সাঁঝের শিশির (ষষ্ঠ পর্ব)

।।১।।

(কিছুদিন পর)

“আরে আমি নিজেই ফিরে যাব, রতনদা তো আছেই, আবার তুই আসবি কেন?”

“তুই তো আচ্ছা হাঁদা, বলছি রতনদাকে ফেরত পাঠাতে, আর এবার আমি দেরী করব না, টাইমের আগেই পৌঁছে যাব, আর ভুল হবে না, আরেকবার সুযোগ তো দে।”

“উফফ, আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে পাঁচটার মধ্যে আসবি কিন্তু, ওকে?”

“ওকে ম্যাডাম, স্থান?”

স্থানটা বলতে গিয়ে খানিক আমতা আমতা করে বলল টিকলি, “ঐ সি.আর.এম -এর কাছে যে চৌমাথাটা, ওখানেই দাঁড়াস। পৌঁছে যাব।”

“সি.আর.এম হসপিটাল?”

“হুম। আচ্ছা এখন রাখছি, বিকেলে দেখা হবে।” রাজদীপকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা রেখে দিল টিকলি। আজ একবার শিউলির কাছে যাবে দেখা করতে। মনটা ছটফট করছে ছোট্ট মেয়েটার জন্য। সেদিন দাদাই এ ঘর থেকে যাওয়ার পর থেকে অনেকবার ফোন করেছে অভিমন্যু। আর ফোন ধরেনি টিকলি। ও জানে এটা অভদ্রতা ছাড়া কিছু না, কিন্তু মা আর দাদাই-এর কথাগুলো কানে ঢোকার পর থেকে ওর নিজের মনেই প্রশ্ন জাগতে শুরু করে দিয়েছে। সত্যিই কি ও, ওর আর অভিমন্যুর মধ্যেকার সম্পর্কটাকে জটিল করছে, নাকি মা আর দাদাই আসলে জটিল করে ভাবছে সবটা। রাজদীপ ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়, সেটা ও খুব ভাল করেই জানে। আর ও আর কাউকে চায়ও না বিয়ে করতে। যেদিন থেকে ন্যূনতম বোধ বুদ্ধি হয়েছে, ও এটাই জেনে এসেছে, রাজদীপই ওর জীবনসঙ্গী হবে। তাহলে আজ সব জেনেও মা আর দাদাই এই কথাগুলো কেন বলছে? এর থেকে ভাল অভিমন্যুর সাথে সম্পর্ক না রাখা। ক’দিনের তো আলাপ, সম্পর্ক না রাখলেই হল। বেকার নিজের জীবনে আর কোন জটিলতা বাড়াতে চায় না টিকলি। নিজের গন্ডির বাইরে ও-ই হয়তো একটু বেশিই মিশেছিল, সেই জন্যই…নাহ, সমস্যা বাড়ার আগেই সেটাকে সমূলে শেষ করে দেবে ও। ও তো জানে খুব ভালভাবে টিকলি কোথা থেকে বিলং করে। ও এরকম বোকামো করতে পারে না। টিকলির জন্য অভিমন্যুর কাছে কোন ভুল ইঙ্গিত পৌঁছাক বা অভিমন্যু কষ্ট পাক, সেটা টিকলি কখনোই চায় না। তার থেকে বরং দূরত্ব বজায় রাখাটাই শ্রেয়। ফোনটা নিয়ে রাজদীপের একটা ছবি ওয়ালপেপার সেট করে দিল টিকলি।

*****

“হ্যালো, মা। হ্যাঁ, ঘুম হল নাকি? আজ তো রোববার, বেরোবে কখন?”

“—“

“আচ্ছা, হুম সবাই ঠিক আছে, আমি এই একটু বেরলাম, শিউলির সাথে একটু দেখা করতে যাব, আজ সকাল থেকেই খুব মনে পড়ছে ওর মুখটা।”

“—“

“না, আর কারও সাথে তো কোন কথা হয়নি, জানি না তাই, আমি একাই যাচ্ছি, ওখান থেকে বেরিয়ে রাজদীপের সাথে একটু বেরবো। তুমি তখন ফোন কর তো, হসপিটালের মধ্যে কিভাবে ফোন করব, তাই ফোন করে নিলাম।”

“—“

“হুম, সাবধানে থেকো তুমিও। রাখলাম।”

