সাঁঝের শিশির (অন্তিম পর্ব)

।। ১।।  

( বেশ কিছুদিন পর )

সারা বাড়িতে এই লাগোয়া বারান্দাটাই টিকলির সবথেকে প্রিয়। সামনে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে বাগান মতো, তারপর রাস্তা। আগে এই জমজমাট এলাকা, রাস্তায় এত আলো গাড়ি, দিন রাত এত হাঁকডাক বেশ লাগতো টিকলির। কিন্তু এখন আর ভালো লাগে না। বাগানের ওই কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়েই এখন কেটে যায় দিনের অনেকটা সময়। নিজের গান বাজনা পড়াশোনা, রেওয়াজে কখনো কোনো গাফিলতি করেনি আজ অবধি টিকলি, কিন্তু এখন রেওয়াজ টুকু করতেও মন নেই যেন। কাকেই বা বলবে? কেই বা আছে শোনার জন্য? যদিও কবেই বা ছিল? ও তো নিজেই এখনো… আবার দরজায় কে নক করছে। আগে টিকলি যতই রাগ হোক না কেন, কাউকে কিছু বলা তো দূর, ওর মুখের অভিব্যক্তিতেও সেই বিরক্তি প্রকাশ পেত না। আর এখন? ও নিজেই বুঝতে পারে কতটা খিটখিটে হয়ে গেছে ও। কতটা বদলে গেছে ও মাত্র কয়েকদিনে। মুখে বিরক্তি নিয়েই দরজাটা খুললো টিকলি, দাদাই।

*****

“নীচে তো জোরদার আলোচনা চলছে, তোকে নিয়ে সোনার দোকান যাওয়া নিয়ে, আর তুই এখানে! সবাই তো খুঁজছে তোকে। কোন দোকানে যাবি কিরকম কি কিনবি বল! সবাই কে কি কিনবে বলে যাচ্ছে আর কনে এইখানে বসে আছে। যা যা, বিকেলে বেরোবে সব মহিলা দলবল।” টিকলির দিকে তাকিয়ে বললো অনির্বাণ। টিকলি নির্লিপ্তভাবে দরজাটা খুলে দিয়ে আবার বারান্দায় ওর প্রিয় সাদা দোলনাতে বসে পড়ল গিয়ে।

“শরীর টরীর খারাপ নাকি রে?” টিকলির কপালে হাত ছোঁয়াল অনি। টিকলি তখন ও সোজা কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকেই তাকিয়ে।  

খানিক পরে দাদাই এর দিকে তাকিয়ে পাশে বসতে ইশারা করল টিকলি।

“এই কি পাকিয়েছিস বলতো তুই? ঠিক ভালো ঠেকছে না তো।” দাদাই এর দিকে তাকিয়ে এতক্ষণে একটা ম্লান হাসি হাসল টিকলি, তারপর বলল,”জানিস তো ও তোর সঙ্গে থাকলে তোকে একবারের জন্য ও মন খারাপ করতেই দেবে না। প্রতিটা সময় ওর মাথায় কিছু না কিছু একটা এক্সসাইটিং চলে, মানে তুই ওর সাথে থাকলে না, ভালো থাকতে বাধ্য। তুই জানিস পুরো কলকাতা ওর নখদর্পণে! ওর সাথেই আমি প্রথম ক্লান্ত না হয়েও হাঁটা যায় জেনেছি, সস্তার রোল মোমো ও যে কি ভীষণ লোভনীয় হয় জেনেছি, ওর সাথে আমি প্রথম গঙ্গার পারে বসে সূর্যাস্ত দেখেছি, আমি ফার্স্ট টাইম ট্রামে চেপেছি! ক্যান ইউ ইমাজিন? আমি জোয়ারের সময় গঙ্গার বুকে ঝোড়ো হাওয়ায় হাওড়া ব্রীজ দেখছি লঞ্চ এ চেপে! কত কম অর্থেও কত বেশি খুশি হওয়া যায় তাই না? এই এত বড় বড় রেস্টুরেন্টের দামি দামি খাবার কিংবা মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা না উড়িয়েও খুশি হওয়া যায়, যদি…”

“যদি সঠিক মানুষটা সঙ্গে থাকে।” টিকলির অসম্পূর্ণ কথার বাকিটা বলে টিকলির চোখের দিকে তাকাল ওর দাদাই। নাহ আজ আর টিকলির চোখ লুকানোর কিছু নেই। ও জানে ও জড়িয়ে

গেছে। এতদিন ধরে নিজেকে এত কিছু বুঝিয়েও শেষ পর্যন্ত ও…

“পুরো জম্পেশ ফেঁসে গেছিস তাই তো?”

নিজের ঠোঁটটা কামড়ে হেসে ফেলল টিকলি এবার। ওর কোঁকড়া চুলগুলো খেলে বেড়াচ্ছে ওর মুখের উপর। বেশ লাগছে এভাবেই, বেশ এলোমেলো হয়ে যেতে। মাথাটা নীচু করে নিজের হাসিটা সামলেই বললো ও ,”অনেক বোঝালাম জানিস তো দাদাই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। যেটা হওয়ার নয় সেটাই হল। একদম ফেঁসে গেছি রে,পুরো ফেঁসে গেছি। “

দাদাই এর হাসিটা চওড়া হল একটু একটু করে। বোনের মাথায় আলতো টোকা মেরে বলল, ” যাক তাও ভালো, একটা অন্তত কাজের কাজ করলি। তা তার নামটা কি?”

টিকলির হাসি হাসি মুখটাকে একটু একটু জড়িয়ে নিচ্ছিল কালো আঁধার। এই হাসিটা আগের হাসির থেকে একদম আলাদা। মুষড়ে পড়া নির্জীব ফুলের মতো এই হাসি। সোজা তাকিয়েই বলল, ” তুই কি করে বুঝলি নামটা রাজদীপ নয়?”

“কারণ আমি তোর দাদাই। এখন নাটক না করে ঝটপট বল নামটা?”       

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল টিকলি ,”কি লাভ আর এখন এসব বলে ?”

“মানে ?এখন, এসব, কি লাভ, মানেটা কি এসবের? তোর কি ৭০ বছর বয়স হয়ে গেছে নাকি যে বুড়ো বয়সে প্রেমিকের নাম বলতে লজ্জা হচ্ছে? এটাই তো বয়স। তাও ভালো বিয়ের আগে তোর বোধোদয় হয়েছে। বিয়ের পরে হলে তো… যাক গে, ওই সেদিনের বাইকের ছেলেটা তো? ঠিক ধরেছিলাম আমি। ওরে, তোর নিজেরই বোঝার আগে আমিই বুঝে গেছিলাম, এক্সপেরিয়েন্সড তো নাকি !  যাই হোক, মহাশয় কি করেন? বলুন এবার। “

“দাদাই তুই এত কুল কিভাবে? আর এখন বলে নয়, কোনোদিনই এই কথাগুলোর কোনো মানে হয় কি? অন্তত ‘মঞ্জরী’তে বসে।  আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না তুই ঠিক কি বুঝছিস আর কি ভেবে কথা গুলো বলছিস ?

