না পেরে পালিয়ে গেল, তার উপর তার সন্তান কীভাবে ভরসা করবে? কীভাবে বাবা বলবে তাকে?
পরমাদেবী ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে বললেন, “তুই যখন আমাদের সবাইকে ছেড়েছিলি, অদিতিকে ছেড়ে গেছিলি… ওকে একা ছেড়ে যাসনি।”
-“মানে?”
-“হ্যাঁ, তুই অদিতির সাথে সাথে সেদিন পাখিকেও ছেড়ে গেছিলি। পাখি, আমাদের ছোট্ট পাখি, ইরা মুখার্জী, তোর মেয়ে। আমরা কেউ জানতাম না, অদিতিও না, তুই যেদিন চলে গেলি, তারপর থেকে ও একবারের জন্যও কাঁদেনি, ঈশান, ইমন, তোদের বাবা,আমি অনেক কাঁদানোর চেষ্টা করেছি। পাথর হয়ে বসেছিল, তারপরই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিল, আমরা ভাবছিলাম ট্রমা হয়তো, সাইকিয়াট্রিস্ট, কাউন্সেলিং, তারপরই জানলাম আমরা, অদিতি মা হবে। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না সেদিন। ঐ অবস্থায় অনেকগুলো ধাক্কা সয়েও আজ মেয়েটা দ্যাখ, কিভাবে এই বাড়িটাকে আগলাচ্ছে। স্বামী, মা, বাবা পর পর হারাল মেয়েটা, হ্যাঁ, ভেঙে পড়েছিল একদম, কিন্তু তারপরও পাখির মা বাবা, এই বাড়ির বড় বৌ…বড় ছেলেও, আর অফিসের ম্যাডামও। অদিতি বলেই পেরেছে, তুই সোনা চিনতে পারিস নি রে। এখন ক্ষমা চাইতে পারিস, সেটা তোর ব্যাপার, কিন্তু…যাক গে। তুই এখন কী করছিস বাবা? তোর এত বড় অসুখ তুই আমাদের থেকে লুকোতে গেলি কেন? এখন সব ঠিক আছে তো?”
ছেলের মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন পরমাদেবী, কতদিন বাবুটাকে ছুঁতে পারেননি, তাই শীর্ণ কোঁচকানো হাতটা আশীর্বাদ, আদর ঢেলে দিচ্ছে নিজের এই এত বছর পর ঘরে ফেরা হতভাগা ছেলেটার মাথায়। পরমার্থবাবু চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, আর ঘরের বাইরে আর একজন, অদিতি। থাক, এখন কিছু না বলাই ভাল, বহুবছর পর এই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত এসেছে, আর সেটাকে নষ্ট করলো না অদিতি, চলে গেল ও।
।।২।।
“মামমাম দ্যাখোনা, পরতে পারছি না তো,” সকালবেলার যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। পাখি রাণী শাড়ী পড়ছে, অঞ্জলি দেবার জন্য। ঐদিকে ইমনদের ঘর থেকে পুঁচকের চিলচিৎকার, তিনি পরছেন লালধুতি আর পাঞ্জাবী, অদিতি এসব সামলাবে না পুজোর ওখানে থাকবে? নিজের নতুন শাড়ীটায় পিনআপ করে মেয়েকে চটজলদি সাজাতে লাগল, ওদিকে নীচ থেকে মা ডাক পাড়ছে তার বড় বৌমাকে।
ঘড়ির কাঁটা বলছে সকাল ৮টা, বাইরের বারান্দায় মিঠে রোদটা এসে পড়েছে, সঙ্গে বাজছে পুজোর গান, পাড়ার পুজোয়। আর মুখুজ্জ্যেবাড়ীতে বাজছে ঢাক।