ফোনটা রাখল টিকলি। চলেই এসেছে প্রায়।

*****

শিউলির ছোট্ট হাতটায় হাত রেখেছিল টিকলি। শারীরিকের সাথে সাথে মানসিক বিপর্যয়টাও অনেক তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠেছে এই বাচ্চা মেয়েটা। এই ক’দিনেই টিকলিকে বেশ চিনে গেছে শিউলি। ওকে দেখলেই একগাল হাসি। মুখ চোখটাও আগের থেকে অনেক ফ্রেশ। কাল পরশুর মধ্যে ছেড়েও দেবে। ইনফেকশনটাও নেই আর। শিউলি টিকলিকে ‘সুন্দর দিদি’ বলে ডাকে। ছোট্ট মেয়েটার মাথা থেকে এরকম অদ্ভুত নাম কিভাবে বেরোল জানা নেই টিকলির। ওর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দেওয়ার সময় ওর নিষ্পাপ চোখ দুটো দেখে বুকের ভিতর অদ্ভুত একটা প্রশান্তি জাগছিল। যার কারণে এই নিষ্পাপ চোখদুটো আজও সচল, জীবন্ত, তার প্রতি শ্রদ্ধায় নতজানু হচ্ছিল মনটা বারংবার, এই সত্যিটা তো আর অস্বীকার করতে পারে না টিকলি। শিউলির সাথে কথা বলে বেরিয়ে এল যখন টিকলি, তখন ৪:৩০টা বেজে গেছে, করিডর পেরিয়ে হসপিটালের গেটে পৌঁছাল টিকলি। ফোনের টাওয়ারটা হসপিটালে ঢুকলেই উড়ে যায় পুরো। গেটের সামনে এসে রাজদীপের ফোনে ট্রাই করছিল টিকলি, তখনই ওর চারপাশটা যেন থমকে গেল এক নিমেষে। রাস্তা পেরিয়ে উল্টোদিকে অভিমন্যু। রাস্তাটা পার হয়ে এই দিকেই আসছে। না টিকলির চিনতে দূর থেকেও এতটুকু অসুবিধা হয়নি। সেই এলোমেলো মানুষটা একইরকম, গালে হালকা দাড়ি এখন চাপদাড়ির পর্যায়ে প্রায়, পরনে একটা কালো কুর্তা আর জিন্স, হাতে ঘড়ি, চোখে চশমা। কপাল ছাপিয়ে উপচে পড়া চুলগুলোকে হাত দিয়ে দায়সারা গোছের করেই ব্যাকব্রাশ করে নিল অভিমন্যু। টিকলি চেয়েও যেন আর নড়তে পারছে না নিজের জায়গা থেকে। নিজের চারপাশে যেন মনখারাপের এক অভেদ্য কালো মেঘ জড়িয়ে রেখেছে ছেলেটা।

অভিমন্যুর চোখ দুটো পড়বার চেষ্টা করছিল টিকলি, চোখের কোণে অভিমানের ছাপ যেন। সেইদিন বাড়ি ফেরার পর থেকে অভিমন্যুর বারংবার ফোন আসা সত্ত্বেও একটিবার ও আর ফোন ধরেনি টিকলি, নিজেকে আটকে রেখেছিল জোর করে। আজ যেন সব জোর একটু একটু করে শিথিল হয়ে যাচ্ছে ওর মধ্যে।অবশেষে চোখে চোখ মিলল, অভিমন্যু ও একইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওর দিকে চেয়ে, খুব ইচ্ছে করছে কথা বলতে, একটু কথা বললে কিই বা হবে? কেউ তো আর ওকে কথা বলতে নিষেধ করেনি, তাহলে এটা ও কেন করছে?এগুলো বাড়াবাড়ি ছাড়া কি? এত নাটকের কি সত্যিই কোনো প্রয়োজন ছিল? অভিমন্যুর মনে হয়তো এসব কিছুই আসেনি, শুধু শুধু মা আর দাদাইয়ের জন্য ওই নিজে থেকে জটিল করে তুললো না তো সব কিছু? অভিমন্যুর সেই হাসি খুশি মুখটা উধাও কোথাও যেন, এত গম্ভীর তো ও নয়। কিছু হলো না তো? সত্যিই তো, ও তো কোন প্রয়োজনেও ফোন করতে পারে, টিকলি এত অভদ্রতা করলো কি করে? ছি ছি ছি! নিজেকে খুব অপরাধী লাগছিল ওর এই মুহূর্তে।ও বিনা কারণেই অভিমন্যুকে এতটা কষ্ট কেন দিল, নিজের যখন ইচ্ছে হবে ঘুরবে কথা বলবে আর যখন ইচ্ছে হবে না এরকম অভদ্রতা করবে, সমাজের বাকি লোকগুলোর সাথে ওর তফাৎটা তাহলে কোথায়? না ও সত্যিই ভুল করেছে, এভাবে বিনা কারণে কারো সাথেই এরকম ব্যবহার করা উচিত নয়। ওকে ক্ষমা চাইতেই হবে।

মাঝের রাস্তাটা ফাঁকা হলে অভিমন্যু রাস্তা পেরিয়ে এদিকে চলে এল, চোখ দুটো নামিয়ে নিল অভিমন্যু। টিকলি আর চুপ থাকতে পারল না। অবশেষে মুখ খুললো ও, “কেমন আছ?”

