পাঁচ ঘন্টা পর (তৃতীয় পর্ব)

ধড়াস করে উঠল মৌ-এর বুকটা, পাপানের কথা শুনে। ক’দিন আগেই সরস্বতী পূজো গেছল, শাড়ী পরে অঞ্জলি, স্কুলে স্কুলে যাওয়া, সবই আগের মতন হয়েছিল বটে, কিন্তু তাও যেন রক্তলাল পলাশ বারবার ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল প্রেমের লাল আবির। তাই অন্যবারের তুলনায় এবারের সরস্বতী পুজোটা বেশীই রঙ্গীন ছিল বটে। সায়নদের স্কুলেও গেছিল মৌ ওর বন্ধুদের সাথে, পরনের হলুদ শাড়ী, অনভ্যস্ত হাতে বারবার কুঁচি আঁচল সামলে জেরবার হাতদুটো। অপটু হাতে খোঁপাটা বাঁধা, চোখের কোণে বহু যত্নে আঁকা কাজল, কপালে টিপ, আর মেজদি ভাই-এর থেকে ধার করা কানের ঝুমকো, গলার হার, ঠোঁটের রঙ।

অঞ্জলি দিয়ে সব সামলে সুমলে ট্রামরাস্তা ধরে যখন সায়নদের স্কুলে পৌঁছেছিল তখন বেলা ১টা বেজে গেছে। সায়নদা ওর বন্ধুদের সাথে মন্ডপের পাশে আড্ডায় ব্যস্ত, চোখটা যেন গেটের কাছেই, হয়তো অপেক্ষাই করছিল। মৌ পৌঁছাতেই সায়নদার ঐ দৃষ্টি অন্তত সেই কথাই বলছিল। না, মৌ-এর সাথে আজ অবধি সায়নের কথা হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটা, তাও শুধু প্রয়োজনে। মৌ-এর মনে যা কিছু আছে তা সায়নের কান অবধি পৌঁছানোর দূর দুরান্তেও কোন সম্ভাবনা নেই। তাহলে কী সায়নের মনেও? যদি তাই-ই হয়।।। মৌ-এর ভাবনা থামিয়ে সায়ন সামনে এসে হাজির, একদম মৌ-এর সামনে, পরনে সাদা হলুদ পাঞ্জাবী, চোখে চশমা, হালকা গোঁফের আভা, আর উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটো।।। মৌ-এর বুকের মধ্যে যেন ধড়াস ধড়াস করে কেউ হাতুড়ি পিটছে।

-“সামনে মাধ্যমিক, তাই আর এখন পড়তে যাব না, স্যার কেও বলে দিয়েছি…আর মাধ্যমিকের পর তোর সাথে কথা আছে। অপেক্ষা করিস।”

সায়ন কথাটা শেষ করেই আর কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে, চলে গেছল সেদিন।

‘কী বলবে?’ এই একটি প্রশ্ন মৌ শয়নে স্বপনে মননে দিনরাত ভেবে চলেছে। ভাল কিছু নাকি খারাপ? ও কী বুঝে গেছে? নাকি ও-ও?

এই সবের মাঝেই মাধ্যমিক হয়ে গেছে, মৌ-এর ব্যস্ততা আরও বেড়েছে, কারণ এইবার মৌ-এর ক্লাস টেন, এরপর মৌ মাধ্যমিক দেবে। এতকিছুর ভিড়ে কথাটা চাপা পড়ে গেছল, কিন্তু অপেক্ষাটা চাপা পড়েনি।

না, মাধ্যমিকের পর সায়নদা কিছুই বলেনি, বেশ কিছুদিন এখানে ছিলও না হয়তো।

তারপর আজ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ… সায়নদার একটা দুর্ধর্ষ রেজাল্ট।।। আর আজ সন্ধ্যেয় হঠাৎ করে পাপানের হাত দিয়ে এই চিঠিটা।