“মানে? তুই ছেলেটাকে ভালোবাসিস, আর ওকে ভুলে যেতে তোর কোনো অসুবিধাও নেই? এটা কি ধরণের ভালোবাসা ভাই বোঝা আমায়। আর সরি টু সে, এটা আর যাই হোক ভালোবাসা নয়। “

“তো কি করবো আমি বল! অনন্যা রায়বর্ধন, এর থেকে বেশি আর কি বা করতে পারে? নামের পাশের ট্যাগটার জন্য তো ছোট থেকেই কি ভাবে হাঁটবো কি ভাবে খাবো কি ভাবে ঘুমোবো কি ভাবে গাইবো কি ভাবে আঁকবো কার সাথে মিশবো সব কিছুতেই তো আগে ভাবতে হতো, হয়, আজ ও তাই ভাবছি। ইনফ্যাক্ট এইসব ভাবার কোনো কারণই নেই একচুয়ালি। কারণ আমি জানি ভেবে কোনো লাভই নেই। এরকম তো না আমার মধ্যে কোনো দ্বন্ধ আছে, আমি জানি খুব ভালো ভাবে পরিণতিটা কি। তো ভেবে কি করবো বল আমায়? আর সব থেকে বড় কথা, আমি তো এটাও জানি না অভিমন্যু আদৌ আমায় ভালোবাসে কি না। আমি কি করবো বলতো আর !”

এইভাবে উত্তেজিত হতে টিকলি কে এই প্রথম দেখলো অনির্বাণ, টিকলির কথার মাঝেই গলা ভেঙে যাওয়া বা ওর চোখের কোণের নোনতা জলটা চোখ এড়ালো না অনির। কিছু বছর আগে অনি ঠিক যে কারণে নিজের জীবনটা গতে বাঁধা খাতে বইতে দিয়েছিল, আজ টিকলিও সেই একই কারণে কষ্ট পাচ্ছে।

“বুঝলাম। কিন্তু ভেবে দ্যাখ যদি অভিমন্যুর উত্তর ও হ্যাঁ হয়? যদি ও ও তোর মতো একটা বারান্দার কোণে বসে এটাই ভাবে? তখন কেমন হবে? শুধু একে অপরকে সাহস করে কথাটা বলতে পারলেই জীবনটা অন্য রকম হতে পারতো। আর তুই যে ব্যাপারে বলছিস যে এই বাড়ি অভিমন্যুকে মানবে না, সে তো জানা কথা। তার জন্য তুই কি কাউকে ভালোবাসতে পারবি না? এটা কিরকম কথা? মানা না মানাটা তাদের ডিসিশন তাদের প্রব্লেম, তো তাদের জন্য তুই কেন সাফার করবি? তোর তো ভালো থাকার বা নিজের কথাটা ভাবার অধিকার আছে নাকি? দ্যাখ আমি আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি, নিজের কথা ভাবাটা কোনো অপরাধ নয়, বরং সারাজীবন নিজেকে নিজের কাছেই উপেক্ষিত রেখে শেষ বয়সে এসে যদি এটা করতাম যদি ওটা করতাম এসব ভাবাটাই বোকামি।

 “মানে? তুমি তাহলে কি বলছ আমি সবার বিরুদ্ধে… “

“আমি কিছুই বলছি না, তুই কি করবি তোর ডিসিশন ,কিন্তু তুই যে কারণের জন্য এত চিন্তিত , সেই কারণগুলো কয়েকবছর পরেই খুব ছোট লাগবে রে। তখন নিজের বোকামোর জন্য নিজেই আফসোস করবি। কেন একটু সাহস দেখালাম না? কেন কিছু বলতে পারলাম না? কেন শুধু অপেক্ষা না করে একটু নিজে থেকে এগোলাম না? একবার হয়ে গেলে আর সেটা বদলাতে পারবি না, তাই যা করবি ভালো ভাবে ভেবে চিনতে করিস। আর যদি… “

“আর যদি ?

“যদি তুই আপোষ করতে চাস, সুখের জন্য নিজের খুশির সাথে, তাহলেও অসুবিধা নেই। নীচে জোর কদমে প্ল্যানিং চলছেই, জয়েন কর। এখানে বসে থেকে কি হবে ?”

দাদাই কথাগুলো বলে টিকলির চোখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো নীচে। কি করবে এবার ও? ও তো এটাও জানে না অভিমন্যু আদৌ ওকে নিয়ে ভেবেছ ও কিনা কোনোদিন। কিন্তু অভিমন্যুর কাছে গেলেই কেন মনে হয় যে ওর ষষ্ঠেন্দ্রিয় ঠিক কথাই বলছে। ওর এত ভুল হতে পারে না। অভিমন্যুও ওর মতনই হয়তো… উফফ আর ভাবতে পারছে না। কিন্তু যদি এটাও ধরে নেয় যে অভিমন্যুও ওর মতন একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে, তাহলেও কি করবে ও? এটা কি সত্যিই সম্ভব? ও রায় বর্ধন পরিবারের মেয়ে হয়ে কি ভাবে করবে এটা? সেদিনের পর থেকে আর একবারও কথা হয়নি অভিমন্যুর সাথে। ও যে কবে এভাবে অভিমন্যুকে…চোখ দুটো বুজে ফেললো টিকলি। বন্ধ চোখের পর্দাতেও অভিমন্যুর হাসিমুখটা ভেসে উঠল সঙ্গে সঙ্গে, তৎক্ষণাৎ চোখ দুটো খুলে ফেলল ও। না না, এই হাসি ও কিছুতেই পারবে না হারাতে। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও কি ভুলভাল ভাবনা ভাবছে ও? ও এখুনি যাবে অভিমন্যুর কাছে, কিন্তু ওর যে সিকিম চলে যাওয়ার কথা ছিল ! ও কি চলে গেল? সেই জন্যই কি আর কোনো যোগাযোগ করেনি? না না, একবার শেষ চেষ্টা করতেই হবে ওকে। ও এখুনি যাবে। কিন্তু তার আগে একটা ফোন করা খুব দরকার। মা কে বড্ড মিস করছে ও। মা কে কি একবার সবটা খুলে বলবে? মা আবার উল্টো কিছু করে বসবে না তো? ধুর। ফোনটা নিয়ে অভিমন্যুকে ফোন করল ও।  বাজছে ফোনটা। কিন্তু কি বলবে ও এখন অভিমন্যুকে? দেখা করবে? তারপর যদি অভিমন্যু… উফফ! বেজে বেজে কেটে গেলো ফোনটা। বুকের ভিতর হাতুড়ি পিটছে টিকলির। নীচে থেকে আবার ছোট কাকী ডাকছে, ধ্যুর। আরেকবার ডায়াল করল অভিমন্যুর নম্বরটা। নাহ, কোনো লাভ হলো না এবারেও। এবার তাহলে কি হবে? টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবার ওর। তৃতীয়বার ফোন করেও ওদিক থেকে উত্তর না পেয়ে আর দেরি করল না টিকলি। মিনিটদশেকের মধ্যে রেডি হয়ে নীচে নামলো ও।