অভিমন্যু মুখের এই হাসি সজীব নয়, এইটুকু ভালোমতো জানে টিকলি, জোর করে মুখে হাসি টেনে অভিমন্যু তাকাল এবার সোজাসুজি টিকলির দিকেই। “ভালোই আছি ম্যাডাম, আর কি? আপনারা যেমন রাখবেন তেমনই তো থাকবো, আপনারাই তো এই সমাজের মাথা। ভালোই আছি, ইনফ্যাক্ট বেশ ভালো আছি। কেন বলুনতো?”

“না আসলে আমি তোমার ফোনটা কিছুদিন ধরতে পারিনি আসলে, কথা ও বলতে পারিনি, রিয়েলি সরি ফর দ্যাট।  আসলে… “

“আরে না না, আপনার সরি বলার কিছুই নেই, প্লিজ সরি বলবেন না, আপনারা ব্যস্ত মানুষ, ফোন ধরতে পারবেন এমন আশা করাটাই অন্যায়, কোন অসুবিধে নেই, আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড। আপনি কেমন আছেন বলুন?এখানে হঠাৎ?”   

টিকলির মনের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল কেউ, কেউ আবার কে? অভিমন্যু ছাড়া আর কে? কিন্তু ওর উপরেই বা দোষ দেয় কি করে? অভিমন্যু কি করেছে? উল্টে ওই তো বিনাকারণে মাঝখান থেকে… তাহলে ওর এত খারাপ লাগছে কেন?অভিমন্যু ওকে আপনি বলে সম্বোধন করছে বলে? কিন্তু ও তো ওকে আপনিই বলতো, শেষ দিন কি তাহলে ওই-ই ভুল শুনেছিল? অভিমন্যু কি ওর উপর রেগে আছে? রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। আচ্ছা ও কি তুমি বলে ভুল করল কিছু? ধুর! কি তখন থেকে উল্টোপাল্টা ভেবে চলেছে ও? নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো টিকলি,  অভিমন্যুই বললো,  আমি ভিতরে গেলাম, আসলে শিউলির সাথে… ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল ও। টিকলিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হসপিটালে ঢুকে গেল এবার অভিমন্যু।

*****

“তোকে হাজার বার বললাম ঠিক সময়ে আসতে না পারলে বলে দে, রতনদাকেও বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম, সবসময় এত লেট কেন হয় তোর রাজ? সবারই সময়ের দাম আছে, রোজ আমায় তোর জন্য ওয়েট করতে হয়।” মাথা গরম হলেও সহজে কাউকে কিছু বলতে পারে না টিকলি, তবে আজ বলেই ফেলল। মাথাটা গরম ছিলই, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আবার ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় কুড়ি মিনিটে ধরে, রাজদীপ অন দ্য ওয়ে। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো গতিও নেই। কিন্তু মাথা গরম করার বা এভাবে রিএক্ট করার কারণ অন্য একজন। চাইলেও আজ কিছুতেই মন শান্ত হচ্ছে না টিকলির।

*****

“ঠিক করে দেখে বলো গোবিন্দ, অগ্রহায়ণের প্রথমেই তাহলে?”

” হ্যাঁ কর্তামশাই, সবথেকে শুভ দিন, আপনি ২রা অগ্রহায়ণেই দিন ফেলুন। “

“ব্যাস! তাহলে প্রবাল? তোমাদের কোনো অসুবিধে নেই তো?”

“না না জ্যাঠামশাই, আমাদের আর কিসের অসুবিধে। “

“তাহলে এই দিনটা স্থির হোক, কি বলো পরমা?”

“হ্যাঁ, বাকিরা কি বলে দ্যাখো, আদিত্য ফেরেনি এখনো, এই অনি, তুই অফিস থেকে বেরোলি যখন তখন ও অফিসেই তোর মেজো কাকা?”

“হ্যাঁ আমি তো আগেই বেরিয়ে এসেছি আজ। বলছি টিকলির বিয়ে, ওকে একবার জিজ্ঞেস করে ডেট ফিক্স করলে হতো না?”