সায়নদা নাকি ওদের স্কুলে ফার্স্ট হয়েছে, জেলাতেও প্রথম সারিতে নাম থাকতে পারে, সেটা শিওর না এখনও। বাবাকে নিজের ছাত্রের জন্য এত খুশী কতদিন পর দেখা গেল কে জানে। কিন্তু এই সব কিছুর পর…চিঠিটা হাতে নিয়ে ছাদে চিলেকোঠার ঘরে দৌড় লাগল মৌ। খামটা ছিঁড়ে চিঠিটা নিজের চোখে না দেখা অবধি… এরকম টেনশন এর আগে কখনো হয়েছে বলে মনে নেই মৌ-এর।

ছাদে এই সময় বড় একটা কেউ আসে না, দুপুরের মধ্যে জামাকাপড় নিয়ে চলে যায়। চিলেকোঠায় গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বসল মৌ। নাহ, আর এক মুহূর্তও দেরী না, তাড়াতাড়ি সাদা খামটা ছিঁড়ে চিঠিটা বের করতে উদ্যত হলো মৌ। খামের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল লাল রঙা হার্ট শেপের একটা কাগজ। তার মানে…

আলোর থেকেও দ্রুত গতিতে চিঠিটা পড়ে শেষ করল মৌ। হ্যাঁ, সায়নদা মৌকে প্রেম নিবেদন করেছে অবশেষে । বহু প্রতীক্ষিত এই মুহূর্ত এভাবে সামনে চলে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি মৌ। চিঠিটা শেষ করে একটা যেন ঘোরের মধ্যে কিছুক্ষণ রইল মৌ। কী সুন্দর যত্ন করে লেখা, হাতের লেখাটাও কী সুন্দর। আবার একবার, বারবার পড়ল চিঠিটা মৌ। ওর মুখে কখন যে ঐ লাজুক হাসিটা উঁকি দিয়েছে, শেষ বেলার সূর্যাস্তের লাল আভা যেন অনেকটা প্রেমের রঙ ছড়িয়ে দিয়ে গেছে অবলীলায়। ওকেও তো এই চিঠির উত্তর দিতে হবে। ওকেও তো বড় যত্নে, সবার চোখের আড়ালে একটা চিঠি লিখতে হবে, শুধুই সায়নের জন্য। বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে, হঠাৎই। চিলেকোঠার জানলা দিয়ে বল্লভদের বাড়ীতে ঐ জানালাটার দিকে তাকাল মৌ। দেখে নিজের মনেই হাসল খানিক। খামে কাগজ ভরে লুকিয়ে নিজের ঘরের দিকে এগোল মৌ।

***************

চোখটা বন্ধ ছিল মৌ-এর, তবু আর্দ্র। এভাবে কাউকে কখনো বলতে হবে নিজের সম্পর্কের স্ট্যাটাস স্বপ্নেও ভাবেনি ও। সেই কিশোরী বেলার প্রেমকে পরিণয়ের পরিণতি দিতে পারার সৌভাগ্য ক’জনেরই বা হয়? মৌ-এর হয়েছিল। না, কোনরকম স্ট্রাগেল, অশান্তি, দুই পরিবারের সমস্যা কোনকিছুই পেরোতে হয়নি ওদের। দু’বাড়ি থেকেই প্রথম থেকেই পরিচয় থাকার দরুণ না তো কোন সমস্যা ছিল, না কোন বাধা বিপত্তি। বড় সহজেই, অনেক আদরে, যত্নে, ভালবাসায় নিজের ভালবাসার সাথে সংসারটা শুরু করেছিল মৌ। সবকিছু তো ঠিকই ছিল, সায়ন একজন স্বনামধন্য ডাক্তার কলকাতার, মৌও নিজের কেরিয়ার নিয়ে খুশী, সবই ঠিক ছিল, কিন্তু ছন্দপতনটা হলো কোথায়?