“কিরে ,এখন কোথায় বেরোচ্ছিস? আজ তো বিকেল বেরোবো। তোকেও তো যেতে হবে। তোরই তো গয়না কেনা হবে ,এখন বেরোস না… “

কাকিমা বলে যাচ্ছিলো নিজের মতো, সেদিকে কান না দিয়ে গাড়ির চাবিটা হাতে নিল টিকলি। ও জানে এবার একটা কিছু ঘটবে। কিন্তু এখন এসব ভাবলে বাকি জীবনটা ভেবেই যেতে হবে। কোনোদিকে না তাকিয়ে কাউকে আর উত্তর না দিয়ে সদর দরজার দিকে পা বাড়ালো ও।    

“আরে যাচ্ছিসটা কোথায় তুই? রতনদা নেই এখন, আর বাকি দুজন ও তো বেরিয়ে গেছে। দাদা নিয়ে গেছে একটা, আরেকটা মেজদা নিয়ে গেছে। একটু দাঁড়া, রতনদা ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে আসবে। কিন্তু… “

“আমার হাতে অত সময় নেই কাকিমা, প্লিজ। “

“কিন্তু তুই গাড়ি চালিয়ে যাবিটা কি করে? এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে টিকলি। আশ্চর্য !”

বড়মার কথায় পিছন ফিরল বেরোবার আগে শুধু, এই টিকলি যেন অনেক অনেক আলাদা। মুখে সেই এক দৃঢ়তা, ঠিক যেমনটা অমৃতার ছিল।

“আমি পারবো, আসছি। ” ব্যাস এটুকু বলেই বেরিয়ে পড়ল টিকলি। বাড়ির লোকের মুখভঙ্গি অভিব্যক্তি যে খুব একটা স্বাভাবিক নয় তা জানে ও। আর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে লাভ নেই, গাড়িটা গ্যারেজ থেকে বের করে শহরের রাজপথে ছোটালো ও, প্রথম গন্তব্য মায়ের বাড়ি।

।। ২।।

“তুমি কেন বুঝতে পারছো না এই অবস্থায় তোমার ওপর এই মানসিক চাপ টা ঠিক নয়। বাচ্ছাটার কথা তো ভাব। কেন এরকম করছো? আমি হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে, প্লিজ এরকম আর হবে না। তুমি প্লিজ অন্তত আমায় ভুল বুঝ না। “

“কাল যা কিছু হলো, আমার মাথার ব্যাণ্ডেজটা না হয় সরে যাবে কদিন পর। কিন্তু এই ক্ষত সারলেও, মনের ক্ষত সারবে কি আর কোনোদিন, আদিত্য? দশ বছর পর ও এই কপালের কাটা দাগ দেখে কালকের দিনটাই তো মনে পড়বে। কিভাবে তোমার সাথে এই ঠুনকো সংসার, সন্তান নিয়ে ভালো থাকবো বলতে পারো ? “

“প্লিজ এভাবে বোলো না অমৃতা, আমি তো ইচ্ছে করে করিনি, দ্যাট ওয়াস এন এক্সিডেন্ট। আমি তোমায় জেনে বুঝে আঘাত করিনি, আর আমি কালকের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। প্লিজ এবার ওই রেণুর ভুত মাথা থেকে বের করো আর নিজের দিকে একটু নজর দাও। ওষুধগুলো ঠিক করে খেয়েছো তো? দাঁড়াও তো টেলিফোনটা বাজছে, দেখি। তুমি রেস্ট নাও। “

ওদের ঘরের ল্যান্ডলাইনটা এসেছে মাস খানেক হলো, আগে শুধু বৈঠক খানাতেই থাকতো, এখন  একটা আদিত্য অমৃতার ঘরেও থাকে। এখন এই অবস্থায় উপর নীচ করাটাও সমস্যা, তাই অমৃতার কথা ভেবেই আরো নিলো আদিত্য। ফোন এ কথা বললেও একটু মন মেজাজটা ভালো থাকে। টিকলির জন্মের পর এবার একটা ছেলে ভীষণ ভাবে চায় এই বাড়ির প্রত্যেকে। আদিত্য নিজেও মনে মনে তাই-ই চায় ,বলেনি যদিও মুখে কিছু।

অমৃতা আদিত্যর দিকেই চেয়ে ছিল ফোন এ কথা বলার সময়। কপালের ক্ষতটায় চিনচিনে ব্যাথাটা এখনো আছে বেশ ভালোই। ৫ টা সেলাই পড়েছে কাল। বেশিক্ষণ বসেও থাকতে পারছে না এই অবস্থায়, মাথাটাতেও কষ্ট হচ্ছে, হেলান দিয়ে বসলো একটু অমৃতা। আদিত্যর দিকে একভাবে চেয়েছিল ও ,কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি আদিত্য জেনে বা না জেনে ওকে শারীরিক ভাবে আঘাত করতে পারেন কোনোদিন, বাবা মা কে সত্যি বলা ও সম্ভব নয়, তাই মিথ্যের আশ্রয় ই নিতে হয়েছিল কাল ওকে বাবার সামনে। আদিত্য তো এরকমটা ছিল না, এতটা কবে বদলে গেলো ও ? যে নিজের এই পরিবার এই ভাইয়ের জন্য নিজের স্ত্রী এর বিরুদ্ধে এতদূর যেতে পারে! অমৃতারই কি চিনতে ভুল হলো তাহলে? আজ এত বছর পর কেন তাহলে ওর মনে হচ্ছে ওর বোধহয় মস্ত বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। ভাগ্যিস বাচ্ছাটার কোনো ক্ষতি হয়নি কাল। কিন্তু এই কথাটা ভুলে কিভাবে আবার আদিত্যর সাথে এই জীবনটা এগিয়ে নিয়ে যাবে ও ? কিছুতেই তো পারছে না ভুলতে কাল আদিত্যর ওই ব্যবহার। উফফ ! কি যন্ত্রনা করছে কপালে। কিন্তু আদিত্য কার সাথে কথা বলছে? হাসপাতাল থেকে ফোন মনে হচ্ছে তো কথা শুনে। নীচু গলায় কথা বলছে তো ও,আর ধৈর্য রাখতে পারল না অমৃতা, অতিকষ্টে পাটা মাটিতে রাখল ও।

“কি হয়েছে? কার ফোন ছিল ?”

