ঘরে ফেরা-২ (ষষ্ঠ পর্ব)

।।১।।

এই অঞ্জলি শেষ হলো, বাচ্চাগুলো অঞ্জলি দিয়েই খাবার জায়গায় দে দৌড়।

পরমাদেবী হাঁটুর ব্যথার জন্য আর বেশী দৌড়োদৌড়ি পারেন না, বয়স হয়েছে, একটুতেই হাঁপিয়ে পড়েন, বসে পড়লেন দালানের পাশে রাখা চেয়ারটায়। দুই বৌমা হাতে হাতে কাজ সামলে নিচ্ছে, আর একজনও চলে আসবে কদিন পর, এবার ওনার ঝাড়া হাত পা। পুজোর পর বিয়েটাও ভালোয় ভালোয় মিটলে শান্তি, রাই ওর মা বাবাকে নিয়ে চলে আসবে একটু পর। ষষ্ঠী থেকেই থাকার কথা ছিল ওদের। ওদের বাড়ির জমির ব্যাপারটার জন্য ছুটতে হলো ওদের আবার তাই আর।।।

-“মা”

একমনে ভাবছিলেন পরমা দেবী, নীলের ডাকে টনক নড়ল, নীলটা আজ এত বছরে বড় বেশী যেন বদলে গেছে।

চোখে চশমা, ব্যাকব্রাশ চুল, হালকা দাড়িতে আগের নীলের থেকে যেন অনেকটা আলাদা, অনেকটা রোগা , গায়ের রঙটা বেশ পরিষ্কার হয়েছে এখন, “বল কী বলবি।”

নীল পরমাদেবীর পায়ের কাছটায় ছোট্ট টুলটা টেনে বসল। 

-“ভালোই হলো, ঈশানের হবু বৌ, ওদের বাড়ির লোকজন আসছে, তোর সাথে আজকেই দেখা হয়ে যাবে, বিয়ের আগে পরিচয়টাও… “

পরমাদেবীর কথা কেটেই নীল বলল, “আমি কালই চলে যাচ্ছি।”

নীলের কথাটা বুঝতে বেশ কয়েকমুহূর্ত সময় লাগল পরমাদেবীর। কয়েকদন্ড মৌনতা।।। 

নীলই আবার বলল,”আমি ঈশানের বিয়েতে থাকছি না মা, চলে যাচ্ছি।”

পরমাদেবীর শূন্য দৃষ্টিটার দিকে চেয়ে বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠল নীলের। কিন্তু।।। কী-ই বা করবে ও? পরমাদেবী ছেলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আবার বললেন, “এই তো এলি বাবা, আবার চলে যাবি? আর তুই যে বলেছিলি ইমনের বিয়েতে পারিসনি, ঈশানের বিয়েতে।।।”

-“হ্যাঁ, ভেবেছিলাম, কিন্তু এভাবে কাজটা চাপে ফেলবে বুঝবো কী ভাবে, কিচ্ছু করার নেই, কী করব আর তাছাড়া।।।”

-“থাক, ঠিক আছে, জলখাবারটা খেয়ে নে।”

নীলকে আর কিচ্ছু বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে পড়লেন পরমাদেবী। কী লাভ আর মায়া বাড়িয়ে? যে গেছে, সে তো কোনদিনই এই ভিটেয় ফিরবে না, এ তো উনি আগেই জানতেন, নিজেই নিজের মনকে এ যাবৎ কদিন ভুল বোঝাচ্ছিলেন, ‘নীলটা এবার ঘরে ফিরল বুঝি, আর যাবে না।’ কিন্তু ভুল তো ওনারই। ও ঐদেশ ছেড়ে আর এই পোড়া দেশ, এই পোড়া পরিবারে কেনই বা ফিরবে? ফেরার হলে তো আগেই ফিরে আসত| ভাবলেনই কী করে এই আকাশ কুসুম চিন্তা। কোঁচকানো গালের উপর থেকে নোনতা চোখের জলটা মুছে নিলেন পরমাদেবী। থাক গে, অনেক কাজ পড়ে আছে, আর অত ভাবনায় কাজ নেই।