সত্যিই তো, আজ অবধি কখনো মৌ ভেবেই দেখেনি, কোথা থেকে উৎপত্তি হলো সমস্যার? হ্যাঁ, সায়ন তো সবদিনই ব্যস্ত ছিলই, প্রথম থেকেই। একজন ডাক্তারের সামাজিক বা নিজস্ব জীবন বলে কিই বা থাকে? পুরোটাই তো নিবেদিত, ডাক্তারী ডিগ্রী অর্জনের পর এই কথাটা তো প্রথমেই ওকে বলেছিল সায়ন। ও-ও তো সেটার সাথে বহু আগে থেকেই অভ্যস্ত ছিল, তাহলে সময় না দেওয়াটা তো কোন কারণ নয়। ওর বেশ মনে আছে, বিয়ের পর ওদের প্রথম জন্মদিনে কোন বিশাল রেস্তোরায় নিয়ে গিয়ে ট্রিট দেয়নি সায়ন, বরং নিজের হাতে রান্না করে সারাদিন ভুলে যাওয়ার নাম করে সারপ্রাইজ দিয়েছিল। বাইরের খাবারের থেকে সায়নের হাতে মৌ-এর জন্য বানানো ওর প্রিয় চিকেনটাই তাই অনেক বেশী ভালবাসার ছিল যেন, অনেক যত্ন জড়িয়েছিল তাতে। তারপর ধীরে ধীরে ব্যস্ততা বাড়তে লাগল, কই আগেরবার তো ওর মনেই ছিল না। পরেরদিন তার কম্পেন্সেশন হিসাবে দামী গিফট, পার্টি, মৌ তো অভ্যস্ত নয় এসবে। তাই ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিল না,ওর ছোটবেলা থেকে চেনা প্রথম প্রেমটা কবে এত বেশী ব্যস্ত হয়ে গেল? কতদিন এমন হয়েছে ওদের মধ্যে ন্যূনতম কথাটুকুও হয়নি, আর সেটা খেয়ালও করেনি সায়ন, যেন সব ঠিকই আছে। দূরত্বের শুরু হয়তো ওখানেই, সায়ন নিজে ডাক্তার হয়েও কেন ওরা নিজেরা নিঃসন্তান। ও যদি সত্যিই চেষ্টা করত তাহলে কী।।। নাহ, ও কোনদিনও মৌ-এর প্রব্লেম জেনেও মৌকে এ নিয়ে বলেনি কিছু, কিন্তু মৌ তো বুঝতে পারতো, ও সায়নের জীবনের একটা বোঝা, একটা বাড়তি দায়িত্ব ছাড়া যেন আর কিছুই না। হ্যাঁ, রাত্রে আর অপেক্ষা করত না মৌ সায়নের জন্য, সায়নই বারণ করত, কিন্তু ঘুমোনোর আগে মৌ-এর কপালে একবার হাত রাখত সায়ন, যে সব ঠিক আছে তো? ব্যস ওটুকুই। আর যেদিন প্রথম মৌ জানল, মৌ-এর কারণেই ওরা কখনো বাবা মা হতে পারবে না, মৌ-এর কান্না যখন ঠেলে – উগরে বেরিয়ে আসছিল বারবার, ছিল পাশে সায়ন। কিন্তু কতক্ষণ ? ওর মৌ-এর পাশে দু’দন্ড বসার সময় কোথায়?