“অনেকদিন পর মাথাটা একটু হালকা লাগছে। ”   

“কিন্তু কার সাথে কথা বললে সেটা তো বলো। “

“দাঁড়াও আগে বাড়িতে খবরটা দি। “

“মানে?”

“মানে রেণুর চ্যাপ্টারটা ক্লোস্ড। ” আঁতকে উঠল অমৃতা। প্রচন্ড ভয় করছে এবার ওর। এসব কি বলছে আদিত্য? রেণু তার মানে…

“হম, এক্সপায়ার করে গেছে একটু আগেই। “

“কি!!!”

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না অমৃতা, আদিত্য বাড়িতে এই খবরটা দিতে গেল। আর অমৃতার বুকের ভিতর মনে হচ্ছে কেউ হাজার হাজার ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে হৃদপিন্ডটা। সারা শরীরে রক্ত চলাচল যেন দ্রুত হারে বাড়ছিল, তার সাথে মনে হচ্ছিল বুকের ভিতর কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে, অসহ্য যন্ত্রণা করছে মাথাটায়। চোখ ফেটে জল আসছিল কিন্তু কাঁদতে পারছিল না অমৃতা। কদিন আগেও রেণু ওর পায়ে মালিশ করে দিতে দিতে বলেছিল “দেখবে দিদি এবার যা ধরণ ধারণ তোমার এবার ছেলেই হবে। রাজকুমার আসছে বাড়িতে,আমি তো ভেবেই রেখেছি রাজকুমার বলেই ডাকবো। ছেলে তো মায়ের মতোই দেখতে হয়, তোমার মতোই এরকম কাটা কাটা মুখ চোখ হবে, টকটকে গায়ের রং, রাজকুমার ছাড়া কি !”

আর আজ কয়েকদিনের মধ্যেই জলজ্যান্ত হাসিখুশি মেয়েটা একটা বডি হয়ে গেলো ! শেষ দিন ও হাত জোর করে অমৃতার কাছেই একটা সুস্থ জীবন আর ন্যায় বিচারের ভিক্ষা চেয়েছিলো। এইভাবে ওই রেপিস্টটা বেঁচে যেতে পারে না, কিছুতেই না। ওর ঘর পেরিয়ে উল্টোদিকেই ওই জানোয়ারটা দাঁড়িয়ে ছিল, কথা বলছিল আদিত্যর সাথেই হেসে হেসে, ওরা দুজন একসাথে আলোকনাথ এর ঘরের দিকে এগোল। আর নিজেকে চুপ রাখতে পারল না অমৃতা। ঘর থেকে পেরিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোলো ও দ্রুত পায়ে, তখনি চারপাশটা কালো হয়ে গেল এক নিমেষে, ঘুরে গেল মাথাটা ,ভারী শরীরটা টাল সামলাতে না পেরে…

*****

অশ্রুসজল চোখ দুটো খুলল অমৃতা, টিকলির হাতের স্পর্শে। মায়ের চোখের জল সচরাচর দেখেনি যে মেয়ে, তাই আর থাকতে পারল না টিকলি, জড়িয়ে ধরলো মাকে। মেয়েকে বুকে চেপে ধরে বহুবছর পর শান্তির নিঃশ্বাস ফেললেন অমৃতা। এতদিন যে সত্যিগুলো কাউকে বলা হয়নি আজ নিজের মেয়েকে বলে এক অপার শান্তি অনুভব করছিল অমৃতা। বিন্তিদি ও জানে, এই মা মেয়ের গল্প এত সহজে শেষ হওয়ার নয়, তাই আর ডাকেনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল অমৃতা। বেশ বেলা হয়ে গেছে।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন সযত্নে, স্নেহের চুম্বন এঁকে দিলেন কপালে, এই একটাই তো অবলম্বন বাঁচার এখন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অমৃতা বলল, আর দেরি না, খেয়ে নাও এবার, বেলা ৩ টা বাজতে যায়।

মায়ের এই কথাটা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেই টিকলি বললো , “আমি তাহলে এবার কি করবো? দাদাই কি ঠিক বলছে?”

মেয়ের চোখের দিকে সোজাসুজি তাকালেন এবার অমৃতা।

“কি দেখছো মা ?”

মেয়ের চোখের তারায় মনের কথাটুকু সহজেই পড়ে নিলেন অমৃতা, হেসে বললেন, “নিজেকে ঠকাচ্ছিস কেন ?”

“মানে ?”

“মানে আবার কি ? যখন সকালে এই বাড়িতে ঢুকলি, তোর চোখে জল ছিল তার কিছু আগেও। কার জন্য সেটা ? অনর্থটা তো ঘটিয়েই ফেলেছিস। এখন আর এসব ভেবে কি হবে ?”

“না গো মা, আমি তো এটাও জানি না আদৌ অভিমন্যু আমায় নিয়ে কিছু ভাবে কি না নাকি পুরোটাই আমার মনের ভুল।”

“একটা কথা কি জানিস তো, মেয়েরাই সবার আগে বুঝতে পারে, ছেলেটা নিজের মনের কথা বোঝার আগেই মেয়ে টা ঠিক বুঝতে যায় কিন্তু। তাই এসব তুই নিজেকে বোঝাতে পারিস আমাকে নয়। আমি তো তোর মা নাকি?”

“এবার তাহলে কি করবো? অভিমন্যু তো সিকিমে… “

“তুই কি জানিস ও ইতিমধ্যেই চলে গেছে কি না? জানিস না তো, তাহলে একবার চান্স নিতে ক্ষতি কি? পেয়েও তো যেতে পারিস। ফোন এ পাসনি তো কি? গাড়িটা আছে, দুটো পা আছে, যা। কার সাধ্য তোকে আটকাবে যদি তুই সত্যিই যেতে চাস?”

অবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়েছিল টিকলি, এই মানুষটাকে তো চেনে না টিকলি, এভাবে মা ওকে বুঝে ওর পাশে দাঁড়াবে ও তো স্বপ্নেও ভাবেনি।

“তাহলে সেদিন আমায় ওভাবে বলেছিলে কেন মা ?”

“বলেছিলাম কারণ তোর কথা শুনে এটুকু বুঝেছিলাম ছেলেটা ভালো, সৎ, তাই ছেলেটার ভালোর জন্য তোকে বলেছিলাম সরে আসতে। রায়বর্ধন পরিবারের রক্ত তো আফটারঅল, তাই। “

“কিন্তু মা রাজদীপ, ওকে আমি কি বলবো ,বাড়িতে সব কিছু কিভাবে একা আমি… “

“তুই একাই পারবি, হ্যাঁ, পারলে তুই ই পারবি। আর রাজদীপ খুব ভালো ছেলে, জরুরি নয় একজনকে ভালো প্রতিপন্ন করতে গেলে আরেকজন কে খারাপ হতেই হবে। তাই না? রাজদীপ খুব ব্রাইট ছেলে, কিন্তু তুই আর রাজদীপ একসাথে… নাহ। এখনও কোনো সংশয় আছে কি ?”