***************

কাল চলে গেলে আজ তো ব্যাগটা গোছাতে হবে, ট্রলিটা নিয়ে উপরে তুলতেই জিনিসগুলো দেখে মনে পড়ল নীলের, সবার জন্য তাদের পছন্দ মতো উপহার কিনে এনেছিল ও, পুজো উপলক্ষে, দিতেই ভুলে গেছে। ছোট বাচ্চাগুলোর, তারপর শিবাঙ্গীর পছন্দ জানা সম্ভব ছিল না, আর পাখি? ওর অস্তিত্ব সম্পর্কেই তো।।। কিচ্ছু বলার মুখই কোথায়? এখানে সবকিছু, বাড়ির সবাই ‘নীল’ নামক মানুষটাকে ছাড়াই বাঁচতে শিখে গেছে। কারো জন্য কিচ্ছু থেমে থাকে না, এখানেও থাকেনি। বহু অপেক্ষার পর এখন আর কেউ অপেক্ষা করে না নীলের থাকা না থাকার। জানা কথা, সে যাবেই। এই বরং ভাল হলো, বৃথা মায়া বাড়িয়ে কী লাভ? পাখির কাছে অদিতিই মা বাবা। সেদিনকার অপরাধের এত বড় মাসুল।।। মা বাবা, স্ত্রী সন্তান, ভাই বোন, পুরো পরিবার, এদের কেউ আর নীলের পাশে নেই। কিন্তু এগুলো হওয়ার কথা ছিল না।

ভাবনা থামিয়ে গিফটগুলো একে একে বের করলো ও, মা-র প্রিয় জামদানী শাড়ী, বাবার পছন্দের রঙের শালটা, ঈশানের বহু দিনের চাওয়া পারফিউমটা, কতবার বলেছিল, ইমনের পছন্দের রোলেক্স ঘড়িটা, সব গুছিয়ে এনেছে নীল। আর অদিতি? ওকে কিচ্ছু দেয়ার মতো যোগ্যতা নীলের… নাহ, ওকে আর কিছু না দিক, চিঠিগুলো দিয়ে যাবে ও। জিনিসগুলো নিয়ে ঘর থেকে বেরলো নীল।

***************

নবমীর রাতে আলো ঝলমলে শহরটায় সারি সারি গাড়ি, অগুনতি মানুষের ভিড়, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর। ডাকের বাদ্যি, ফুচকা, চাট , সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে পাখিটার। হ্যাঁ, আজ রাত্রে, পুজোর শেষে সবাই মিলে বেরিয়েছে, সঙ্গে নীলও। না, কেউ ডাকেনি ওকে, শূন্যস্থানটা পূরণ করার দায় বা ইচ্ছে আর হয়তো নেই কারো, ও নিজেই বেরলো। পুজোর রাতের কলকাতা বহুদিন দেখেনি, তাই দুচোখ ভরে এই কোলকাতাটাকে দেখে নিচ্ছিল ও, কী জানি আবার কবে আসা হয়।।। আদৌ আসা হয় কী না। পাখিটা খুব খুশী আজ, এভাবে পুরো বাড়ি বহুদিন পর বেরলো। যদিও আসল কারণটা কেউ জানে না, জানে পরমাদেবী, পরমার্থবাবু। তাই এই অশক্ত শরীরেও আজ দুই বুড়োবুড়িতে বেড়িয়েছেন ঠাকুর দেখতে, আজ কতবছর পর, নীলকে এভাবে পুজোয় সবার সাথে আর হয়তো পাওয়া হবে না, জানেন পরমাদেবী, তাই শত কষ্ট হলেও।।। হাসিমুখে নাতি নাতনীর হাত ধরে ফুচকায় মনোনিবেশ করেছেন। পরমার্থবাবুও মুখে যাই বলুন, সবাই মিলে, উপরন্তু নীলটা যখন আছে, আজ যত কষ্টই হোক, উনি বেরবেন।

অনেক আনন্দ, হৈহুল্লোড়-এর পর যখন বাড়ি ফিরল সকলে, তখন বেশ অনেকটা রাত । গাড়ি নিয়েই বেরনো হয়েছিল, খাওয়াদাওয়া বাড়িতে সেরে। ঠাকুর দেখা মিটিয়ে যে যার ঘরে পাত্তাড়ি গুটোচ্ছে যখন, নীল গিয়ে বসল সামনের ঠাকুর দালানে চেয়ারটা টেনে। একটু একা থাকতে ইচ্ছে করছে, মায়ের মুখের দিকে একদৃষ্টে চেয়েছিল ও। কাল মায়ের বিসর্জন, সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে মা-ও, আরও এক বছরের প্রতীক্ষার শুরু। নীলেরও যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, তফাৎ একটাই, নীলের আর আগামী বছর কেন… কখনোই… মায়ের দিকে তাকিয়ে আজ চঞ্চল মনটা শান্ত করতে চাইছিল নীল, ঠিক-ভুল, সত্যি-মিথ্যের হিসেবটা আজ বড্ড গুলিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, কারো ভালোর জন্য যদি মিথ্যে বলা হয়, তাহলে তো ক্ষতি নেই, সে তো পাপের আওতায় পড়বে না, তাই না? ওর এই কাজও তাহলে।।।

