ঘরে ফেরা-২ (চতুর্থ পর্ব)

।।১।।

-“কে এল বৌমা? এই মেজো বৌমা দেখ তো এতক্ষণ ধরে কী করছে?”

-“ঐ তো রান্নার ঠাকুর আসার কথা, দেখছি মা।”

বাড়ি ভর্তি লোক, ঢাকের বাদ্যি, ধুনোয় ঝাপসা চারদিক, সকালের মিঠে রোদ – আর এই সবের মাঝে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে ইন্দ্রনীল। অদিতি বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিল না এই ঘটনার জন্য। ঐ জন্য কোথা দিয়ে পাঁচটা মিনিট কেটে গেছে বুঝতেও পারেনি। দুজনের মুখেই কোন কথা নেই, মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুধু ওরা, পা দুটো যেন পাথরের মতো ভারী, শিবাঙ্গী না এলে হয়তো আরও কতক্ষণ এভাবেই চেয়ে থাকত অদিতি। শিবাঙ্গী এই প্রথম দেখছে ইন্দ্রনীলকে, যতটুকু যা দেখেছে সেটা ফটোয়, তাই প্রথমে নিশ্চিত হতে পারছিল না। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বুঝতে পেরে ছুটল বাড়ির ভিতর।

**************

কাবেরী শুনেই দৌড়ে এসে যেই চেঁচামেচি শুরু করেছে, অদিতির সম্বিৎ ফিরল ততক্ষণে। বুঝল এখানে এখন থাকা মানেই আত্মসম্মান নিয়ে টানাটানি। ধীর পায়ে সদর দরজা ছেড়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল ও। ইমন, ঈশান, পরমাদেবী, বাড়ির সকলে অবাক-এর সঙ্গে সঙ্গে খুশীও, মারাত্মক খুশী। ঘরের ছেলে আজ এত বছর পর ঘরে ফিরেছে, খুশী হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ঘরে ফেরাটা আর পাঁচটা ঘরে ফেরার থেকে যে আলাদা তা বলাই বাহুল্য। ঈশান আর পরমাদেবীর চোখ এড়ায়নি অদিতির এভাবে চলে যাওয়াটা।

পরমাদেবী তো মা, ছেলেরও মা আবার এই মেয়েটারও, যাকে নিজের মেয়ের থেকে কম কিছু ভালবাসেননি, কাকে ফেলবেন আর কাকে দেখবেন উনি?

এত হঠকারিতার মধ্যে পুজোর নির্ঘণ্ট আসন্ন, পুরুত মশাই তাগাদা না দিলে আর কারও মাথায় আসতোও না এখন।

**************

পুজোর সমস্ত কাজ অদিতি নিজে হাতে করে প্রতি বছর, এবারও নিজের দায়িত্ব পালনে কোন ত্রুটি করেনি অদিতি।

অদিতির ঘরের দরজাটা বন্ধ, পুজোর শেষে নিজের ঘরে ঢুকে গেছে অদিতি, কেউ ওকে ডাকার সাহসও পাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর পরমাদেবী আর থাকতে না পেরে দরজায় এসে ডাকলেন। বাড়ি ভর্তি লোক, অদিতিকে সকলেই খুঁজছে, কত মিথ্যে বলবেন আর। না এখনও দরজা খুলছে না, আর একবার ডাকলেন পরমাদেবী। এবার দরজাটা খুলল। 

দরজা খুলে ভিতরে চলে গেল অদিতি। একদম পরিষ্কার চোখমুখ, মুখে ভাবনা চিন্তার লেশমাত্র নেই। পুজোর শাড়ি ছেড়ে গুছিয়ে রাখা, গয়না-গাটি খুলে রাখা। খুব শান্ত ভাবেই বলল অদিতি, “সরি মা, বাথরুমে ছিলাম, তাই প্রথমবার খুলতে পারিনি দরজাটা, বসো তুমি, তারপর? ছেলের সাথে এতবছর পর গল্প হলো?”