“না, সংশয় তো কোনোদিনই ছিল না মা, রাজদীপই আমার ডেসটিনি, এটুকুই জানতাম আর মেনেও নিয়েছিলাম , আলাদা করে ভালোবাসার কথা তো কোনোদিন ভাবিইনি, অভিমন্যুই হঠাৎ অসময়ে এসে সব এলোমেলো করে দিলো।”

“অসময়ে কেন বলছিস? ভাগ্যিস এখন এলো, একদিন না একদিন ও তো তোর সামনে এসে দাঁড়াতই, ভাব এরপর এলে কি করতিস?”

“মা আমার কি বড্ড দেরি হয়ে গেল?”

“বেরিয়ে পড়। নয়তো এবার সত্যিই দেরি হয়ে যাবে। শুধু এটুকু মনে রাখবি তুই কোনো ভুল করছিস না। যা, বেরিয়ে পড়। আমি বলছি। ‘

“আর দাদু ,বাবা ?”

“আমার ছেলেকে হারিয়েছি ওই মানুষগুলোর জন্য, মেয়ের কোনো ক্ষতি হতে দেব না ওদের কারণে ,আমি কথা বলবো , আমি আছি তো নাকি? যা তুই। “

আর এক মুহূর্ত ও দেরি করতে ইচ্ছে করছে না টিকলির, আর সত্যি একটু ও সংশয় নেই ,ভয় ডর নেই , চক্ষুলজ্জার চিন্তা নেই আর, ব্যাগটা নিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই নেমে পড়ল ও। কিন্তু একি? টায়ারটাকেও এখনই পাংচার হতে হলো? ধ্যুত ! একরাশ বিরক্তি নিয়ে গাড়িতে মারল টিকলি। যত অভিমন্যুর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে তত যেন বাধা এসে দাঁড়াচ্ছে সামনে। আর একটু একটু করে প্রতীক্ষার পর্ব দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে কিছু একটা, পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত বেগে, টিকলিকে ধরতে হবে কিন্তু ও পিছিয়ে পড়ছে যেন।

“আবার কি হলো?” মেয়ের চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে অমৃতার চোখ গেল গাড়ির চাকার দিকে।

“হুম, কলকাতা শহরে কিন্তু অনেক বাস ট্রাম ট্যাক্সি আছে। আর তুমি প্রাপ্তবয়স্ক ও হয়ে গেছ, তারপর ও ডল পুতুলের মতো থাকতে চাইলে সেটা তোমার সমস্যা। আমার কিছু করার নেই। “

আর একমুহূর্ত ও দেরি করল না টিকলি, বেরিয়ে পড়ল ও, ঘড়িতে তখন প্রায় ৪ টা।

“দুগ্গা দুগ্গা। ” বলে কপালে হাত ছোঁয়াল অমৃতা, জোরে শ্বাস নিল একটা, একটু ইতস্তত করে অবশেষে ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করল ও।

“হুম, অমৃতা বলছি, জরুরি দরকার। একটু কি দেখা করা যাবে আদিত্য ?”

   ।। ৩।।  

একবার বাস একবার ট্যাক্সি বদলে যখন শোভাবাজারে পা রাখল টিকলি, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায়। সূর্যাস্তের আলোয় পশ্চিমাকাশে গোধূলির লাল আভা, চারপাশটা যেন সোনালী হলুদ দুধে আলতা রঙে সেজে উঠেছে নিজের মতন করে। চারপাশে মানুষের ব্যস্ততা, গাড়ি, ট্রাম, টানা রিকশা সব পেরিয়ে অভিমন্যুর বাড়ির গলির দিকে দ্রুত পা চালাল ও। এক একটা সেকেন্ড এক একটি যুগের মতন মনে হচ্ছে এখন, যতটা দ্রুত চলা সম্ভব চলছিল টিকলি। অভিমন্যুর সাথে দেখা হবে তো?আরেকবার ফোন করলো ও, এখন সুইচ অফ বলছে। তার মানে টিকলির ফোনটা দেখেও অভিমন্যু একবার ফোন করল ও না, ধরল ও না? ফোনটা এখন অফই করে দিলো? এরকম কেন করছে ও টিকলির সাথে? এইভাবে শাস্তি দেবে? হাঁপাতে হাঁপাতে যখন অভিমন্যুর বাড়ির গলির মধ্যে গিয়ে পৌঁছালো টিকলি, একসাথে যেন কান ফাটিয়ে বাজ পড়ল ওর মাথার উপর। ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে অভিমন্যুর নাম ধরে ডাকতে, তাহলে কি ওর কানে পৌঁছাবে? বাড়ির সামনের গেটের কাছে পৌঁছে ধপ করে সামনের রকটায় বসে পড়ল টিকলি বিধস্ত হয়ে, বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে।   

******

আরো দুটো মিটিং বাকি ছিল, সব আপাতত পোস্টপন্ড করে দিয়ে রওনা দিলো আদিত্য। সূর্যাস্তের সোনালী আলো টা গাড়ির কাঁচের উপর পড়ে প্রতিসৃত হচ্ছিল আদিত্যর চোখে। কত বছর পর দেখা হতে চলেছে আজ অমৃতার সাথে? স্মৃতি থেকেই হারিয়ে গেছে, তার পর থেকে আর কোনোদিন ও কফি হাউসে পা রাখেনি আদিত্য। আজ যাচ্ছে আবার। এখানেই বিয়ের আগে একটিবার অমৃতার সাথে দেখা করেছিল ও। একটা কচি কলাপাতা রঙের সালোয়ার পরে নীচের ফুটপাথটায় আদিত্যর জন্য দাঁড়িয়ে ছিল সেদিন কার মেয়েটা। আদিত্যই ইচ্ছে করে বড়োসড়ো কোনো রেস্টুরেন্টে ডাকেনি অমৃতাকে সেদিন। অস্বস্তি হতো হয়তো, মারাত্মক চারিত্রিক দৃঢ়তা আর প্রখর আত্মসম্মান, এই দুটো গুণেই অমৃতার প্রতি মুগ্ধ হয়েছিল আদিত্য। অমৃতা নিজের কোকঁড়া চুল গুলো সব সময় বেঁধে রাখতো, টিকলি যেন পুরো নিজের মায়ের ধাঁচেই গড়া। সেই কোঁকড়া চুল, টানা টানা চোখ, সেই গায়ের রং। আজ যদি ছেলেটা বেঁচে থাকতো তাহলে কেমন দেখতে হতো কে জানে ? নার্সিংহোম থেকে যখন সাদা কাপড়ে মুড়ে ওই ছোট্ট নিথর শরীরটা আদিত্যর হাতে তুলে দিয়েছিল, কচি মুখটা যেন অবিকল ছোট্টবেলার আদিত্যই, মা-ই বলেছিল। নিজে হাতে নিজের সন্তানের কাজ করে বাড়ি ফিরে আর অমৃতার সামনে দাঁড়াতে পারেনি আদিত্য। ওই ঘটনার জন্য কি আদিত্যই দায়ী ছিল? অমৃতা তো আজ ও আদিত্যকেই…