“বোকার মতো কথা বোলো না অনি,  ওর মত নিয়ে ডেটটাও ফিক্স করতে হবে? আধুনিকতা বড় বেশি ঘিরে ফেলেছে তোমাদের। ”    

আলোকনাথের গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বরে তখনকার মতো সবার সমস্ত মতামত চাপা পড়ে গেল একটা নিমেষে, বিড়বিড় করে নিজের মনে কিছু একটা বলছিল অনি, আলোকনাথের কান এড়ালো না সেটা।

“যা বলার পরিষ্কার করে বলো অনি। “

“কিছু না, তুমি বললে না বিয়ের ডেটটাও ওর মত নিয়ে ফিক্স করার কি দরকার, তাই বলছিলাম বিয়ের ডেটটাই অন্তত ওর আর মেজো কাকীর মত নিয়ে ফিক্স করতে পারতে। বাকি সব তো… আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকা না থাকায় সমান। তার থেকে তোমরাই ঠিক করো, পরে জানিয়ে দিও তাহলেই হবে।” ঝড়ের মতন কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেল টিকলির দাদাই। কথাগুলো আরো আগে বলা উচিত ছিল হয়তো, নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করার আগে শুধু রিমঝিমকে বললো,  “প্লিজ এখন ডেকো না, আমি নিজেই চলে আসব একটু পর, একটু একা থাকতে দাও।” দরজা লাগিয়ে দিল অনি, ও জানে রিমঝিম ঠিক বুঝে নেবে, আর কেউ না বুঝুক।

*****

“মা তুমি অন্তত আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো, এতবড়ো একটা অন্যায় কে কিভাবে প্রশ্রয় দিতে পারো তুমি মা? সবাই তো আমায় ভুল বুঝছে, তুমি তো সবটা জানো, তুমি তাহলে কিছু বলছো না কেন? তুমি জানো আমি কোনো অন্যায় করিনি, তাও তুমি চুপ কেন? আমি তোমার নিজের মেয়ে নই বলে?আর সেজদা তোমার নিজের ছেলে বলে ওর এত বড় একটা পাপ তুমি মেনে নেবে?”

“মেজো বৌমা, তুমি এই অবস্থায় এখন শুধু নিজের আর তোমার পেটের বাচ্চাটার কথা ভাবো, টিকলির কথা ভাবো, আদিত্যর কথা ভাবো, এই সংসারটার কথা ভাবো, রেণু এই বাড়ির কেউ নয়। ও শুধুমাত্র এই বাড়ির ড্রাইভারের মেয়ে, ওর ভাবনা ওর বাড়ির লোককেই ভাবতে দাও না। “

“মা তুমি এই কথাটা একটা মেয়ে হয়ে বলছ আমায়? রেণুর জীবনটা তো শেষ হলোই, ওর শরীরের এখন যা অবস্থা ও বাঁচবে কি না আদৌ সেটাই বড় প্রশ্ন, আর তুমি আমায়…”   

” বৌমা তুমি যা করছো তাতে তোমার সন্তানের কতটা ক্ষতি হবে সেটা ভেবে দেখেছো কি? এখন এই শরীরে কোথায় তুমি হাসিখুশি থাকবে তা নয়… “

“মা প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো, রেণু রেপড, ওর শরীরের অবস্থা ভালো না মা, ওই মেয়েটা তো তোমাকেও মা বলে ডাকতো সেটা কি ভুলে গেছ? ও হয়তো বাঁচবেও না, কিন্তু ওর এই অবস্থার জন্য রায়বর্ধন পরিবারেরই একজন সদস্য দায়ী, তোমার সেজো ছেলে দায়ী। বুঝতে পারছ তুমি? এরপর ও তুমি বলবে আমি সব জেনে বুঝে কেন হাসি খুশি নেই?”

“চুপ। একদম চুপ। এই কথাটা আর কারো কানে যাওয়ার আগে এই ঘরেই বন্ধ করো বৌমা। এতেই সবার মঙ্গল হবে। তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে রেণুর এই অবস্থার জন্য চন্দ্রনাথ রায়বর্ধনই দায়ী?প্রমাণ করতে পারবে কিছু? শুধু শুধু আমাদের পরিবারের দিকে কাদা ছুড়বে লোক। কিছু প্রমাণ করতে পারবে না তুমি, চাইলেও পারবে না। তাই বলছি এই ব্যাপারটা মাথা থেকে বের করো। রেণু এই বাড়িতে নেই আর, তাই তুমি ও নিজের সন্তানদের কথা ভাবো। আমাদের যা বললে বললে, এই কথাটা যেন তোমার শ্বশুরমশাইয়ের কানে না যায়, আদি সবটা সামলে নেবে আমি জানি। ”  

“মা একটা মেয়ে এই অবস্থায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে মিথ্যে বলবে? তুমি কি পুত্রস্নেহে অন্ধ হয়ে গেছ? কি বলে যাচ্ছ তখন থেকে?আর আমরা সবাই জানি সেজদার রেণুর প্রতি স্বভাব চরিত্র কেমন ছিল। আমি এই ঘটনা ঘটার অনেক আগেই তোমায় বলেছিলাম সেজদার ভাব গতিক আমার ভালো লাগছে না। আজ রেণু একটা ড্রাইভারের মেয়ে বলে এই কথা গুলো… “