-“বৌমা, আমি জানি এখন তোমার মনের অবস্থাটা, কিন্তু এখন পুজোর সময়ে ছেলেটা কাউকে কিছু না বলে নিজের বাড়ি চলে এসেছে, সত্যিই জানতাম না, জানলে।।।।”

-“মা, তোমরা কী সত্যিই কিচ্ছু জানতে না? যাই হোক, তোমাদের ছেলে, তোমাদের বাড়ি, আমায় এত কৈফিয়ৎ দেওয়ার সত্যি কোন প্রয়োজন নেই।”

পরমাদেবী কিছু বলার আগেই অদিতি আবার বলল,”তুমি বা তোমরা, তোমাদের বাড়ির ছেলের সাথে কী করবে না করবে একান্তই তোমার ব্যাপার। এখন বাড়িতে পুজো তাই আমি এমন কিছু করব না যাতে বাড়ির অসম্মান হয়। কিন্তু আমার মেরুদন্ডটা এখনও সোজা আছে তো, তাই আবার সব ভুলে ঐ লোকটার সাথে একই ছাদের তলায় ঘর করতে পারব না মা, আর একটা কথা, পাখির ব্যাপারে কোনরকম arguement চাই না। তোমাদের ছেলে পাখির ব্যাপারে জানতে পারুক বা না পারুক, হুট করে কোন অযাচিত অধিকার ফলাতে এলে, আমি কোনভাবেই বরদাস্ত করব না। শুধু জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। সবটুকু তো জান তোমরা, আর নতুন করে কি বলবো বলতো?”

একটানা এতটা বলে চুপ করল অদিতি। বাড়িতে পুজোর হইহই পরিবেশটা কেমন যেন অন্যরকম, যেন এক ধর্মসংকট। পরমাদেবীর সত্যিই কিছু বলার ছিল না। কীই বা বলতেন? সত্যিই তো, উনি তো সবই জানেন। 

নীল আসার পর থেকে গেস্টরুমটা খুলে দেওয়া হয়েছে, “গেস্টরুম” দেখেও নীল কিছু বলল না, খানিক অবাকই হলেন পরমাদেবী।

পুজোর শেষের পর খাওয়াদাওয়া সেরে সব নীলের ঘরেই আছে। ওদিক থেকে হইহই করে আওয়াজ আসছে, বাচ্চাগুলো খুব খুশী। কায়দা করে ঈশানের সঙ্গে পাখিকে পাঠিয়ে দিয়েছে ঠাকুর দেখতে অদিতি। ঈশান আর রাই-এর সাথে ঘুরুক বরং, ততক্ষণে কথা বলে নেবে ও |

-“বৌমা”, পরমার্থ বাবু সাধারণত নিজের ঘরেই থাকেন, নিজের বই-এর জগতে, আজ উঠে এসেছেন বড় বৌমার ঘরে।

শ্বশুর মশাই-এর গলার আওয়াজে একটু হলেও থতমত খেয়ে গেল অদিতি। 

-“বাবা, বাইরে কেন, ভিতরে এসো না।”

-“আমি বাধ্য হলাম আসতে বৌমা। বসতে আমি আসেনি। দেখ নীলের আসা নিয়ে কোন ইঙ্গিতই আমাদের কাছে ছিল না তা বলা ভুল। ও আসতে চাইছিল ঈশানের বিয়েতে, কিন্তু আমরা একবারও বলিনি ওকে আসতে, বা আসার অনুমতিও দি নি। তা নিয়ে তোমার মা-র সাথে আমার আলোচনাও হয়েছিল, কিন্তু তার আগেই ও হঠাৎ করে এভাবে চলে আসবে, ভাবতে পারিনি। পুজোটা কাটুক, আমরা ওর সাথেও কথা বলবো, তোমায় আর নতুন করে আমাদের কিছু বুঝিয়ে বলতে হবে না, আমরা জানি সবটা, সে জন্যেই আমার আর তোমার মা-র এখানে আসা। তিনটে দিন একটু ধৈর্য্য ধরো মা। আমি একটা ব্যবস্থা নিশ্চয় করব। আর তুমি নিশ্চিন্ত থাকো পাখির ব্যাপারে। আমার সেটাও খেয়াল আছে। আর কোন কথা নয়, বাড়ি ভর্তি লোক, এভাবে ঘরে বসে থেকো না, নীচে যাও ।”

পরমার্থবাবুর উপর কিছু বলার কোন সাহস অদিতি, পরমাদেবী কারোরই নেই। কথাগুলো বলে চলে গেলেন উনি, পরমাদেবী অদিতির হাতটা ধরে তাকালেন অদিতির দিকে। ওর অবনত দৃষ্টি বুঝিয়ে দিচ্ছে পরিষ্কারভাবে ওর অসহায়তা। ঘি আর আগুনকে একসাথে রাখলে ঘর তো পুড়বেই, তা বিলক্ষণ বোঝেন পরমাদেবী। “এসো নীচে”, বলে চলে গেলেন উনি।