“চল, চল তাড়াতাড়ি, দেরী হয়ে যাচ্ছে, পালা,” পাখিকে নীচে পাঠিয়ে নিজে রেডি হয়ে ঘর থেকে বেরলো অদিতি। ধুতি পাঞ্জাবীতে বেশ অন্যরকম লাগছে নীলকে আজ, বারান্দা থেকে নীচের ঠাকুর দালানে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইল অদিতি। পাখিটা নীচে যেতেই নীল পাখিকে কোলে নিয়ে ঢাকিদের বাজানোর স্টাইল দেখাচ্ছিল, পাখিটাও কেমন চেনে না জানে না দিব্যি উঠে পড়ল মানুষটার কোলে, ও তো কখনো দেখেই নি ওকে, তাও।
সবকিছু তো এরকমই হওয়ার কথা ছিল, যেমনটা এখন হচ্ছে, তাই না? কিন্তু।।। অদিতির লুকিয়ে রাখা সহজ সরল নিষ্পাপ মুখের হাসিটা ছাপিয়ে আবার ফুটে উঠল কাঠিন্য, কপালে বিরক্তির ভাঁজ, তাড়াতাড়ি নীচে চলে গেল ও।
*********
অষ্টমীর পুজো, অঞ্জলি, ভোগ খাওয়া সব পেরিয়ে সন্ধিপুজোর নির্ঘণ্ট উপস্থিত। অদিতি সারাটা দিন উপোস করেই আছে। সন্ধি পুজোর অঞ্জলি দিয়ে তারপরই খায় ও। ঘরে এসেছিল একটু বিশ্রাম নিতে, চোখ বুজে শুয়েছিল। দরজায় কেউ নক করছে। সারাটাদিনের খাটাখাটনি, উপোসের পর আর যেন শরীরটা চলছে না, জানে তো শুয়েছে একটু, আবার এখন কে এলো? দরজাটা খুলতেই অবাক হওয়ার পালা, শরবতের গ্লাসটা হাতে নীল। শরবতটা তো শিবু খানিক পরে নিয়ে আসবে বললো, আর যে কোনদিন নিজেরটা ছাড়া আর কারও কথা চিন্তা অবধি করেনি, তার এতদিন পর এরকম ব্যবহার, সত্যিই কী হজম করা যায়?
অদিতি দরজায় দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, “তুমি হঠাৎ?”
-“ভিতরে আসতে পারি?”
অদিতি খানিক ইতস্তত করে বাধ্য হয়েই বলল,”এসো…তুমি হঠাৎ শরবত নিয়ে…।”
-“শিবাঙ্গীই আসছিল, আমিই বললাম দাও আমিই নিয়ে যাই, এই সুযোগে তোমার সাথে কথাগুলোও হয়ে যাবে।”
যা ভেবেছে তাই, কোন দরকার ছাড়া এমনি এমনি আসার মানুষ যে নীল নয়, তা অদিতি বিলক্ষণ জানে।
-“বলো কী বলবে? পাখির ব্যাপারে নিশ্চয়? অধিকার চাইতে এসেছো? তোমার থেকে এটাই এক্সপেক্টেড যদিও।”
-“নাহ, পাখির ব্যাপারে আগে জানালে পারতে, হয়তো…।”
-“আগে কেন জানাবো বলতো? আর জানালেই বা কী লাভ হতো? আর এতদিন পর জেনেই বা তুমি কী করবে? ।।।আমি বুঝতে পারছি না এই অবান্তর কথাগুলো এখন বলার কী মানে?”
-“অবশ্যই, এখন এগুলো বলে লাভ নেই জানি আমি, আমি তোমার সাথে তো কথা বলার সুযোগই পাচ্ছি না, তাই ভাবলাম এখনই যদি বলতে পারি…বলার এটুকুই ছিল জাস্ট যে…আমায় ক্ষমা করে দিও অদিতি, আমার সমস্ত অন্যায় যা আমি তোমার সঙ্গে করেছি, এ’বাড়ির সবার সাথে করেছি, জানি তার কোনো ক্ষমা হয় না, কিন্তু আমি ক্ষমা না চাওয়া অবধি আর শান্তি পাচ্ছিলাম না। ব্যস, এতটুকুই বলার ছিল, কোনো দাবী বা অধিকার ফলাতে আমি এখানে আসিনি এত দূর থেকে,তাই তুমি এত ভেবো না। পাখির উপর কোনো অধিকার দাবী আমি করব না। সত্যি বলতে কী, আমার কোন অধিকারই বর্তায় না, আর আমি সেটা ভাল মতো জানি। পারলে ক্ষমা করে দিও।।।”
-“ক্ষমা? সে আমি বহুদিন আগেই তোমায় করে দিয়েছি, এখন আর কিছু মনেই হয় না। তারপর? জেসিকাই তো নামটা? কেমন আছো? সুখী তো তোমরা?