“ড্রাইভারের মেয়ে বলেই তো বলছি, কেউ কিছু করতে পারবে না। পরিস্থিতির গাম্ভীর্যটা বোঝার চেষ্টা করো, আর কে দেবে বেডে শুয়ে জবানবন্দি? চেষ্টা করে দ্যাখো, কিছু বলাতে পারো কি না।”

“মা তুমিও… “

“বড় বড় ঘরে এরকম কত ঘটনা ধামাচাপা পড়ে, এত ভাবলে হয় নাকি? তুমি তো বুদ্ধিমতী মেয়ে অমৃতা, তুমি এই বোকামোটা কি ভাবে করছো? আর আমাদের ‘মঞ্জরী’র বিরুদ্ধে চাইলেও তুমি কেন কেউ কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না। মাঝখান থেকে তোমার সংসারেই তার প্রভাব পড়বে। আর সব কথা বারমহল অবধি যায় না অমৃতা, অন্দরমহলের মধ্যেই কিছু কিছু কথা চাপা দিতে হয় কেন বুঝছ না এটা? আমি নিজে জমিদার বাড়ির মেয়ে, আমি বলছি এটা এমন কোনো ব্যাপার না। তুমি নিজের কথা আগে ভাবো। ”   

“আর যদি না ভাবি? যদি সারা কলকাতার সামনে এই রায়বর্ধন পরিবার, এই ‘মঞ্জরী’র ভিতরের সমস্ত সত্যি কথা সামনে আনি?”

“চেষ্টা করে দ্যাখো, পারবে না কিছু করতে। উল্টে ক্ষতি তোমারই হবে, আর এই কথাটা একবার এই অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে তোমার শ্বশুরমশাইয়ের কানে যদি পৌঁছায় আমি আর তোমায় চাইলেও রক্ষা করতে পারবো না অমৃতা।”

“বেশ, আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো তাহলে। ”     

“জিদ করো না অমৃতা, আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি… “

“না মা, এরকম ভালো যে বাড়িতে চাওয়া হয়, সেই বাড়িতে আমার অন্তত দম বন্ধ হয়ে আসছে, আপনি ও যে এই ঠুনকো মানসম্মান আর মুখোশের আড়ালেই বাঁচতে অভ্যস্ত, আমি জানতাম না।আপনি শুধু পুত্র স্নেহেই অন্ধ নন, বরং ক্ষমতার আর প্রভাব প্রতিপত্তির শীর্ষে বসে থাকা একজন খুব বোকা মহিলা। আপনি বুঝবেন একদিন নিশ্চয়, এই জীবনেই বুঝবেন, আপনি বা আপনারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে আসলে এই পরিবারেরই ক্ষতি করছেন, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে। চলি। ”    

*****

আলোকনাথবাবু এই নিয়ে তৃতীয় বার ডাকলেন পরমাদেবীকে, “গোবিন্দ আর প্রবালের জন্য চা জলখাবারের… “

সম্বিৎ ফিরল পরমাদেবীর। ১৫ বছর আগের ঘটনায় চোখটা ঝাপসা হয়ে গেছিল অজান্তেই। “হ্যাঁ হ্যাঁ এখুনি আনছি। ” ঘর থেকে বেরিয়ে চোখটা মুছে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন।  

*****

পাক্কা ৪০ মিনিটে ধরে চৌমাথার মোড়টায় দাঁড়িয়ে রয়েছে টিকলি, কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আজ আর আগেরদিনের মতো মনে হচ্ছে না রাজদীপ কখন আসবে। বরং উল্টে এখন মনে হচ্ছে অভিমন্যু কেন এখনো হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এই রাস্তাটা ধরে আসছে না? একটাই তো রাস্তা, রাজদীপ আসার আগে অভিমন্যু একবারটি আসুক, টিকলির অনেকগুলো কথা বলার আছে যে, কি বলবে জানে না ও, কিন্তু ও সামনে এসে দাঁড়ালে ও ঠিক বলতে পারবে জানে টিকলি। মায়ের পর এই অভিমন্যুকেই তো ও অত না ভেবে নিজের মনের কথাগুলো বলতে পেরেছিল, আজ ও তাই ওর বলতে কিসের দ্বিধা? কতদিন মন খুলে কথা বলেনি ও অভিমন্যুর সাথে, হাঁসফাঁস করছিল ওর ভিতরটা, আর বার বার প্রার্থনা করছিল যেন এখনই রাজদীপ না এসে পৌঁছায়।