নাহ, বেশী ভেবে লাভ নেই, সবাইকে সব উপহার দেওয়া হয়ে গেছে, খালি অদিতিকে দেওয়া বাকী। কাল যাওয়ার আগে ওর হাতে ঐ বহুমূল্য চিঠিগুলো তুলে দেবে ও, বহুমূল্য সবার কাছে নাও হতে পারে, কিন্তু এর গুরুত্ব কতটা তা নীল খুব ভালভাবে জানে। কালকের পর থেকে আর একটিবারও কথা বলেনি অদিতি, যদিও আর কীই বা বলবে? ওর মনে হাজার প্রশ্ন, দ্বন্দ, জিজ্ঞাসা যেন দাউদাউ করে জ্বলছে, শুধু কাকে জিজ্ঞেস করবে তাই।।।

ঘরের দিকে ফিরল নীলও। অনেক রাত হলো, আর আজ বড় ক্লান্ত লাগছে, যেন একটু বিশ্রাম চায় মনটা, আর যে এত জটিলতা, অশান্তি এসব কিছু নিতে পারছে না।

***************

সকাল থেকেই রান্নাঘরের দিক থেকে ম-ম লুচির গন্ধ আসছে। দশমীর দিন ওদের পাড়ায় সবাই মিলে একসাথে খাওয়াদাওয়া হয়, দুপুরে। তারপর বিকেল থেকে সিঁদুর খেলা। সে সিঁদুর খেলায় অদিতির বিয়ের প্রথম বছরই গেছিল। ব্যস, ঐ প্রথম – ঐ শেষ। শিবাঙ্গী বোঝে, প্রথমবার ওর সাথে যেতে বলে ফেলেছিল, তারপর আর বলেনি কখনো। বিসর্জনের সময় হইহই রইরই, পাড়ার পুজোর ভাসান, সঙ্গে মুখুজ্জ্যে বাড়ির, এই মুখুজ্জ্যে বাড়ির পুজোর নাম আছে রীতিমত আশেপাশে, তাই বিসর্জনটাও বেশ জাঁকজমক করেই হয়। অদিতির আজ রান্নাঘরে অনেক কাজ, চটপট লুচিগুলো ভাজছিল, আজ ঠাকুরদালানে ওর তেমন কাজ নেই, কাজগুলো সেরে ঘরে গিয়ে একটু জিরিয়ে আবার বেরনো। খাওয়াদাওয়া সেরে এসে মাকে বিদায় জানানো। হাতের কাজগুলো সেরে শিবাঙ্গীকে খেতে দিতে বলে নিজের ঘরে গেল ও।

ওদের বাড়িটা বেশ পুরনো, এখন সারিয়ে নিয়েছে বলে ঠিকঠাক আছে, তবে পরমার্থবাবু বাড়িটা সারালেও কিছু জিনিস কিছুতেই বদলাতে দেননি। ঐ জন্যই জানলার কাঁচগুলো আগেকার দিনের মতো লাল, নীল, হলুদ, সবুজ। এখনও ছাদে কড়ি বড়গা, এখনও জানলাগুলো খড়খড়ি দেওয়া সেই বড়ো বড়ো জানলাই আছে। এখনও বাড়ির একতলায়, দালান, চৌবাচ্চা অস্তিত্ব । দাবার ছক মেঝেতে এখনও পাখিরা জমিয়ে একা-দোক্কাও খেলে। পরিবর্তন নিশ্চয় হয়েছে, তা না হলে তো এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাঁচতেই পারতো না কেউ, কিন্তু নিজেদের রুচি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বনেদীয়ানাকেও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ধরেও রেখেছে, আর বাবার এই জিনিসটাই অদিতির ভীষণ ভালো লাগে।

বারান্দাটা পেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে গেল অদিতি, ভরদুপুরেও ঠান্ডাই থাকে মোটামোটা দেওয়ালের এই ঘরগুলো। 

ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ল টেবিলটায়। জানলা গলে রোদটা পড়ে ঘরটা এখন আলোয় আলো। পর্দাটা টেনে দিল। ঘরটা ঠান্ডা হবে তবে, টেবিলের দিকে ভ্রু টা কুঁচকে তাকাল একবার, একটা পেট মোটা খাম, বেশ বড়সড়।