ব্রেক কষে থামল আদিত্যর গাড়িটা। এসে গেছে কফি হাউস। আজ বহু বছর পর।     

*****

বিকেল গড়িয়ে আঁধার ঘনাতে শুরু করে দিয়েছে এতক্ষণে। ল্যাম্পপোস্ট গুলোও একা দাঁড়িয়ে হলুদ আলো ছড়াচ্ছে, সেইদিকেই চুপ করে তাকিয়ে বসেছিল টিকলি। আসতে বড্ড দেরি করে ফেললো ও, এই অপূরণীয় ক্ষতি কি করে মেটাবে তার পথ ওর জানা নেই আর, ওর দিকে তাকাতে তাকাতে গলি দিয়ে পেরোচ্ছে আশপাশের লোকজন, ওর যদিও সেই দিকে কোনো হুঁশ নেই। বড্ড রাগ হচ্ছিল নিজের উপর আজ, আর একটু আগে কেন এলো না ও? কিন্তু অভিমন্যুর মা বাবাই বা কোথায় গেল ?সপরিবারে চলে গেলো নাকি? ধুর। না না। আচ্ছা আশপাশের বাড়িতে কাউকে একটা জিজ্ঞাসা করলে হয় তো। পাশের বাড়িটা থেকে সন্ধ্যাবেলার সিরিয়ালের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল ও। এদেরই না হয় একবার…

“ওমা তুমি এখানে কি করছ গো সুন্দর দিদি?”

পরিচিত কণ্ঠটা কানে আসতেই ফিরে তাকাল টিকলি। আঁধার আরেকটু জাঁকিয়েছে এই জায়গাটায়, একটু ভ্রু কুঁচকে দেখলো ও, ছোট্ট মেয়েটা কি শিউলি? একটু কাছে আসতেই স্পষ্ট হলো, আরে হ্যাঁ তাই তো। এতক্ষণে পরিচিত কাউকে দেখে একটু যেন শান্ত হলো মনটা।

“তুই এখানে এখন ?”

আমি তো মায়ের সাথে ফিরছি, মা পিছনের দোকানটা থেকে ডিম কিনছে, আমি এগিয়ে এসেছি একটু।

“এখন কেমন আছিস ?”

“ভালো আছি গো এখন দিদি। কিন্তু তুমি অভি দাদার বাড়ির সামনে হঠাৎ? কি হয়েছে?”

“তোর দাদা কই রে ?”

“জানি না গো ,আমি তো এই আজকে থেকেই একটু বেরোতে শুরু করেছি, আমিও একটু দেখা করবো বলেই এদিক দিয়ে আসছিলাম, ফোন এও তো পেলাম না। “

“ও আচ্ছা। “

“তুমি কি এখানে একা বসে থাকবে নাকি ?”

“না, এই তো চলে যাবো এবার। “

“খুব ইচ্ছে তোমায় একদিন আমাদের ঘরে ডেকে খাওয়ানোর, আমার মা খুব বলো মাংস রাঁধে জানো তো, কিন্তু তোমায় এখন কি করেই বা ঘরে ডাকি? অভিদাদা তো শুনেছিলাম চাকরি পেয়ে গেছে। কিন্তু জেঠু জেঠিমার তো থাকা উচিত। কি জানি কোথাও গেছে হয়তো। দিদি আমি এগোই, মা নয়তো চিন্তা করবে আমার , তুমিও আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না, এলাম গো দিদি। ” কথা কটা বলে এগিয়ে গেল শিউলি, হতভম্বের মতন বন্ধ দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো টিকলি।

*****

“সরি এভাবে জরুরি তলব দিয়ে ডেকে পাঠানোর জন্য, আসলে সত্যি যে খুব জরুরি দরকার ছিল তাই… “

প্লেট এর দিকে তাকিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে বলল অমৃতা। ওপাশ থেকে আদিত্যর মুখে তেমন কোনো কথা নেই, অমৃতাই বলছিল ,আসলে এত বছর পর সামনা সামনি  দুজনেই যে বেশ অস্বস্তিতে, সেটা দুজনের কাছেই পরিস্কার, অমৃতা যখন মাথা নীচু করে কথা বলছিল ওর চোখের পাশের কুঁচকানো চামড়াটা, বা সদ্য পাক ধরা রুপোলি চুলগুলো, বা চোখে পাওয়ারের  চশমাটা, এসবই দেখছিল আদিত্য ,আর খুঁজছিলো সেই অমৃতাকে, যাকে ছেড়ে এক মুহূর্ত ও থাকতে পারতো না ও একটা সময়ে।

“আমি কি বলছি প্লিজ একটু মন দিয়ে শোনো, আর পুরোটা না শুনে কোনো রিএক্ট করো না এখানে। প্লিজ।”

“অমৃতার চোখে চোখ যে কত বছর পর রাখলো এভাবে আদিত্য কে জানে ,আজ যেন মনে হচ্ছে ওর চোখ দুটো না বলেও অনেক কিছু বলে দিয়ে যাচ্ছে ,ও কি আদিত্যকে ক্ষমা করে দিয়েছে তাহলে ? ও কি আদিত্যর কাছে কোনো সাহায্য চাইতেই… বিপদে পড়ল না তো অমৃতা ? এর আগে যতবারই কোনো সমস্যা হয়েছে, আদিত্য পাশে এসে দাঁড়াতে চাইলেও অমৃতাই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে, একটা অভেদ্য দেওয়াল খাড়া করে রেখেছে সবদিন, আর আদিত্যর যে এটাই প্রাপ্য সেটা আদিত্য নিজেও জানে। তাও আজ যখন এত বছর পর এভাবে, তার মানে সত্যিই কিছু গুরুতর বৈকি। ”   

“কি হয়েছে? বলো। “

অনেকগুলো বছর পর আদিত্যর কথায় যেন হারিয়ে যাওয়া ওই ভরসার ছোঁয়াটা পেলো অমৃতা, এই ভাবেই তো আদি আগে ওকে ভরসা যোগাত, ওর মাথার সব চাপ নিজে নিয়ে কি সুন্দর অবলীলায় সমাধান করে দিতো সবটা। আজ আবারো সেই একইরকম… নিজের ভাবনায় লাগাম দিয়ে গলাটা ঝেড়ে আদিত্যর চোখের দিকে তাকাল একবার অমৃতা ,তারপরই বললো, “টিকলির সাথে রাজদীপের বিয়েটা ক্যানসেল করতে হবে। “

ছোটোখাটো বজ্রপাত হলো যেন আদিত্যর মাথার উপর, কিছু কুল কিনারা পেলো না ও, ভ্রু কুঁচকে অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড অমৃতার দিকে, “মানে ?”