আরও চেষ্টা না করে বরং মৌ-কে বুঝিয়েছিল ঠিক নাকি অন্য উপায় বের হবে। এত অনাথ বাচ্চা আছে তাদের একজনকেই নাহয়…

এত অপমান, এত অভাব – না, অর্থের না, ভালবাসার – কীভাবে মানত মৌ। পারছিল না, নাহলে আজ ওর জীবনটাও সামনের ভদ্রলোক ভদ্রমহিলার মতো হতে পারত। আজও তো অফুরান ভালবাসা মানুষদুটোর মধ্যে। এরাও তো নিঃসন্তান, দিব্যি তো আছে। মৌ-ও তাই, ও-ও পারত।।। হ্যাঁ, ঠিক তাইই তো, ওরাও তো পারত যা নেই, যা পাওয়ার নয় তা নিয়ে না ভেবে যা আছে তা নিয়ে ভাল থাকতে, ঠিক এঁনাদের মতন। সায়নও তো তাই বলেছিল।।। তাহলে কী মৌ-ই নিজের রাগে, দুঃখে, এতটাই কাতর, এতটাই অন্ধ ছিল যে সায়নের ভালবাসার এই রূপগুলোকে চিনতেই পারেনি ও। ভালবাসার রূপ, ধরন, তো বয়সের সাথে সাথে বদলায়। এটাই তো নিয়ম, এটাই তো জরুরী। সায়নও তাই করেছে, মৌকে ওর না-পাওয়াগুলো ভুলতে বলেছিল। হ্যাঁ, ওর পাশে ফিজিক্যালি না থাকতে পারুক সবসময়, ফোন করত, ও ঠিক আছে কী না। মৌ-ই তো আর ফোন ধরত না সায়নের। যে সায়নের সাথে কথা না বললে ওর শান্তি হতো না, সেই মানুষটাই ফোন করলে ওর এত রাগ কেন হতো? যেন ওর মধ্যেকার শূন্যতা , অপূর্ণতাটাকে বারবার সায়ন খোঁচা মেরে সামনে আনছে, এটাই তো ভেবে এসেছে মৌ। তাই নিজেই দায়িত্ব নিয়ে সায়নকে নিজের থেকে দূরে পাঠিয়েছে। কই, এভাবে তো কখনো ভাবেনি তো ও। সায়নও তো ফোন করে ওর খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছিল সামনের মানুষটার মতই। সায়নও ওর জন্য চিকেন রাঁধতে শিখেছিল, সায়নও মৌ-এর পছন্দের জিনিস আনার কথা সচরাচর ভুলতো না, এই মানুষটার মতোই।।। বরং সায়নের এই প্রতিটা কাজই মৌ-এর মধ্যে ভাললাগার বদলে বিরক্তির সঞ্চার করেছিল|আজ মনে হচ্ছে মৌ-এর যে মৌ-ই ভুল করেনি তো? একজন তৃতীয় পুরুষকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দেখে আজ মৌ-এর এটাই মনে হচ্ছে, মৌ-এরই ভুল হচ্ছে হয়তো। যেটা এতদিন এত মানুষ, সায়ন নিজে বোঝানোর পরও মনে হয়নি কখনও, তাহলে? এখন কী? এই ডিভোর্সটাও তো মৌ-ই চেয়েছে সায়নের থেকে। ও-ই কোর্টে কেস করেছে, সায়ন তো দিতেই চায়নি, তাহলে?

আজ সায়নের ওর প্রতি ব্যবহারে ও বিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিয়েটা ভাঙার ডিসিশন নিয়েছে। ওদের দুজনের মধ্যে অনেক না পাওয়া অনেক খারাপ মুহূর্তগুলো সায়নের প্রতি ওর অনুভূতিটাকে ওর কাছে বড় বিরক্তিকর করে তুলেছে।

মৌ-এর ভাবনা ভেঙে গেল ভদ্রলোকটির কথায় 

“জিজ্ঞেস করলাম বলে কিছু মনে করো না মা, আমি আসলে…” বলতে বলতেই ট্রেন থামল পরের স্টেশনে।

মৌ আর কিছু না বলে শুধু অভিব্যক্তিতে বোঝাল, সব যখন শেষ তখন আর এত বাক্যব্যয়-এ কী লাভ?