মন মেজাজ নেই ওর তেমন, তবু, অনিচ্ছাসত্বেও তুলল একবার। কিছুই লেখা নেই। ধ্যুর, আবার টেবিলেই রেখে দিল খামটা । ওর মনে অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক সংশয়, কিন্তু সেগুলোর উত্তর কোথায় পাবে তাও জানা নেই। কাল ডায়েরীতে চোখটা না গেলেই হয়তো ভাল ছিল, ও জানে না নীল সত্যিই কেন এসেছে, কিন্তু নীলের ডায়েরীতে ‘জেসিকা’ নামটা দেখেই কাল ডায়েরীটা তুলেছিল ও। না, খুব বেশী কিছু ও পড়তে পারেনি, কিন্তু ঐ নামটাই কি যথেষ্ট নয়? নীল ভাবতে পারেনি মনে হয় ওর-ই বাড়িতে অদিতি এভাবে বহাল তবিয়তে থাকবে, এত বছর ধরে, ওরই সন্তান, ওর মা বাবা পরিবার সবাইকে নিয়ে এভাবে, আর নীলের সব থাকা সত্ত্বেও আজ কিছুই নেই। জেসিকাকে নিয়ে কী ও এই বাড়িতে আসতে চায়? অদিতি আছে বলে পারল না? ও কী এই জন্যই এসেছিল? আর তাই-ই এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে?

আজ নিজেকে বড্ড অপমানিত লাগছে অদিতির, এতবছর ধরে।।। এগুলো তো ওর প্রাপ্য ছিল না। বাড়ির প্রতিটা মানুষের ভালবাসাটাও কম পড়ে যখন আসল মানুষটার থেকে সম্মান, ভালবাসা কিছুই পাওয়া যায় না। আজ এই বাড়িতে অদিতির পরিচয়টা কী? সবাই তো বড় বৌমা বলেই ডাকে ওকে, এবাড়ির বড় ছেলের সাথে সম্পর্ক না থেকেও তার সম্পর্কের ছাপ টা তো অদিতিকে বয়ে বেড়াতেই হচ্ছে, আজও। কী লাভ হচ্ছে তাহলে ঐ শাখাপলা, সিঁদুর দূরে সরিয়ে দিয়ে। কাকে শাস্তি দিচ্ছে ও? আজ যদি এটাই কারণ হয়, আরও একবার অসম্মানিত হবে ও, আর তারপরও এখানে এই বাড়িতেই থাকবে, এভাবেই? চোখদুটো ঝাপসা, চোখদুটো মুছে খামটা হাতে নিল ও, আনমনেই। খামটা খোলাই ছিল, উল্টো করে অন্যমনস্কভাবে ধরার জন্য বেশ কিছু কাগজ পড়ল টেবিলের উপর। বেশ পুরোনো কাগজ, দুটো ডায়েরী, এদিক ওদিক করেই বুঝল, আরে এ তো নীলের হাতের লেখা, কিন্তু অনেক পুরোনো লেখাগুলো। অনেক আগের লেখা পুরোনো ডায়েরী, কিছু কাগজেও লেখা, প্রায় বছর পাঁচেক আগের। চোখ দুটো মুছে পড়তে লাগল অদিতি–

।।২।।

পুরোনো হলদে হয়ে যাওয়া কাগজ, ডায়েরীর পাতা ইতিউতি ছড়ানো। আলুথালু হয়ে মেঝেতেই বসে অদিতি, মুখ চোখে স্পষ্ট যে একটা প্রবল ঝড় চলছে ওর ওপর দিয়ে, অদিতির এমন রূপ আজ থেকে বহু বছর আগে দেখেছিল মুখুজ্জ্যে বাড়ি, আজ আবার। আর এই দুবারই কারণ সেই একটাই মানুষ, নীল। তখনও ছেড়ে গেছিল সব, এবারও তাই। যন্ত্রণা টা এবারে আরও মারাত্মক, আগেরবার কোন ভালবাসা ছিল না, কিন্তু এবার।।।

হ্যাঁ, আলবাত ভালবাসা।।। কেন, এই তো এই পাতাতে লেখা, “বাড়ি ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে , সমস্ত দায়দায়িত্ব ছেড়ে সত্যি ভেবেছিলাম খুব ভালো থাকব, শুধু দৌড়ব নিজের স্বপ্নের পিছনে, কিন্তু আজ সত্যি বুঝি কতটা ভুল ছিলাম আমি। আজ অফিসে অদ্ভুত একটা কান্ড ঘটল, ছোট খাটো ভূমিকম্প তো এখানে লেগেই থাকে, কিন্তু আজকেরটা অতটা ছোট খাটো ছিল না, কিছু জায়গায় ক্ষতিও হয়েছে, অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবাই নিজের পরিবার, প্রিয়জনকে ফোন করতে ব্যস্ত। আমার কেউ ফোন করার নেই, কাউকে না। রাস্তাটা তো আমি নিজেই বন্ধ করেছি, তাহলে আজ মনটা অন্যসুরে গাইছে কেন, সত্যিই জানা নেই। আচ্ছা, মা বাবার সাথে তো কথা হয়, কিন্তু অদিতি? ও কেমন আছে? ও ভালো আছে তো? ওকে তো মুক্ত করে দিয়েই এসেছিলাম, এখন কেমন আছে ও?”