“মানে এটাই যে টিকলি রাজদীপের সাথে নয় অভিমন্যুর সাথে ভালো থাকবে। “

চোয়াল একটু একটু করে শক্ত হচ্ছিল আদিত্যর,” অভিমন্যু আবার কে ? টিকলি কি আবার…”

” হ্যাঁ, তুমি ঠিকই ধরেছ, টিকলি ওই ছেলেটাকেই ভালোবাসে, রাজদীপ কে নয়। ভুল মানুষকে ভালোবাসার বিড়ম্বনা কি তা আমার থেকে ভালো আর কে জানে, আর আমি সেই কারণেই নিজের মেয়ের জন্য আজ তোমার সাথে কটা কথা বলতে এসেছি। ”    

*****

এদিকটা একদম অন্ধকার হয়ে গেছে এখন, টিকলির নিজের ছায়াটা পড়েছে সামনেটায়। গাছের পাতাগুলো ঝোড়ো হাওয়ায় নড়ছে আর অদ্ভুত সব ছবি সৃষ্টি করছে এল আঁধারিতে, পুরো গলিতে শুধু টিমটিমে হলুদ ল্যাম্প পোস্টার আলো ছাড়া আর কিছুই নেই। বাড়িতে বাড়িতে সিরিয়েল চলছে, তাদের জানলা পেরিয়ে অল্প আলো ছড়িয়েছে গলির খানিকটা জায়গায়। এভাবে কতক্ষণ বসে আছে টিকলি কে জানে, হঠাৎ ই ওর ছায়ার পাশে একটু একটু করে দীর্ঘ হচ্ছিল ছায়া টা। একবারের জন্য হলেও ভয়ে বুক তা কেঁপে উঠল টিকলির, এভাবে একলা এখানে কিছু ঘটলে তো ও… তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করতে গেল ও বাড়িতে,ফোন কানে নিয়েই আরেকবার ছায়ায় চোখ পড়তেই থমকাল এক মুহূর্তের জন্য। কি হলো এটা? এই ছায়ার বিপরীতের মানুষটা যে খুব পরিচিত, খুব চেনা লাগছে যেন, সেই একই গড়ন, পরনে পাঞ্জাবি, একইরকম ভাবে হেঁটে আসা, অবিকল এক ! এ যে একদম অভিমন্যুর মতোই, না অভিমন্যুর ছায়াটাও এই কদিনে টিকলি ভীষণ ভালো ভাবে চিনে গেছে , তাহলে টিকলি যা ভাবছে সেইটাই কি ঠিক? অভিমন্যু কি তার মানে…মনেপ্রাণে চাইছিল টিকলি ,ও যা ভাবছে তাই যেন সত্যি হয়। অনেক আশা নিয়ে মাথাটা এবার ঘোরালো টিকলি। একটা বিশাল পাথরের চাঁই যেন নেমে গেলো বুক থেকে। সেই বহু প্রতীক্ষিতক্ষণ উপস্থিত, একেবারে হারিয়ে ফেলেনি তাহলে ও অভিমন্যুকে , এতটা দেরি ও করে ফেলেনি ও, অভিমন্যু ওর সামনেই দাঁড়িয়ে তাই, বেশ অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ওর দিকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল টিকলি অভিমন্যুর দিকে, মুখ চোখ ঘেমে, ল্যাম্পপোস্টের আলোয়  চকচক করছে ওর মুখের স্বেদবিন্দু।চোখে চশমা আছে বটে, কিন্তু সেই কাঁচের মধ্যে দিয়ে ও অভিমন্যুর চোখে যে টিকলিকে দেখে অবাক হওয়ার সাথে সাথে আনন্দ ও লুকিয়ে আছে, বুঝতে খুব একটি আর অসুবিধা হলো না টিকলির। ঘামে ভেজা চুলগুলো কোনোমতে আঙ্গুল দিয়ে পিছনে উল্টানো, পাঞ্জাবির হাতাও গুটিয়ে কনুই অবধি, ঘেমে নেয়ে এসে এভাবে এখানে টিকলিকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাকরুদ্ধ অভিমন্যু ও ,তারপর নিজেই বললো ,”আপনি এখানে ?”

ওর মুখে আপনি শুনে অকারণেই বেশ রাগ হলো টিকলির, তাও কিছু বলল না ও। একদৃষ্টে অভিমন্যুর দিকে তাকিয়ে রইল চোখে চোখ রেখে। অভিমন্যু কি এখনো কিছু বলবে না? ও কি এখনও বুঝতে পারছে না, জড়তার এগোল ভেঙে একবারটি বলতে পারছে না? কেন? এত কেন ভাবে ও? টিকলি তো নিজে যেচে আজ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তাহলে ?

“আমি তো ভাবলাম বোধহয়… যাই হোক, বাড়িতে তালা বন্ধ কেন ?কাকু কাকিমা কই?”

“নার্সিংহোমে, ওখান থেকেই আসছি। “

“মানে? কি হয়েছে কাকু কাকিমার ? একবার ও বললে না ?” শেষের শব্দ কটা অনুচ্চারিতই রইল টিকলির। “

“বাবা ঠিক আছে, মায়ের একটা এটাক হয়ে গেছে, এখন একটু বেটার, বাবা আর আমি ওখানেই গেছিলাম ,বাবা আসছে একটু পর। “

“কবে হয়েছে?” টিকলির চোখে মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট , মানুষটা কে এক দেখাতেই বড় আপন মনে হয়েছিল যে টিকলির।

“হলো কদিন, আমার সিকিম যাওয়াটাও ওই কারণে ,যাক গে… কংগ্রাচুলেশনস, বিয়ের জন্য। নেমন্তন্ন করতে এইদিকে আসা বুঝি? না আসলে এই অধমের বাড়িতে এভাবে আপনাকে একদমই এক্সপেক্ট করিনি আসলে। তাই।”

“থ্যাংকস, তোমাকেই ইনভাইট করতে এলাম, ইয়ে…মানে , তুমি খুশি তো ?”

” আমার খুশি অখুশি তে কি যায় আসে, আমরা চুনোপুটি মানুষ ,আপনাদের বিয়ের খবর নিউস চ্যানেল এ দেখাবে, খবরের কাগজে বেরোবে, তখনই দেখবো, কোথায় আপনি আর কোথায় আমি? আপনার বিয়েতে যাওয়া আমার মানায় না, একটা জিনিস এই কদিনে শিখেছি, বেশি উঁচুতে হাত বাড়ানো উচিত নয়, নিজের গন্ডির মধ্যেই থাকা ভালো, নিজের ক্ষমতা আর যোগ্যতা কতুটুকু মাথায় রাখি এখন, কিছুদিন একটু তাল কেটে গেছিল, এখন একদম ঠিক আছে। “

” আর যদি আকাশ নিজে থেকেই তোমার কাছে ধরা দিতে চায়?”