মৌ-এর কথা শেষ না হতেই সামনের সীটে উঠলেন পরের স্টেশন থেকে এক দম্পতি। অবাঙালি দম্পতি বেশ কিছু মালপত্র নিয়ে উঠলেন সামনের সীটে। লাগেজগুলো উপরের বাংকে তুলতে গিয়েই ঘটল ঘটনাটা।

সিট্ এর সামনে রাখা সমীরবাবুর টিফিনবক্সটায় লাগল ধাক্কাটা। কিছু বুঝে উঠে সামলানোর আগেই টিফিন কৌটটা ধাক্কা খেয়ে পড়ল মেঝেতে। টিফিন কৌটায় যত্নে বানানো সমীরবাবুর রান্না তখন ট্রেনের কোচের মেঝেয় ছড়িয়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় কোচের সবাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে, সমীরবাবুও। উল্টোদিকে বসা মৌ একবার সমীরবাবুর চোখের দিকে তাকালো। এরকম শূন্য দৃষ্টি কখনো আগে চোখে পড়েছে বলে মনে পড়ে না। শুধু কিছু খাবার নয়, একটা মানুষের যত্ন, ভালবাসা। ঐ সাধারণ খাবারটায় লুকিয়েছিল অনেকটা মান ভাঙানোর জন্য যত্নে বাঁচানো প্রেম।

বৃদ্ধ মানুষটার পাওয়ারের চশমা পেরিয়েও চোখের কোণের জলটা চোখ এড়াল না মৌ-এর। বড্ড খারাপ লাগছিল মৌ-এর। অনেক ক্ষমা চাওয়ার পালা চললেও এই ক্ষতিগুলোর কোন ক্ষতিপূরণ হয়না হয়তো।

ভদ্রলোকের অশক্ত জীর্ণ চেহারা, শীর্ণ হাতে কৌটোটা তুলে নিলেন। পাশের দম্পতিকে ক্ষমা করা ছাড়া আর উপায়ই বা কী। মৌ-ও সাহায্য করল মানুষটাকে, শুধু বারবার মানুষটার মুখের দিকে তাকাচ্ছিল ও। বড্ড কষ্ট হচ্ছিল মৌ-এর, আর তার সাথে সাথে আজ এটাও বুঝল, সময়ের সাথে সাথে ভালবাসা সবসময়ই হারিয়ে যায় না, যাদের হারায়, তারা হারাতে দেয় বলেই হারায়। দুটো মানুষের মাঝের দূরত্ব কখনোই তাদের শারীরিক দূরত্বের জন্য আসে না, যারা এই কারণটাকে দায়ী করে তারা মিথ্যে বলে, ভুল বলে, নিজের ভুল বোঝাবুঝি, সুযোগ না দেওয়া একে অপরকে, ইগো, এগুলো চোখেই পড়ে না, যতক্ষণ না তৃতীয় ব্যক্তির সাপেক্ষে সেগুলো চোখের সামনে আসে।

শেষবার, মৌ-এর রাগ ভাঙাতে সায়নও তো বানিয়ে এনেছিল খুব সাধারণ পায়েস, কিন্তু, মৌ তা ছুঁয়েও দেখেনি, খেতে ইচ্ছে করছে না বলে এড়িয়ে গেছিল। আর কিছু শব্দ বিনিময় হয়নি ওদের মধ্যে, সায়নের ওপর প্রচন্ড রেগেছিল মৌ। মৌকে ওই যন্ত্রণার মধ্যে ফেলেই ওকে দু’দিনের জন্য শহরের বাইরে যেতে হয়েছিল এক পেশেন্টকে বাঁচাতেই। আর নিজের সাথে একাই লড়েছিল মৌ| কে ভুল কে ঠিক এখানে, ওদের দুজনের তো অজানা, শুধু দুজনের মধ্যে দূরত্বটা বাড়তে বাড়তে অসীমে চলে গেছিল| সায়নের বারংবার চেষ্টার আর কোনো ফল হয়নি সেদিন. আচ্ছা, সেদিন কে দোষী ছিল? সায়নেরও কী সেদিন এই মানুষটার মতোই কষ্ট হয়েছিল? রাগে দুঃখে অন্ধ মৌ যা ফিরেও দেখেনি, নাকি এর থেকেও বেশী? প্রত্যাখ্যানটা তো তৃতীয় কোন ব্যক্তি না, মৌ করেছিল| তাহলে?