নীলের মনে অদিতির জন্য ভাবনাটা , এটাই তো অদিতি চেয়েছিল বারবার, পায়নি, কোনদিন পায়নি, কত যেন তারিখটা, ২০১৫-এর লেখা এটা, কিংবা এই যে এইটা -” আজ সত্যি বড্ড একা লাগছে, হয়তো আমি স্বার্থপর বলেই এই সময় নিজের পরিবারের কথা ভাবছি। অসুস্থ বলেই হয়তো।।। হ্যাঁ, তাই-ই তো, স্বার্থপর তো আমি অবশ্যই, নাহলে কেউ তো।।। ইমনটারও বিয়ে হয়ে গেল, একবার দেখতেও পেলাম না, কোন মুখে যাব, ও ভাল থাকুক। মা বাবা তো একবারও বললো না আসার কথা, কেনই বা বলবে? সেদিন যখন থাকতে বলেছিল, তখন তো থাকিনি। মা, আজ তোমায় বড্ড মিস করছি গো। পা-টা এক্সিডেন্ট হয়ে ভালমতো ক্র্যাক হয়েছে, তোমায় বললে তুমি টেনশন করবে তা আমি কী জানি না, কিন্তু।।। বিশ্বাস করো মা, আজ খুব ইচ্ছে করছে তোমার কোলে মাথা রাখি, কিন্তু কী ভাবে ফিরবো? আর যে কোন রাস্তাই খোলা নেই, সব শেষ করেছি নিজের হাতে।।। আচ্ছা মা, অদিতি কেমন আছে? জানো আজ ঘুমের ঘরে যেন মনে হলো অদিতি আমার পাশেই আছে। আমি জানি না কী হয় মাঝে মাঝে আমার সাথে, আমি তো স্বেচ্ছায় হাত ছেড়ে এসেছি, তাহলে আবার এসব কেন?”

এরকম ভাবেই টুকরো টুকরো করে কোলাজটা পড়ছিল অদিতি, বেশ ক’বছর আগের থেকেই নীলের মনে নিজের জায়গা কীভাবে একটু একটু করে গড়ে উঠেছিল তার কোলাজ । এই লেখাটার সময় নীল জানত না পাখির অস্তিত্বের কথা। ও-ই চায়নি নীল আর কোনদিন কিছু জানুক, ওর সামনে আসুক। জানলে কী সবকিছু অন্যরকম হতে পারত, হয়তো, হয়তো বা নয়।

আচ্ছা এই পাতাটাই কাল অদিতি দেখেছিল না, এই তো জেসিকাই তো, হ্যাঁ, নীল লিখেছিল এটাও বছর চারেক আগে।

“জেসিকার সাথে সম্পর্কটা ভাঙার পর বুঝলাম অদিতিই আমার জন্য কতটা সঠিক ছিল, যে কোন কিছুর বিনিময়ে নয়, নিঃস্বার্থভাবে আমার পাশে, আমার স্বপ্নের পাশে থাকতে চেয়েছিল সারা জীবন। আর আমি? কী করলাম? তাকেই কেমন মাঝরাস্তায় নিজের স্বার্থে ছেড়ে দিলাম। জেসিকা আর আমার মধ্যে তফাৎ কোথায় তাহলে? সত্যিই তো, কোন ফারাক নেই। অদিতি, তোমায়, মা-কে, বাবাকে, তোমাদের বড্ড মিস করি গো, আচ্ছা, তোমরা তো একবারও বলো না আমায়, আমি কবে ফিরবো? ফিরবো কী না আদৌ? অনেক অভিমান করে আছ না? জানি, বাবা তো আর আমার সাথে কথাই বলে না ভালো ভাবে , তুমিও গুনে কটা কথা বলো মা, আগে আমি ফোন করতাম না, এখন তোমরাই আর করো না, ঈশানটার গলাও কতদিন শুনিনি। শূন্যস্থান এভাবেই পূরণ হয়ে যায় হয়তো। আমি না আজ…আজ অদিতিকে বড্ড মিস করছি, ওকে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু, আমার কোন যোগ্যতা নেই আর, ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। এখন সবসময় একটা পাপ বোধ কাজ করে, আমি শান্তি পাচ্ছি না, আমি কী পাগল হয়ে যাচ্ছি?”