একটু একটু করে আঁধার ঘনাতে শুরু করে দিয়েছে আবার, ফোনটা বেজে উঠতেই ধড়ফড় করে উঠলো বুকটা। অন্যমনস্ক ছিল আসলে। রাজদীপ ফোন করছে, এসে গেলো তাহলে? এবার তো তাহলে ওকে চলে যেতেই হবে। মনে খানিক আশঙ্কা নিয়েই ফোনটা ধরল টিকলি।

“হ্যালো, হ্যাঁ কতদূর? হ্যালো। হ্যালো। “

বার তিনেক ডাকাডাকির পর কিছু শুনতে না পেয়ে ফোনটা রেখে দিল টিকলি। ফোনে তো কিছুই শোনাই যাচ্ছে না, রাজদীপ কোথায় দাঁড়িয়ে? এদিকেই তো থাকার কথা ছিল। এখন আবার খুঁজে বেড়াতে হবে। উফফ!”

আবার ফোন করছে।    

“আরে কোথায় তুই? আমি তো মোড়ের মাথাতেই দাঁড়িয়ে, কতক্ষণ আর দাঁড়াবো বলতো?”

“ঠিক তোমার ঈশান কোণে, ঝাড়বাতির দোকানটার সামনে। “

ভিরমি খেলো এক মুহূর্তের জন্য টিকলি, না এটা তো রাজদীপের গলা নয়, এটা তো… এটা তো অভিমন্যু… এত উত্তেজিত এর আগে কবে শেষ হয়েছিল মনে পড়ে না ওর। আলোঝলমলে মহানগরীর রাস্তায় পাগলের মতো ওর চোখ দুটো খুঁজছিল অভিমন্যু কে। কোথায় ও? ওর জন্যই তো এতক্ষণ ধরে… ঘাড় ঘুরিয়ে ডানদিকে ঝাঁ চকচকে বিশাল ঝাড়বাতির দোকানটার দিকে চোখ পড়তেই দেখল অভিমন্যু সেই একইরকম হাসিমুখে দাঁড়িয়ে, ঠিক আগের মতোই। একটা বিশাল পাথর যেন নেমে গেল ওর বুকের উপর থেকে।  অভিমন্যু আর ওকে আপনিও বলেনি, তার মানে ও আর রেগে নেই! তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে অভিমন্যুর দিকে এগোল টিকলি, অভিমন্যুও এগোতে লাগল ওর দিকে। টিকলির কাছে অভিমন্যুর মুখের ওই হাসিটা যেন অনেক অনেক বেশি উজ্জ্বল ওই হাজার হাজার ঝাড়বাতির সামনেও। অবশেষে কয়েক সেকেন্ড পর যখন অভিমন্যুর সামনে এসে পৌঁছাল ও, দ্রুত হেঁটে আসার জন্য হাঁফাছিল রীতিমতো। এই কয়েক সেকেন্ড যেন অনেকটা বেশি সময় মনে হচ্ছিল ওর। কি হয় ওর অভিমন্যু সামনে এলেই? অভিমন্যুকে দেখলেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে ও, চারপাশটা যেন শান্ত নিঝুম হয়ে যায় হঠাৎ করেই, মাথার মধ্যেও যেন ঝিম ধরে যায়, আর এই বাস্তবের মাটিতে পা রাখতে ইচ্ছেই করে না, মনে হয় ওই ঘোরের মধ্যেই থাকুক না, সময়টাকে ইচ্ছে করে নিজের মর্জিতে বেঁধে ফেলতে, থমকে দিতে ইচ্ছে করে আশপাশের সমস্ত গতি, শুধু শ্বাস প্রশ্বাস আর চোখের পলক, এছাড়া আর কারো যেন গতিশীল হওয়ার কোন অনুমতি নেই। বুকের ভিতরের ধুকপুকানিটাও যেন অভিমন্যুর সামনে এসে শান্ত হয়ে যায় অনেকটা। যেন অনেকদিন পর পাওয়া অনেকটা প্রশান্তি, ব্যাস ! এই তো সেই সব পেয়েছির দেশ, যার খোঁজে এতদিন ছিল টিকলি। আর যে সত্যিই কিছু চাই না ,অভিমন্যু ছাড়া…  

পাশে গাড়ির তীব্র হর্নে টনক নড়ল টিকলির। অভিমন্যু ওর হাতটা ধরে রাস্তার ধার থেকে ওকে তাড়াতাড়ি ভিতর দিকে সরিয়ে নিয়ে নিজে ধারে দাঁড়াল। হাঁ করে দেখছিল অভিমন্যুকে টিকলি। নাহ আর কিছু ভাববে না ও, ভিতরে বাড়তে থাকা ঘোরটাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল ও। অভিমন্যুই প্রথম বলল, “এখনো এখানে দাঁড়িয়ে যে ? আবার সেদিনকার মতো লঙ্কা কেস নাকি?” বলেই হেসে উঠলো ও।