একমুহূর্তের জন্য হলেও অপ্রস্তুত হলো নীল, অদিতির চোখ এড়াল না সেটা। হাত দিয়ে পাঞ্জাবীটা ঠিক করতে করতে বারান্দাটার কাছে গিয়ে বলল, “মাস ছয়েক রিলেশনে ছিলাম, অস্বীকার করব না, লিভ-ইন করতাম, তারপর ওর মনে হলো ও পারবে না আমার সাথে থাকতে, আমিও কোন টান অনুভব করতাম না, ব্যস, আর কী, আলাদা হয়ে গেলাম, নাথিং মোর দ্যান দ্যাট। তুমি কোথায় দেখলে? ফেসবুক? নাহ, যা ভাবছো তা একেবারেই নয়, আমরা আলাদা হয়ে গেছি বেশ কিছুদিন হয়ে গেল, বছর খানেকের উপর। তুমি? তুমি নিজের জীবনটা গুছিয়ে নাওনি?”
নীলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই অদিতি বলল, “আমি বেশ ভালোই আছি, দেখছ তো। সারাদিন যে কীভাবে কেটে যায়, কে জানে, তবে তুমি সত্যিই অনেক বদলে গেছে, অনেক। আগের সাথে এখন যেন মেলাতেই পারছি না। যাই হোক, তোমার কেরিয়ার, গান-বাজনা, যার জন্য এত কিছু, সেসব কেমন চলছে?”
-“ভালো, বেশ ভালো, বিরাট কিছু না হয়তো, আমি খুশী। চাকরী, তারপর নিজের গানবাজনা নিয়েই থাকি। দেখা যাক।।। অদিতি, আমি পরশু-ই চলে যাচ্ছি, এখনও বলিনি কাউকে, তোমাকেই বললাম প্রথম।”
একবারের জন্য হলেও ধাক্কা খেল অদিতি, এটা একদমই আনএক্সপেক্টেড ছিল ওর কাছে, এতবছর পর এসে আবার।।। অদিতির তো খুশীই হওয়া উচিত, কিন্তু পারছিল না, কিরকম যেন একটা লাগছিল।
নীল বারান্দাটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, চোখে শূন্য দৃষ্টি, অন্যমনস্ক ভাবেই বলল, “মানুষ অন্যায় করে, কিন্তু যখন তার উপলব্ধিটা হয়, তখন অনেকটা দেরী হয়ে গেছে, আর তখনই সব থেকে বেশী যন্ত্রণাটা হয়, চাইলেও আর সব আগের মত হয় না তখন।”
নীলের দৃষ্টি অনুসরণ করেই অদিতির চোখ গেল নীলের ঘাড়ের কাছে, পাঞ্জাবীর ফাঁক গলে স্পষ্ট দাগটা। অদিতিকে দেখছে বুঝতে পেরেই নীল তড়িঘড়ি ঠিক করে নিল পাঞ্জাবীটা।
-“শরবত খেয়ে চলে এসো নীচে, সন্ধিপুজো শুরু হবে”, তাড়াতাড়ি কথাগুলো বলে চলে গেল নীল।
।।৩।।
“শিবু ওদিকটা দ্যাখ, ওদের খাওয়া হলে এবার বসে পড়বি, আর শরীরটা সায় দিচ্ছে না রে, জল দে তো একটু” – পুজো, ভোগ খাওয়ানো, বাড়ির লোকের খাওয়াদাওয়া সব সেরে বসল যখন অদিতি, তখন সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত। রাত পেরোলেই নবমী, বাইরের ভিড়েই তো মালুম পাওয়া যাচ্ছে, আজ আর কারোরই বাইরের ঠাকুর দেখতে যাওয়ার মতন অবস্থা নেই, সারাটা দিন এত খাটনির পর।
-“ওদিকে হয়ে গেছে দিদি, আমি খাবারটা বাড়ছি তাহলে।”
-“হ্যাঁ, খেয়ে ওপরে চলে যাব একদম।”, শিবাঙ্গীর কথায় সায় দিয়ে বসে বসে হাই তুলছিল অদিতি।
পুজোর এই কটাদিন যেমন আনন্দ হয়, তেমনই খাটনি, কিন্তু এত কষ্ট করতেও এতটুকু কষ্ট মনেই হয় না। খুব ভাল কাটে এই কটা দিন। শিবুটা খাবার আনতেই ভাবনায় দাঁড়ি টেনে খাওয়ায় মন দিল ওরা।
**********
নবমী এসে গেল দেখতে দেখতে, বাড়িতেই পুজো হওয়ার জন্য বাইরে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখাটা কোন বারই হয় না অদিতির। শিবাঙ্গী আসার পরও পুঁচকেটাকে ছেড়ে অত পারেনা মেয়েটা, তাই অদিতির উপরই সবটা বর্তায়। এবার নবমীতে ভেবেছিলো ঠাকুর দেখতে বেরবে। কিন্তু…