খড়্গপুর স্টেশন এসে গেছে।

সামনের ভদ্রলোকের নামার পালা, আগের মিশুকে হাসি খুশী মানুষটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। নামার আগে মৌ-এর মাথায় হাত রাখলেন, মৌ-এর বড্ড ভাল লাগল। যা কোনদিন মনে হয়নি, যা কোনদিন ওর ভাবনায় আসতে পারে বলে মনেই করেনি, আজ কোন অজানা কারণেই যেন বারবার ওগুলো প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল মৌ-এর মনে।মানুষটা যত না কথা বলে গেলেন, তার থেকে বেশী যেন ওনার চোখ, অনেক বেশী কথা বলে গেল। স্টেশনের ব্যস্ততা, ধুলো, কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়, কেনাবেচা, দরদাম, হকার, সবকিছু যেন কান থেকে ফিকে হয়ে যাচ্ছিল আসতে আসতে। কিছু কথা যেন বলা হলো না, কিছু একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো? খুব বেশী দেরী করে ফেলল কী? ট্রেন ছেড়ে দিল আবার। কয়েক ঘন্টার সাক্ষাৎ, কিছু মুহূর্ত, যেন অনেক অজানা, অচেনা প্রশ্নগুলোর মাঝে দাঁড় করিয়ে দিল মৌ-কে। উনুনের ধোঁয়া ঝাপসা করে দিল চোখ, একবার কী… সায়নকে একটিবার ফোন করবে? নিজের মনের মধ্যে ওঠা ঝড়টা বড় বেসামাল করে দিচ্ছে যে আজ…ট্রেন তখন দ্রুতগতিতে।।। আসছে নিজের শহর।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

সাঁঝের শিশির (অন্তিম পর্ব)

।। ১।।   ( বেশ কিছুদিন পর ) সারা বাড়িতে এই লাগোয়া বারান্দাটাই টিকলির সবথেকে প্রিয়। সামনে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে বাগান মতো, তারপর রাস্তা। আগে

Read More »

সাঁঝের শিশির (ষষ্ঠ পর্ব)

।।১।। (কিছুদিন পর) “আরে আমি নিজেই ফিরে যাব, রতনদা তো আছেই, আবার তুই আসবি কেন?” “তুই তো আচ্ছা হাঁদা, বলছি রতনদাকে ফেরত পাঠাতে, আর এবার

Read More »

সাঁঝের শিশির (পঞ্চম পর্ব)

।।১।। “এবার বিশ্বাস হল তো, মেয়েটা খামোখা কেন মিথ্যে বলবে বলো তো? আর আমি তো প্রথমেই দেখেছিলাম, তোমায় বলেওছিলাম, তুমিই আমার কথা বিশ্বাস করোনি, এখন

Read More »

সাঁঝের শিশির (তৃতীয় পর্ব)

“তুমি একবার আমার কথাটা শোনো, আচ্ছা আমার মিথ্যে বলে কি লাভ বলতো? আর তোমার মনে হয় আমি এই অবস্থাতেও মিথ্যে কথা বলব এখনও?” “সত্যি মিথ্যের

Read More »

সাঁঝের শিশির (দ্বিতীয় পর্ব)

।।১।। “কি গো টিকলিরাণী, খাও। কখন থেকে খাবারের থালা নিয়ে বসে আছ? তোমার প্রিয় পাস্তা করে দিলুম যে, ভাল হয়নি?” অন্যমনস্ক টিকলি সামনের বাগানটার দিকে

Read More »

Share with