টিকলি মাথা নেড়ে হাসল শুধু একটু অভিমন্যুর হাসিটার দিকে তাকিয়ে, আর ভাবল এই কদিনে এই হাসিটার মূল্য ওর জীবনে এতটা বেড়ে গেল কি করে? কবে কখন কিছুই তো বুঝতে পারল না ও। অভিমন্যুর মুখে ওই হাসিটা না দেখেই তো ও যেন শেষ হয়ে যাচ্ছিল মুহূর্তের মধ্যে। ওর কষ্ট হলে আজ হঠাৎ টিকলির মনটা কাঁদছে কেন? ও কি তাহলে সত্যিই…

“তুমি রাস্তার মাঝে এরকম অন্যমনস্ক হয়ে যাও কি করে আমায় একটু শেখাতে পারো তো ! যাক গে, এই কদিন খুব ব্যস্ত ছিলে মনে হচ্ছে , যদিও আমার ব্যস্ততার সময় ও শুরু হল বলে। ওই জন্যই ফোন করছিলাম। “

ভ্রু কুঁচকাল টিকলি ,”মানে?”

“এখানে দাঁড়িয়েই সব শুনবে না একটু এগোবে ?”

“না আসলে আমার গাড়িটা… বলা আছে আসলে ?”

“এই রে, আবার সেই গাড়ি? যাই হোক ,আজ যেতে পারলে ভালোই হতো, আর তো কদিন আছি। “

মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল টিকলির। “কদিন মানে? কোথায় যাচ্ছ? কারো কিছু মানে কি হয়েছে ?”

অভিমন্যুর চলে যাওয়ার কথাটা এক মুহূর্তের জন্যও হজম করতে পারল না টিকলি।

“এইসবের জন্যই ফোন করছিলাম, যাই হোক বলেই দি, চাকরির চেষ্টা করছিলাম, পেয়ে গেছি অবশেষে। আপাতত ৬ মাস ট্রেনিং এখন, পোস্টিং সিকিমে। কিছুদিনের মধ্যেই বেরিয়ে যাবো।”  

নিজের অজান্তেই টিকলির হাতটা আজ চলে গেলো অভিমন্যুর কাঁধে, আনন্দে কাছে টানতে গিয়ে নিজেই নিজেকে সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিল ও। অভিমন্যুর এচিভমেন্টে খুশি হবে না ও ?ভীষণ ভীষণ খুশি ও! আরো বেশি খুশি কারণ অভিমন্যু খুশি যে, তাই। এবার ওর স্বপ্নগুলো ও পূরণ করতে পারবে, নিজের মায়ের জন্য কিছু করতে পারবে। প্রাণ ভরে একগাল হেসে অভিমন্যুকে  কংগ্রাচুলেট করল টিকলি। আজ সত্যি খুশির দিন। কিন্তু অভিমন্যু কি একেবারেই…

“আচ্ছা সিকিমে কতদিন থাকতে হবে? মানে কলকাতায় আর… “

“দেখা যাক, আশা করি ট্রেনিং শেষে ফিরতে পারবো। “

মুহূর্তের মধ্যে টিকলির মুখের অভিব্যক্তির এই পরিবর্তন কি অভিমন্যুর চোখে পড়ে গেল? ও কি বুঝে ফেলল কিছু টিকলির মনের খবর? অনেকটা আনন্দের মাঝে যেন জড়িয়ে গেল মনখারাপের কালো মেঘটা। নিজের মুখে জোর করেই হাসিটা তাই ফুটিয়ে রাখল টিকলি।

“আচ্ছা একটু এগোনো যাবে কি ? সামনে একজন ফুচকাওয়ালা বসে, জাস্ট অসাধারণ ফুচকা বানায়, আমি ছেলে হয়েও যা ভালোবাসি ফুচকা খেতে! ফুচকা চলবে এখন ?তাহলে খাওয়াতে পারি ? আরে এত ভাবতে হবে না, সামনেই থাকছি তো, তোমার ওই লঙ্কা কাণ্ডের ড্রাইভার এলে না হয় ফোন করে নেবে। অসুবিধা নেই তো। তুমি একঘন্টা দাঁড়াতে পারলে তোমার লঙ্কা ড্রাইভারও না হয় দাঁড়াবে কিছুক্ষণ। এই তোমাদের ড্রাইভাররা তো খুব সাংঘাতিক, তোমায় ওয়েট করতে হয় ড্রাইভারের জন্য? মানে আলাদাই লেভেল তো !”