দরজাটা লাগিয়ে ঘর আঁধার করে নিজের ঘরের বারান্দাটায় গিয়ে দাঁড়ালো অদিতি। বারান্দাটায় একটা কোজি চেয়ার আছে, ওর খুব প্রিয়। এই বারান্দার কোণ, এই কোজি চেয়ারটা, ছোট্ট টেবিল, কফি মাগ এগুলো ওর, একান্তই ওর নিজের। কারো প্রবেশের অনুমতি নেই এখানে। 

এই বারান্দাটাতে বসেই ও একটা একটা করে দিন গুনত, পাখি ওর কোলে আসার আগে। না একা ছিল না ও, সবাই ছিল ওর পাশে, কিন্তু যার থাকার কথা আসল মানুষটাই তো ছিল না। ওর চোখের কোণের কালি, ওর ডিপ্রেশন, ওর পাগলামি, ওর কাউন্সেলিং, ওর মাঝ রাতের বমি, ওর ওষুধের বাক্স, ওর অদম্য জিদের রাত-জাগা পড়ার টেবিল, ওর ইন্টারভিউ, ওর সিলেকশন থেকে ওর আজকের অফিসের কেবিনটা, চেয়ারটা, কোথাও – কোথথাও তো ইন্দ্রনীল মুখার্জীর অস্তিত্বই নেই। আজ তাহলে কী জন্য ওর জীবনে ফিরে এলো? ওর জীবনে ফিরে এসছে বলা ভুল, ও ওর বাড়িতে ফিরে এসছে, যেটাকে অদিতি আজ নিজের বাড়ি মানে।

অদিতির মা বাবা চলে যাওয়ার পর, ভাইবোন নিজের কেরিয়ার নিয়ে আজ ব্যস্ত হওয়ার পর ওর নিজের বলতে এই বাড়ি, এই বারান্দা, এই ঘরটা, পাখি, এই বাড়ির লোকজন, এরা ছাড়া তো আর নেই ওর কেউ।

আজ বহুদিন পর অদিতির চোখের জল, না, এই চোখের জল-এর কারণ নীল নয়। আজ বড্ড ক্লান্ত লাগছে অদিতির, এতগুলো মানুষ থাকা সত্ত্বেও যেন আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে ওর। ঝাপসা চোখের দৃষ্টি পেরিয়ে মেনগেটের দিকে নজর গেল অদিতির, পাখিটা ফিরছে ওর ছোটকার সাথে।

আগে পাখির সাথে কথা বলতে হবে, নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে, ঐ লোকটা পাখিকেও কেড়ে নিতে চাইবে, কিন্তু অদিতি বেঁচে থাকতে তা হতে দেবে না। তাড়াতাড়ি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে গেল অদিতি।

************

মুখুজ্জ্যে বাড়িতে ভোগ খাওয়ানো হয় নিত্যদিন, তাই পাড়ার লোকজনও কৌতূহল নিরসনের জন্য খেজুরে আলাপ জমাতে হাজির।

নীল আসার পর থেকে মা-র সাথে যাও বা নেহাতই সামান্য কথা হয়েছে, কিন্তু বাবা, ঈশান, আর… আর… অদিতির সাথে একবারও…।

পাড়ার মুখের মিষ্টির দোকানের গোপালদা চলে যেতেই নীল ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বেরিয়ে এল। নয়তো আবার লোকজন চলে আসবে, কিন্তু নীলের যাদের সাথে কথা বলা দরকার, তাদেরকেই পাচ্ছে না, কাবেরী ওর ছেলেটাকে নিয়ে বেরলো একটু, একটু ঠাকুর দেখতে, তার আগে অবধি এখানেই ছিল। নীলকেও বলেছিল, কিন্তু মারাত্মক জেটল্যাগ, নীল না করে দিয়েছে।

দালানটা দিয়ে বাবার ঘরের দিকে যেতে গিয়েই ধাক্কা।।। সামনে অদিতি।

*************

কয়েক মুহূর্তের জন্য দুজনেই চুপ, অদিতিই সঙ্গে সঙ্গে সরে গেল ওখান থেকে, পাখিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে যাবে বলে।

-“কেমন আছ অদিতি?”