সত্যিই হয়তো শূন্যস্থান পূরণ হয়ে গেছল, নীলকে হারানোর পর অদিতিকে আঁকড়ে ধরে, পাখিকে আঁকড়ে ধরেই ভাল থাকতে চেয়েছিল পরমাদেবীরা। নীল তো নিজে সব ছেড়ে গেছে। শত অনুরোধ, কান্না, অভিমানেও ফেরেনি, তাই সত্যিই আর তাকে ফেরানোর আশা কবেই শেষ করে দিয়েছিল মানুষ দুটো, আর ফাঁকা স্থানেই ঢুকে পড়েছিল ওদের আদরের বড় নাতনী পাখি আর অদিতি। কিন্তু বারবার, এই সমস্ত কথার মাঝে একজনের উপস্থিতি বড্ড জোরালো , বারবার তার কথা, সারাদিনের কাজের শেষে তাদের একসাথে গল্প, আড্ডা, ঘুম – একজনই সবসময়, পারিজাত। কিন্তু কে এই পারিজাত?

বিধ্বস্ত হয়ে বসেছিল অদিতি। ডাকতে এসেছে শিবাঙ্গী, বলে দিয়েছে, ওকে যেন কেউ এখন বিরক্ত না করে। কারও উপস্থিতি কারও সঙ্গই এখন আর চায় না অদিতি। একা থাকতে চায় ও, নীল ওর কথা এতবার ভাবত? ডায়েরীর দুটো পাতা ছাড়া ছাড়াই তো অদিতির নাম। নীলের স্বপ্নের পিছনে দৌড়েও অদিতির নাম স্পষ্ট, ওর সারল্য, ওর ভালবাসা, ওর পাগলামি, ওদের বিয়ের সময়ের কথা, ক্ষণস্থায়ী কিছু সুখের মুহূর্তের কথা, বারবার এগুলোই লিখে গেছে নীল, বারবার নীলের একাকীত্ব, আর অদিতির না থাকাটা ফুটে উঠেছে ডায়েরীর পাতাগুলোতে। আজ অদিতির ঠিক-ভুলের হিসেবটা গুলিয়ে যাচ্ছে যে, দূরে গিয়ে যদি ভালবাসলে তাহলে আগে ফিরলে না কেন? একবার সাহস করে যদি সামনে এসে দাঁড়াতো নীল – জানা নেই অদিতি কী করতো, কিন্তু নীলকে।।। ভাবতে ভাবতেই একটা প্রায় ছিন্নভিন্ন পাতা হাতে এল অদিতির। পাতাটাকে মুচড়ে দেওয়া হয়েছিল বেশ বোঝা যাচ্ছে। কী এমন লেখা-

“মৃত্যুকে এত কাছ থেকে না দেখলে হয়তো সত্যিই এই উপলব্ধিটা আসত না, ভাগ্য অশেষ ভালো তাই অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেছি, কিন্তু পারিজাত আমার ভুলের মাশুল গুনছে আজ নার্সিংহোমে। ঠিক কতগুলো মানুষের আর ক্ষতি করব আমি? আমার সবথেকে কাছের বন্ধুটাও আজ আমারই কারণে।।। ও তো আমায় ভরসা করেই গাড়িতে উঠেছিল।।। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।।। এই জীবনে কটা মানুষের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো খুব দরকার, ওই মানুষগুলোর কাছে ক্ষমা না চাইলে আমি কোনদিনও মরেও শান্তি পাব না। কিন্তু ওই মানুষগুলোর সামনে দাঁড়ানোর মতো সাহস, যোগ্যতা কিছুই তো নেই। বড্ড অপরাধী লাগছে আজ নিজেকে। মা, তোমার এই ছেলেটাকে ক্ষমা করে দিও, অদিতি।।। জানি না, তোমায় কিছু বলার যোগ্যতা, ভাষা আমার আছে কী না। আজ নিজেকেই যেন ঘেন্না করছে। পারিজাতের অন্তত যেন কিছু না হয় ঠাকুর, ঐটুকু দেখো।”

আর কোন কিছু লেখা নেই , কিন্তু কে এই পারিজাত? কিছু যে আর মাথায় ঢুকছে না অদিতির। আজ ওর চোখের জলের কারণ সত্যিই নীল, স্বীকার করতে কোন দ্বিধা নেই ওর, নীলের মনে এখানে থাকাকালীন না হোক, কিন্তু এই অসীম দূরত্ব থেকেও যে অদিতিই ছিল বারবার নীলের মনে, নীল যে নিজের ভুলে সত্যিই অনুতপ্ত তা তো আর অস্বীকার করা যায় না। নীল ফিরতে চেয়েও পারেনি, স্বেচ্ছায় ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে, আর বহু প্রতীক্ষার পর এই বাড়িও ক্লান্ত হয়ে ওর জন্য দিন গোনা বন্ধ করে দিয়েছে।।। অদিতিকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে নীলকে যেতে দিয়েছে।।। নীলকে আঁকড়াতে গেলে অদিতিকে যেতে দিতে হতো ।।। তখন তো পরিস্থিতি এটাই ছিল, কিন্তু এখন? এখন কেন নীল তাহলে চলে যাচ্ছে? কিন্তু বারবার কোথাও যেন অদিতির মনে হচ্ছে, কোথাও একটা কিছু বেসুরো ঠেকছে, কিছু একটা যেন মিলছে না – ভাবতে ভাবতেই হাতে পড়ল কাগজটা। এটা তো চিঠি, কোন ডায়েরীর পাতা নয়, একদমই পুরোনোও নয়। মানে সবে লেখা, চিঠিটাতে অদিতিকে উদ্দেশ্য করেই লেখা কিছু। বেশ লম্বা চিঠি।