কথাটা শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজদীপ গাড়িটা সামনে এসে পার্ক করল একেবারে। ধক করে উঠল টিকলির ভিতরটা। কেন তার কারণ জানে না টিকলি ,কিন্তু রাজদীপ এখন না  আসুক এটাই তো মনে প্রাণে চাইছিল টিকলি। টিকলি একবার রাজদীপের দিকে আর একবার অভিমন্যুর দিকে চাইল। অভিমন্যু কি কিছু আঁচ করতে পেরেছে? টিকলি তো রাজদীপের ব্যাপারে এখনো কিছুই বলেনি ওকে। ধ্যুর কিসব ভাবছে ও। ও কি পাগল হয়ে গেল একেবারেই ? টিকলি কিছু বলার আগেই রাজদীপ গাড়ি থেকে নেমে এসে জড়িয়ে ধরল টিকলিকে। এই মুহূর্তটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না টিকলি। এভাবে এখন এখানে হঠাৎ? আর অভিমন্যু ! ও কি ভাবছে? ছিঃ ছিঃ ! টিকলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল রাজদীপের দিকে, খুশিতে ঝলমল করছে রাজদীপের মুখটা। তারপরেই চোখ পড়ল অভিমন্যুর দিকে, শুধু অবাক চোখেই তাকিয়ে ছিল না ও, রীতিমতো অপ্রস্তুত! রাজদীপ অভিমন্যুর দিক থেকে টিকলির মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল, “এখুনি বাবা ফোন করেছিল, আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে, ২রা অগ্রহায়ণ। বুঝলি? উফফ ! এম সো হ্যাপি ! চল আজ তোর পছন্দের রেস্তোরাঁতেই যাবো, চল চল ওঠ। “এক মুহূর্তের মধ্যে যেন কি একটা ঘটে গেল টিকলির সামনে। না রাজদীপ যতটা খুশি সেরকম আলাদা করে কোন বাড়তি উছ্বাস নেই টিকলির মধ্যে, বরং রাজদীপের উজ্জ্বল মুখটার থেকে এক মুহূর্তের মধ্যে অভিমন্যুর মুখে নেমে আসা আঁধারটা যে বড় বেশি বিঁধছে আজ টিকলির বুকে। অভিমন্যুর চোখের এই দৃষ্টি কিছুতেই ভুলতে পারবে না ও। গাড়িটা ছেড়ে দিল, অভিমন্যু ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল, ঠিক আগের মতোই। শুধু আজ প্রথমবার টিকলির চোখ ঝাপসা। কিন্তু ওর তো আনন্দ হওয়ার কথা, এই তো রাজদীপ কত খুশি ! ও তাহলে ওর সাথে সাথেই কেন পারছে না খুশি হতে? ওর কেন মনে হচ্ছে ও কিছু বড় একটা যেন হারিয়ে ফেলছে? যেটা হওয়ার নয় সেটাই হচ্ছে? গাড়িটা বাঁক নিয়ে ঘুরে যাওয়া অবধি ঝাপসা চোখে অভিমন্যুর প্রতিবিম্বটাই দেখছিলো ও আয়নায়। অভিমন্যুর সাথে আর কি দেখা হবে? এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় চোখ দুটো বুজে ফেলল টিকলি।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

সাঁঝের শিশির (অন্তিম পর্ব)

।। ১।।   ( বেশ কিছুদিন পর ) সারা বাড়িতে এই লাগোয়া বারান্দাটাই টিকলির সবথেকে প্রিয়। সামনে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে বাগান মতো, তারপর রাস্তা। আগে

Read More »

সাঁঝের শিশির (পঞ্চম পর্ব)

।।১।। “এবার বিশ্বাস হল তো, মেয়েটা খামোখা কেন মিথ্যে বলবে বলো তো? আর আমি তো প্রথমেই দেখেছিলাম, তোমায় বলেওছিলাম, তুমিই আমার কথা বিশ্বাস করোনি, এখন

Read More »

সাঁঝের শিশির (তৃতীয় পর্ব)

“তুমি একবার আমার কথাটা শোনো, আচ্ছা আমার মিথ্যে বলে কি লাভ বলতো? আর তোমার মনে হয় আমি এই অবস্থাতেও মিথ্যে কথা বলব এখনও?” “সত্যি মিথ্যের

Read More »

সাঁঝের শিশির (দ্বিতীয় পর্ব)

।।১।। “কি গো টিকলিরাণী, খাও। কখন থেকে খাবারের থালা নিয়ে বসে আছ? তোমার প্রিয় পাস্তা করে দিলুম যে, ভাল হয়নি?” অন্যমনস্ক টিকলি সামনের বাগানটার দিকে

Read More »

সাঁঝের শিশির

প্রথম পর্ব ।।১।। “টিকলি তোর হলে চলে আয় এবার, খেতে দিয়ে দিয়েছি।” রেওয়াজ শেষে চোখ দুটো এতক্ষণে খুলল টিকলি, ঘড়ির দিকে তাকাল একবার। প্রণাম করে

Read More »

Share with