নীল আসার পর থেকে এই প্রথম অদিতিকে কিছু বললো। আজ এতগুলো বছর পর নিজের কাছের মানুষটাই সবথেকে বেশী অপরিচিত অদিতির কাছে। 

অনেকটা বদলে গেছে নীল। বয়সের সাথে সাথে চেহারা, মুখেও ভাঙ্গন ধরেছে খানিকটা। গলার সুরটা যেন আরও গম্ভীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে। চোখের দৃষ্টিতে সেই ঔদ্ধত্য যেন খানিটা প্রশমিত। গালে হালকা দাড়ি রেখেছে এখন, আগের মত ক্লিনশেভ না। সবমিলিয়ে চট করে দেখলে চেনা ভার।

-“ভাল, বেশ ভাল”, আর কোন কিছু না বলেই অদিতি সদর দরজাটার দিকে গেল। ঈশান পাখিকে বড় বৌদির হাতে দিয়েই দেখলে বড়দা ওখানেই দাঁড়িয়ে। আজ বহুবছর কোন কথা নেই, ঈশান যে বড়দার আসায় খুশী হয়েছে সেটা বললেও ভুল বলা হবে। ও কিছু না বলে ঠাকুর দালানের কাছে চলে গেল। কাল অষ্টমী, সন্ধিপুজোর জোগাড় শুরু হবে ভোর রাত থেকেই। পাখিকে নিয়ে চলে গেল অদিতি। মাকে একটু পরে আসছে বলল। 

পাখির মুখে অদিতির উদ্দেশ্যে মা ডাকটা ভাবাছে নীলকে। তার মানে কী।।। একবার বাবার সাথে কথা বলতেই হবে।

*************

-“বাবা, আসব?”

আজ বহুবছর পর সেই ঘরটার চৌকাঠে।

“এসো”, গুরুগম্ভীর গলাটায় যেন কী একটা আছে।মাথা নত করে ঘরে ঢুকল নীল। বিশাল আরামকেদারাটায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলেন পরমার্থবাবু। মুখের সামনে থেকে বইটা নামালেন, চশমাটা ঠিক করে উঠে বসলেন ঠিক করে হাতে ভর দিয়ে, “বসো।”

-“বাবা, কেমন আছ?”

-“এই কথাটা জিজ্ঞেস করতে নিশ্চয় এতদূর আসোনি, কেমন আছি তা তো দেখতেই পাচ্ছ। কী জন্য তোমার এখানে আসা, কী বলতে এসেছ সেগুলো বলো।”

-“আমি আমার নিজের বাড়িতে আসতে পারব না?”

-“না, পারবে না। নিজের বাড়ি, বাবা মা, স্ত্রী, ভাইবোন সব কিছু ফেলে যখন ঐভাবে বেরিয়ে যেতে পেরেছিলে, তখন কী পিছন ফিরে দেখছিলে, কী হবে ঐ মানুষগুলোর?দেখনি, ভাবোওনি, তাই এত বছর পর ‘নিজের বাড়ি’ বলে অধিকার ফলালেও, এই বাড়িটা, বাড়ির সবাই তোমায় নিজের করতে পারবে না, তাই কথা না বাড়িয়ে কী হয়েছে বলো।”

-“বাবা আমি জানি আমি ভুল করেছি, কিন্তু।।।”

-“এক মিনিট, তুমি ভুল না অন্যায় করেছ। ভুল আর অন্যায়-এর মধ্যে যে পার্থক্যটা আছে সেটা বুঝতে শেখ। অনেক তো হলো।।। নাও, বলো কী দরকারে এসেছ?”

-“বাবা, আমি এখানে কোন দরকারে আসিনি, আমি সত্যি তোমাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইতেই এসেছি।।।”

পরমার্থবাবু থামিয়ে দিয়ে বললেন,”তা হঠাৎ এতদিন পর তোমার মনে হলো ক্ষমা চাওয়া দরকার? এরকম তো তুমি নও, এরকম ভাবনা হঠাৎ তোমার মাথায়?আর ক্ষমা চাইবার জন্য এভাবে এখানে অতদূর থেকে এলে যে রাস্তা বিগত সাত বছরেও মাড়াওনি? নিজেই বলতো এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?”

তখনই পরমাদেবী ঢুকলেন ঘরে।

-“আসলে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, যতদিন না দেখেছি, এই উপলব্ধিটা আসা বোধহয় সম্ভব ছিল না। কিন্তু যখন মৃত্যুর সাথে লড়াইটা জিতে গেলাম, তখন বুঝলাম, জীবনে সাফল্য, চড়াই-উতরাই যাই থাকুক, নিজের আপনজন, নিজের পরিবারকে দূরে রেখে ভাল থাকার চেষ্টা করাটা মূর্খামি।”মাথা নিচু করে কোনোক্রমে কথা গুলো বলে দিলো নীল এক নিঃশ্বাসে।

-“কী বলছিস তুই? মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছিস মানে?”