অদিতি,
তোমার সাথে আমার এর আগে কোনদিনই দেখা হয়নি, কিন্তু ভাই… মানে নীল-এর থেকে তুমি, তোমাদের বাড়ি, তোমাদের পুরো পরিবারের ব্যাপারে অনেক গল্প শুনেছি অনেক, এই পাঁচ বছর ধরে, কী তারও বেশী একটু, আমরা হরিহর আত্মা, নীল আর আমি কোনদিন এত ভালো বন্ধু হয়ে যাব সত্যিই ভাবিনি। আমাদের প্রথম দেখা অফিসে, অফিসে আমাদের আরো মিলটা হয়েছিল বাঙালী বলে। তারপর আলাপ পরিচয় বাড়তে বাড়তে দেখলাম, এই ছেলেটার সাথে আমি সত্যিই বিদেশ-বিভুঁইয়ে একা থেকেও আর একা নই। নীলও তাই, পুরো একা। ব্যস, আর কী, জুড়ে গেল আমাদের রোজনামচা একই খাতে। নীলের থেকে এই মুখুজ্জ্যে পরিবারের ব্যাপারে এত শুনেছি যে বাড়ির প্রতিটা কোণ, কোন বাঁকের পর কোন জানলা, সবটাই যেন আমার হাতের নাগালে। আজ একটা কথা তোমায় বলছি অদিতি, ও বিদেশে ছিল ঠিকই, কিন্তু ওর মন, ওর ভাবনা এখানেই পড়ে থাকত সবসময়।
ও ভাল ছিল না তোমাদের ছেড়ে অদিতি, আমি তো সবটুকুই জানি। এই বাড়ি, পরিবার, তোমায় ছেড়ে স্বার্থপরের মতো চলে আসা, এখানে শুধু নিজের স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ছুটতে সবকিছু, সবাইকে ভুলিয়ে দেওয়া, জেসিকার সাথে একটা ভুলভাল রিলেশনে জড়ানো।।। এই সবকিছু ভুল, ভুল কেন বলছি, অন্যায়, চরম অন্যায় করেছে ও, কিন্তু নিজের ভুলটা বোঝার পর থেকে আত্মগ্লানিতে পোড়া একটা মানুষের যন্ত্রনাটা দেখেছি আমি, আমি তো সবসময় ছিলাম ওর পাশে। বারবার এটাই বলতো, আমার ঐ মানুষগুলোর সামনে দাঁড়ানোর মুখ নেই, কিন্তু ক্ষমা না চাইলে শান্তি পাব না মরেও। তখন কে জানত এরকম কিছু ভেবে রেখেছেন মা? প্রথম এক্সিডেন্ট টায় আমি মরলে মরতাম, আমার আছেই বা কে, কিন্তু দ্বিতীয় এক্সিডেন্টটায় সবকিছু এভাবে ওলটপালট হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। ছোট থেকেই গলার স্বর পাল্টে বলা, অভিনয়, এসবে যথেষ্ট দক্ষ ছিলাম। হ্যাঁ অদিতি, তুমি ঠিকই ধরেছ, আমি তোমার নীল নই, তোমার নীলের সেই প্রাণের বন্ধু পারিজাত, যার কথা তুমি নীলের ডায়রীতে বারবার পেয়েছ। প্রথম আকসিডেন্টের পর আমার শরীরের তিনটে অঙ্গ-র রিপ্লেসমেন্ট দরকার ছিল, নয়তো আমি বাঁচতাম না, দ্বিতীয় একসিডেন্টে, যেদিন নীল আমাকেই দেখতে হসপিটাল আসছিল সেদিনই…হ্যাঁ, একই হসপিটালে এডমিট ছিলাম আমরা দুজন। আমি ফিরলাম, ও ফিরল না আর। ওর ব্রেন ডেথ হয়ে গেছিল, আর আজ আমি বেঁচে নীলের জন্যই। বলতে পারো, নীল আজও আমার মধ্যে দিয়েই বেঁচে আছে। ওর চোখ, ওর হৃদয় দিয়েই পৃথিবীটা দেখছি,তাই ডাক্তার যখন আমার ছিন্নভিন্ন মুখটা সারিয়ে তুলতে একটা ছবি চাইল, আমি আর দুবার ভাবিনি, যে কাজ নীল করে যেতে পারেনি, ওর সমস্ত না বলা কথা, ওর না পাওয়াগুলো, ওর ক্ষমা প্রার্থনা এগুলো আমিই করে গেলাম, ওর হয়ে।
না, আমার কোন ক্যান্সার হয়নি, যতই অভিনয়ে পারদর্শী হয়, যতই চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হোক, দুজন মানুষকে যতই এক বানাক তারা, মা-র চোখকে ফাঁকি দেবে কার সাধ্যি, তাই মিথ্যের আশ্রয় আমায় নিতেই হয়েছিল, আর কোন উপায় আমার ছিল না। কিন্তু আমি জানি তুমি ধরতে পারছিলে অসঙ্গতিটা, তোমার মন তো অন্য কথা বলবেই। আর তারপর ঐ আমার ঘাড়ের কাছের জরুল টা , আমার জন্মদাগ। ব্যস, আর কী।
আমার একটা অনুরোধই রেখো, ক্ষমা করে দিও নীলকে। ও তোমায় ভালবাসতো, হয়তো এখনো বাসে। শুধু বুঝতে দেরী করে ফেলেছিল সেটা বড্ড, আর অত অন্যায়-এর বোঝায় ভালবাসাটা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আমি ওর অসম্পূর্ণ কাজটুকু সম্পূর্ণ করে গেলাম। তুমি ছাড়া আর কেউ কিছু জানে না, না জানাই থাক, এই অনুরোধটা রেখো। সময়ের সাথে সাথে নীলের স্মৃতি আরও একবার মুছে যাবে এবাড়ির মানুষের মন থেকে। সব জানলেও এখন তার সঠিক সময় নয়।
সবশেষে, একটাই আক্ষেপ, নীল কোনদিন জানলোই না পাখির অস্তিত্ব, জানলে হয়তো…
আমি জানি অদিতি, তুমি নীলের পরিবারকে ভাল রাখবে, তুমি নিজেও ভাল থেকো। তাহলেই নীলও ভাল থাকবে।