আর কিছু বলতে পারলো না অভিমন্যু, একদৃষ্টে চেয়েছিল টিকলির দিকে, টিকলি নির্বাক থেকেও যেন নিজের মনের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছিল অভিমন্যুর সামনে, ” কাল কাকিমাকে দেখতে যাবো আমি। প্লিজ। এইটুকু অনুমতি দাও। “

মাথাটা নাড়লো শুধু অভিমন্যু, টিকলির চোখ থেকে চোখ দুটো সরিয়ে মাথাটা নামিয়ে নিলো ও, সরে আসতে যেতেই হাতটা অবশেষে ধরে ফেললো টিকলি ,” একটু সাহসের দরকার শুধু। তুমিই তো আমায় শিখিয়েছিলে কিভাবে ভয় না পেয়ে নিজের জীবনটা নিজের মতো করে বাঁচার সাহস দেখতে হয়। তাহলে আজ কি হলো?”

অভিমন্যু কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা ভেঙে বললো, ” কিছু অনুভূতি ভাগ করা যায় না, উল্টো দিকের মানুষটা যদি সেই অনুভূতির দাম না দিতে পারে। তাই কিছু কথা মনে রাখাই ভালো।”

“আকাশি নীল রুমালটা এখনো নিজের কাছে নিয়ে ঘোরো কেন? গাড়ি চোখের আড়াল না হওয়া অবধি ওভাবে কেন দেখো আমার চলে যাওয়াটা? এইটুকু সাহস করে বলতে পারলে না? আমি রাজদীপ কে করছি না বিয়ে, আমি কিন্তু পেরেছি। আর তুমি?”

চোখ দুটো বুজে নিলো এক সেকেন্ডের জন্য অভিমন্যু, আর দেরি করল না ,অবশেষে টিকলির হাত দুটো এবার শক্ত করে ধরে নিলো ও। ওর চোখের কোণের জলটা পেরিয়ে মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা আনন্দের অনুভূতিটুকু বুঝে নিতে সময় লাগল না আর টিকলির। একসাথে যেন হাজার হাজার আলো জ্বলে উঠল এই আলো আঁধারির মাঝেও। নিজের বাহুডোর উন্মুক্ত করল অভিমন্যু, এক নিমেষে ওকে নিজের দুইহাতে জড়িয়ে নিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল টিকলি।   

*****

“আসলে আমি অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেছি ,অনেক অন্যায় করেছি তোমার উপর, নিজের সন্তানদের উপর, এক সন্তানকে হারিয়েছি, আরেকজনকে হারাতে চাই না আর, এই কথাগুলো এত গুলো বছরে তোমার সামনে এসে বলতে পারিনি , কিন্তু আজ না বললে আর হয়তো বলার সুযোগ পাবো না আমি, তোমার মতন আমিও চাই  টিকলি ভালো থাকুক। যতই হোক ,একমাত্র মেয়ে আমার, হয়তো দেখাতে পারি না ওকে কতটা ভালবাসি , কিন্তু বাবা হয়ে আজ এই মুহূর্তে সত্যি আমি ও চাই টিকলিটা অন্তত খুশি থাকুক। আর কিছু চাওয়ার নেই আমার। তোমার সাথে লড়ার ক্ষমতা নেই আর আমার অমৃতা, লড়তে চাই ও না। আমি নিজে বাবার সাথে কথা বলবো কিন্তু, একটা শর্ত আছে। “

“আবার কিসের শর্ত ?” জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল অমৃতা।

“আমি খুব ক্লান্ত অমৃতা, আর পারছি না একা চলতে, তোমার জীবনের ভুল মানুষটা হয়ে আর বাঁচতে পারছি না আমি এভাবে। ” এটুকু বলেই নিজের হাতটা অমৃতার দিকে বাড়াল আদিত্য। নিজের চারপাশের কঠিন আবরণটা আর টিকিয়ে রাখতে পারছিল না অমৃতা, আদিত্য এভাবে সামনে এসে দাঁড়ানোর পর, অবশেষে ভাঙল এবার দেয়ালটা। ” টিকলির জন্য তুমি একা নয় ,আমরা দুজনে একসাথে লড়বো এবার। আদিত্যর হাতটা ধরল অবশেষে অমৃতা, ১৫ বছর পর। ঘাসের উপর কিছু শিশির বিন্দু শুধু ভোরে নয়, সাঁঝেও যে উজ্জ্বল হয় ।

।। সমাপ্ত।।

তুলিকা রায়ের কলমে দুটি ভিন্ন স্বাদের সেরা উপন্যাস একসাথে মাত্র ৯৯/- টাকায় -

Share with

এরকম আরো কিছু গল্প

সাঁঝের শিশির (ষষ্ঠ পর্ব)

।।১।। (কিছুদিন পর) “আরে আমি নিজেই ফিরে যাব, রতনদা তো আছেই, আবার তুই আসবি কেন?” “তুই তো আচ্ছা হাঁদা, বলছি রতনদাকে ফেরত পাঠাতে, আর এবার

Read More »

সাঁঝের শিশির (পঞ্চম পর্ব)

।।১।। “এবার বিশ্বাস হল তো, মেয়েটা খামোখা কেন মিথ্যে বলবে বলো তো? আর আমি তো প্রথমেই দেখেছিলাম, তোমায় বলেওছিলাম, তুমিই আমার কথা বিশ্বাস করোনি, এখন

Read More »

সাঁঝের শিশির (তৃতীয় পর্ব)

“তুমি একবার আমার কথাটা শোনো, আচ্ছা আমার মিথ্যে বলে কি লাভ বলতো? আর তোমার মনে হয় আমি এই অবস্থাতেও মিথ্যে কথা বলব এখনও?” “সত্যি মিথ্যের

Read More »

সাঁঝের শিশির (দ্বিতীয় পর্ব)

।।১।। “কি গো টিকলিরাণী, খাও। কখন থেকে খাবারের থালা নিয়ে বসে আছ? তোমার প্রিয় পাস্তা করে দিলুম যে, ভাল হয়নি?” অন্যমনস্ক টিকলি সামনের বাগানটার দিকে

Read More »

সাঁঝের শিশির

প্রথম পর্ব ।।১।। “টিকলি তোর হলে চলে আয় এবার, খেতে দিয়ে দিয়েছি।” রেওয়াজ শেষে চোখ দুটো এতক্ষণে খুলল টিকলি, ঘড়ির দিকে তাকাল একবার। প্রণাম করে

Read More »

Share with