পরমাদেবী অবাক দৃষ্টিতে চেয়েছিলেন ছেলের দিকে। পরমার্থবাবুও ছেলের কথা কিছু বুঝতে পারছিলেন না।

“কী বলতে চাইছো তুমি?” পরমার্থবাবু ছেলেকে শুধোলেন।

-“ঠিকই বলছি বাবা, বেশকিছুদিন আমি হসপিটালাইজড ছিলাম, আমার কেমো চলছিলো বেশ কিছুদিন, অনেক সার্জারি, লাংস ক্যান্সার। তখন ওখানে একা মৃত্যুর সাথে লড়াইটা লড়তে গিয়ে জীবন আমায় আসল শিক্ষাটা দিয়ে গেছে, তোমাদের সাথেও বহুদিন ফোনে কথা হয়নি, তোমরা কিছুই জানতে না তাই। হসপিটালের বেডে শুয়ে তখনই ঠিক করেছিলাম। যা কিছু করেছি, জানি তার ক্ষমা হয় না, কিন্তু আমার একবার ক্ষমা না চাওয়া অবধি শান্তি হচ্ছিল না। তাই তোমাদের সবার সামনে একবার এসে দাঁড়াবোই আমি |তবে এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।।।”

“এইজন্যই কী তোর শরীরটা এমন ভেঙে গেছে বাবা? তুই আমায়ও একবার বললি না?”, পরমাদেবী আর নিজের মাতৃসত্ত্বাটাকে কঠিন আবরণের আড়ালে লুকোতে পারলেন না।পরমাদেবীর চোখ টা ছলছল করছিলো, সেই দিকেই চেয়ে নীল আবার বললো,”অনেকগুলো অপারেশন হয়েছে, কেমো চলেছে, তাই হয়তো তোমার মনে হচ্ছে মা। কিন্তু, এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। আর কোন ভয় নেই, তুমি চিন্তা করো না। আমার এখানে আসার এটাই একমাত্র কারণ। আমি অদিতির সামনে যাওয়ারও যোগ্য নই, কিন্তু আমি তাও ক্ষমা চাইব ওর কাছে। কিন্তু আমি একটা কথাই জানতে চাই, মা, বাবা, প্লিজ সত্যি করে বলো, “পাখি কে?”

দরজায় আওয়াজ শুনে ফিরে তাকাল ওরা, কখন যে প্রসাদের থালা নিয়ে অদিতি দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করেনি কেউ, ও কী সব কিছু শুনেছে? অদিতির চোখের দিকেই একদৃষ্টে চেয়ে রইল নীল।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

সাঁঝের শিশির (অন্তিম পর্ব)

।। ১।।   ( বেশ কিছুদিন পর ) সারা বাড়িতে এই লাগোয়া বারান্দাটাই টিকলির সবথেকে প্রিয়। সামনে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে বাগান মতো, তারপর রাস্তা। আগে

Read More »

সাঁঝের শিশির (ষষ্ঠ পর্ব)

।।১।। (কিছুদিন পর) “আরে আমি নিজেই ফিরে যাব, রতনদা তো আছেই, আবার তুই আসবি কেন?” “তুই তো আচ্ছা হাঁদা, বলছি রতনদাকে ফেরত পাঠাতে, আর এবার

Read More »

সাঁঝের শিশির (পঞ্চম পর্ব)

।।১।। “এবার বিশ্বাস হল তো, মেয়েটা খামোখা কেন মিথ্যে বলবে বলো তো? আর আমি তো প্রথমেই দেখেছিলাম, তোমায় বলেওছিলাম, তুমিই আমার কথা বিশ্বাস করোনি, এখন

Read More »

সাঁঝের শিশির (তৃতীয় পর্ব)

“তুমি একবার আমার কথাটা শোনো, আচ্ছা আমার মিথ্যে বলে কি লাভ বলতো? আর তোমার মনে হয় আমি এই অবস্থাতেও মিথ্যে কথা বলব এখনও?” “সত্যি মিথ্যের

Read More »

সাঁঝের শিশির (দ্বিতীয় পর্ব)

।।১।। “কি গো টিকলিরাণী, খাও। কখন থেকে খাবারের থালা নিয়ে বসে আছ? তোমার প্রিয় পাস্তা করে দিলুম যে, ভাল হয়নি?” অন্যমনস্ক টিকলি সামনের বাগানটার দিকে

Read More »

Share with