বাড়ির বড় ঘড়ি টা জানান দিল রাত ১টা, বেশী খাটাখাটনি গেলে আবার অদিতির চোখে ঘুম আসে না, আজও আসছে না, অগত্যা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মানুষের সাজগোজ, ঘোরা-ঘুরিই দেখছিল। ওর বারান্দাটা থেকে বাইরের বাগান পেরিয়ে মেনগেট, রাস্তাটা দেখা যায়, নীচের গেস্টরুমের ঘরের আলোটা বাগানে পড়ে, সেটাও দেখা যায়, সেটাতেই চোখ গেল অদিতির, এত রাত্রেও নীলের ঘরের আলো জ্বলছে, অথচ নীলের চোখে এক ফোঁটা আলো পড়লেও ঘুমোতে পারতো না, তার মানে এখনও জেগে আছে, এত রাত অবধি কী করছে ও জেগে, এখন তো আর কোন কাজ নিয়ে আসেনি ছুটিতে, একবার কী দেখবে? ওর কী দরকার, যা করছে করুক। বেশ খানিক্ষণ দোলাচলে থেকে বারান্দা থেকে সরেই এলো অদিতি। ঘুমটাও আসছে না, ওর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অদিতির ভাবার আর কোন জায়গায় নেই, ও ভাবতেও চায় না, তাও মনটা কেমন একটা খুঁতখুঁত করছে। কেন জানে না ও, কিন্তু কিছু একটা যেন হচ্ছে ওর মধ্যে। হয়তো ওর মনের ভুল, কাউকে বলতেও পারছে না, বোঝাতেও পারবে না কাউকে, কিন্তু কিছু একটা আছে যেটা ওকে স্বস্তি দিচ্ছে না, নীল আবার চলে গেলে কী ও স্বস্তি পাবে? নাকি ও চলে যাবে সেটা জানার পর থেকেই ওর মধ্যে এটা হচ্ছে? কোনটা ঠিক? সাত পাঁচ ভেবে দরজাটা আস করে ভেজিয়ে নীচের দিকে গেল অদিতি।
এখন রাত্রের দিকে এদিকটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে, অদিতি ঘরের সামনের দিকে আসতেই বুঝল নীল জেগেই আছে। সিগারেটের গন্ধ, দরজাটা হালকা ভেজানো, দরজা ঠেলেই ঢুকে পড়ল অদিতি, বেশী কিছু না ভেবেই। নীল দরজার দিকে পিছন করে ওদিকের জানলাটায় দাঁড়িয়ে। অদিতি যা ভাবছে তা সত্যি হওয়া সম্ভব কী? হলে।।। নীল বুঝতে পারেনি এখনও অবধি অদিতি ঘরে ঢুকেছে। নীলকে কী ডাকবে? কী ভাববে ও? এত রাত্রে ওর ঘরে।।। ধ্যুর কেন এল? চৌকাঠের ওপারে পা বাড়াতেই চোখ পড়ল টেবিলের উপর লেখা খাতাটায়।।।
চেনা চেনা হাতের লেখাটা না? অনেকদিন পর দেখলেও ভোলার নয়, তাই চোখটা চলেই গেল, ডায়েরী লেখার অভ্যাসটা যায়নি তাহলে এখনও নীলের। না চাইতেও কতগুলো শব্দগুচ্ছ চোখে পড়েই গেল, না লুকিয়ে পড়ে নেয়ার মানুষ না অদিতি, কিন্তু…কিন্তু…না পড়লেই ভাল হতো মনে হয়।।। কয়েকমুহূর্ত শুধুমাত্র… অদিতির সামনে থেকে সরিয়ে নিল ডায়েরীটা নীল।।। ঝড়ের মতো।
***********
অদিতির চোখে জল, ওপাশের মানুষটার চোখ একটা আকুতি।।। আর দাঁড়ালো না অদিতি, নিজের ঘরের দিকে দৌড় লাগল অদিতি। তার মানে ওর সন্দেহই… এই ভাবে কখনো কারো সন্দেহ ঠিক প্রমাণিত হতে পারে? অদিতি তো একবারও চায়নি নিজে ঠিক প্রমাণ হোক। তাহলে? নিজের ঘরে ঢুকে দরজা দিয়ে দিলো অদিতি। ওর কিছু বলার, ভাবার, শোনার মতো অবস্থা ছিল না তখন, আর ঐ তো মানুষটা? নাহ, একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি তার মুখ থেকে, কী বলতো আর? কিছু জিনিস না জানাই থাক, কিন্তু…অদিতির সবটা জানার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।বাইরের ঘড়িতে ঘন্টা পড়ল রাত ২টো।