-পারিজাত।

বাইরে ট্যাক্সির আওয়াজ, দুপুর গড়িয়ে কখন বিকেল নেমে গেছে, খেয়ালও করেনি অদিতি। পারিজাত-এর ট্যাক্সিটা বেরিয়ে গেল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে, চলে গেল পারিজাতের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা নীল। আর কখনো ফিরবে না এসব।।। আজ এত বছর পর কান্নায় ভেঙে পড়ল অদিতি, নীলের জন্য, ওর নীলের জন্য। বাইরে তখন বিসর্জনের ঢাক বাজছে।

।।সমাপ্ত।।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

সাঁঝের শিশির (অন্তিম পর্ব)

।। ১।।   ( বেশ কিছুদিন পর ) সারা বাড়িতে এই লাগোয়া বারান্দাটাই টিকলির সবথেকে প্রিয়। সামনে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে বাগান মতো, তারপর রাস্তা। আগে

Read More »

সাঁঝের শিশির (ষষ্ঠ পর্ব)

।।১।। (কিছুদিন পর) “আরে আমি নিজেই ফিরে যাব, রতনদা তো আছেই, আবার তুই আসবি কেন?” “তুই তো আচ্ছা হাঁদা, বলছি রতনদাকে ফেরত পাঠাতে, আর এবার

Read More »

সাঁঝের শিশির (পঞ্চম পর্ব)

।।১।। “এবার বিশ্বাস হল তো, মেয়েটা খামোখা কেন মিথ্যে বলবে বলো তো? আর আমি তো প্রথমেই দেখেছিলাম, তোমায় বলেওছিলাম, তুমিই আমার কথা বিশ্বাস করোনি, এখন

Read More »

সাঁঝের শিশির (তৃতীয় পর্ব)

“তুমি একবার আমার কথাটা শোনো, আচ্ছা আমার মিথ্যে বলে কি লাভ বলতো? আর তোমার মনে হয় আমি এই অবস্থাতেও মিথ্যে কথা বলব এখনও?” “সত্যি মিথ্যের

Read More »

সাঁঝের শিশির (দ্বিতীয় পর্ব)

।।১।। “কি গো টিকলিরাণী, খাও। কখন থেকে খাবারের থালা নিয়ে বসে আছ? তোমার প্রিয় পাস্তা করে দিলুম যে, ভাল হয়নি?” অন্যমনস্ক টিকলি সামনের বাগানটার দিকে

Read More »

Share with